লিসা অনেক্ষণ ধরে কোন কথা না বলে চুপ করে বসে আছে।একটু আগেই মেয়েটা প্রচুর কথা বলছিল।শুভর একটু ভালো লাগছে না লিসার এই নিরব হয়ে রাগ করে বসে থাকাটা।
__কি হয়েছে আমার রাজকুমারির?(শুভ)
লিসা নিশ্চুপ হয়ে সবুজ ঘাসের উপর পড়ে থাকা মৃত প্রজাপতিটার দিকে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ করে লিসার রাগের কোন কারণ খুজে পায় না শুভ।সে তো কোন বকাঝকা কিছুই করে নি তবে কেন লিসা এই ভাবে গুমড়া মুখে বসে আছে।
__আমার লিসা রাজকুমারিটার কি হয়েছে গো কথা বলবে না আমার মিষ্টি রাজকুমারি।
__চুপ আমি কারো রাজকুমারি না।একদম কথা বলবা না আমার সাথে।
__আমি কি করছি রাজকুমারি,কি অপরাদ আমার।কেন কথা বলা যাবে না রাজকুমারি?
__কাজটা তুমি একদম ঠিক কর নি?
__কি করছি আমি।
__একদম কথা বলবা না চুপ করে বস থাকো।
এখন দুজনেই নিরব।শুভর মনটাও খারাপ হয়ে যায়।এমনটা তো কোনদিনও লিসা করে নি।তাহলে আজ হঠাৎ করে কেন এই রাগ।সত্যিই কিছু ভালো লাগছে না অনেক্ষণ ধরে এই নিরবতা এখন শেষ করা উচিৎ।
__লিসা আমি এখন বাসায় যাব।
একটু অভিমান করে বলছে।শুভ জানে লিসা থাকে যেতে দিবে না।
__এই লিসা চলে যাচ্ছি আমি।
__যাও।
শুভ আর থামেনি সত্যি চলে যায়।কিছুক্ষণ পর লিসার রাগ কমলে শুভ কথা চিন্তা করে,না ছেলেটার সাথে এমনটা করা ঠিক হয়।না জেনে ভুলটা করছে,জেনে তো আর করে নি।সাথে সাথে শুভকে কল দেয়।শুভ বার বার কল কেটে দেয়।না লিসাও এখন একা একা বসে থাকবে না একটা রিক্সা ডেকে লিসাও বাসায় চলে যায়।’রাতে শুভকে একটা মেসেজ দেয় প্লীজ একটি বারের জন্য হলেও কল দিও।শুভ মেসেজটা দেখে সাথে সাথে লিসাকে কল দেয়।
__হ্যালো লিসা কি বলবে বলো।
__বলব অনেক কিছু তার আগে সরি বলছি।
__সরি কেন।
__তোমার সাথে কাল যা করেছি তার জন্য সরি।
__কেন করেছিলে এমন।আমি কি কোনভাবে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।
__হুম তুমি কষ্ট দিছ আর তা না জেনে।এখন ফোন রাখি কাল সকালে বলব সব।
__ঠিক আছে গুড নাইট।
কি এমন ভুল করেছি তাও না জেনে।অনেক্ষণ চিন্তা করেও কিছুই পায় নি।চিন্তাগুলো ছেড়ে ঘুমিয়ে যায় শুভ।
অতপর সকালে
__তাহলে শুন শুব বলছি তুমি না জেনে কি ভুল করেছিলে।
__হুম বল।
এবার লিসা বলতে শুরু করে।
আমি ভালোবাসি প্রজাপতি।আর কাল তুমি সেই প্রজাপতিটাকে আমার চোখের সামনেই লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেল।তাই একদিকে মন খারাপ অন্যদিকে প্রচন্ড রাগ ছিল তোমার উপর।
যখন আমি ৮ ৯ বছর বয়সের ছিলাম তখন প্রজাপতি খুব
ভালো লাগত আমার।বাবার সাথে বিকাল বেলা প্রতিদিন বাগানে গিয়ে প্রজাপতির পিছনে ছুটতাম।প্রজাপতির সাথে দৌড়াদৌড়ি প্রচন্ড ভালো লাগত আমার।
কিছুদিন পর একদিন আমি প্রচন্ড অসুস্থ্য হয়ে পড়ি।
হাসপাতালে জানালার পাশের কেবিনে ছিলাম আমি।
সকাল বেলা প্রজাপতিটা জানালার পাশে এসে ডানা ঝাপটাচ্ছে।সে এখনও হাসির শব্দটা শুনতে পায়নি।প্রজাপতির ইচ্ছে হচ্ছে জনালাটা ভেঙ্গে ফেলতে,কিন্তু তার তো সেই শক্তি,বিধাতা তাকে সেই শক্তি দেয়।প্রজাপতিটা বার বার ডানা ঝাপটাচ্ছে,কখন শুনবে সে একটু হাসির শব্দ।যখন চোখ খুলল তখন প্রজাপতিটাকে দেখে আমার অনেক ভালো লাগে,নিজের অজান্তেই একটু হাসি চলে আসে ঠুটের কোণে। আমারও ইচ্ছে হচ্ছে তার কাছে ছুটে যেতে। একদিন জানালার একপাশ খুলা ছিল প্রজাপতিটা তার রঙ্গিন ডানা ঝাপটে এসে আমার কাঁধে বসে আমি ভয় পেয়ে উফফ বলে উঠি।আমার পাশে ছিল নার্স সে এসে প্রজাপতিটাকে মেরে ফেলে,প্রজাপতিটা মেঝেতে পরে ডানা ঝাপটে যেন আমাকে বিদায় জানাচ্ছে। বলছে ভালো থেক তুমি,আমার সময় শেষ একটু হাসবে রাজকুমারি,তুমি সুস্থ্য হয়ে আবার সেই বাগানে আমাকে দেখতে আসবে তো,হাজার হাজার প্রজাপতিদের ভিরে আমাকে খুঁজবে তো।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আর পারছি না আমি।বিদায় বন্ধু।
সেই দিন প্রজাপতির কষ্টটা যেন আমার মাঝেই অনুভব করি।চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।
শুভ দখতে পায় লিসার চোখে জল টলমল করছে।এখনি যেন কেদে ফেলবে মেয়েটা।
__এই এই বাবুনি আমার আস তো?
(লিসার হাত ধরে)
__কোথায় যাব।
__চল তোমাকে ফুসকা খাওয়াব।
__আমি খাব না ভালো লাগছে না।
__ঠিক আছে তুমি বস আমি আসছি।
(একটু পর শুভ ফুসকা নিয়ে লিসার পাশে এসে বসে)
__বলছি তো আমি খাব না কেন আনতে গেলে।
__চুপ কোন কথা না হা কর।
__এই তো লক্ষি মেয়ে।দেখিত আরেক বার হা করো।
__বাহরে আমি কি একা একাই সব খাব নাকি।তুমি হা কর তো।
__করছি দাও।
__নাও দিলাম। আবার দেই।
__না না আমি তোমার মতো পেটুক নাকি তুমি খাও।
__কি বললা আমি পেটুক ফেলে দিব কিন্তু সবগুলা।
__ফেলে দাও না কে নিষেধ করল।
__সত্যি দিব কিন্তু সবগুলা তোমার উপরেই দিব।
__এই এই বাবুনি সলিই সলিই।আমার বাবু নি টা অনেক ভাল।
__ইসস রে হইছে আর পাম দিতে হবে না।কান ছাড়।