বোবা বউ

বোবা বউ

আমার স্ত্রী কথা বলতে পারে না তাতে অবশ্য আমার কোনো আফসোস নেই বরং ভালোই হয়েছে আমি সারাদিন ওর সাথে কথা বলি আর ও মন দিয়ে তাকিয়ে আমার বলা কথা গুলো শুনে আর ওর সে চাহনি টাই আমায় যেনো পাগল করে তোলেআমি অর্ক বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ২৮বছর বয়স বিয়ে করেছি ১বছর আগে  অবশ্য বিয়েটা অনেক সাধনার পর হয়েছে মা মারা গিয়েছে ১৫বছর হলো বাবাই মানুষ করেছে আর আমার বউ মারিহাযার কথা এতোক্ষণ যাবৎ বলছিলাম বাবার বন্ধুর মেয়ে জন্ম থেকে কথা বলতে পারে না অনেক চিকিৎসা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনাটাই সাফল্য পায় নেই।

মারিহা যখন ৫বছর তখন একটা দুর্ঘটনায় ওর বাবা মা মারা যায় বাবা ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে সারাদিন চুপচাপ বসে থাকতো আমার একদম ভালো লাগতো না ছোট বেলায় মারিহা দেখতে অনেকটা Taddy এর মতো ছিলো যাকে বলি গুলুমুলু আমি ওর কাছে বসে অনেক কথা বলতাম কিন্তু ও কিছুই বলতো না শুধু শুনতো একদিন অনেক মেজাজ গরম হয়ে যায় আমি সারাদিন কথা বলি ও কেনো কথা বলে না আমি ওর কাছে গিয়ে কথা বলছি ও শুধু শুনছে কিছু বলছে না দেখে ধাক্কা মেরে ফেলেদি মনে করেছিলাম এবার হয়তো কিছু বলবে কিন্তু না ও কিছুই বললো না শুধু দু চোখ বেয়ে ওর পানি ঘরিয়ে পড়ছে আমি ওর কাছে গিয়ে ওঠাতে নিলে ও উঠে চলে যায়  আমার অনেক খারাপ লাগে।

রাতে আম্মুর কাছে গিয়ে সত্যি টা খুলে বলি মা আমাকে যেটা বলেছিলো তাতে আমি অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম ও বাগপ্রতিবন্ধি কথা বলতে পারে না তাই ও আমার সাথে কথা বলে না কথাটা শুনে মনের মধ্যে অনেক আঘাত লাগে আমি নিজের অজান্তেই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে তারপর আম্মু আমাকে বুঝিয়ে বলে ওর সাথে ভালো ভাবে ব্যবহার করতে।

আম্মু আব্বু দুজনি ওকে অনেক ভালবাসতো  আস্তে আস্তে ও হয়ে যায় আমার খেলার সাথি ধীরে ধীরে দুজনি বড় হতে থাকি মা মারা যাবার পর বাবাই আমাদের দুজনকে দেখা শুনা করতেন বাবা ব্যবসার কাজের জন্য আমাদের কে বেশি সময় দিতে না পারলেও আমার তার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই বাবা যখন ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যেতো আমি তখন মারিহা কে নিয়ে রাতে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতাম অনেক জায়াগায় যেতাম ওর Favorite actor ছিলো Salman khan & উনার যদি কোনো ছবি রিলিজ হয় তাহলে ওকে দেখাতে নিয়ে যেতেই হবে আর যতোক্ষণ না নিয়ে যাবো ততক্ষণ মুখ গুমরা করে বসে থাকতো ওর মুখে হাসি ভালো লাগে গুমরা নয় তাই আমি ওকে নিয়ে যেতাম ওর পছন্দের ছবি দেখতে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো ওই আর ওর একমাত্র বন্ধু আমি ও আমার জন্য শুধু বন্ধু ছিলো না ও ছিলো আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন জানি না কিভাবে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি ওকে আমার মনের কথা বলবো তার আগেই বাবা আমার Higher education এর জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয় তখন মারিহা মাত্র স্কুল ছেড়ে কলেজ এ ভর্তি হয়।

