আমার বউয়ের নাম মিনু।আজ প্রায় সাতমাস হতে চলেছে আমাদের বিয়ের। আমাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো। মেয়েটা ওর নামের মতই সাধাসিধা। সবসময় শাড়ী পরে,কোন হট্টগোলে নেই,বেশিকিছু আবদার করেনা,ঘরের যাবতীয় কাজ বলতে গেলে একাই করে।আমি ব্যাস্ত মানুষ।সারাদিন অফিস করি।দুপুরে মিনুর ফোন বা টেক্সট না পেলে আমার খাওয়ার কথা মনে থাকেনা।
আজ সম্ভবত অফিসে যেতে একটু লেট হয়ে গেল।তারাতারি করে টাই বাঁধতে বাঁধতে টেবিলে খেতে বসলাম।মিনু টাই’টা টেনে ঠিক করে দিলো।ও আমি খেতে বসলে পাশের চেয়ারে বসে থাকে।যা লাগে প্লেটে তুলে দেয়,কারেন্ট না থাকলে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে। পেটে প্রচুর খিদেও লেগেছে।রাতে খেতে পারিনি ঠিকমত।এই খিদে নিয়ে যখন ভাতের লোকমা মুখে দিলাম,দিয়েই মুখ কুঁচকে গেল।পেপে আর রুইমাছের তরকারী।তরকারীতে একটুও লবণ দেয়নি মিনু! মিনু কিছু বুঝতে পারলোনা।চোখের ইশারায় জানতে চাইলো,-কি হয়েছে? আমি কিছু হয়নি বলে লবণের পাত্র থেকে এক্সট্রা লবণ প্লেটে নিয়ে খেতে শুরু করলাম।খেতে একটু বিস্বাদ লাগছিলো বটে!তাও চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম।বাসা থেকে বেরোনোর সময় মিনু বুকে ফুঁ দিয়ে দিল।এরকমটা ও রোজই করে। অফিসে প্রচুর কাজ পড়ে আছে।বসের প্রিয়পাত্র হওয়াটাও একটা ঝামেলার। যেকোন কিছুতে ওনার আমাকে না হলে চলেইনা।
সবকিছু সামলে বাসায় ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল।মিনু মায়ের রুমে ছিলো তখন।আমি বাসায় ফিরেছি দেখে তারাতারি করে আমাদের রুমে এলো।আমি মিনুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।কিছু বললাম না।মিনু আবার পাশের রুমে গেল।ফিরলো হাতে একটা খাতা আর কলম নিয়ে।তখন পা থেকে মোজা খুলছি।মিনু কাগজে কিছু একটা লিখে কাগজটা আমার দিকে না তাকিয়েই বাড়িয়ে দিল।কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম সেখানে লেখা,”সকালে আমি ভূলে তরকারীতে লবণ দেইনি।তুমি কিছু বললেনা কেন?
আমি বললাম,”ধুর বোকা!তুমিতো প্রতিদিনই ঠিকঠাক রান্না করো। একদিন ভূল হতেই পারে।কোন ব্যাপার না। মিনু আবার কাগজে কিছু একটা লিখে কাগজটা বাড়িয়ে দিল।কাগজে লেখা,”আমি সকালে খুব তারাহুরা রান্না করেছিলাম।লবণের কথাটা মনেই ছিলোনা।তুমিতো গতরাতেও ঠিকমত খাওনি।আমার আর এমন ভূল হবেনা।” আমি তখন তাকালাম ওরদিকে।ও মুখ কালো করে বসে আছে।আমি বাঁহাতে ওর গালটা ছুঁয়ে বললাম মিনু! ও তখন তাকাল আমার দিকে।আমি আবার বললাম,”আমি অফিসে যাওয়ার সময় তুমি রোজ আমার টাই বেঁধে দাও,কোটটা গায়ে চড়িয়ে দাও।
আমি কয়দিন তোমার শাড়ী ঠিক করে দিয়েছি?আমি অফিসে গেলে তুমি রোজ দুপুরবেলা ফোন দিয়ে টেক্সট দিয়ে আমার খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দাও।আমি কয়দিন ফোন করে তুমি খেয়েছো কিনা জিজ্ঞেস করেছি?অনেক সময় রাতে ফিরে টায়ার্ড থাকলে সেদিন আমি খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি।তোমাকে স্পর্শ করার সময়টাও হয়না।অথচ তখনও দেখি তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছ।আমি কয়দিন তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি?
তুমি রোজ রান্না করো আমার জন্য,আমাদের সবার জন্য।আমি কয়দিন তোমাকে রান্না করে খাইয়েছি?তুমি ঠিক সময়মত মায়ের পান ঠিক করে দাও।বাবাকে নিয়ম করে ওষুধ খাওয়াও।ঘরের যাবতীয় কাজ করো। কখনো তো কোন অনিয়ম হয়নি।তোমার প্রতি আমি অনেক অনিয়ম করার পরেও তুমি কোন অভিযোগ করোনি।আর এতদিন পর তোমার ছোট্ট একটা ভূল নিয়ে যদি আমি চিল্লাচিল্লি করি,কিংবা রাগ করি তাহলে সেটা কখনোই পুরোষোচিত কাজের মধ্যে পড়েনা।দেখো মিনু!আমাদের একসাথে থাকার মাত্র সাতমাস হলো।আরো কতগুলা দিন একসাথে থাকতে হবে।
আমাদের অনেকগুলা বাবু হবে,তারা বড় হবে,আমরা বুড়ো হবো,আমাদের দাঁত পড়ে যাবে।সেখানে যদি তুমি তরকারীতে একদিন লবণ কেন দাওনি সেই ভূলটাকে আমি ভূল ধরে বসে থাকি তাহলে সংসার চলবে? মিনু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।ওর চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে আমার কাঁধ।নিঃশব্দ কান্না ওর। আমি জানি চাইলেও মিনু শব্দ করে কান্না করতে পারবেনা।আল্লাহ ওকে কথা বলার ক্ষমতা দেয়নি।মাঝেমাঝে সৃষ্টিকর্তার কিছু নিষ্ঠুরতায় অবাক হতে হয়।এত লক্ষী মেয়েটাকে কথা বলার ক্ষমতাটা দিলে কি এমন ক্ষতি হতো? থাক এসব!আপাতত মিনু কান্না করুক।ওর কান্না আমি থামাবোনা।কারন কান্নাটা থামলেই মিনু আমাকে ছেড়ে দিবে।আমি ওর শক্ত করে জড়িয়ে ধরাটা মিস করতে চাইছিনা। এভাবেই ভালোবাসাগুলা নিয়মিত বেঁচে থাকুক।ছাড়াছাড়ি না হোক কোন সম্পর্কের।ছোটছোট ভূলগুলা ঢাকা পড়ে যাক ভালোবাসায় তৈরি দেয়ালে।
রোদে পোড়া এই পৃথিবীর বুকে কিছুক্ষণের জন্য ভালোবাসার বৃষ্টি হলে ক্ষতি কি? স্বামী স্ত্রীর সংসারে ছোটখাটো ভুল হতে পারে সেবোল কে ধরে রেখে ঝগড়া করা একদম ঠিক না একটা স্ত্রী চাই তার স্বামীকে সব দিয়ে সর্ব দিক দিয়ে কাজ করে হোক যেভাবে হোক সুখে রাখতে আর আমরা তো বাহিরে কাজ করে টাকা উপার্জন করি ঠিক আছে আমরা অনেক কষ্ট করি তার পরেও আপনাকে যদি মাটির চুলায় একদিন তিন বেলা রান্না করতে দেওয়া হয় তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার স্ত্রী কতটুকু কষ্ট করে আপনার পরিবারের জন্য রান্না করা সংসার সামলানো বাচ্চাকাচ্চা বড় করা তাদের দেখাশোনা করা অনেক অবদান রাখে মেয়েরা একটা সংসারে তাই আমাদের উচিত তাদের ছোটখাটো ভুল কে ধরে ঝগড়া না করে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে ভালবেশে বাকি জীবনটা পার করে দেওয়া।