সকালে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছিলাম। আজ শুক্রবার অফিসে যাওয়ার কোন তারা নেই। এমন সময় অনুভব করলাম মাথাই কারো হাতের স্পর্শ। আর কানে কানে কি যেন বলতেছে প্রথমে না বুজতে পারলেও পরে ঠিকই বুজলাম। আম্মু মাথাই হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে আর “ভোর হলো দোর খোল খুকুমণি ওঠো রে ঐ ডাকে জুঁই শাঁখে ফুল খুকি ছোট রে।”
এই কবিতাটা আমার কানে অবৃত করছে। আমার আম্মু অন্য সব আম্মুর চেয়ে একটু আলাদা। ঘুম থেকে যতই দেরি করি উঠি না কেন আম্মু কখনও আমাকে বকা দেয় না বরং আস্তে আস্তে মাথাই হাত বুলিয়ে ঘুম থেকে উঠাই। চোখ খুলতেই আম্মু বলে উঠলো “রিদয় তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিছে আয় তোর আব্বু তোর জন্য নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে”। তোকে কি জানি বলবে। “আচ্ছা আম্মু”,এটা বলে ফ্রেস হতে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখলাম আব্বু-আম্মু দুইজনই বসে আছে আমার অপেক্ষাই। আমাকে দেখেই আব্বু বলে উঠলো “বাবা বস তোর জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম। এরপরে সবাই মিলে নাস্তা করা শুরু করল।
তারপর আম্মু বলে উঠলো রিদয় দেখ প্রতিদিন সকালে উঠে তোদের জন্য রোজ রোজ নাস্তা বানানো আমার দ্বারা আর সম্ভব না। কাজের লোক দেখবো একটা? (আমি) না। আমি তোর বাবাকে বলছি তোকে এবার বিয়ে করাবা। আমিতো পুরাই লজ্জাই লাল হয়ে গেছি। কি করে কি বলবো কিছুই বুজতেছি না। তাই নিছের দিকে তাকিয়ে কোন মতে নাস্তা শেষ করে উপরে চলে আসলাম। কিছুক্ষন পরে আম্মু রুমে এসে আবার জিজ্ঞেস করলো। কি সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন আম্মুকে বললাম মেয়ে দেখতে। তখন আম্মু যা বললো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম উনারা নাকি মেয়ে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। আগামীকাল আমার সবাই মিলে আবার সামিয়াকে দেখতে যাবো কেমন? না আম্মু কালকে যেতে পারবো না।কালকে আমার অফিস আছে। তাই বলে কি মেয়েকে দেখবি না? না আম্মু।তোমরা দেখেছ, তাতেই হবে। আচ্ছা ওকে।
আম্মু রুম থেকে চলে গেলো এরপরে নিজে নিজে ভাবতে লাগলাম কয়দিন আগের সেই ছোট্ট রিধয়টা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। আজকে তার বিয়ের জন্য সবাই উঠপরে লেগেছে। নিজের ক্যারিয়ার এর কথা চিন্তা করতে করতে প্রেম নামক শব্দটার সাথে নিজেকে জড়াইনি। এগুলো যখন ভাবছিলাম আম্মু এসে তখন বললো এই নে নাম্বার। (আম্মু) কার নাম্বার এটা? (আমি) সামিয়ার (সামিয়ার আমার হবুর নাম)। ফ্রি হয়ে কথা বলে নিস। আচ্ছা। এরপরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হলাম শুক্রবার ছারা এখন বন্ধুদেরকে তেমন একটা টাইম দেওয়া সম্ভব হয় না। তাতে তাদের ক্ষোবের শেষ নেই।আড্ডা শেষ করে বাসাই এসে গোসল করে নামাজ পড়তে চলে গেলাম। নামাজ পড়ে এসে লান্স করে রুমে এসে ভয়ে ভয়ে সামিয়াকে কল দিলাম। অনেক্ষন রিং হওয়ার পর কল রিসিব হলো হ্যালো।
(সামিয়া) হাই। (আমি) কে আপনি? আমি রিধয়। ওহ আচ্ছা আপনি? (তার মানে সে আমার ব্যাপারে জানে) হুম। কেমন আছেন? আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন? ভালো। কি করেন? বসে আছি। আপনি কি করছেন? আমি একটু কাজ করছিলাম। অহ আচ্ছা তাহলে কাজ করেন। পরে কথা হবে। ওকে আল্লাহ হাফেজ। ওকে ওর ভয়েসটা শুনে কেমন জানি মন জুড়াই গেলো। এরপরের দিন সকালে অফিসে কাজ করছিলাম হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। এরপরের দিন সকালে অফিসে কাজ করছিলাম হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন চেক করতে দেখি সামিয়ার কল। হ্যালো (সমিয়া) হ্যালো। (আমি) কেমন আছো ? ভালো, আপনি? ঐ আপনি আপনি কাকে বলছো? তাহলে কি তুই করে বলব? ইচ্ছে হলো বলতে পার। লাগবে না। কি করছো? কাজ করছি।
অফিসে? হুম। বিকালে ফ্রি আছো? হুম। কেন? দেখা করবো তোমার সাথে তাই। দেখা করে কি হবে? যাকে বিয়ে করবো তাকে দেখবো না। বিয়ের পরে তো এমনি দেখবা। না আমি বিয়ের আগেই দেখবো। আমি পারবো না। কিহ? হুম। তোমাকে একটা ঠিকানা টেক্সট করছি। সময় মতে চলে আসবে না হয় খবর আছে। পারবো না। এই বলে ফোন কেটে দিলাম। কি রাগী মেয়েরে বাবা বিয়ের আগেই মারার হুমকি দিচ্ছে। ও ফোন রাখার একটু পরেই আম্মুর কল এসে হাজির হ্যালো আম্মু। হুম। তুই নাকি সামিয়াকে বলছিস দেখা করতে পারবি না? জ্বী আম্মু বলছি। মেয়েটা দেখা করতে চাই যেহেতু যাই একবার দেখা করে আই। আচ্ছা আম্মু। এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
আম্মুর ফোন রাখতেই দেখি সামিয়ার একটা টেক্সট।এ্যাড্রেস আর টাইম দেওয়া। এরপরে অফিসের কাজে মন দিলাম। বিকাল ৩ টা বেজে ২৭ মিনিট ম্যাডামের ৩ টায় আসার কথা ছিলো। আর এখনও আসার কোন খবর নাই।আমি এসে বসে আছি।কল দেওয়া যাক একবার। রিং পরার সাথে সাথে কল রিসিভ হলো মনে হয় রিসিব বাটুন এ আঙ্গুল দেওয়াই ছিলো। হ্যালো (আমি) হ্যালো (সামিয়া) কোথায় তুমি? আরে বাবা আসছি তো। তাড়াতাড়ি আসো এত তাড়াহুড়া করছ কেন। কাজ আছে। তাহলে চলে যাও, আমি আসব না। না না কাজ নেই। আস্তে আস্তে আস। হুহ।
কলটা কাটতেই সামনে খেয়াল করলাম একটা মেয়ে আসছে আমার দিকে। অসম্ভব রকমের মায়াবী। বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে। হয়ত মেয়েটা আমার চাওয়াটা আঁচ করতে পেরেছে। পাশে এসে বলল,,পাগলা মাহামুদ? (সামিয়া) (কন্ঠটা শুনে বুঝতে পারলাম এটাই সামিয়া। কিন্তু ও আমার ছদ্মনামটা কিভাবে জানে।) না,পাগলী সামিয়ার বর। (আমি) ঐ আমি পাগলী না। পাগলের বউতো পাগলী হয়। হু বয়েই গেছে এরকম একটা পাগলের বউ হতে।
কিন্তু তুমি আমার ছদ্ম নামটা জানো কিভাবে? আরে যাকে বিয়ে করবো তার ব্যাপারে তো সব কিছু জানতে হয়। তাই না? হুম তাই। কিন্তু কিভাবে জানলে? সেটা তোমার না জানলেও চলব। এখন চলো সামনের দিকে হাঁটি। হুম চলো। হাঁসি, দুষ্টামী করে ঐ পুরো বিকালটা কাটল। সামিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় ফিরলাম। বাসায় আসতেই, আম্মু উৎসুক দৃষ্টিতে জানতে চাইলো সামিয়াকে কেমন লাগছে? আমি এইটা হাসি দিয়ে উপরে চলে আসলাম। এই হাঁসির একটা রং আছে, একটা গন্ধ আছে, একটা অর্থ আছে যেটা আম্মু ঠিকই বুঝতে পেরেছিল।
রাত্রে সামিয়ার কথাগুলো বার বার মনে হচ্ছিল। একটু রাগি টাইপের মেয়ে। এটা কোন সমস্যা না। চলে যাবে। এরকম একজনকেই তো চেয়েছিলাম। যে আমার খুব কেয়ার করবে। আমার ভালো-খারাপ সব বিষয়ে অধিকার দেখাবে। আমার সব কিছুই তার মনে করে নিজের মত করে আগলে রাখবে। সব সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিবে।
এরপরের দিন আব্বু-আম্মু সামিয়াদের বাসাই গিয়ে।বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করে আসলো। সাত দিন পরেই আমাদের বিয়ে। এই কয়দিনে সামিয়ার সাথে অনেক কথা হয়ছে। একে অপরকে কিছুটা হলেও বুঝে নিয়েছি।
এর মাজে কিভাবে যে সাতদিন কেটে গেলো বুজতেই পারি নাই। সাতদিন পর আজ আমাদের বিয়ে। অনেক ধুম-ধাম করে আমাদের বিয়ে হলো। আব্বু আম্মুর মুখে খুশির চাপ দেখতে পেলাম। আসলে আমি এটাই চেয়ে ছিলাম। যে সবসময় যেন আব্বু আম্মুকে খুশি রাখতে পারি।
বিয়ের সমস্ত ফরমালিটিস কমপ্লিট করে বাসাই আসলাম। বাসাই আসার পরে অনেকেই আসছে ওকে দেখতে। দেখা দেখি শেষ ওরে বাসর ঘরে দেওয়া হলো।আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব আসছে আমার বাসাই। বিয়ের ব্যাস্ততার কারনে ওদেরকে টাইম দেওয়া হয়নি। তাই আমি ওদের সাথে একটু আড্ডাই বসলাম।আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত ১:৩০ এর বেশি বেজে গেছে খেয়ালই করি নাই।
দূর সর্ম্পকের এক দুলাভাই এসে বললো কি শালাবাবু কয়টা বাজে খবর আছে? কেন মাত্রতো ১:৩০ বাজে। ১:৩০মাত্র হলো? ঐ দিকে যে একজন আপনার অপেক্ষায় বসে আছে সেটার খেয়াল আছে? হুম। (একটু লজ্জা ও পাইলাম) তখন বন্ধুরা সবাই বলে উঠলো যা বন্ধু আজকে তো তোমার বিড়াল মারার রাত। যাও বন্ধু তাড়াতাড়ি যাও।এই বলে সবাই মিলে টেনে বাসর ঘরের সামনে এসে হাজির করালো। এতক্ষন তো ঠিকই ছিলাম এখন কেন জানি অসস্থি লাগছে। পুরো শরীর ঘামছে। এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে একই রুমে। তাও আবার কি বিড়াল মারার কথা বললো।
যখন বাসর ঘরের সামনে দাঁড়াই দাঁড়াই এগুলো ভাবছিলাম। তখনই দুলাভাই একটা হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বাসর ঘরে ডুকাই দিলো। আমি দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ডুকলাম। আর তখন দেখলাম সামিয়া খাট থেকে নেমে আসছে। আমি ভাবলাম বাংলা ছবির সাবানার মত সে আমাকে পায়ে ধরে সালাম করবে।আমি তার মাথাই হাল ভুলিয়ে বলবো বেঁচে থাকো,দীর্ঘজীবি হও। কিন্তু না। সে সেটা করে নি সে আমার পায়ের বদলে কলার চেপে ধরে বললো।
এই তুই এতক্ষন কৈ ছিলি? আমি যে তোর জন্য এতক্ষন ধরে ওয়েট করছি তার খবর নাই? (সামিয়া) (কি মেয়েরে বাবা বিয়ের রাতেই তুই তুকারি করছে আল্লাহই জানে আমার কপালে কি আছে) আসলে ববববববন্ধুদের সাথে আড্ডা দিদিদিচ্ছিলাম? এই তুই কি তোতলা নাকি? বিয়ের আগেতো ঠিক ভাবেই কথা বলতি। না না একটু নার্ভাস হয়ে গেছিলাম তাই আরকি। তুই কি মেয়ে? আমার নার্ভাস হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে আমি একটু ও নার্ভাস না। আর তুই ছেলে হয়ে নার্ভাস। না। আসলে হইছে কি হইছে হইছে আর বলা লাগবে না। এখন চলো দুইজন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নি।
তারপর দুইজনে মিলে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজ শেষ করে ও বললো চলো ছাদে যাবো? (সামিয়া) ছাদে কেন এত রাতে? (আমি) আমার অনেক দিনের স্বপ্ন আমার বরের সাথে বিয়ের প্রথম রাতে ছাদে গিয়ে গল্প করবো। কিন্তু সবাই কি বলবে আমরা এখন ছাদে গেলে? সেটা তুমি জানো যে ভাবে হোক ম্যানেজ করো। এই কয়দিন কথা বলে যা বুজলাম ও যাই বলে তাই করে।ওর সাথে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নাই। ওরে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বসো আমি বেড় হয়ে দেখতেছি।
রুম থেকে বেড় হয়ে দুলাভাইকে কল দিয়ে বিস্তারিত বললাম। দুলভাই বললো সমস্যা নাই তোরা যা মুরুব্বিরা বেশির ভাগ সবাই ঘুমাই গেছে। আর ছাদে যাওয়ার সিড়িতো তোদের রুমের পাশে। আমি বাকিটা দেখছি। এরপরে ওরে বললাম চলো যাওয়া যাক। কিন্তু ম্যাডাম বললো ওর আরেকটা স্বপ্ন আছে। ওর স্বপ্ন ছিলো ওর বর ওকে কোলে করে ছাদে নিয়ে যাবে। কি আর করার ম্যাডামকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করলাম ছাদের দিকে।
ছাদের দোলনাটাই দুইজন বসে আছি। ও আমার কাধে মাথা রেখে অভিরাম কথা বলেই যাচ্ছে জানতে পারলাম, সামিয়ার অনেক স্বপ্ন তার পরিবারকে নিয়ে।তার ভালো একটা স্বামী থাকবে। যে তার সুখ,দুঃখ গুলো বুঝবে, তাকে অনেক অনেক ভালোবাসবে। তার শ্বশুর শাশুড়ি তাকে অনেক ভালোবাসবে। আসলে প্রত্যেকটা মেয়ের এরকম স্বপ্ন থাকে যে তার স্বামী তাকে বুঝবে, ভালো বাসবে, শ্বশুর শাশুড়ি তাকে অনেক ভালোবাসবে। সব মিলিয়ে তার একটা সুখী পরিবার থাকবে।
আমি এতক্ষন শুধু চুপ করে ওর কথা গুলো শুনছিলাম। আর ওকে দেখছিলাম ও এমনিতেই অনেক মায়াবী চাদের আলোতে ওকে আরো বেশি মায়াবী লাগছে। আমার চোখে চোখ পড়তেই ও লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোটে আলতু করে একটা চুমু এ্যাকে দিয়ে বললাম তোমার সব স্বপ্ন পূরনের দায়িত্ব আজ থেকে আমার তুমি শুধু আমাকে ও আমার আব্বু-আম্মুকে একটু ভালোবেসো তাতেই হবে।
(সমাপ্ত)