৫বছর পর নিজের দেশে ফিরে আসিআমাকে কেউ রিসিভ করতে যায় নি বাবা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো আমিও কিছু ভাবি নেই এ ভেবে যে বাবা হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত কিন্তু মারিহা ও আসেনেই তাতে একটু খারাপ লেগেছে চিন্তা করি বাসায় গিয়ে ওর সাথে জগড়া করবো এ নিয়ে কিন্তু বাসায় এসে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও আমি তৈরি ছিলাম না।

বাড়ি সম্পূর্ণ সাজানো মনে হচ্ছে কারো বিয়ে আমি গাড়ি থেকে নেমে জলদি করে বাসায় ডুকে যায় বাবা কে দেখলাম কিছু মানুষের সাথে কথা বলছে আমি সামনে যেতেই বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম বাবা আমাকে দেখে ভিষন খুশি হয়ে উঠে আমি বাবা কে জিজ্ঞেস করি বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান আছে‌ বাবা বলে হ্যাঁ আজ মারিহার বিয়ে কথাটা শুনে আমার উপর আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মারিহার বিয়ে না না এটা হতে পারে না মারিহা শুধু আমার ও অন্য কারো হতে পারে না।

অর্ক:বা…বা…মা.. মারিহা র বিয়ে কার সাথে তুমি তো এ ব্যাপারে আমায় কিনছু জানালে না আর মারিহা কি রাজি

বাবা:হুম মারিহা মামনিও রাজি…

অর্ক:ছেলেটা কে বাবা (তখন আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না কিভাবেই বা বের হবে আমার মারিহা নাকি অন্য কারোর হয়ে যাবে মারিহা কিভাবে রাজি হয়ে গেলো)

বাবা:কি রে কিভাবছিস

অর্ক:আমি একবার মারিহার সাথে কথা বলতে চাই..

বাবা:কথা পরে হবে আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় কাজি চলে আসবে বিয়ে পড়াতে।

আমার মন মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায় আমি দৌড় দিয়ে মারিহার ঘরে চলে যায় সেখানে অনেক গুলো মেয়ে একসাথে জোরো হয়ে আছে আমি নক করলে মেয়েরা সরে যায় একটি মেয়ে চেয়ারে বসে আছে বউ সেজে আমি দেখে থনকে যায় আমার মারিহা কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে লাল বেনারসী সাথে মেচিং করা গহনা আমি ওর থেকে নিজের চোখ সরাতেই পারছি না মারিহা মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আমাকে দেখে ওর মুখে জয় পাওয়ার হাসি ফুটে উঠে।

আমি ঘরে গিয়ে মারিহার কাছে গিয়ে দাড়ায় ঘরের সবাই চলে যায় আমি মারিহাকে জিজ্ঞেস করি ওকি বিয়েটা নিজ ইচ্ছায় করছে ও যখন হ্যাঁ বলেছিলো‌ আমার যেনো পুরো দুনিয়াটাই উল্টে যায় কিছু মেয়র এসে মারিহা কে নিচে নিয়ে যায় আমি সেখানেই বসে পড় আমার মারিহা আজ সত্যি সত্যি কি অন্য কারো হয়ে যাবে কান্না করতে থাকি হঠাৎ পিছন থেকে কেউ কাঁধে হাত রাখে হুম বাবা এসেছিল বাবা আমাকে তৈরি হয়ে নিচে আসতে বলে আমি নিষেধ করে দিলেবাবা আর তৈরি হতে বলে না বরং জোর করে নিচে নিয়ে যায়।

মারিহা সোফায় চুপ করে বসে আসে আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ও হেসে উঠে ওর সে হাসিটার কাছেই আমার সব কষ্ট ভুলে যায়‌ কিন্তু আজকের পর তো এ হাসিটা দেখতে পাবো না ভেবে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে
বাবা আমাকে নিয়ে মারিহার পাশে বসিয়ে দেয় আমি মারিহার দিকে তাকিয়ে আছি আর মারিহা মাথা নিচু করে বসে আছে কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে আমার কাজির কথায় কোনো খেয়াল নেই আমি শুধু মারিহা কে দেখে যাচ্ছি প্রথমে মারিহা কে কুবল করতে বলে কিন্তু মারিহা চুপ করে বসে থাকে কারন ও তো কথাই বলতে পারে না আশেপাশের মানুষ কথা বলতে শুরু করে অনেকেই পাশে থেকে বলছে কবুল বলতে আমার মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে যায় আমি চিৎকার দিয়ে বলি ও কথা বলতে পারে না তাই বলে কি এ ভাবে বলতে হবে মনে মনে বলেই তো হয় সবাই আমার কথায় চুপ হয়ে যায় বাবা আমার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে যেতে বলে আমার তখন অনেক খারাপ লাগছিলো আমার মারিহা কে নিয়ে কথা বলছিলো  হঠাৎ কাজি আমায় কবুল বলতে বললে আমো হতভম্ব হয়ে যায়

বাবা:কি রে কথা শুনতে পাচ্ছিস না কাজি কি বলছে বল।

অর্ক: বিয়ে কার সাথে হচ্ছে আমার…

বাবা:ভেবে তো ছিলাম তোর সাথে আমার মামনিটা কে বিয়ে দিয়ে একবারের জন্য ঘরে মেয়ে করে রাখবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তুই এ বিয়েতে রাজি না বাবার কথা শুনে নিজেকে অনেক লাকি মনে হচ্ছিল…

বাবা: মারিহা মামনি তুই মন খারাপ করিস না আমি তোর বিয়ে অনেক ভালো জায়গায় দেবো বাবার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি।

অর্ক:কে বলছে আমি রাজি না আমি রাজি কাজি আমি রাজি কবুল কবুল কবুল এখন থেকে মারিহা আমার বউ আমার কবুল বলা দেখে সবাই অনেক হাসাহাসি করে তাতে আমার কিছু যায় আসে না আজ আমি আমার ভালোবাসার জয় লাভ করেছি মারিহার দিকে তাকিয়ে দেখি ও মাথা নিচু করে হাসছে ওর এ হাসি দেখেই তো আমি পাগল হয়ে যায়।

বিয়ে হয়ে যায় আমাদের বাবা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম একবার আমাদের বিয়ে দিয়ে দিলে কেনো তাও আবার একে অপরের সাথে বাবা তখন বলেছিলো বাবা:তোর মা মারা যাওয়ার আগে আমায় বলেছিলো আমি মারিহাকে ছাড়া নাকি থাকতে পারবো না‌ মারিহা যেনো তোর সাথে সারা জীবন থাকেতাই আমি তোকে সারাজীবনের জন্য মারিহা কে দিয়ে দিলাম দেখিস বাবা ওর যেনো কোনো কষ্ট না হয় মেয়েটা অনেক হারিয়েছে এখন তুই পারিস ওকে খুশী গুলো ফিরিয়ে দিতে আমিও যে ওকে অনেক ভালবাসি সে কথাও বাবা জানতো কিন্তু তখনও আমার মনের কোনো এক কোনে দ্বিধা ছিলো মারিহা আমায় কি ভালোবাসে নাকি বাবার বলায় বিয়ে করেছে অনেক গুলো প্রশ্ন ছিলো আমার মনে কিন্তু এ সব প্রশ্নের উত্তর মারিহা আমায় এক কথায় দিয়ে দেয়।

আমি বাবার সাথে কথা বলে ঘরে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমি আমি মারিহাকে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি মারিহা দরজার বরাবর দাড়িয়ে আছে আমি ঘরে যেতেই আমাকে গেটের সামনে দাড়াতে বলে নিজের ভাষায় ইশারা দিয়ে বলেছিলো ভালোবাসি তোমাকে সেদিন আমি বিশ্ব জয় করেছিলাম আমিও ওকে বলেছিলাম ভালোবাসি আমিও যে তোমায় ভালোবাসা বলতে একে অপরের দোষ খুঁজে বের করা নয়,বরং একে অপরের অপূর্ণতা কে নিজের মনে করে তা পূর্ণ করা আমিও সর্বদা চেষ্টা করি ওর পাশে থাকার।

এখন আমাদের বিয়ের একবছর পূর্তি হয়েছে মারিহা এখনও আগের মতই আছে আমি সারাদিন কথা বলি আর ও শুনে আর হাসে আর Salman Khan এর ছবিতো উনাকে দেখাতেই হবে ওর প্রতি আমার ভালোবাসা দিন দিন বেড়েই চলেছে মন থেকে বলছি আমার স্ত্রী বোবা হয়েছে তো কি হয়েছে আমার কোনো আফসোস নেই বরং আমি খুশি এমন একজন জীবন সঙ্গিনী পেয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত