সময় মধ্যরাত ১ বেজে ৩৪ মি আমি একা। হাতে একটা নীল রঙের ডায়েরি। সবাই বলে কস্টের রঙ নাকি নীল।
তাই যখন কোন কস্টের গল্প মাথায় আসে তখন এই ডায়েরীতেই লিখি। বাইরে ঝির ঝিরিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। এই সময়টায় এক কাপ চা হলে যা জমত না।
পুরো ফ্লাট ফাকা। আমি ছাড়া সবাই পরিক্ষা দিয়েই বাড়ীর দিকে ছুটছে। আমি কাল যাব।
আজ রান্নাও বন্ধ ছিল তাই নিজেই ডিম ভেজে আর খিচুড়ি দিয়ে পেটের দায় সারলাম।
মজার কথা হল এক রাতের বেলা আমাদের রুমের সবার মাথার নীচের বালিশ ব্যালকনিতে বিচ্ছিন্ন ভাবে পাওয়া গিয়ে ছিল।
এটা কোন মানুসের কান্ড নয় সেটা পরে জানা গেছে। আমি অবশ্য ভুতে ভয় পাই না। অপেক্ষায় আছি।
যদি তাহারা একবার দেখা দিত, এক চটকানিতে মুখের ৩৩ টা দাত ফেলে দিতাম।
কারন বালিশের বদলে যদি ব্যাটা বজ্জাত ভুতের নজর আমার নিরপরাধ লুঙ্গির দিকে যায়! তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ।
তাই আগে থেকেই ভুতেদের সাবধান করতাম। অবশ্য এখন পর্জন্ত তারা ভয়ে আমার সামনে পরে নি! অনেক কথা বলে ফেললাম।
তাহলে গল্পটা শুরু করা যাক।…..
*****
গল্পের প্রধান চরিত্র তানভির আহমেদ সকাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র। ছেলেটার সব ছিল।
কিছুদিন যাবত বাবাকে হারিয়েছে , হারিয়েছে তার প্রিয় আরেকজনকে মানুষ কে। বন্ধুদের সাথে সেই পুরনো আড্ডা কবেই হারিয়ে গেছে।
আজ তার পৃথিবী আলাদা। সে পৃথিবীর যুদ্ধক্ষেত্রে সে একাই যোদ্ধা ।
–
১ম অংশ
১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকাল ঢাবিতে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স এ চান্স পেয়েছে। । সেদিন খুব সকাল । কুয়াশা পড়ছিল ।
তানভির আজ প্রথম ক্যাম্পাসটা ঘুরতে বেড়িয়েছে তার বন্ধু সোহানের সঙ্গে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটা একটু বেশ’ই বড় ।
আচমকা একটা মেয়ে ওদের পাঁশ দিয়ে চলে যায়। ভার্সিটিতে মেয়ের অভাব নেই । কিন্তু তানভীরের মনে হল মেয়েটা সবার থেকে আলাদা।
মেয়েটার চুলে বিন্দু বিন্দু কুয়াশা জমেছে আর সূর্যের সামান্য আলোয় সে জল কনা গুলো জল জল করে জলছে। তখনও ভোরের লাল আভা।
ঠিক যেন কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার বনলতা সেন। “চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিশার দিশা, মুখে তার স্রাবস্তির কারুকার্য ” ।
–
তানভীরের ভাষ্যে কথোপকথন শুরু………
কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটি বনলতার মত হাওয়া হয়ে গেল। আচমকা মেয়েটা আবার তার বান্ধবীর সাথে এদিকে আসল। কিছু যেন খুজছে।
সোহানের মেয়েদের প্রতি একটু টান আছে। মেয়ে দুটোর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল ।
–
– এক্সকিউজ মি! আপনারা কি কিছু খুঁজছেন?
‘
মেয়ে- জী , আসলে আমার বন্ধু নেহার ফোণাটা হাত থেকে পড়ে গেছে এখানে কোথাও। ।
–
আমি সোহানকে বলালাম এখনও লোকজন কম। এভেবে খুজতে গেলে লোকের সংখ্যা বেরে যাবে তখন আর ফোনটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তুই সামনে যা আমি পিছনে আপনারা একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে যান। তাই হল। ফোনটা অবশেষে আমিই খুজে পেলাম।
মনে হল যেন বনলতার সাথে প্রেমের প্রথম পদক্ষেপ সম্পন্ন করিলাম। আমার সাফল্যে সোহানের মন ক্ষুন্ন হইল। আমি ইহাতে বড়ই মজা লইলাম।
–
পরদিন ক্লাসে উপস্থিত হয়েই দেখি মেয়েটা আমার সামনের ব্রেঞ্চে। মেঘ না চাইতেই জল। এরপর আমরা বন্ধু হইলাম।
আর তার বন্ধুত্বটা ছিল অন্য সিস্টেমের। আমি একটু অলস টাইপের ছিলাম। সব কিছুতেই দেরি হত।
আর আমার বান্ধুবি নেহা সঠিক সময়ের বহু পূর্বেই সে কাজের সম্বন্ধে ফোনে আমাকে অবহিত করিত।
যেমন ধরেন নোট, লেকচার, অরিয়েন্টেশন, সব। তাহার কলের তারনায় আমি একটু ঠিক ভাবে ঘুম পর্যন্ত পারতে পারতাম না।
তার জন্যই আমি মেধাবিতে পরিনত হয়েছিলাম। যেদিন আমাদের প্রথম ইয়ারের রেজাল্ট দিল। আমার রেজাল্ট খুব ভাল হয়েছিল।
সেই খুশির সাহসেই নেহাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়া বসিলাম কারন আমার ভাল ফলাফলের জন্যও নেহার অবদানই বেশই ছিল।
নেহাই সাহসাই তাহা কবুল করিয়া রইলো। আমাদের প্রেম চলিতে লাগিল। ।
–
দ্বিতীয় অংশ ।
–
ঈদের ছুটিতে বাবা আর আমি বাড়ি যাচ্ছিলাম। বাবা সাভারে চাকুরী করতেন। বাবা আমাকে তার জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসতেন।
আমি যে এতো বড় হয়েছি তবু বাবা আমাকে ছোট শিশুর মত আগলিয়ে রাখতেন।
আর বাবার ভালবাসার প্রমান সেদিন বাবা তার জীবন দিয়ে প্রমান করলেন!
আমাদের বাসটা যখন টাঙ্গাইল ছাড়ল আচমকা বাসটা একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে খালের দিকে কাত হল।
বাবা আমাকে জোর করেই জানালা দিয়ে বের করে দিলেন কিন্তু বাবা আর বেরুতে পারেননি। সেদিন আমি আমার প্রিয় বাবাকে হারিয়েছি।
আমি বেড়িয়েছিলাম ঠিকি কিন্তু বাসটা গড়ানোর সময় আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়।
এরপর আমার বা’পা কেটে ফেলতে হয়েছিলো। আমার সঙ্গী হল একটা ক্রেস ।
–
তৃতীয় অংশ
–
ক্যাম্পাসে যেদিন গেলাম নেহা আমার অবস্থা দেখে খুব কেঁদেছিল। কিছুদিন আর ভার্সিটিতে আসে নি।
ওর ফোনে বহুবার কল দিয়েছি কিন্তু বন্ধ ছিল। তারপর একদিন ও ভার্সিটিতে এলো কিন্তু আমার সঙ্গে আর কথা বলে নি।
দিন পনের পর, ক্যাম্পাসে একটা স্মার্ট ছেলের বাইকের পেছনে আরোহী হিসাবে ওকে দেখলাম। ছেলেটা বুয়েটে পড়ে।
আমি এখন খুব খুশি।আমার চোখে আনন্দ এই ভাবে যে তাকে একজন পা হারা মানুষের প্রেমিকা হতে হয় নি।
আমি এখনও আরও ভালভাবে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার বাবার ত্যাগ’ টাকে সার্থক করতে হবে ।
আমার মায়ের বিধবার বেশ হয়তো আমার কারনেই। নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না। আর অপেক্ষায় আছি কবে নেহার বিয়ের দাওয়াত পাব !
ওকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন এই কাঁচা হাতে একটা কবিতা লিখেছিলাম সেটা আজও আমার বুকপকেটে রাখি।
ভাল থেকো নেহা, আমার অন্য পৃথিবীর গল্পের পাতা ফুরিয়েছে।
……
ছেড়া পাতার কবিতাটি আজো বুক পকেটে যত্ন করে রেখেছি, তোমায় শোনাবো বলে ।
.
তোমার দেয়া কলমটার কালি কবেই ফুরিয়ে গেছে তবু আজো সেটাকে আজো আগলে রেখেছি,
একটা নূতন কবিতা লিখব বলে ………
.
মনে পরে……
সেই কুয়াশা পরা ভোর?
তুমি আর আমি বসে ছিলাম সবুজ ঘাসের উপর ……
আর লিখছিলাম নুতন একটা সকালের কবিতা,
যেটা তুমি আর আমি মিলে শেষ করার কথা ছিল ।
.
তারপর,
কত শীতের ভোঁর পেরিয়েছে,
তুমি আর আসো নি ।
.
সবাই বলে তুমি নাকি হাজার বছরের জন্য ঘুমিয়েছো……
আমি বিশ্বাস করিনি….।
.
তাইতো ……
এখনও কুয়াশা পড়া শীতের ভোরে-
আমি বসে থাকি,
তুমি আসবে বলে…।।
.
শেষ অংশ
.
সেই তানভীর আজ আজ এখন বি সি এস ক্যাডার। পদটা অজানাই থাক।
আর মেয়েটা ওই নেতা মার্কা ছেলেটার সাথে বছরখানেক পর পালিয়ে গিয়েছিল। কারন মেয়েটা
যে নেতা মার্কা ছেলের সাথে পালিয়েছিল সেই ছেলেটা খুব বেশি ভাল ছিল না। তাই মেয়েটার পরিবার রাজী হচ্ছিল না।
মেয়েটার পৃথিবী এখন আলাদা। তাই তার গল্পটাও আলাদা।