বিয়ে

বিয়ে

জনাব আশফাকউদ্দিন সাহেব চিন্তিত মুখে বারান্দায় বসে আছেন।কাল তার একমাত্র মেয়ে স্নেহার বিয়ে। আজ গাঁয়ে হলুদ হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর হয় নি। কেন হয় নি তাও এক রহস্য। তার স্ত্রী পরিষ্কার করে কিছু বলে নি। হঠাৎ সকালে বলছে গাঁয়ে হলুদ হবে না।কেন হবে না সে বিষয়ে কিছু বলে নি।আশফাকউদ্দিন অবশ্য তা নিয়ে ভাবিত হন নি।এসব মেয়েদের অনুষ্ঠান। তারাও বুঝবে।আশফাকউদ্দিনের সব চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বিয়ে।এখন তিনি বারান্দায় বসে কাজ তদারকি করছেন।কমিউনিটি সেন্টারে জিনিসপত্র পাঠানো হচ্ছে।আশফাকউদ্দ

িনের ছোট ভাই রফিকউদ্দিন আজ রাতে সেখানে থাকবেন।জিনিসপত্র পাঠানোর কাজটা যতটা সহজ ভাবা হয়েছিল ততটা সহজ না।সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলছে লোকগুলো।আশফাকউদ্দিনের ইচ্ছে করছে কাজের ছেলেটাকে চড় মেরে চাপার দাঁত ফেলে দিতে।এ নিয়ে বেশ কয়েকবার ধমকও দিয়েছেন তিনি।কিন্তু কাজের ছেলেটি নির্বিকার।এতে আশফাকউদ্দিনের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

জিনিসপত্র পাঠিয়ে সব গোছগাছ করতে করতে প্রায় ১১টা বেজে গেল।আশফাকউদ্দিন ভেতরে গিয়ে দেখলেন সবাই খুব আনন্দ করছে।গান বাজনা হচ্ছে।ছোট ছেলেমেয়েরা হৈচৈ করছে।আশফাকউদ্দিন মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন।মেয়ের সাথে যে দু’দণ্ড কথা বলবেন তার উপায় নেই।সারাবাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন।স্নেহার বিয়ে উপলক্ষে এসেছে সবাই।

– বাবা… (স্নেহা)
– খেয়েছিস মা? (আশফাকউদ্দিন)
স্নেহা মাথা নাড়ল।
– খেয়ে নে।অনেক রাত হয়ে গেছে।আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস। (আশফাকউদ্দিন)
– বাবা… (স্নেহা)
আশফাকউদ্দিন মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।

– আমি তোর বাবা।আমি তোর খারাপ চাই না।এটা তুই এখন না বুঝলেও ১০ বছর পর ঠিক বুঝবি।তুই আয় খেয়ে নে।আর দেরি করিস না।আর শোন তুই তোর ঘরে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়িস।আজ এ বাড়িতে তোর শেষ রাত। তুই একা নিজের মত করে কাটা রাতটা।তবে বেশি রাত জাগিস না।কাল তোর জীবনের অনেক বড় একটা দিন। —— কথাগুলো বলে তিনি উঠে আসলেন।

– আমি মরে যাচ্ছি বাবা (ফিসফিসিয়ে বলল স্নেহা)
আশফাকউদ্দিন নিজের ঘরে চলে এলেন।ওদিকের সব মোটামোটি গোছগাছ। সবাই যে যার মত ঘুমাতে চলে গেছে।আজ রাতে আর খাবেন না তিনি।আশফাকউদ্দিন লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন।হঠাৎ তার স্ত্রী রেবেকা বানু বলে উঠল,
– ঘুমিয়ে পড়েছ? (রেবেকা বানু)
– কেন? (আশফাকউদ্দিন)
– স্নেহা খুব কাঁদছিল।বোধহয়… (রেবেকা বানু)
– দেখ বিয়ের আগে মেয়েদের একটু এমন হয়ই।এটা তেমন কিছু না। (আশফাকউদ্দিন)
– কিন্তু…. (রেবেকা বানু)
– কোনো কিন্তু না। জহির অনেক ভাল ছেলে।ও স্নেহাকে ভাল রাখবে,সুখে রাখবে।আমি আমার মেয়ের জন্য ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।আর কোনো কথা না।ঘুমাও। (আশফাকউদ্দিন)

রেবেকা বানু আর কিছু বললেন না।স্বামীর কথার উপরে আজ পর্যন্ত কোনোদিনই কিছু বলেন নি তিনি।
আশফাকউদ্দিন জানেন তিনি কোনো ভুল করছেন না।নিজের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেছেন তিনি।জহিরের সাথে বিয়ে হলে স্নেহা সুখী হবে।বাবা হিসেবে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করা কি খুব অন্যায়? মোটেই না।আর এসব ভালবাসা টালবাসা বলে কিচ্ছু নেই।একটা রাস্তার ছেলে কোনোদিনও তার জামাই হতে পারে না।কি ভবিষ্যত দিবে ওই আদনান তার মেয়েকে? পার্কে বসে ১০টাকার বাদাম হাতে নিয়ে অনেক কথাই বলা যায় কিন্তু দুনিয়াটা বড্ড কঠিন।এখানে শুধু ভালবাসা দিয়ে চিড়া ভিজে না।ভাল থাকতে হলে টাকা চাই টাকা।স্নেহা বাচ্চা মেয়ে তাই এসব বুঝতে পারছে না এখন।কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন স্নেহাও এই সত্যিটা উপলব্ধি করবে।আর তখনই বুঝবে আশফাকউদ্দিন সাহেব সেদিন ঠিক কাজটিই করেছিলেন।স্নেহা বড্ড বেশি বোকা।নাহলে ও ভাবল কি করে ওরকম একটা ছেলে তার বাড়ির জামাই হবে! হাজার হোক স্ট্যাটাস লেভেল বলেও তো কিছু আছে নাকি!

আশফাকউদ্দিন সাহেব ঘুমিয়ে পড়লেন।কালকে খুব ভোরে উঠতে হবে।বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনো কমতি থাকা যাবে না।তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।তিনি ঘুমিয়ে গেলেন।
কিন্তু আগামীকাল বিয়েটা হচ্ছে না।

এক বাসায় পাশাপাশি ঘরে থেকেও আশফাকউদ্দিন সাহেব অনুভব করতে পারলেন না কি গভীর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে তার আদরের মেয়েটি এ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত