ভাই-বোনের ভালবাসা

ভাই-বোনের ভালবাসা

~ভাইয়া,ভাইয়া,আমাকে এই অংক টা বুঝিয়ে দিবি??
~না,এখন সময় নাই,,,
~দে,,না,,ভাইয়া,,,প্লিজ,,,,
~বললাম না,সময় নাই,,,যা ফোট,,,আর কোচিং থেকে কি বুঝে আসিস যে পারিস না!
~এই অংকটা কোচিং এ যেদিন করাইছিলো আমি সেদিন যাই নি,,
~কেন??জাসনি কেন??
~তোর মনে নাই,,সেদিন বৃষ্টি হইছিলো,,,,,
~ছাতা ছিল না??
~ছিলো,,,কিন্তু আম্মু যেতে মানা করছিলো,,,,,
~ওওও,,,,যা,,, পরে এসে বুঝাই দিবানি,,,,
~এখন দে,,না ভাইয়া,,,,কাল কোচিং এ আমার পরিক্ষা,,,,,
~বললাম না,,,,পরে,,,যা ফোট,,,,,
:
বোনটাকে অংকটা না বুঝিয়ে দিয়েই বাইরে চলে গেলাম,,,,
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে,,,আবার বাসায় ফিরে আসলাম।
:
এসেই দেখি বোনটা অংক করতেছে,,,,
~ভাইয়া,,বুঝাই দিবি না??
~কি??
~আরে তোর দেখি কিছুই মনে থাকে না,,সেই অংক টা,,,,
~ওওও,,,আচ্ছা,,পরে,,,এখন মাথা ব্যথা করছে,,,,
~আমি যখন কিছু বুঝাই দিতে বলি তখন’ই তোর না বুঝাই দেওয়ার বাহানা শুরু হয়ে যায়,,,
~নারে বোন সত্যিই মাথা ব্যথা করছে,,,,
~তুই সিগারেট খাইছিস তাই না!!
~মারবানি কিন্তু!সিগারেট আবার কি জিনিষ?
~ইস,,,ঢং কতো,,,আমি জানি,তুই সিগারেট খাইছিস,,,কারণ, যতবার’ই তুই সিগারেট খাস,ততবার’ই তোর মাথা ব্যথা হয়,,,,
~মারবানি কিন্তু!চুপ,,
বোনটাকে একটা ঝাড়ি দিয়ে রুমে গিয়ে ঘুমোতে লাগলাম,,,,,
:
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে,,,ফ্রিজ খুলে দেখতে পেলাম,আমার সেই কিনে রাখা টাইগার নেই,,,,,
নিশ্চই ফাহমিদা খাইছে,,,,
~ওই ফাহমিদা,,,,
~কি??
~আমার টাইগার কোথায়??
~ফেলাই দিছি,,,
~কেন??ফেলাইছিস কেন???
~ছিঃ তুই ওইগুলো খাস কিভাবে,,,ঔষধ এর গন্ধ,,,,তাই ফেলাই দিছি,,,,
~তোরে তো আজকে মেরেই ফেলবো,,,,
এই বলেই বোনটাকে ঠাস করে একটা চর দিলাম,,,,,,
বোনটা কাঁদতে কাঁদতে বললো,”যেদিন আমি চলে যাব সেদিন বুঝবি,বোন কাকে বলে!!”
~হ,,,তুই যা তো,,,, এক্ষুনি ফোট,,,
:
রাগ হয়ে বোনটা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো,,,,
:
সন্ধ্যার সময় বোনটাকে দেখলাম,সকালের সেই অংকটা একা একা বুঝতে চেষ্টা করছে,,,কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে,,,না,,,,
তাই আমি বললাম,
~কিরে এখনো বুঝিস নাই??
~তুই কি বুঝাই দিছিস নাকি যে বুঝবো!
~এদিকে আয়,,আমি বুঝাই দিচ্ছি,,,,
~প্রথমবার না বুঝলে মারবি নাতো!
~না,মারবো না,,,,
~সত্যি তো?
~আরে বললাম তো মারবো না,,,
আসলে আমার মাথাটা একটু সহজেই গরম হয়ে যায়,,,,একবার বুঝানোর পর যদি না বোঝে,তাহলে ওমনি দিই এক চর,,
:
অতঃপর বোনটাকে অংকটা বুঝিয়ে দিলাম,,,কিন্তু অবাক কান্ড,যাকে দুই-তিন বার বুঝিয়ে দিতে হয়,আজ তাকে একবার বুঝিয়ে দিতেই বুঝে গেলো,,,,,
তাই জিজ্ঞেস করলাম,
~তুই একবারেই এই অংকটা পারলি কিভাবে? তুই তো দুই-তিন বার বুঝানোর পরও বুঝতে পারিস না,,,
~আসলে এই অংকটা আমি আগেই পারতাম,,,
(একটা হাসি দিয়ে)
~তাহলে আবার বুঝাই দিতে বলছিস কেন??
~আসলে আমি দেখছিলাম,আমার ভাইটা আমাকে কতোটা ভালোবাসে,,,,
:
বোনটাকে ঠুনা দিয়েই বাইরে চলে গেলাম,,,
যাওয়ার আগে বোনটা বললো,”ভাইয়া,তুই আসার সময় চিপস নিয়ে আসবি কিন্তু!”
~ইস,,,আমার কাছে টাকা নাই,,,,
~আমি জানি না,,,,আনতেই হবে কিন্তু!!
:
কি আর করার বোনের অর্ডার তাই আনতেই হবে,,,,না হলে তো আবার আমাকে মেরে ভূত বানিয়ে দেবে,,,,
:
চিপস নিয়ে আসার পর,,,,
~আমাকে চিপস দিবি না??
~ইন্না,,দেবো না,,,,
~আমার টাকার তা আমাকেই দিবি না!
~তোর টাকার তো কি হইছে,,,আনছিস তো শুধু আমার জন্যই,,,,
~যাহ্,তোর সাথে আর কথা নাই,,,
এই বলেই মুখটা দুঃখী ভাব করে নিলাম,,,
আমাকে এইভাবে দেখতে পেয়ে বোনটা চিপস দিলো,,,,তাও মাত্র গুনে গুনে ১০ টা আর দেওয়ার আগে বললো,”এই ১০ টার বদলে কালকে আরোও এক প্যাকেট চিপস আনবি কিন্তু!”
:
হুম,,,এই হলো আমার ছোট বোন ফাহমিদা।এইবার ক্লাস থ্রি তে উঠলো,,,,
পাগলিটা চিপস অনেক পছন্দ করে,,,তাই টাকা থাকলে প্রতিদিন’ই চিপস নিয়ে আসি,,,,
এভাবেই চলছিলো, আমাদের ভাই-বোনের দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া,,,,,,
:
17 বছর পর,,,,
আজ আমার পাগলি বোনটা অনেক বড় হয়ে গেছে,,,আজ ওর বিয়ে,,,,,
চারিদিকে প্রচুর হৈচৈ,,,,।সকলে অনেক আনন্দ,,করছে,,,।কিন্তু এতো আনন্দের মাঝেও তিনজনের মুখে হাসি নেই,,,
এক,আব্বু
দুই,আম্মু
আর এক, “আমি”
হ্যা,আজ আমার চিপস পাগলী বোনটা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে,,,,চলে যাবে তার এই “ভাই”টাকে ছেড়ে,,,
:
পাগলীটার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে,,,,
আম্মু ও চিপস পাগলীটা কাঁদছে,,,,
আব্বুকে দেখলাম,শত ব্যাথা বুকে নিয়েও হাসি মুখে বেয়াই এর সাথে কথা বলছে,,
আমি পাগলীটার কানের কাছে এসে বললাম,
~তোর মেকআপ কিন্তু এইবার নষ্ট হয়ে যাবে!!
~ভাইয়া,,এইবার অন্তত ফাজলামি বন্ধ কর,,,এই বলেই পাগলিটা আরোও জোরে কাঁদতে লাগলো,,,,,,
আমিও এইবার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না,,,,তবুও কান্না মাখা চোখে বোনটাকে বিদায় জানালাম,,,,
:
আজও আমি প্রতিদিন আসার সময়, পাগলিটার জন্য চিপস নিয়ে আসি,,,,
কিন্তু,চিপস থাকলেও খাওয়ার মানুষটি যে তার এই ভাইয়ের কাছে এখন নেই,,,,
বোনটাকে শুধু এটুকুই বলতে চাই,
“বোন,আজও তোর সয়তান ভাইটা চিপস নিয়ে তোর জন্য অপেক্ষায় আছে”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত