মায়ের ভালোবাসা

মায়ের ভালোবাসা

আমি ছোট থেকেই মায়ের আদরে বড় হয়েছি। আমার বাবাকে কখনও দেখিনি মা কে বলতাম আমি বাবার কথা কিন্তু মা আমাকে বাবার কথা বলতেন না মুখ লুকিয়ে কান্না করতেন।

কিন্তু আমি বাবার পরিচয় জানতে উঠে পরে লাগলাম মা আমাকে বাবার কথা না বলাতে শেষে আমি একটা কথা বলে ফেলি মা তুমি কেনো আমার বাবার কথা আমাকে বলো না? তাহলে কি আমি তোমার অবৈধ সন্তান! এই কথাটি শোনার পর আমার মা আমাকে একটা জোরে থাপ্পর মারে আর কান্না করতে করতে চলে যায় আমার সামনে থেকে। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিলো আমার আমার জন্য না আমার মায়ের জন্য মা কে অনেক বড় ব্যাথা দিয়ে ফেলেছি। আমি ভালোবাসতাম একটা ছেলেকে আর তাকে আমি বিয়ে করতে চাই কিন্তু আমার মা এই বিষয় টা কোনোভাবেই মেনে নেয় না। কিন্তু আমি মায়ের কথায় কোনরকম কান দিতাম না আমি যেটা ভাবতাম সেটাই হলো শেষ কথা।

আমি বিয়েটা করেই ফেলি তাও আবার আমার মায়ের অনুমতির বিরুদ্ধে। বিয়ের পর কয়েকদিন বেশ ভালই চলছিলো আমাদের সংসার কিন্তু কিছুদিন পর শুরু হলো আমার উপর অত্যাচার। আমাকে সব সময় আমার শাশুড়ী খোটা দিয়ে কথা বলতেন। আমি মায়ের সাথে থাকাকালীন একটি কাজ ও করতাম না কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে অনেক কাজ করি কিন্তু তাতেও কারো মন পেতাম না। শশুর বাড়ির সব লোক আমাকে মেনে নিতে পারছিলো না। আমি এসব কিছু মনে করতাম না কিন্তু যখন থেকে আমার উপর আমার ভালোবাসার মানুষ আমার স্বামী অত্যাচার করতে থাকে সেদিন এটা মেনে নিতে পারিনি। আমি আমার মা কে ছেড়ে এসেছি যার জন্য আজ সে ই আমাকে এমন ভাবে বলল।

আমার স্বামী বলে আমি নাকি আমার মায়ের অবৈধ সন্তান আর আমাকে নাকি আর ভালোবাসা তার পক্ষে সম্ভব না তিনি বলেন যার কোন বাবার পরিচয় নেই তাকে আমি আর আমার বউ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারছি না। আমি আমার স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে স্তদ্ধ হয়ে যাই কারন আমার স্বামী জানতেন যে আমার বাবা নেই কিন্তু এটা নিয়ে যে এতটা হবে তা ভাবিনি কখনও।সব সহ্য করা যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষের দেওয়া কস্ট কখনও সহ্য করা যায় না। প্রায়ই বিনা কারনে আমাকে তিনি তার প্যান্ট এর বেল খুলে মারতো তখন সব সময় মা মা বলে চিতকার করতাম ব্যাথার যন্ত্রনায়। কিন্তু আমার মা তো আমার পাশে নেই কেউ সারা দিতো না। পাশের ঘরে আমার শাশুড়ী ছিলেন তারাও এগিয়ে আসেনি কেউ। মুখ বুজে সব সহ্য করতাম।

একদিন আমার স্বামী আমাকে তার ঘর থেকেইই বের করে দেয়। আমি কোথায় যাবো কি খাবো বুঝতে পারতাম না। আমি সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু আমি আমার সন্তানের জন্য এই পাপ কাজ করতে পারিনি। পারিনি নিজেকে শেষ করে ফেলতে। হ্যা আমার গর্ভে এখন এখন একটা সন্তান আমি মা হতে চলেছি! আমি কোথাও যাওয়ার রাস্তা না পেয়ে শেষে আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে যাই। আমার মা আমাকে সেদিন দেখে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। সেদিন ই বুঝেছিলাম মায়ের ভালোবাসা কতটা গভীর কতটা আপন। আমি মা কে বলি” মা আমাকে ওরা বের করে দিয়েছে ওদের ঘর থেকে”। আমার মা বলে উঠেন ” ওরা বের করে দিয়েছে তো কি হয়েছে আমি আছি তো। সেদিন মাকে জরিয়ে ধরে ছিলাম অনেকক্ষন আর কান্না ওও করেছিলাম খুব। আমি আর মা কে বলতাম না আমার বাবার কথা যদি মা বাবার কথা শুনে আবার কান্না করে সেই ভয়ে।  একদিন আমার দাদী আমাকে বলেই ফেলে আমার বাবার কথা। দাদী বলেন তোর বাবা ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী।

তোর মায়ের সংসার বেশ ভালোই চলছিলো। তুই যখন তোর মায়ের পেটের ভিতর ছিলি তখন তোর বাবা একটি রিপোর্ট থেকে জানতে পারে যে তুই মেয়ে সন্তান হবি। তোর বাবা মেয়ে সন্তান মেনে নিতে পারেনি তোর মা কে বলে তোকে তোকে গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় মেরে ফেলতে কিন্তু তোর মা তখন তোকে মেরে ফেলতে রাজি হননি। তোর বাবা এর জন্য তোর মাকে মায়ের উপর অনেক অত্যাচার করত শেষে তোকে বাঁচানোর জন্য তোর মা তোর বাবার সংসার ছেড়ে চলে আসে। আর তারপর তোর জন্ম হয়। তোকে তোর মা অনেক কস্টে মানুষ করেছে আর এর প্রতিদান তুই এভাবে দিলি।

আমি দাদীর কথা শুনে হু…হু…হু.. করে কেঁদে দেই। মা পাশের ঘরে ছিলেন আমি দৌড়ে গিয়ে মা কে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেই। মা কিছুটা অবাক হয়ে যায় আমার এমন করতে দেখে। মা বলে উঠে কিরে মা এভাবে কাঁদছিস কেনো? (মা) (নিশ্চুপ ভাবে কেঁদেই চলেছি আমি) ঐ পাগলী মেয়ে আমার এভাবে কাঁদার কারন টা কি হুম? আমি কান্না জরিত কন্ঠে বলে উঠলাম.. আ. আ..আ. আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও মা? আরে তুই কিচ্ছু করিসনি বুঝলি। আর আমি কি তোর উপর রাগ বা অভিমান করতে পারি বল।

আমি মা কে ছেড়ে দিয়ে মায়ের পা ধরে কান্না করে বলি মা আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি জানতাম না মা তুমি আমার জন্য বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছো! যদি জানতাম তবে কখনই বলতাম না এমন কথা প্লিজ মা আমাকে ক্ষমা করে দাও? আমার মা আমার হাত ধরে উপরে তুলে আমার চোখের পানি তার হাত দিয়ে মুছে দিয়ে আমাকে তার বুকে জরিয়ে নিলো। আমি আমার মায়ের বুকের মাঝে পৃথিবির শ্রেস্ট সুখ খুজে পেলাম। আমার মা ও আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। মা মেয়ে দুজোনেই কাঁদছি এ কান্না থামার নয় এ কান্না ভালোবাসার কান্না।

কিছু বছর পর  আমি লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকরী করছি এখন। আমার একটা মেয়ে সন্তান ও হয়েছে আমি আমার মেয়ে আর আমার মা একসাথে থাকি। আমার স্বামী একবার আমাকে তার বাসায় নিয়ে যেতে এসেছিলো কিন্তু আমি যাইনি কারন যে একবার আমাকে এমন অত্যাচার করে তাড়িয়ে দিয়েছে সে আর যে এমন করবেনা তার কি প্রামাণ আছে।সত্যি বলতে আমি আগের মতো এখন ও আমার স্বামীকে ভালোবাসি। কারন সে ছিলো আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা পরে হয়তো সে তার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলো। আমার মেয়েটা এখন বেশ বড়ই সব কিছু বোঝার ক্ষমতা আছে ওর। আমাকে একদিন বলে মা আমার বাবা কে?

আমি আমার মেয়ের এমন প্রশ্ন শুনে কি উওর দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে আমার সাথে যা যা ঘটেছে সব কিছু বলে দেই আমার মেয়েকে। আমি বলার পর লক্ষ্য করি আমার মেয়েটার ও চোখের কোনে পানি জমে গেছে। আমি বলি মামনি তোমার বাবার খোজ পেলে আমাকে ফেলে বাবার কাছে চলে যাবে না তো? মেয়েটা আমার কথা শুনে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে জরিয়ে ধরে বলে না মা আমি কখন ও তোমায় ছেড়ে চলে যাবো না। যে মানুষ টা তোমাকে এতো কস্ট দিয়েছে তার কাছে আমি কখনই যাবো না মা। আমি তোমার কোলে মাথা রেখে এভাবে সারাজিবন কাটাতে চাই।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত