সুখ দূঃখের সাথী

সুখ দূঃখের সাথী

-ঐ তুই এইখানে কি করিস!হুম? দেখছিস না কি করছি।(বিরক্তি নিয়ে) হুম দেখছি তো। এই একটা কাজিই তো করতে পারিস। আচ্ছা এখন যা তো, আমার ভাল লাগছে না। চলে গেলাম।পরে আবার পেছন থেকে ডাকবি না।আর একটা অনুরোধ করবো রাখবি!? হুম।রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো।

বল কি বলবি? প্লিজ সিগারেটটা আর খাস না।কষ্ট হয় আমার। আজিব কষ্ট তো হবে আমার।তোর হতে যাবে কেন!! ও তুই বুঝবি না।আসি রে বাই। আচ্ছা।সাবধানে যা। (মেয়েটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেল) এতক্ষণ যার সাথে কথা বললাম সে আমার একমাত্র বান্ধবী,বলা যায় আমার সব সুখ,দূঃখের সাথী নাবিলা। মেয়েটা ধৈর্য দেখলে মাঝে মাঝে অবাক না হয়ে পারি না।কিভাবে যে আমাকে সহ্য করে আল্লাহ ভাল জানে।

পরেরদিন কলেজে এসেই দেখা কি রে কাল কখন বাসায় গেছিলি? (নাবিলা) তুই যাওয়ার ক্ষণিক বাদেই।(আমি) রাতে খেয়েছিস তো? হ্যা রে। আচ্ছা একটা কথা বল তো ইদানীং দেখছি তোর মন সবসময় খারাপ থাকে।কারণটা কি রে? আরে ওইসব কিছুই না।বাদ দে। চল ক্লাসে যাই সময় হয়ে গেছে। আচ্ছা চল। তারপর সোজা ক্লাসে চলে আসলাম। ক্লাস শেষে নাবিলাকে কিছু না বলেই বাসায় আসলাম। আমার এমন হওয়ার পেছনে একটা কারণ আছে।যাইহোক সেটা পরে বলবো আগে পরিচয় পর্বটা বলি। প্রথম যখন নাবিলার সাথে পরিচয় হয় ব্যাপারটা ঠিক সাধারণের মত ছিল না। তো বলে ফেলি সেই কাহিনী।

আমি কাব্য।নিজের বলতে শুধুই আমি।আর কেউ নেই।বড় হয়েছি মামা বাড়ি। আসলে যার বাবা মা নেই সেই বুঝে বাবা, মা না থাকার কি কষ্ট।যাইহোক,তো একদিন রাতে পথশিশুদের জন্য খাবার কিনে নিয়ে হাটছিলাম।উদ্দেশ্য তাদের নিয়ে আজ রাতের খাবারটা খাওয়া। বলা যায় এটা আমার একপ্রকার অভ্যাস। যখনই সময় পাই ওদের জন্য কিছু খাবার কিনে নিয়ে যাই।আজও যাচ্ছি। আমার শিশুগুলোর সাথে আগে থেকেই পরিচয়। জানি ওরা এখন ঘুমিয়ে আছে।হাতে খাবার দেখলে নিশ্চয় অনেক খুশি হবে। ভেবে নিজেরও ভাল লাগছে।

কিন্তু আজকে ভিন্ন দৃশ্য দেখালাম, সবাই গোল হয়ে বসে আছে।মাঝখানে একটা মেয়ে কি যেন বলছে আর সবাই হাসিতে মেতে উঠছে।এই প্রথম আমি ওদের এমন মন খুলে হাসতে দেখলাম। ওদের হাসতে দেখলে নিজেরও ভাল লাগে। আসলে এতিম তো।একজন এতিমই এতিমের দুঃখটা বুঝে। একটু দাঁড়িয়ে তাদের কাছে চলে গেলাম। আমাকে দেখেই কয়েকটা বাচ্চা ছেলে বলে উঠলো “ওই দেখ ভাইয়া আসছে।” ওদের মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনতে খুব ভাল লাগে। আমিও হাসি মুখে তাদের কাছে খাবার নিয়ে গেলাম। কাছে যেতেই সবাই একসাথে বলে উঠলো ভাইয়া দেখছো এই আপুটা অনেক ভাল, আমাদের খাবার এনে খাইয়েছে,অনেক গল্প বলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমিও কৃতজ্ঞতার সাথে তাকে ধন্যবাদ বললাম। তারপর সেই রাতের মত ওদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসতে যাব উমনি মেয়েটা বলে উঠলো “চলুন,একসাথে যাই।” আমিও মানা করলাম না। দুজনই চুপচাপ হাটছি।হঠাৎ মেয়েটা বল্ল আপনি কি ওদের আগে থেকেই চিনেন? হুম। ওদের মুখে হাসি দেখলে মনে একটা প্রশান্তি লাগে তাই না! হ্যা।অনেক অনেক ভাল লাগে। আচ্ছা আগে তো আপনাকে এইখানে দেখি নাই।হঠাৎ কি মনে করে?(আমি) আসলে আমরা পুরো পরিবার খুলনায় থাকতাম।বাবার ট্রান্সফার হওয়ায় এইখানে।

আচ্ছা।থাকছেন কোথায়? এইতো সামনেই।আপনিও কি পুরো পরিবার নিয়ে এইখানে থাকেন? একাই থাকি। কেনো?মা বাবা কোথায়? নেই।আমি একাই। সরি। ব্যাপার না।সত্যি তো এটাই। আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম। বাসায় এসে শুয়ে আছি।হঠাৎ মনে হল ইশ মেয়েটার নামই তো জানা হল না। পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি ৯টা বাজে। হায় হায় কলেজ যাবো কখন!!কিছু না খেয়েই তাড়াহুড়া করে কলেজের দিকে ছুটলাম। কলেজে গিয়ে দেখি একটা ক্লাস শেষ। দ্বিতীয় পিরিয়ডে ক্লাসে ঢুকে একদম শেষের বেঞ্চটাতে বসে পড়লাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সামনের সারিতে কাল রাতের সেই মেয়েটি বসা।কিছুটা অবাকই হলাম।

ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরুতেই পেছন থেকে হাই!কেমন আছেন?(আমি) আরে আপনি সেই না যার সাথে কাল রাতে কথা হয়েছিল? হুম।কলেজে কবে ভর্তি হলেন? এইতো একসপ্তাহ হলো। চলেন সামনে যাওয়া যাক। হুম চলেন। এভাবেই কথা বলা,ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা।একপর্যায়ে এমন হয়ে যায় যে কেউ কাউকে ছাড়া যেন চলতেই পারি না। আর মজার ব্যাপার হল আমাদের ঘুরতে যাওয়া বা কিছু করা মানেই ছিল ওই পথশিশুদের সাথে থাকা।প্রায় প্রতিরাতেই আমরা ওদের জন্য খাবার নিয়ে যেতাম, ওদের সাথে গল্প আর মজা করা নিয়ে মেতে থাকতাম।

হঠাৎ লক্ষ্য করি ওর ব্যবহারে কিছুটা পরিবর্তন আসছে।আগের থেকে অনেক বেশি আমার কেয়ার করে।সব সময় খোজ খবর নেয়।আমিও বেশ ছিলাম।ওকে নিজের একজনই ভেবে নিয়েছিলাম। তারপর একরাতে ও আমাকে কল দিয়ে বলে কাল যেন কলেজে আগেই যাই,কি নাকি কাজ আছে।আমিও হ্যা বলে দেই। পরদিন সকালে কলেজে গিয়ে দেখি ও আগেই এসে দাঁড়িয়ে আছে। কি রে! ডাকলি যে হঠাৎ, কি কাজ তাড়াতাড়ি বল। আসলে কাব্য তোকে একটা কথা বলবো। জানি না তুই কিভাবে নিবি! কিভাবে কি নেওয়ার আছে বলে ফেল তো।

আচ্ছা তাহলে শুন।(চোখ বন্ধ করে) আমি তোকে অন্নেক ভালবাসি। আমি কিছু জানি না।আমি তোকে ভালবাসি এইটায় শেষ। এখন রীতিমত আমি একটা শকড এর মধ্যে আছি।কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে আসি। তারপর নানান চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।আসলেই কি ও আমাকে ভালবাসে নাকি অনাথ বলে করুণা করছে। আমি তো কারো করুণার পাত্র হতে চাই না।

তাই একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম।ওকে কয়েকদিন এড়িয়ে চলবো।কোনকথা বলবো না এমনকি ওকে সময়ও দিব না।দেখি কি হয়। যেই ভাবা সেই কাজ।এরপর থেকেই আমি নাবিলাকে এড়িয়ে চলি,কথা বলি না এমকি ওর কথাও শুনি না। এতকিছুর পরও ওর একটুও পরিবর্তন দেখলাম না।ও ঠিক আগের মতই আমাকে কেয়ার করে। এখন বর্তমানে আসি।উপরে তো দেখলেনিই বাসায় চলে আসছি।এখন ভাবছি পাগলিটাকে আর কষ্ট দিব না।কালকেই গিয়ে বলবো আমিও ওকে ভালবাসি। আহ রাতে একটুও ঘুম আসছে না, কখন যে সকাল হবে।

পরদিন সকাল বেলায় ফুলের দোকান থেকে অনেকগুলা গোপাল কিনলাম। উম্ম এখন নাবিলারে একটা কল করা দরকার। হ্যালো নাবিলা! হুম বল। কোথায় আছিস?আচ্ছা যেখানেই থাকিস না কেনো তাড়াতাড়ি কলেজে আয়। কেনো!আমি আসতে পারবো না।রাখ তো। আচ্ছা না আসলি।রাখি হাহাহা আমি জানি ও না এসে পারবে না। আর দেরী না করে কলেজে চলে গেলাম। দাঁড়িয়ে আছি তো দাড়িয়েই আছি।ও আসছে না কেন আজ।ওকে যে আমার আজ বলতেই হবে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ করে দেখলাম মহারানী আসছে।আজ কেমন যেন আলাদা রকম অনুভূতি কাজ করছে।কখনো তো এমন হয় নি। আজকে আবার ও শাড়ি পড়েছে।বেশ মানিয়েছে শাড়িতে। আমার সামনে আসতেই, কিরে বললি যে আসবি না!তো আসলি কেন?

জানি না।আসছি তোর কোন প্রব্লেম। বাব্বাহ তোর দেখি রাগও আছে। (চুপ) মেয়েটা মনে হয় অনেক কেঁদেছে।চোখের নিচে কালচে দাগ আবার স্বাস্থ্যটাও খারাপ করে ফেলছে। আচ্ছা নাবিলা শুন কি বল বলবো নাকি বলবো না! বলতো। আসলেই আমিও তোকে ভালবাসি(মাথা নিচু কিরে ওর দিকে ফুলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে) মেয়েটা কিছুই বলছে না। মনে হয় পাথর হয়ে গেছে।

চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। যাহ!আমি তোকে ভালবাসি না। (নাবিলা) কিহ! ভালবাসিস না মানে!তোর যে চেহারা আমি ছাড়া আর কোন ছেলে পাবি না যে তোকে বিয়ে করবে। কুত্তা,ফাজিল।আমি তোকে আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসি।

আর কিছু বল্লাম না। শুধু বুকের উষ্ণতায় আগলে নিলাম।আর ভাবলাম নাহ পাগলিটাকে আর একটুও কষ্ট দিব না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত