আজ আবিদের মন খারাপ।আম্মু তাকে বকেছে।পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করার কারনে।চতুর্থ শ্রেণি থেকে এবার সে পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছে। আম্মু বকা দেবার কারনে রাগ করে ছাদে এসে দাড়িয়ে আছে।একটু পর তার পাশে তার বয়সী একটা মেয়েহাতে ক্যাটবেরি চকলেট নিয়ে তার পাশে এসে দাড়ায়।মেয়ের পরিবার তাদের বাসায় নতুন এসেছে।।
মেয়েটা আবিদের পাশে এসেঃ-খাবে? না। মন খারাপ।হ্যা। আম্মু বকেছে। কেন? পরিক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তাই। কোন ক্লাসে পড় তুমি? এবার পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছি। তুমি? আমিও এবার পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছি।নাম কি তোমার? আবিদ।তোমার? আরশি।বন্ধু হতে পারি আমরা দুজন? আচ্ছা। তাহলে নাও ক্যাটবেরি খাও। আমি অন্যের দেয়া কিছু খাই না। এইমাত্র না বন্ধুত্ব করলা !! বন্ধু কিছু দিলে খেতে হয়। তাহলে দাও।।
একটু পর আরশি, এই কি করছ এইসব? কেন? কি করছি? পুরোটা খেয়ে ফেলছ কেন? তুমি না আমাকে দিলা। তাই বলে পুরোটা ??!! আমাকে একটু দাও। না, আমি দিব না।আমি পুরোটা খেয়ে ফেলব। এই বলে আবিদ দৌড় দিল।আরশি আবিদের পিছুপিছু ছুটল। ক্যাটবেরি চকলেটের মাধ্যমে শুরু হয় তাদের বন্ধুত্বের শুভ সূচনা। এভাবে চলতে থাকে তাদের বন্ধুত্বের দিনগুলি।তার সব কিছু ভাগাভাগি করে খেত।এমনকি যদি কেউ এক টাকার চকলেটো খেত তবে সেটাও তারা ভাগাভাগি করে খেত। আরশিকে তার আব্বু আবিদের স্কুলে ভর্তি করে দেয়।দুজন একসাথে স্কুলে আসা যাওয়া করত। তাদের বন্ধুত্বের ফলে দুই পরিবারের মধ্যে একটা আসা- যাওয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
দেখতে দেখতে তাদের বন্ধুত্বের তিনবছর পার হয়ে গেল।এখন তারা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।আগামীকাল আরশির পরিবার এ বাসা ছেড়ে চলে যাবে কারন আরশির বাবা সরকারি চাকুরীজীবী।ওনার বদলি হয়ে গেছে।এখন তারা অন্য শহরে চলে যাবে। যাওয়ার আগের দিন, কাল চলে যাচ্ছ তাই না ? হ্যা। সেখানে গিয়ে নতুন বন্ধু পেয়ে ভুলে যাব আমায়? মেয়েটা কোন উওর না দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।যাবার সময় একটা চিঠি দিয়েছিল আবিদকে যাতে কাঁচাপাঁকা হাতের ছোঁয়ায় লেখা ছিল “বন্ধুত্বের বন্ধন কখনই ভুলা কিংবা ছিন্ন করা যায় না।” আরশি চলে যাবার পর আবিদের একা থাকতে খুব কষ্ট হত।প্রত্যেকটা সময় আরশির শূন্যতা অনুভব করত সে কিন্তু একটা সময় বাস্তবতাকে মানিয়ে নেয় আবিদ। এভাবে স্কুলে-কলেজের গন্ডি পার করে আবিদ এখন অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্র।এত বছরে আরশিকে অনেকটা ভুলে গেছে প্রায়। ভার্সিটির ক্লাস,বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা।এসব করতে করতে আরশির কথা এখন আর তেমন মনে পড়ে না।আরশি চলে যাবার পর একদিন তাদের বাসায় এসেছিল কিন্তু আবিদ ক্লাসে থাকার কারনে তাকে দেখতে পারেনি।
রাত ১২টা।পড়ালেখা শেষ করে সবেমাত্র ফেসবুকে আসল আবিদ।কলেজে উঠার পর তার এক বন্ধু তাকে একটাফেসবুক আইডি খুলে দেয়।ফেসবুকে ঢুকা মাত্রই চোখে পড়ে “অভিমানী কন্যা” নামে একটা আইডি থেকে রিকুয়েস্ট এসেছে।আবিদ অপরিচিত কাউকে এড করত না,তার উপর মেয়েদের আইডিগুলা ফেক মনে হত।তাই রিকুয়েস্টটা ঝুলিয়ে রাখে।এভাবে পাচঁদিন যাবার পর রাতে আবার যখন পড়া শেষে ফেসবুকে আসে,তখন দেখে “অভিমানী কন্যা” আইডি থেকে মেসেজ এসেছে:-আপনার সমস্যাটা কোথায়? কই? আমার তো কোন সমস্যা নাই। তাহলে আমার রিকুয়েস্টা ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন? আমি অপরিচিত কারো রিকুয়েস্ট এক্সসেপ্ট করি না। আচ্ছা আপনি কি সবাইকে সাথে সাথে চিনে ফেলেন নাকি? না।কেন? তাহলে আমায় সাথে সাথে চিনবেন কি করে? আস্তে আস্তে চিনবেন।
একথা শুনার পর একসেপ্ট করে নেয় রিকুয়েস্টটা।মেয়েটা একের পর এক মেসেজ দিত।আবিদ একটা কথার উওর দিলে মেয়েটা তিনটা মেসেজ দিত। কথা বলতে বলতে একসময় তারা ফ্রি হয়ে যায়।আবিদ অনেকবার তার নাম জানতে চেয়েছে কিন্তু নাম জানতে চাইলেই সে এড়িয়ে গেছে। এভাবে কথা বলতে বলতে একদিন মেসেজে, আচ্ছা আবিদ,তুমি কি কাউকে ভালবাস? ভালবাসতাম কিনা জানি না তবে একজনকে ভাললাগত। কে সে? কোথায় থাকে? আমরা একসময় খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। এখন কোথায় তা জানি না।। সেও কি তোমাকে ভালবাসত? জানার সুযোগ পাইনি। তুমি যাকে ভালবাসতে সেটা কি আরশি?
মেয়েটার এমন উওর দেখে আবিদ চমকে যায় কারন তার এই কথা সে ছাড়া আর কারো জানার কথা না।তাহলে এই মেয়েটা জানল কিভাবে?এসব ভাবতে ভাবতে পাশে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠে।হাতে নিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার।রিসিভ করতে ওপাশ থেকে, কেমন আছ? ভাল কিন্তু আপনি কে? আমি “অভিমানী কথা” এবং আমিই আরশি। তু….মি।না ইয়ে মানে,আমার ফোন নাম্বার এবং ফেসবুক আইডি পেলেকোথায়? কয়েকদিন আগে তোমার বাসার ফোন নাম্বার খুজে পেয়েছি।ফোন করার পর তোমার বোন রিসিভ করে।তার কাছ থেকে তোমার সব তথ্য নিয়েছি। তাহলে এত দিন পরিচয় গোপন করেছ কেন? তোমার মনের কথাটা জানার জন্য। আমারটা জানতে পারলে তোমারটা বল। কি বলব? ফাজলামো করবে না।না হলে এই ফোন রাখছি। এই না না বলছি। বল। আমিও তোমাকে ভালবাসি।
শুরু হয় তাদের ভালবাসার নতুন অধ্যায়।সেই ছোটবেলার বন্ধুটা আজ ভালবাসার মানুষে পরিনত হয়েছে।আরশিকে ফিরে পেয়ে আবিদ খুব খুশি হয় তাও আবার ভালবাসার মানুষ হিসেবে। এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল তিনটি বছর।তারা দুজন অর্নাস শেষ করেছে।আবিদ চাকরিতে জয়েন করে আর অন্যদিকে আরশিকে বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাপ দেয়া হয়।আরশি ব্যাপারটা আবিদকে জানায়।আবিদ তাদের ভালবাসার কথা তার আব্বু- আম্মুকে জানায়। ছোটবেলা থেকে আবিদের আব্বু-আম্মু সব ব্যাপারে তাকে হেল্প করে এসেছে।আবিদের আব্বু-আম্মু আরশিদের বাড়ি যায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।দুই পরিবারের সম্মতি সাপেক্ষে তাদের বিয়ে ঠিক করা হয় কিন্তু সেটা একবছর পর।
এই একবছরের ভিতর আরশির পরিবার আবার ঢাকায় চলে আসে।দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে।আর মাত্র পনেরদিন বাকি বিয়ের।একদিন আরশি মার্কেট গেল কেনাকাটার জন্য।রিক্সা করে বাসায় ফিরছিল।হঠাৎ পিছন থেকে এক বাসের ধাক্কায় রাস্তায় পরে যায় এবং তার একটা পায়ের উপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যায়।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।অপারেশন করে তার একটা পা কেটে ফেলা হয়। ঠিক সময়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়নি।আরশির সুস্থ হতে প্রায় পাচঁ মাস সময় লাগে।এই সময়ে আরশি কেমন জানি আস্তে আস্তে আবিদের কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছে কিন্তু আবিদ দুরে চলে যাবার কারনটা খুজে পাচ্ছে না।কেন সে এমন করছে?
আবিদ – তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন?
আরশি – কেমন করছি? আমার কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছ কেন? তোমাকে যত তাড়াতাড়ি ভুলা যায় ততই ভাল। কেন? কারন তুমি এখন আমাকে বিয়ে করবে না। কেন করব না বিয়ে? এখন আমার একটা পা নেই।যা তোমার পরিবার কোনদিন মেনে নিবে না। তাই তো।আমি খেয়ালি করিনি তোমার পা নেই।
কথাটা বলেই আবিদ চলে আসে।আবিদ চলে আসার পর অনেক কেদেঁছিল আরশি কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছিল। রাতে আবিদ তার আব্বু-আম্মুকে আবার রাজি করায় তাদের বিয়ের ব্যাপারে।প্রথমে তারা দ্বিমত পোষণ করলেও পরে এটা ভেবে রাজি হয় যেখানে আবিদ খুশি হবে,তাকে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে পারবে সেখানে তারা বাধা হয়ে দাড়াবে কেন? পরেরদিন কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই আরশিকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসে।
রাত ১১.১৯ মিনিট।আরশি বড় ঘোমটা দিয়ে খাটের উপর বসে আছে।একটু পর আবিদের আগমন।আবিদ আসার পর পরই আরশি কাদতে লাগল। কাদঁছ কেন? সেদিনের ঘটনার জন্য সরি। কোনদিনের জন্য? আরে ঔদিন।যেদিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম। আরে এর জন্য কাদতে হবে।নাও চকলেট খাও (পকেট থেকে চকলেট বের করে আরশির হাতে দেয়) আজ সেই প্রথম দিনের মত কেউ পুরোটা খেয়ে ফেলেনি।দুজন ভাগ করে খায়।
আসলে ভালবাসতে হলে মনকে ভালবাসা দরকার উপরের সৌন্দর্যটাকে নয় কিন্তু এখন বর্তমানে দেখা যায় কেউ সবাই উপরের সৌন্দর্যটাকে ভালবাসে, মনকে কেউ ভালবাসে না।শারিরিক সৌন্দর্য্যের উপরে যে একটা মনোদিক দিয়ে সৌন্দর্য্যের ছাপ আছে তা ভুলে গেলে কিন্তু খারাপ।
সমাপ্ত