কি ডাকাত মেয়েরে বাবা

কি ডাকাত মেয়েরে বাবা

সকালে ঘুমিয়ে আছি। তখনি আমার ইয়ে মানে আমার ডাকাত বউ বলে উঠলো,,অ্যাই,তোমার মানিব্যাগ কোথায়? (ফারজানা) কিছু বলল্লা?(আমি) হুম,,শুনতে পাও নি??(ফারজানা) না তো। ন্যাকামি করবা না ভালোয় ভালোয় বলো মানিব্যাগ কোথায়?(ফারজানা) ওহ মানিব্যাগ তো গতকাল হারিয়ে ফেলছি। মিথ্যা বলবা না!(ফারজানা)  যাও তো এখন অনেক সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতেছি কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখো?(ফারজানা) ওই তো পাশের বাড়ির নিহাকে নিয়ে।

আহা,কী রোমান্টিক সিন!! কিহহহ।বাদর দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা (ফারজানা)  রুমে বাদর আসলো কই থেকে? বাদর তো গাছে থাকে তুই বাদর তাড়াতাড়ি মানিব্যাগ দে (ফারজানা) মানিব্যাগ এতোক্ষণে অন্যের পকেটে। হা হা হা [এইসব মানিব্যাগ খালি করার ধান্দা। আমিও নাছর বান্দা দিমু না] একটু পর দেখি আমার ডাকাত বউটা আমার মোবাইল নিয়ে কই চলে যাচ্ছে,,,তখনি এই ফারজানা আমার ফোন নিয়ে কই যাও?? যদি মানিব্যাগ না দেখিয়ে দাও, তাইলে এইটা ভেঙ্গে ফেলবো।(ফারজানা) এ কি!! আমার উপর রাগ না দেখিয়ে, ফোনের উপর দেখাচ্ছো কেনো? হুম এখন বলো মানিব্যাগ কোথায়?!(ফারজানা) কি জানি মনে নাই তো আবার?? এই যে ফেলে দিলাম কিন্তু!!(ফারজানা) না সোনা না।ওই যে ড্রয়ারে রাখা আছে।

এই নাও তোমার ফোন। লক্ষী ছেলে উম্মাহহহ। (ফারজানা) লক্ষী ছেলে হতে চাই না। তুমি মানিব্যাগ টা আমার কাছে নিয়ে আসো। নাহ্ তা তো হবে না। এখন আমি আমার ইচ্ছা মতো টাকা নিবো।(ফারজানা) এইটা কী ধরনের ডাকাতি?? হুম ডাকাতিই তো।(ফারজানা) কত টাকা নিলে? ৩ হাজার (ফারজানা) কিহহহহহহ।সকাল সকাল এতো টাকা নিয়ে কই যাবে? সেইটা তোমাকে বলতে হবে??(ফারজানা) আমার আর বুঝতে বাঁকী রইল না ফারজানা বিউটি পাল্লারে যাবে। তার মধ্যে,,আজ আবার আমার চাচাতো বোনের গায়ে হলুদ। আরে ভাই আগে যদি জানতাম, এই মেয়েটা নিজের স্বামীর মানিব্যাগে ডাকাতি করে নিজের রুপচর্চা করবে,, তাহলে,বাবা! এই মেয়ের ধারে-কাছে যেতাম না। এখন কিছুই করার নেই,  বিয়ে তো করেই ফেলছি!!  তাই মানিব্যাগ টা বহুত সাবধানে রাখতে হয়।

বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে মানিব্যাগের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি আর ২ হাজার টাকা আছে। ওইটা নিয়ে এসে, বালিসের নিচে রেখে আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু একটু পর ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়েছিস? (বৃষ্টি) [সামান্য চোখটা খুলে দেখি,বৃষ্টি আসছে। খাইছে!! আমি শিওর এইটাও টাকা নেওয়ার ধান্দায় আসছে] কী রে ভাইয়া?(বৃষ্টি) আমি এখন ঘুমের মধ্যে আছি আপু। ঘুমের মধ্যে থাকলে কেউ কথা বলতে পারে??(বৃষ্টি) হুম,,আমি পারি। ভাইয়া কিছু টাকা দে না??(বৃষ্টি) [ জানি তো সবার একটাই চাহিদা] এইখান থেকে সর আমি উঠলে কিন্তু তোর খবর আছে! ভাইয়া উঠ না?(বৃষ্টি) ওই কি হইছে বল? আমাকে ১ হাজার টাকা দে না?(বৃষ্টি) আমি কি টাকার ব্যাংক?? ভাবীকে তো ৩ হাজার টাকা দিছিস!(বৃষ্টি) তোর ভাবী ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।

তাহলে আমাকে এখন দে??(বৃষ্টি) তোকে কিন্তু এখন !! ওই যা,  আব্বুর কাছে গিয়ে টাকা নে আচ্ছা,, ঠিক আছে টাকা দেওয়া লাগবে না।(বৃষ্টি) [বেশ ভাল করেই খেয়াল করলাম বোনটা আমার মনটা ছোট করে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ] তখন, এই বৃষ্টি?? [ নিশ্চুপ ] বৃষ্টি এই দিকে আয় তো? হুম।বল কি বলবি??(বৃষ্টি) এই নে ১ হাজার টাকা ভাইয়া জানতাম তুই আমাকে টাকা দিবি।(বৃষ্টি) [ বোনটা টাকা পেয়ে আমাকে ৩ মিনিট যাবৎ জড়িয়ে ধরে আছে।দুনিয়ার অনেক গুলো সুখের মূহুর্তের মধ্যে মনে হচ্ছে এইটা একটা। অনেক ভালো লাগতেছে বোনটাকে খুশি করতে পেরে] বৃষ্টি এবার তো ছাড় আপু। ভাইয়া তুই দুনিয়ার সব থেকে ভালো ভাইয়া আমার।(বৃষ্টি) এই পাগলি কাঁদিস কেনো? [ খুশিতে বোনটা আমার চোখে জল এনে ফেলেছে] কিছু না ভাইয়া,,তুই তাড়াতড়ি উঠে,ফ্রেশ হয়ে নে।

আমরা কিন্তু বিউটি পাল্লার থেকে এসেই বিয়ের বাড়িতে যাবো।(বৃষ্টি) তার মানে,, তুইও তোর ভাবীর সাথে বিউটি পাল্লারে যাবি?? হিহিহি ব্যাপার টা এতোক্ষণে তোমার মাথায় ঢুকলো ভাইয়া?(বৃষ্টি) এই বিউটি পাল্লার গুলো মাইয়াদের আসল রুপ আর কাউকে দেখতে দিবে না। ফ্রেশ হয়ে, কিছু খাইতে যাবো, দেখি বাড়িতে কেউ নেই। আব্বু-আম্মু কাল রাত থেকেই বিয়ের বাড়িতে। আর শয়তান দুইটা পাল্লারে! নিজেই সামান্য একটু নাস্তা সেরে পিসিতে বসলাম। অনেক গুলো কাজ জমা হয়ে গেছে। কাজ গুলো শেষ না করতেই দেখি মহারাণী দুইটা হাজির। মহারাণী দুইটার দিকে অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওমা চিনবার শক্তি নেই, কে কোনটা!!! বৃষ্টি তুই কোনটা?? (আমি) এই যে ভইয়া আমি এইটা। [ বৃষ্টি হাত তুলে আমার কথার উত্তর দিল] তুমি এখনো রেডি হও নি? কখন যাবে বিয়ে বাড়িতে??(মিষ্টি বলল্ল ) একটু দাঁড়াও..আমি রেডি হইতেছি।

পিসি থেকে উঠে,গোসল দিয়ে রেডি হয়ে ওদের সাথে বিয়ের বাড়িতে চলে গেলাম। বিয়ের বাড়িতে এসে দেখি, সবাই মিষ্টি আর বৃষ্টির মতো পাল্লার পাগলি। তবে অনেক লালনা বিয়ের বাড়ি বলে কথা! কাউকে ঠিক ভাবে চিনতে পারছি না। বিয়ের বাড়িতে গেলে সব ছেলেদের একটা কমন ব্যাপার আছে আমার ক্ষেএেও ব্যাপারটার ব্যতিক্রম ঘটলো না। অলরেডি ২/৩ টা মেয়েকে চোখ মেরে ফেলছি। কিন্তু আমার সামনে একটা মেয়ে আমাকে দেখে মিটি- মিটি হাসতেছে। ব্যাপার কী!! আমাকে দেখে হাসে কেনো?? আবার একটু চিনা চিনা লাগতেছে কিছু না ভেবে, মেয়েটাকে চোখ মেরে বসলাম।

কিন্তু মনে হচ্ছে, পিছন থেকে কেউ একজন আমার চোখ মারা টা দেখে ফেলল। ধুর কে কি দেখলো, সেইটা আমার দেখার বিষয় না। উফফফ,,এত্তো আটা আর ময়দা, নিশ্চিত কিছু দিনের মধ্যেই এই গুলোর দাম বেড়ে যাবে!! নিজের বউ এবং বোনটাকেও আর রক্ষা করা গেলো না। হঠাৎ সামনে এসে কে জানি আমার শার্টের কলার টা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে দেখি ‘ফারজানা’। এইবার খাইছে! নিশ্চিত কিছু ঝামেলা আছে এর মাঝে”! ব্যাপার কি তোমার? নিজের চোখ সামলিয়ে রাখতে পরো না??(ফারজানা) কী করছি আমি বলবা তো? তুমি ওই মেয়েকে চোখ মারলে কেনো?(ফারজানা) কোন মেয়ের কথা বলছো?

এই যে একটু আগে একটা মেয়েকে?(ফারজানা) সেইটা তুমি কেমনে দেখলে? তার মানে, তুমি সত্ত্যি নিজের ইচ্ছায় চোখ মারছো?(ফারজানা)[ এই রে!! ধরা খেয়ে গেলাম ] না বাবু,, বিশ্বাস করো আমি চোখ মারি নি! তোমার বোন বৃষ্টিও দেখছে।(ফারজানা) বৃষ্টি কেমনে দেখলো? তুমি যাকে চোক মারছো, সেইটা আমি আর আমার পিছনে বৃষ্টি ছিল।(ফারজানা) [খাইছে!! নিজের বাঁশ নিজেই তৈরী করলাম] ওহ তাইতো বলি,,এইরকম চিনা চিনা লাগতেছিল কেন! ছিঃ আমার ভাবতে অবাক লাগছে তুমি এইরকম একটা ছেলে!!(ফারজানা) আমি মোটেও সেইরকম ছেলে না,হু। হুমম।

এখন যে তোমার একটা কাজ করতে হবে, বাবু?(ফারজানা) কী কাজ, বাবু??( অনেক খুশি হয়ে বল্লাম ) ৪০ বার কান ধরে উঠ-বস করতে হবে।(ফারজানা)  হু,,বলল্লেই হলো! আমি করবো নাকি তাই কথাটা শুনে মিষ্টি চোখ গুলো এতো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে আমাকে গ্রাস করে ফেলবে মূহুর্তের মধ্যে উঠ- বস করতেছি তো। এতো রাগ হওয়ার কি আছে! হু,এক্ষণি শুরু করো,, কেউ নাই আশে পাশে।(ফারজানা)  করতেই হবে? হু,শুরু start (ফারজানা) এক…দুই…তিন…চার…পাঁচ। বাবু শাস্তিটা একটু কমানো যায় না??? নাহ্যা  বলছি তাই।

কথা কম বলে নিজের কাজ করো (ফারজানা) ছয়…সাত…আট…নয়…দশ…ভাই চলছে চল্লিশ পর্যন্ত তারপর থেকে আর কখনো ভুলেও বিউটি পাল্লারে যাওয়া মেয়েদের চোখ মারতে যাই না। না জানি কখন আমার ‘ডাকাত বউটা আমার মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দেয়।

The End

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত