এই ড্রাইবার, গাড়ি ছাড়ো না কেন?,,পিছন থেকে চিৎকার দিয়ে এক মেয়ে বলে উঠলো। আমার কান এর পর্দাটা যেন ফেটে যাচ্ছিলো আরেকটু এর জন্যে।গাড়ির ড্রাইভার টা ও গাড়িটা ছাড়তেসে না।মেয়েটা আবার ও চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,, ঐ গাড়ি কি ছাড়বেন নাকি নেমে পরবো? জ্বি আপু,,আমার মনে হয় আপনার জন্যে সেটাই ভালো হবে। ও হ্যালো।আপনি বলার কে? আমি সাজ্জাদ।
উফফফ,,,এমনেই গাড়ি ছারে না আর উফফফ,,,এমনেই গাড়ি ছারে না আর এর মধ্যেই আরেকটা ভেজাল এসে জুটলো আমার কাছে। বাবা মা মেয়ে দেখতেসে আমার জন্যে।মেয়ে দেখার জন্যেই সাথে আমার বন্ধু কে নিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিলাম।বাবা মা আগে থেকেই মেয়ের বাড়ি তে বসে আছে।আর আমরা এখন গাড়িতে। আমার সামনের সিটের মধ্যেই মেয়েটা বসে ছিলো।অবশেষে গাড়ি ছাড়লো।মেয়েটা সস্তির নিশ্বাস ফেললো একটু।মেয়েটাকে দেখেই আর যে মেয়ে দেখতে যাচ্ছিলাম সে মেয়ে কে দেখার ইচ্ছেটা চলে গেলো।
আপনার নামটা কি জানতে পারি? কেন?আমার নাম আপনি জানতে চাচ্ছেন কেন? না।আসলে এমনেই। কেমন মেয়ে রে বাবা,,নাম জানতে চাইলাম সেটাতে ও সমস্যা।(বিড়বিড় করে বলে উঠলাম) ঐ,,কি বললেন? তেমন কিছু না।বললাম আপনার মানুষ এর সাথে ব্যাবহার টা একদম জাক্কাস। ওকে আক্কাস। এটা কোন কথা হইলো।শেষ পর্যন্ত আমারে আক্কাস বললো।যাক সমস্যা নাই।নিজের হবু বউ (পছন্দ হয়ে গেলো তাই বিয়ে করার চিন্তা ও করে ফেল্লাম,সে থেকে হবু বউ বললাম)যেহেতু বললে সমস্যা নাই কোন।
আম্মু ফোন করলো।অনেক চিন্তায় পরে গেলাম,,আম্মুকে এখন কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।আমি তো এখন আম্মুর দেখা মেয়ে বিয়ে করতে চাই না।আমার তো বদরাগী মেয়েটাকে পছন্দ হয়ে গেসে।আর কিছু ভাবলাম না।আম্মুর ফোনটা ধরলাম হ্যালো আম্মু।কই তুমি? এই তো বাবা মেয়ের বাড়িতে বসে আছি।তোরা কই।তাড়াতাড়ি চলে আয়। আসলে আম্মু একটা কথা বলার ছিলো। হে বাবা বল। আম্মু,,আসলে আমি তোমার দেখা মেয়ে কে বিয়ে করব না। কিহ!আমি কিচ্ছু বুঝি না।তুই মেয়ের বাড়িতে আসবি ই ।মেয়ের ছবি দেখে মেয়েটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।যতক্ষন না তুই মেয়ের বাড়িতে আসতেসিস ততক্ষন আমি এখানেই বসে থাকবো।নে তোর বাবাকে বল একটু আগে আমাকে যে কথাটা বললি।
সারসে কাম,,বাবা শুনলে মাইরা ই ফেলবো। নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলে উঠলাম,,আম্মু নেটওয়ার্ক এ অনেক প্রব্লেম করতেসে।হ্যালো হ্যালো।আম্মু কিছু শুন্তে পাইতেসি না।….টুট টুট….ফোন কেটে দিলাম।বাবা শুনলে কপালে খারাপ কিছুই আছে।দুপুর ঘনিয়ে এসেছে।সামনের সিটে বসা আমার হবু বউটা ঘুমিয়ে পড়েছে।লক্ষ করলাম রৌদ্র এর রশ্নি মেয়েটার মুখে এসে পরেছে।রৌদ্র এর আলোতে চেহেরাটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।চুল গুলা এলোমেলো ভাবে উড়ছে বাতাসে।বার বার চুল গুলা মেয়েটার মুখখানা কে ঢেকে দিচ্ছে।আয় হায়,আর সজ্জ করতে পারছি না।আমি আর মেয়েটি ডান পাশে বসে আছি গাড়ি এর।
আমি যাতে খুব ভালোভাবে মেয়েটাকে দেখতে পারি সে জন্যে বাম পাশে এসে বসলাম গাড়ি এর।খুব মনযোগ দিয়ে চুল এর এলোমেলো ভাবে দোল খাওয়া দেখছি।হঠাৎ ও হ্যালো।এভাবে কি দেখতেসেন? নিজের অজান্তেই ঘোরের মাঝে বলে ফেললাম,,তোমাকে দেখছি আর ভাবছি।তুমি যদি আমার বউ হতা।আমাদের দুইটা বাচ্চা থাকতো। কি সুন্দর করেই আমাকে আব্বু ডাক দিতো,,আর তোমাকে আম্মু। সাহস তো কম না আপনার। এতক্ষনে এ আমার জ্ঞান ফিরে আসলো।মনে মনে বলে যাচ্ছি,,এ কি করলাম আমি।কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললাম। মেয়েটা জুতার দিকে নির্দেশ করে বলে ফেললো,,জুতাটা দেখেছেন? হুম্ম দেখলাম,,সাইজ ৮। মানে কি?জুতার দোকানের কর্মচারী নাকি? না,,জুতার দোকানের মালিক। উফফফ,,এ লোকটার সাথে কথা বলাই বেকার।
মেয়ের রাগটা একটু বেশি। এখন কি যে করি,,কথা গুলা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ গাড়ি থেমে চলে আসলো আমার গন্তব্যস্থানের সামনে। নামার ইচ্ছে ছিলো না।কারন আমি তো আম্মুর পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করবো না।মেয়েটা যেখানে যায় আমি সেখানেই যাবো।জানালার দিকে মুখ করে বসে রইলাম সিটে।গাড়ি ছেড়ে দিলো।একি,,গাড়ির বাহিরে মেয়েটা কি করছে। এর মানে কি মেয়েটার বাড়ি এ জায়গাতেই।কিন্তু এদিকে তো গাড়ি ছেড়ে দিলো।কন্টাকটার গাড়ি থামাবে না,,একদম সাফ জানিয়ে দিয়েছে।কিছু করার ছিলো না,,চলন্ত গাড়ি থেকেই লাফিয়ে নামতে হলো। দুই থেকে তিনটা ডিগবাঝি খেয়ে মেয়েটার থেকে একটু দূরে গিয়ে পরলাম।অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে মেয়েটা।
আবার ও আপনি আমার পিছু নিয়েছেন!ও মাই গড! আপনার নামটা তো শুনা হল না।একটু কি বলবেন? নাম জানার জন্যে কি কেউ এভাবে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেয়! কেউ দেয় না,,কিন্তু আমি দেই।কারন আপনাকে যে আমার অনেক ভালো আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে বলে উঠলো,, দেখুন আপনি কিন্ত বেশি বারাবারি করছেন। হয়তবা।নামটা অন্তত বলুন।আমার নাম সাদিয়া।এবার প্লিজ আমার কাছ থেকে যান। যাবো তো।এমন করছেন কেন?আরেকটু থাকি।
আসলে আমি আপনার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। আপনি যেটা কল্পনা করছেন সেটা কখন ও সম্ভব না।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আজ ছেলে পক্ষের আসার কথা। আমি মাথা নিচু করে চলে আসলাম সেখান থেকে। বাসার সবাই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। সবায় আমার সাথে রাগ যে কেন মেয়ে দেখতে আমি গেলাম না।এমনেই যাকে চাইলাম তাকে পাইলাম না।আর ঐদিকে কোন মেয়ের জন্যে যেন আমার সাথে বাসার কেউ কথা বলে না।যে মেয়েটার জন্যে এত কিছু তাকে একটু দেখতে ইচ্ছে হইলো।আম্মুকে দেখেছিলাম কার যেন একটা ছবি ময়লার ঝুড়ি তে ফেলতে।
ময়লা ঝুড়িতে তো খুজে পাইতেসি না।পরদিন সকালে বাসার বাহিরে দাত মাজতেসি,,হঠাৎ একটা ময়লা ছবি চোখে পরলো। শুধু চোখটা দেখা যাচ্ছে ছবিটার মধ্যে।স্পষ্ট ভাবে দেখার জন্যে ছবিটা হাতে নিলাম।ছবিটা দেখে আমার হাত থেকে ব্রাশটা টা মাটিতে পরে গেলো। ১০০০ভোল্টেজ এর বিদ্যুৎ বয়ে গেলো আমার শরীর এর উপর দিয়ে।আয় হায়,,এই তো সেই মেয়ে যাকে আমি চাই। তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে ছুটে গেলাম।সব খুলে বললাম।কিন্তু আম্মু বললো না।আমি আর পারবো না।তুই পারলে বিয়ে করে আন। আম্মু,,তুমি না আমার লক্ষি আম্মু।এমন করো কেন।একটু ফোন দিয়ে বলো না।তোমার ছেলের জন্যেই তো বলবা।
অবশেষে আম্মু কে রাজি করালাম।অবশেষে মেরা পাজারু গাড়িটা বাহির করিলাম।আম্মু,আব্বু কে নিয়ে ঝরের বেগে টান মারলাম।মেয়ের বাসায় বসে আছি। সাদিয়া তো আমাকে দেখে অবাক। আমাকে ইশারা করে কি যেন বলার জন্য ওর কাছে ডাকলো।কাছে যেতেই আমার কলার ধরে দেয়াল এর সামনে আমার শরীর ঠেকিয়ে বলে উঠলো,,আপনার প্রবলেম টা কি? খাইসে রে।আই মরচি।আমনের আবার কিতা হইলো? কি হইলো মানে?সাদিয়া কেঁদে দিয়ে বলে উঠলো,, আপনি জানেন আমি কত মিস করেছি আপনাকে।ছেলে আমাকে দেখতে আসে নি সে জন্যে অনেক খুশি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম আপনি আমার জন্যে আবার আসবেন।
কিন্তু আপনি আরে পাগলি কাঁদতেসো কেন?সেই ছেলেটা আমি ই ছিলাম।আমি ও জান্তাম না যে মেয়েটা কে দেখতে আসবো সেটা তুমি। কিহ!ঐ শয়তান।আমাকে তাইলে দেখতে আসেন নি কেন?আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। (অভিমানী স্বরে) আরে বাবা আমি কি জানতাম নাকি তুমি ই আমার হবু বউ। না।আমি করবো না বিয়ে। সত্যি করবে না বিয়ে? না। আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি তাইলে। যাও।
যাচ্ছি কিন্তু।কথাটা বলেই দরজা এর কাছে চলে আসলাম। ব্যা করেই কেঁদে দিলো সাদিয়া।ঐ,,যদিদরজার বাহিরে আর এক পা পরে আমি আপনাকে,,আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো। আয় হায়।কিতা কও তুমি।নাহ,,কোনদিন ও যাবো না তুমি না বলা পর্যন্ত।
কাছে গিয়ে সাদিয়া এর চোখ মুছে দিলাম। শেষে আর কিতা হইব।যা হওয়ার সেটাই হইলো। সাদিয়া কে বিয়ে করে ফেললাম।