আপনি সিগারেটও খান? হঠাৎ কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। আমি সিগারেট খাই। হ্যা আমি সিগারেট খাই। ( বাস্তবে না। শুধু গল্পে ) ওর মৃত্যুর পর খুব ভেঙ্গে পরেছিলাম। শুনেছিলাম সিগারেট নাকি মানুষ কে সাময়িক শান্তি দেয়। (যদিও কথাটা সম্পূর্ণ সত্য নয় ) এরপর থেকে আমি সিগারেট কে আপন করে নেই।
জানিনা কষ্ট কমে কিনা। তবে যতটুকু সময় সিগারেট খাই ততটুকু সময় যেন তাকে একটু ভুলে থাকতে পারি। তাই এই সিগারেট খাওয়া। কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন? ( মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করল ) কিন্তু আমি কি জবাব দিব ভাবছি। আজকাল মেয়েটা একটু বেশিই কেয়ার করছে আমার। যদিও খারাপ লাগে না। তবুও কেন জানিনা কেমন একটা লাগে।
আপনি কি বোবা হয়ে গেলেন? ( মেয়েটা আবারও জিজ্ঞেস করলো।)জি আমি সিগারেট খাই না আমি ঘাস খাই। ( হঠাৎ মাথাই উল্টা পাল্টা কিছু বুদ্ধি আসলো ) কিন্তু আমি তো দেখছি আপনি সিগারেট খাচ্ছেন। ( মেয়েটা চোখ রাঙ্গিয়ে বলল ) ধুর আপনি যে কি বলেন? আমি তো ঘাস খাচ্ছি। আমার চোখের সমস্যা হয়নি। আমি দেখতেই পাচ্ছি আপনি সিগারেট খাচ্ছেন। ( মেয়েটা একটু আওয়াজ বাড়িয়ে বলল ) দেখতেই যখন পাচ্ছেন তখন জিজ্ঞেস করছেন কেন? ( একেই বলে উল্টা চাল ) আপনি জানেন না সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? ( বুঝলাম কথাটা একটু ঘুরালো। হয়তো বুঝতে পেরেছে কথাই আমার সাথে পারবে না।)
হুমম জানি। এই দেখুন সিগারেটের প্যাকেট এর উপরেও তাই লেখা আছে। ( সিগারেটের প্যাকেট টা বের করে দেখালাম।) তাহলে খান কেন? আপনি জানেন না একজন পর পুরুষের সাথে মেয়েদের কথা বলা ঠিক না? ( আমি উল্টা প্রশ্ন করলাম ) হুমম জানি। তাহলে বলছেন কেন? ( দেখ কেমন লাগে ) আজব আমি আপনার ভালোর জন্য বলছি আর আপনি আমাকে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে উল্টা পাল্টা যুক্তি দেখাচ্ছেন।
আমি কোথায় যুক্তি দেখালাম। আমি তো শুধু বললাম। ( সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললাম। ধোয়াটা ছাড়তেও মজা লাগে। আহ কি জীবন। ( এর থেকে মরে যাওয়াই ভালো) ধুর, আপনি আসলেই একটা ফালতু মানুষ। ( রাগ দেখিয়ে বলল ) তা আপনি আজকে জানলেন? আমি তো জন্ম থেকেই ফালতু। ( সিগারেটে আর একটা টান ) আপনার সাথে কথা বলতে আসাই উচিৎ হয়নি।
আমি কি বলেছিলাম ” আসুন আমার সাথে কথা বলুন” ( মুখ ভেংচি কেটে বললাম ) আচ্ছা বাদ দিন। এবার বলেন আপনি সি কেন খান? (মেয়েটা আবার কথার মোড় পাল্টে নিল) সে অনেক বড় কাহিনী। (সিগারেট টা হাত থেকে ফেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম ) তাহলে সংক্ষিপ্ত করে বলুন। (মেয়েটা শোনার আগ্রহ দেখালো) শুনে কি করবেন? প্লিজ বলুন। (অনুরোধের সুরে) আপনাকে বলতে যাব কেন?
দুঃখের কথা শেয়ার করলে মন হাল্কা হয়। ( জ্ঞানীর ভাষায় বলল ) ওহ তাহলে শুনুন , আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম। তার সাথে বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ একটা এক্সিডেন্ট এ সে মারা যায়। তারপর থেকে কষ্ট গুলো কমানোর জন্য এই সিগারেট খাওয়া। (সংক্ষিপ্ত করেই বললাম) ওহ। আচ্ছা আজকে বাই। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসাই যেতে হবে। বলেই মেয়েটা আমার বলার অপেক্ষাই না থেকে সোজা চলে গেলো। মেয়েটা আসলেই অদ্ভুত। আমাদের বাসায় দ্বিতীয় তলাই থাকে। আমরা থাকি উপরের তলাতে। আমি আবার সূর্যাস্তের দিকে মনোযোগ দিলাম। প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে ধরালাম।
কয়েকদিন পরের ঘটনা। আমি আমার রুমে শুয়ে আছি। ওহ আপনাদের আমার সম্পর্কে বলা হয়নি। থাক জেনে লাভ নেই। সব কিছু জানতে হয় না। রুমে শুয়ে ছিলাম এমন সম কেউ ঘরে আসলো। আমার ঘরে সাধারণত আম্মু আর বোন ছাড়া কেউ আসে না। তাই আমি শুয়েই আছি। আমাকে বিয়ে করবেন? হঠাৎ এমন একটা কথা কানে আসাতে আমি শোয়া থেকে লাফিয়ে বিছানাই উঠে বসলাম। আবার সেই মেয়েটা এসেছে। কিন্তু বুঝতেছি না এর মাথার তার ঠিক আছে তো? কি বললেন? ( আমি আবারও শুনতে চাইছিলাম।)
বললাম আমাকে বিয়ে করবেন? ( মেয়েটি আবারও বলল ) আপনাকে কেন বিয়ে করতে যাব? আমি বলেছি তাই। ( মেয়েটি জোর দিয়ে বলল ) আপনি বললেই কি করতে হবে নাকি? ( আমিও জোর দিয়েই বললাম ) জি করতে হবে। আপনাকে ওভাবে দেবদাসের মতো দেখতে ভালো লাগে না।
আমি দেবদাসের মতো থাকলে আপনার সমস্যা কোথায়? যাকে ভালোবাসি তাকে দেবদাসের মতো দেখলে তো সমস্যা আছেই। (মেয়েটা কিছুটা লাজুক ভাবে বলল ) ভালোবাসেন মানে? আপনার মাথা ঠিক আছে? জি আমার মাথা ঠিক আছে। আপনার ঐ অগোছালো হয়ে চলা আমার খুব খারাপ লাগতো। ইচ্ছা করতো আপনাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিই। আপনি জানেন না আমি বিবাহিত?
ছিলেন। কিন্তু এখন তো বিপত্নীক। তাই আমার কোনো সমস্যা নেই। শুধু আপনি রাজি থাকলেই হয়ে যাবে। আমি যদি রাজি না হই তাহলে? ( জানতে ইচ্ছা করলো ) তাহলে আর কি? এখন যেটুকু জালাই কাল থেকে তার দ্বিগুণ জালাবো। আপনাকে একটুও শান্তিতে থাকতে।