গাঁও গেরামে কোন সুন্দরীর সাথে মন খুলে যে দুটো কথা বলবো তারও কোনো পরিবেশ নাই। কত সব বিচ্ছিরি ব্যাপার যে ঘটে যায়!
আমার চাচাতো ভাই বিমলের শ্যালিকা এসেছে গত পরশু। বিমলের ছেলের জন্মদিন ছিলো, ওই উপলক্ষেই আসা বোধ হয়। মেয়েটিকে সেদিন এক নজর দেখেছিলাম, আজ আবার দেখলাম। দুপুর নাগাদ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেখি মেয়েটি বিমলদের বাড়ির সামনের রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাব জমাতে আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-আপনার নাম কী?
যদিও মেয়েটির নাম আমি জানি তবুও সৌজন্য দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা।
মেয়েটি বললো, ক্ষণা।
আমি তৎক্ষণাৎ কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, খ দিয়ে নাকি ক্ষ দিয়ে?
ক্ষণা হেসে বললো, যা! জানেন না বুঝি? ক্ষণা নাম ক্ষ দিয়ে হয়!
হবে হয়তো ক্ষ দিয়ে। তাতে কী আসে যায়! মেয়েটি হাসলে এত সুন্দর লাগে! মনে হয়, শীতের সকালে সবুজ ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশিরের ওপর সূর্যের আলোকছটা! বললাম, আপনার দাঁতগুলো খুব সুন্দর!
– ধন্যবাদ।
– চোখ দুটোও।
– ধন্যবাদ।
– ওষ্ঠের ওপর যে এক বিন্দু তিল আছে ওটাও।
– হয়েছে হয়েছে। আর বলতে হবে না।
– কেন? বলার জন্য লোক আছে বুঝি?
আমি ক্ষণার মুখের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি, ক্ষণা কী উত্তর দিবে সেটা জানার জন্য। ওমা! ঠিক সেই মুহূর্তে দেখি আমাদের এলাকার গতন পাগল সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে দৌড়ে এদিকেই আসছে!
ক্ষণা আর আমি দুজনেই লজ্জায় কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলাম না। তারপর ক্ষণা ছোট্ট করে শুধু বললো, এখন যাই।
মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলি, এইসব পাগলদের কী কোন কালেও একটু বুদ্ধিসুদ্ধি হবে না?
দুপুরে খাওয়ার পর মা পায়েশ খেতে দিয়েছিলো। তাই খেতে খেতে মা কে জিজ্ঞেস করলাম, মা আমার বয়স ঠিক কত হলো?
মাঝে মা আমার বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছিলো। এখানে ওখানে মেয়েও দেখলো দুই চারটা। তা মায়েরই পছন্দ হয় না, আমার হবে কী করে! তারপর অনেকদিন হলো বিয়ের কথা আর উঠছেই না এখন!
আমি তাই ভাবলাম বাড়ির আশেপাশেই যেহেতু সুন্দর একটা মেয়ে ঘোরাঘুরি করছে, আমার বয়সের কথা মনে করিয়ে দিলে তবুও যদি মা’ র চোখে মেয়েটা পড়ে! মা বললো,
– সাতাশ, আটাশ হবে। হা রে উপল? কী দরকার তোর বয়সের কথা শুনে?
– না। তেমন কিছু না। ওই যে ভিম বললো, উপলদা আমি তোমার চেয়ে চার বছরের ছোটো। তবুও দেখো আমার চুল পেকে যাচ্ছে। তোমার এখনও একটাও পাকলো না। তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কী!
মা চেহারায় গাম্ভীর্য এনে বললো, তোর বাপ বলেছে ত্রিশের আগে এ বংশে কেউ বিয়ে করে না।
মিষ্টি পায়েশও মুখের মধ্যে এত বিস্বাদ লাগলো আমার!
তারপর দিন কয়েক বিমলকে দেখলাম বৌ আর সুন্দরী শ্যালিকা নিয়ে বাজারের পশ্চিম পাশে যে কফিশপ হয়েছে সেখানে কফি খাচ্ছে, সিনেমায় যাচ্ছে, চড়ুইভাতি করছে। রাস্তাঘাটে গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগলেও যেন আমাকে দেখতে পায় না! শালার পুরুষ মানুষের ওই এক স্বভাব, সুন্দরী স্ত্রীলোক বগলতলা করতে পারলে আশে পাশের মানুষ যেন আর চিনতেই পারে না!
আমার কথায় সবচেয়ে বেশি যে সমর্থন দিলো সে ভিম। বললো, ঠিকই তো! বিমলদা আমাদের জন্য সিনেমার টিকিট কেটে আনলেও তো আমরা আর যেতাম না! শুধু আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য হলেও দুটো টিকিট বেশি কাটতে পারতো! নাকি?
আমি ভিমের মুখের দিকে তাকাতেই ভিম মুখটা একটু কাচুমাচু করলো। ভিম বুঝতে পেরেছে, বলতে বলতে ও একটু বেশি বলে ফেলেছে। তার জন্য সিনেমার টিকিট কাটা হবে আর সে যাবে না এমনটা এইদিকের কোন পাগলও বিশ্বাস করবে না, তার ওপর আবার যদি ক্ষণার মতন সুন্দরী থাকে সেখানে!
সেদিন আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে ক্ষণা ডেকে বললো,
– উপল বাবু ভালো আছেন?
-ভালো।
– কথা বলার জন্যে একজন লোকও পাওয়া যায় না এখানে। সবাই যেন যে যার কাজে ব্যস্ত!মন টিকছে না আর। ভাবছি চলে যাব।
-সে কি! রতন আপনাকে টিয়া পাখি কিনে দেয়নি?
– টিয়া পাখি কিনে দিবে কেন?
– এ পাড়ার কোন ছেলে ছোকরার সাথে যেন কথা বলতে না পারেন। শুধু টিয়া পাখির সাথেই কথা বলেন আর সময় পেলে জামাই বাবুর সাথেই চিমটা চিমিটি করেন, এজন্য।
– যাঃ! কী যে বলেন! খুব অসভ্য আপনি!
– কোনোদিন আপনার মতন সুন্দরীর সংস্পর্শে আসতে পারিনি তো তাই কথায় একটু রুক্ষতা রয়ে গেছে।
– আর সংস্পর্শে এলে কী হতো?
– মুখের কথা মধুর হয়ে ফুটতো, আপনার কানেও তা সুরের মতন বাজতো!
– হাহা! কী পাগল আপনি!
– যা! আমি কি গতন পাগলের মতন উলঙ্গ থাকি নাকি?
দুজনেই সশব্দে হেসে ফেললাম। ক্ষণা বললো, আপনার সাথে থাকলে না হেসে উপায় নেই!
আমাদের বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে গেলেই নিতাইয়ের মুদির দোকান। নিতাইয়ের দোকান থেকে দুটো কোমল পানীয় কিনে আমি আর ক্ষণা চুমুক দিতেই ভিম এসে হাজির। ভিম চোখ বড় বড় করে বললো, উপলদা তুমিও! সারা জীবন তোমার পেছনে ঘুরলাম দুই টাকার চিনাবাদাম খাওয়ালে না! আর বিমলদার শ্যালিকাকে পেয়ে একেবারে কোল্ড ড্রিংকস!
একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলাম। ক্ষণাও দেখি অন্যদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে! সত্যিই গাঁও গেরামে একটা এনভায়রনমেন্ট নেই!
তার একদিন পর সন্ধ্যার সময় একটা কেলেঙ্কারি হয়ে গেলো। আমি বার বাড়ি বসে ছিলাম। হঠাৎ বিমলদের বাড়িতে শোরগোল শোনা গেলো। এগিয়ে গিয়ে দেখি ওখানে ভিমরাও আছে। ভিমকে জিজ্ঞেস করলাম,
– কী হয়েছে রে?
– ক্ষণা হারপিক খেয়েছে।
– হারপিকও আবার একটা খাওয়ার জিনিশ?
– তুমি সব সময় এমন রসিকতা করো না উপলদা? হারপিক কি কেউ সাধ করে খায়?
– তবে কেন খায়?
– মরার জন্য খায়।
ক্ষণার মত ওমন সুন্দর মেয়ে মরে যাওয়ার জন্য হারপিক খেয়েছে ভাবতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ভিমের কাছে জানতে চাইলাম,তা ক্ষণা মরতে চায় কেন?
– একটা ছেলের সাথে নাকি ক্ষণার সম্পর্ক ছিল।
– থাকবেই তো। এমন সুন্দর মেয়ে।
– হুঁ, তা ছেলেটার নাকি আবার বৌ আছে। ক্ষণা আজ কিভাবে যেন এটা জানতে পেরেছে৷ তাই হারপিক খেয়েছে।
– বৌ আছে? ছি! ছি!
– উপলদা তুমি ছি! ছি! করছো কেন? আমাদের সমাজে বৌ থাকার পরও প্রেম করা তো নতুন কিছু না।
– আমি ওই ছেলেটাকে ছি! ছি! করছি না।
– তবে কাকে করছো?
– নিজেকেই।
– সে কি! কেন?
– ঘরে বৌ থাকার পরও ক্ষণার মতন সুশ্রী মেয়ের সাথে প্রেম। আর আমার কী ফাটা কপালরে ভিম!
দুইদিন পরের খবর।
ক্ষণাকে হাসপাতালে নিয়ে ওয়াশটয়াশ করে ডাক্তাররা আজ রিলিজ দিয়েছে। ক্ষণা আবার বোনের বাড়িতেই এসেছে।ক্ষণার বাবা রাগারাগি করায় বিমল বলেছে, কয়েকদিন থাকুক আমাদের কাছেই। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তারপর বাড়ি যাবে।
ক্ষণা কিন্তু এখন গম্ভীর হয়েই থাকে। কারো সাথে বেশি কথা বলে না, মিশে না। কেমন মনমরা হয়ে থাকে সবসময়। সেদিন বাজারের কাছে যে কফিশপ হয়েছে, সেই কফিশপে নিয়ে গেলাম ক্ষণাকে। বিমলের বৌ অর্পিতা বৌদিকে বলে কয়েই নিয়ে গিয়েছি, একটা যুবতী মেয়ে সবসময় এত মনমরা হয়ে থাকলে কার ভালো লাগে!
ক্ষণা চুপচাপ বসে ছিল। আমি ক্ষণার দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বললাম ‘কফি’!
ক্ষণা হেসে ফেললো। বললো, উপল বাবু এটা যে কফি, হারপিক নয় সেটা জানি আমি।
বললাম,
-চুমুক দেন তবে। ভয় নেই।
-উপল বাবু আপনি আমাকে বিদ্রুপ করেন নাকি সাপোর্ট দেন এটাই বুঝি না। আপনি খুব অদ্ভুত মানুষ।
কথায় কথায় ক্ষণা সেদিন খুব আবেগী হয়ে পড়ছিলো। ক্ষণা বললো,জানেন উপল বাবু আমি খুব ইমোশনাল একটা মেয়ে। এই যে সেদিন আবেগের বশে বোনের বাড়ি এসে একটা কেলেঙ্কারি করে ফেললাম সেটা নিয়ে তুলকালাম হলো ঠিকই কিন্তু ওখানেই শেষ নয়। একটা মেয়ে হিসেবে কলঙ্কটা আমাকে দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে। মানুষজন নিচু চোখে দেখবে। আমাকে বিয়ে দিতে গেলেও এইসব ইতিহাস ঘেটেঘুটে বের করবে ছেলেপক্ষ। তারপর হয়তো মোটা অঙ্কের পণে একরকম দফারফা হবে। কিন্তু জানেন তো, ওটা আমার কাছে বিয়ে নয় বরং ওকে বিসর্জন বলাই শ্রেয়।
আমি চুপ করে ছিলাম। ক্ষণা আবার বললো, আর ওই ছেলেটার কথা ভাবুন। বিবাহিত স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আমার সাথে কী অন্যায় করলো! তবু তার দায় নেই এতটুকু, সমাজের কাছে সে আমার মতন অপরাধী নয়। উপল বাবু একে কি আপনি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বলবেন না?
ক্ষণাকে সহজ করার জন্য চেহারাখানায় বোকা বোকা ভাব এনে বললাম, যাই বলুন না কেন বিয়ের পর নারী পুরুষ সকলের শরীরেই একটা পার্মানেন্ট সিম্বল রাখার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হত। এতে করে আপনার মতন অনেক রমণীরই মনের ব্যথা এড়ানো যেতো। কী বলুন?
ক্ষণা আমার কথা শুনে ওই মুহূর্তেও খিলখিল করে হেসে ফেললো! সত্যিই অকারণে হাসা, অকারণে কাঁদা নারীর একটা বৈশিষ্ট্য বটে! ক্ষণা অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো, উপল বাবু আপনি পারেনও!
তারপর একদিন সকালে অর্পিতা বৌদির সাথে দেখা হতেই, বৌদি বললো
– উপলদা আপনি জাদু টাদু জানেন নাকি?
– জানতাম ছোটোবেলায়। অনেকদিন কাউকে দেখাই না তো। এতদিনে ভুলেই গিয়েছি মনে হয়।
– হাহা। ফাজলামো রাখেন। আপনার সাথে সেদিন কফিশপ থেকে ফেরার পর থেকেই বোনটা আমার চনমনে। একেবারে সতেজ!
– বলেন কি! দেশ থেকে তো রেফ্রিজারেটরের ব্যবসা উঠে যাবে একদম!
– যা! শুনুন আজ বিকেলে বুড়াই নদীতে নৌকায় করে ঘুরতে যাবো ক্ষণাকে নিয়ে। আমার বাপের বাড়ির দেশে তো নদী নেই। ক্ষণার খুব শখ। আপনি সাথে থাকলে খুব ভালো লাগবে আমাদের।
সুন্দরী রমণীর ভালো লাগলে উপলের সেখানে না থেকে উপায় কী!
বিকেলবেলা বুড়াই নদীর পাড়ে এসে দেখতে পেলাম, স্যুট পরিহিত বেঁটে গোছের একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন! কাছে এসে চোখে খানিকটা ঢলাঘষা দিলাম। আরে এ ভদ্রলোক হতে যাবে কোন দুঃখে! এ তো ভিম! ভিমকে জিজ্ঞেস করলাম, এই গরমেও স্যুট পরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ভিম বললো, উপলদা একা একা ক্ষণার সাথে নৌকা ভ্রমণ করবা তাই কি হয়?
ভিমের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি নতুন কেনা একজোড়া চকচকে জুতা যা ভিমের সাইজের সাথে যায় না। জিজ্ঞেস করলাম, এ কার জুতা পরে এসেছিস?
ভিম চুপিচুপি বললো, বাবার। আমার চটিজুতো ছিঁড়ে গেছে কাল রাতে।
নৌকায় বসে অর্পিতা বৌদি হাল ধরেছে, আমার হাতে বৈঠা। পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষণা মুগ্ধ চোখে প্রকৃতি দেখছে, ভিম ক্ষণাকে সায় দিচ্ছে! ভিমের সাইজ সব দিক থেকেই ছোটো শুধু জুতা জোড়া বড়। সেই বড় ও উচু জুতা পরে উঁকিঝুঁকি মেরেও লম্বায় ক্ষণার সমান হতে পারছে না সে কিন্তু প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। শেষমেশ সে চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে ক্ষণাকে বললো,বসে বসেই প্রকৃতির সৌন্দর্য কিন্তু ভালো উপভোগ করা যায়!
ক্ষণা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললো, দিদি! দিদি! দেখো নদীর ধারে কী সুন্দর কাশফুল!
ভিম বোধকরি কাশফুল দেখার জন্য একটু বেশিই উঁকি দিয়েছিলো। ফলাফলও পেলো হাতেনাতে। পা পিছলে ভরা নদীতে ঝপাৎ করে পড়ে গেলো।
আমি ও অর্পিতা বৌদি অনেক ধস্তাধস্তি করে ভিমকে নদী থেকে নৌকায় তুললাম। জলটল খেয়ে ভিম এসে ভেজা কাপড়ে নৌকায় বসলো। ভিমের বাম হাতে এক পাটি জুতা, অন্য পাটি নদীর স্রোতে ভেসে গেছে। অনেক চেষ্টা করে সে কেবল তার বাবার একপাটি জুতা রক্ষা করতে পেরেছে।
সেই থেকে ক্ষণা হাসছে, ক্ষণার হাসি আর কিছুতেই থামছেই না! মেয়েটা এভাবে হাসলে আমার শরীরে যে এক ধরনের শিহরণ অনুভূত হয়, সেই প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম।
সেদিন সাত সকালে মা পূজো দিতে গিয়েছে মন্দিরে, বাবা বাড়ি নেই। আমি সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে দুটো টান দিয়েছি মাত্র। এর মধ্যেই কোথা থেকে যেন ক্ষণা এসে দাঁড়িয়েছে আমার পেছনে। তারপর একটু শাসনের সুরেই বললো,
-উপল বাবু Smoking is injurious to health. আমি মুহূর্তেই সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জবাব দিলাম,
– খাবেন না যেন!
– মস্করা হচ্ছে?
– করা যায় তো একটু একটু আপনার সাথে।
– তা যায়। খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠেন দেখছি।
– রাতে না ঘুমালেও কিন্তু সকাল হয়।
– না ঘুমিয়ে কী করেন শুনি?
– চোখ লাল করি। এই যে দেখুন চোখ দুটো কত লাল আমার?
– যা! পাজি কোথাকার!
ক্ষণা কিছু না বলেই চলে গেলো আবার।
ক্ষণা কেন এলো, কেন চলে গেলো ঘণ্টাখানেক মাথা চুলকিয়েও কোন হেতু খুঁজে পেলাম না।
নিতাইয়ের মুদির দোকানের সামনের মাচালে ভিম দেখি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমাকে দেখতে পেয়ে ভিম যেন আরও একটু মিইয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম, তোর হয়েছেটা কী?
ভিম জানালো, ওর বাবার জুতা হারানোর পর থেকে ওকে বাড়িতে এক বেলা করে খেতে দিচ্ছে আবার ক্ষণার সামনে ইজ্জতটাও গেলো। মন ভালো নেই ভিমের!
মন কি আমারও ভালো আছে? আজকাল মনের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। কখন ক্ষণার সাথে দেখা হবে সেই আশায় বড় উদগ্রীব হয়ে থাকে।
তারপর দুই দিন ছটফট করে কাটালাম। ক্ষণার দেখা নেই। এরমধ্যে বিমলের সাথে একবার দেখা হয়েছিল অবশ্য, সংকোচে জিজ্ঞেস করতে পারিনি ক্ষণার কথা। সেদিন পড়ন্ত বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে বুড়াই নদীর পাড়ে এসেই দেখতে পেলাম ক্ষণাকে। মুহূর্তেই হৃদকম্পন বেড়ে গেলো আমার। ক্ষণা আকাশি রঙের শাড়ি পরে নদীর ধারে একাকী কাশফুল ছিঁড়ছে। বললাম,
– কেমন আপনি? হঠাৎ হঠাৎ গা ঢাকা দেন।
ক্ষণা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
– মনে মনে খুঁজেছিলেন বুঝি?
প্রত্যুত্তরে কী বলা যায় ভেবে পেলাম না। তারপর দুজনেই চুপচাপ নদীর কাছে এসে দাঁড়ালাম, স্বচ্ছ জলের ওপর আমাদের প্রতিবিম্ব! ঢেউ এসে দোলা দিচ্ছিল দুটি ছায়ামূর্তিকে।
ক্ষণা নীরবতা ভেঙে কিছুটা ভারী গলায় বললো,
– অনেকদিন হলো। কাল চলে যাচ্ছি উপল বাবু।
– গেলেই বা কী? মা বলেছে বয়স ত্রিশ হওয়ার আগে কাউকে ধরে রাখার সাধ্য নেই আমার।
ক্ষণা হেসে ফেললো। তারপর বললো,
– সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু তাই বলে হাত ধরারও কি উপায় নেই?
কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, বিকেলে বাজার থেকে জিলাপি খেয়ে এসেছি। হাত আঠালো হয়ে আছে এখনও। দাঁড়ান নদীর জলে হাতটা ধুয়ে নিই আগে।
ক্ষণা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো আমার কাঁধে!