তুমি রবে নিরবে

তুমি রবে নিরবে

নীল: কেমন আছেন ম্যাডাম?

রুহি: লাথি খাবি?

নীল: অন্য কিছু থাকলে নিয়ে নিচে আয়। খুব খুদা লাগছে।

রুহি: তুই কোথায়?

নীল: বেলকুনি দিয়ে দেখ…

রুহি: তুই এতো রাতে এখানে কেনো? কেউ দেখে ফেললে কি হবে?

নীল: নিচে আসবি না করে আমি উপরে যাবো?

রুহি: তুই যে কি

নীল: আচ্ছা, উপরে আসছি।

রুহি: না না, আমি আসছি।

নীল: এইতো আমার মিষ্টি বউ।

রুহি: কে তোর বউ। আর একবার এই কথা বললে উপরে তুলে উসট্টা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো।

নীল: হা হা।

রুহি: আবার হাসে। তোর কি কখনোই লজ্জা হবে না।

নীল: আপন মানুষের কাছে লজ্জা কিসের। যা ফোনটা কেটে দিলো। কিছুক্ষণ পর……

নীল: এতো দেরি হলো কেন?

রুহি: নে খেয়ে নে, তাড়াতাড়ি বিদায় হো।

নীল: ওয়াও, পোলাও। বাসায় ছিলো? ভালো সময়ে এসেছি দেখছি।

রুহি: …..

নীল: পানি কই?

রুহি: নে

নীল: গেলাম রে।

রুহি: সাবধানে যাস ।

নীল যেতে নিলেও ফিরে এলো।

নীল: ওর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলাম। আমার মিষ্টি বউ।

রুহি: তবে রে

নীল: কাল দেখা হবে। বলেই  কোনোমতে ওর কাছ থেকে পালালাম।

রুহি: পাগল একটা। রুহি আর নীল কলেজ লাইফ থেকে ফেন্ড। এখন দুইজনই জব করে। নীলের বাবা গ্রামে থাকে। ওর নিজে হাত পুড়িয়ে রান্না করে খেতে হয়। তাই মাঝে মাঝে হুটহাট রুহির কাছে আসে। যদিও খাওয়াটা মেইন উদ্দেশ্য না, বলতে গেলে রুহি কে দেখতে আসে। পরেরদিন..

রুহি: এতো সকালে আমার অফিসে, তুই অফিসে যাবি না?

নীল: আজ তোর ইন্টারভিউ নিবো।

রুহি: অফিস ছুটি তাই বল।

নীল: না। একটু পরেই যাবো, তোর সাথে দেখা করতে আসলাম।

রুহি: কাল রাতেই না দেখা হলো।

নীল: হুম। কফি খাবি?

রুহি: না এখন আমার কাজ আছে, বিকালে অফিস ছুটির সময় , তোর সময় হলে আসিস।

নীল: ওকে মেডাম।

রুহি: নীল..

নীল: হুম।

রুহি: সাবধানে থাকিস। তোর জন্য সবসময় চিন্তায় থাকি। এতো জব থাকতে কেন যে সাংবাদিক হতে গেলি।

নীল: চিন্তা করিস না, তুই থাকতে আমার কিছু হবে না।

রুহি: ধং করিস না।

নীল: এইতো সত্তিকারের প্রেমিকের মুল্য কেই বা দিলো

রুহি: যা তো। কাজ বাদ দিয়ে তোর সাথে পেচাল পারলে বস অফিস থেকে নট করে দিবে।

নীল: হুম বাই।

রুহি: বাই। বিকেলে….

রুহি: চল।

নীল: তোকে ক্লান্ত লাগছে। চল বাসায় রেখে আসি।

রুহি: কফি?

নীল: একবারে তোর হাতের খাবো। আর একা একা ভালো লাগে না । আংকেল কে বলে আপনারে আমার বাড়ি নিয়ে যাওয়া্র ব্যবস্থা করবো।

রুহি: আইছেরে

নীল:আসবো তো বারাত নিয়ে তোরে বৌ করে নিয়ে যেতে।

রুহি: …

নীল: ওলে, শরম পাইছে রে আমার বউটা

রূহি: কে বললো?

নীল: আমি

রুহি: আমি বাসায় যাবো।

নীল: চল পৌছে দি। কিছুদিন পর আজ নীল আর রুহির বিয়ে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়েটা হয়। আজ দুইটা ভালোবাসার মানুষের মধুচন্দ্রিমার রাত।

নীল: কি হলো এটা।আমি তো জানতাম বিয়ের রাতে বউ বরকে সালাম করে।

রুহি: সালাম লাগবে?

নীল: ওই কি করছিস? লাগছে তো। ছাড় বলছি রুহি।

রুহি: আর লাগবে…

নীল: এই আমার কপালে ছিল, বাসর রাতে বৌ এর মার। যা চলে গেলাম। নীল রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতে গেল। রুহি ওর হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। নিজেও নীলের ওপর পড়লো।

রুহি: রুহি নীলকে একটা কিস করেই উঠে আসতে নিলেই নীল রুহিকে টেনে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়। পরের দিন ওদের জীবনে নতুন সূর্যের উদয় হয়।

রুহি: কোথায় যাচ্ছিস?

নীল: অফিসে যেতেই হবে। রাগ করিস না প্লিজ আমি একটু পরেই চলে আসবো।

রুহি: খেয়ে যা।

নীল: ওকে, সুইট বউ।

রুহি: নীল আর রুহির বৈবাহিক জীবনটা বেশ সুখেই কাটছিলো। এক বছরপর আজ ওদের আজ বিবাহ বার্ষিকী।

নীল: Happy Marriage Anniversary, Jan

রুহি: Happy Marriage Anniversary

নীল : বিকেলে রেডি থাকিস, আজ এক জায়গায় ঘুরতে যাবো ।

রুহি: ওকে । অফিস যাবি এখন?

নীল: হ্যাঁ, আজ আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশন আছে। যার জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছি।

রুহি: okay, best of luck.

নীল: love you bou  Reply পেলাম না , বিকেলে দিতে হবে কিন্তু।

রুহি: আচ্ছা। বিকালে…

রুহি: আমাকে রেডি থাকতে বলে ও এখনো এলো না। আজ আশুক একবার।

নীল: সরি, সরি,সরি। আমি চলে এসেছি।

রুহি: …

নীল: …

রুহি: চল এবার।

নীল রুহির জন্য একটি রোমান্টিক ডিনারের আয়োজন করে।

নীল: কেমন হয়েছে?

রুহি: খুব ভালো।

নীল: কি হলো? তুই কি কান্না করছিস?

রুহি: না, চোখে কি যেন পড়েছে।

নীল: মিথ্যা বলছিস? রুহি নীলকে ধরে কেদে দিল।

রুহি:তুই খুব ভালো নীল। আমার জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া তুই। প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো যাসনা। I love you, love you so much, Nil.

নীল: আরে পাগলি কাদছিস কেনো।।আমি কখনো তোকে ছেড়ে যাবো না। আর তোকে ছাড়া কোথাই যাবো।
দেখ কান্না বন্ধ কর বলছি। আমিও কেদে দিবো কিন্তু।

রুহি: নীল

নীল: একটু হাসেন ম্যাডাম।

রুহি: ….

নীল: একটু

রুহি: …

নীল: ভালোবাসায় ভরপুর নীল রুহির জীবন বেশ ভালই কাটছিলো। ইদানীং নীলকে বেশ গম্ভীর লাগে। রুহি জিঙ্গাসা করলেও কিছু বলে না। নীল ওদের বিবাহ বার্ষিকীর দিনে এক কুখ্যাত সন্তাসিদলের বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ জোগাড় করে। যা ওরা জানতে পেরে নীল কে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। নীল রাজি না হলে, নানা রকম ভাবে ব্র্যকমিল করছে।

রুহি: কি এতো ভাবিস?

নীল: কিছুনা। ঘুমাস নি এখনো?

রুহি: তোকে ছাড়া একা আর ঘুম আসে না।

নীল: Really sweety

রুহি: হুম।

নীল: তাহলে তো আমার বউটাকে ….

রুহি: কি করছিস, নামা আমাকে, পড়ে যাবো তো।

নীল: আমার উপর বিশ্বাস নেই?

রুহি: নিজের থেকেও বেশি।

নীল: তাহলে ভয় পাসনা। তোর এই রোমিও তোর গায়ে একটা আচর ও লাগতে দিবে না ।

রুহি: এইটুকু ভরসা এই পাগলটার উপর আমার আছে। ও হে, কাল অফিসে মিটিং আছে, একটু লেট হতে পারে। তুই খেয়েনিস।

নীল: আচ্ছা । এখন কিছু পাওয়া যাবে?

রুহি: না। একদম না।

নীল: হা হা ।

রুহি: নীল না বলছি কিন্তু।

নীল: ক্রিং ক্রিং….

নীল: কে রে, ফোন করার সময় পেল না।

রুহি: হা হা। দেখ কে।

নীল: ওকে সুইট বউ।

নীল:হ্যালো, কে বলছেন? নীলকে লোকগুলা আবার ভয় দেখায় যে, প্রমাণ গুলো দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নীল ও ভয় পাওয়ার পাত্র না।

নীল: আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। প্রমাণ দিতে হলে কাল কোটেই দিবো। বলেই নীল ফোন কেটে দিলো। পরেরদিন সন্তাসিগুলোর শাস্তি হয়। তিন মাস পরে…

নীলের মা: কথা বল নীল। এমন চুপ করে থাকিস না। এসব ভুলতে হবে বাবা, না হলে তূই বাচবি কী করে। ওগো ( নীলের বাবা) ও কি করে বাচবে এভাবে। কেমন অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

নীল: নীলের কানে শুধু সেই কথাগুলোই ভাসছে তাহলে ভয় পাসনা। তোর এই রোমিও তোর গায়ে একটা আচর ও লাগতে দিবে না।

রুহি: এইটুকু ভরসা এই পাগলটার উপর আমার আছে। তুই খুব ভালো নীল। আমার জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া তুই। প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো যাসনা। I love you, love you so much, Nil.

নীল: আরে পাগলি কাদছিস কেনো।।আমি কখনো তোকে ছেড়ে যাবো না। আর তোকে ছাড়া কোথাই যাবো।

তিন মাস আগের ঘটনা নীল কোট থেকে বাসায় ফিরে আসে। ও রুহির জন্য অপেক্ষা করছে। যদিও রুহি বলেছে আর ওর আসতে লেট হবে।নীল তবুও বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে এই বুঝি ওর সুইট বউটা এলো। এমন সময় ফোন আসে হসপিটাল থেকে। রুহি এক্সিডেন্ট করেছে। নীল হসপিটালে গিয়ে জানতে পারে ঘটনাস্থলেই রুহি মারা যায়। যারা ওকে হাসপাতালে ভর্তি করে, তারা নীলের হাতে একগুচ্ছ গোলাপ দেয়।আর বলে” এই গোলাপগুলো ওনার হাতে ছিলো”। পরে জানা যায় ওই সন্তাসি দলের লোক এক্সিডেন্ট টা করায়, নীলের উপর প্রতিশোধ নিতে।

বর্তমানে নীল নীজেকে প্রায় ঘরবন্ধি করে নিয়েছে। রুহির বলা প্রতিটি কথা ওর কানে বাজে। হিতাহিত ঙ্গেন সে হারিয়েছে। আনমনে সে শুধু একটি কথায় বলে ‘তুমি রবে নিরবে’

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত