নীল আকাশটা আজ নীলচে আভা হারিয়েছে।রবি তার কিরণ বিলাতে ব্যর্থ।বস্তুত এটা কিছু বাষ্পরাশির ধূম্রজালের ছন্দ অঙ্কনের প্রাকৃতিক নিয়ম।
এই দৃশ্যমান ছন্দগুলো কতই না চমকপ্রদ।কখনো কখনো মেঘরাশি অন্তরিক্ষের বুকে দীপপুঞ্জ হয়ে ঠাই দাড়িয়ে থাকে।এটা কি কোনো প্রাকৃতিক নিয়ম?
যদি প্রাকৃতিক নিয়ম হয়ও তাও ভালো।তাহলে এই প্রাকৃতিক নিয়ম গুলো কিভাবে চলে?কে এসব সুনিপুণ ভাবে তৈরি করেছে?
এই মাঠের মধ্যে কতো চাঁপা ঘাস কে এসবের গাঁয়ে সবুজ রং মাখিয়েছে?
এসব কি আপনা আপনিই হচ্ছে!
যদি তাই হতো তবে এই সুন্দর দূর্বাঘাসের মনোরম মাঠটা তো সাগরও হয়ে থাকতে পারতো।কিন্তু তা না হয়ে মাঠ হলো কেনো?
রিয়াদ মাঠের মধ্যে বসে এসব চিন্তা করছে একা একা।আর বার বার আকাশের দিকে নয়নের দৃষ্টিসীমা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
পৃথিবীর বুকে যদি সবচেয়ে বড় সুখ বলে কিছু থাকে,তবে সেটা দৃষ্টিসুখ।প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্যের মাঝেই দৃষ্টিসুখ লুকোচুরি খেলে।
লুকোচুরির আড়ালে কে থাকে?
কি জানি!এতো কিছু কল্পনা শুধু শুধু সুস্থ্য মস্তিষ্কের পন্ডশ্রম বটে।তবু হাজারো প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে করে রিয়াদের।
ছোটবেলার কথা মনে পড়ে রিয়াদের।মা বলতেন ঐ আকাশে আল্লাহ্ থাকেন।তিনিই আমাদের সৃষ্টি করেছেন।তাই আমরা তারই ইবাদত করি।
ছোটবেলা থেকেই রিয়াদ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।রিয়াদ এর মা রিয়াদকে নামাজের সব দুআ শিখিয়েছে।আরবী পড়ার জন্য মক্তবে পাঠিয়েছে।
কিন্তু রিয়াদ মক্তবে না গিয়ে পাশের গ্রামের দুষ্ট ছেলেদের সাথে মার্বেল খেলতো।মক্তবের আরবী শিক্ষা আর নেওয়া হয়ে ওঠেনি।
আরবী পড়তে না পারায় রিয়াদের বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়।স্কুলের ধর্মশিক্ষা বই শুধু পরিক্ষাতে ভালো ফলাফল করার জন্যই পড়ে।
ধর্মের যে তাত্ত্বিক জ্ঞান সেটা তখন উপলব্ধি হয়না।শুধু মায়ের কথা মতো পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে যায়।
রিয়াদের মনে পড়ে, স্কুলের বইয়ে হয়তো একদিন পড়েছিলাম গাছপালা,পাহাড়-পর্বত,নদী-নালা,চাঁদ,সূর্য এসব কিছুর সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন।
যার সম্মুখে নত হয় শির।তিনিই তো মহামহিম।
আজ রিয়াদ সৃষ্টিশীল জীব জগত নিয়ে চিন্তাশীল।
চিন্তার এপার-ওপার মিলাতে মিলাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের “আল্লাহুআকবার আল্লাহুআকবার” ধ্বণি তার কানে ভেসে আসলো।
কয়েকদিন ধরে নামাজ ঠিক মতো আদায় করা হচ্ছে না।কেমন যেনো অপরাধী মনে হয় নিজেকে রিয়াদের।
তাড়তাড়ি উঠে রিয়াদ মসজিদের দিকে রওনা দিলো।
মাগরিবের নামাজের কাতারে দাড়িয়ে যখন ইমাম সাহেব “আল্লাহুআকবার” বলে বুকে হাত বাঁধে রিয়াদের দু-চোখ ছলছল করে ওঠে।
রুকুতে যায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় নিজের ভুল ত্রুটির জন্য।রুকু থেকে উঠে যখন সিজদাহ্ করে।এবার সত্যি সত্যি রিয়াদ কেঁদে ফেলে।
নামাজ শেষে রিয়াদের নিজেকে অনেক হালকা মনে হয়।নিষ্পাপ এক মানব মনে হয় নিজেকে।
রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দু-তিনটা অটো চালককে জিজ্ঞেস করে, রামনগর যাবেন মামা?
উত্তর আসেনা ওপাশ থেকে, অটো বাইকও থামেনা রাস্তার পাশে।
হাঁটতে হাঁটতে লিলি মোড়ে আসে রিয়াদ।একজন লোক কড়াইতে গরম বালুর মধ্যে কাঁচা বাদাম দিয়ে ভেজে নিচ্ছে।
তা দেখে রিয়াদের বাদাম খেতে খুব ইচ্ছে করে।
মামা, দশ টাকার বাদাম দেনতো।বাদাম হাতে নিয়ে রিয়াদ মানি ব্যাগ থেকে একশত টাকার নোট বের করে দিলো।
‘মামা ভাংতি হবেনা?’
সাথে সাথে রিয়াদ মানি-ব্যাগের ছোট পকেটটাতে তর্জনী আর মধ্যমা আঙুল দুটি প্রবেশ করালো।
দু-টো পাঁচ টাকার কয়েন বার করে বাদাম বিক্রেতাকে দিলো।বিক্রেতাও খুশি হলো।খুশিটা না দেখা গেলেও স্বস্তিটা নিশ্চিত দৃষ্টির বাইরে যায়নি।
সত্যিই মানি ব্যাগের ছোট পকেটগুলো মানুষকে খুশি করার জন্যই বোধ হয় তৈরি করেছেন।
সেই পকেট এর জন্য চকলেট বিক্রেতা খুশি, বাদাম-বুট ওয়ালা খুশি, আরো খুশির মহাখুশি ফকির বাবা ভোলানাথ।
যেদিনই কলেজের গেটে রিয়াদ দাড়ায় রিতিমতো ফকির ভোলানাথ বাবা সামনে এসে হাজির।
আর যখন মানিব্যাগে তর্জনী আর মধ্যমার প্রবেশ হয়,
তখন হয়তো ভোলানাথ গীতার যে সামাণ্য কিছু শব্দ মনে রেখেছেন তা মনে মনে সব কয়টা ঠোঁটস্থ বলে ফেলেন কয়েকবার।
যেনো পকেটে আর দু-টো পয়সা বেশি থাকে।
সত্যি ভোলানাথের দু-টো পয়সা বেশি পাওয়ার আত্মহারা খুশি, আমাকে আত্মভোলা বানিয়ে দেয়।
,
রিয়াদ বাদামগুলো না খেয়ে ওভাবেই পকেটে পুরে নেয় মোড়ানো পেপার সুদ্ধ।লিলি মোড়ে অটো বাইক নিয়ে হোস্টেলে চলে আসে রিয়াদ।
,
রিয়াদ অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে।স্বনির্ভরতার জন্য একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করছে।শহরে হোস্টেলে থেকে পড়া-লেখা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু পুস্তকের লিপিবদ্ধ জ্ঞান তার প্রাকৃতিক চিন্তাধারার মস্তিষ্কের তৃষ্ণাতুর ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারেনা।
তাই একটু সময় পেলেই প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখতে ছুটে চলে এদিক সেদিক।
কখনো সবুজ মাঠে, কখনো বা শ্যামল পাথারে।এক কথায় রিয়াদকে প্রকৃতি প্রেমী বলা যায়।
(আবির)
রিয়াদ মধ্যবিত্ত্ব পরিবারে ছেলে।বাস্তবতার কুঠারাঘাত জীবনের প্রত্যেকটা পরতে পরতে পেয়ে বড় হয়েছে।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে রিয়াদ সবার বড়।বোনটা এবার এস,এস,সি দেবে।আর ছোট ভাইটা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
মা ঘরের কাজ-কর্ম করে।বাবা কৃষক।নিজেস্ব কিছু জমা-জমি আছে সেগুলো চাষাবাদ করে।
আহামরি কিছু না হলেও সবকিছু মিলে ভালোই সুখে চলে তাদের সংসার।
কিন্তু ঐ যে কৃষকের ঘরে অভাব আসে কার্তিক মাসে।সে রকম রিয়াদের ঘরেও অভাব আসে।
নিজের সামণ্য বেতনের কিছু অংশ পরিবারে দিয়ে সংসারের কঠিন সময়টা দূর করার চেষ্টা করে রিয়াদ।
আলহামদুলিল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তার পরম অনুগ্রহে অভাব এর কাঠিণ্যতা দূর হয় পরিবার থেকে।
,
সময় ক্ষেপণ হয়।ধীরে ধীরে পড়া-লেখার দ্বার প্রান্তে এসে পৌছায় রিয়াদ।
এখন উদ্দেশ্য একটা সরকারি চাকুরি নামক ‘সোনার হরিণ’ হাসিল করা।
কিন্তু ‘সোনার হরিণ’ তো তাদের প্রাপ্য যারা বংশ পরস্পরায় এসবের উত্তরাধিকারী।
কিন্তু এ আধার রিয়াদের ছোট মস্তিষ্কের জ্ঞানপুঞ্জে শোভা পায়না!
একের পর এক চাকুরীর জন্য ইন্টার ভিউ দিতে দিতে যখন বয়স গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধিন্যস্ত কাজ করার ক্ষমতাকে বাই বাই জানায়।
ঠিক তখনি পূর্বের কোম্পানিতে প্রমোশন জুটে যায়।
হতাশা কমে।সুখ আসে দুঃখের দ্বার প্রান্তে।স্বস্তির নিঃশ্বাস ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে।
যেনো হাজার বছর দৌড়ানোর ক্লান্তি কিছুটা কমে যায়।প্রাণে মিলে পরম প্রশান্তি।
,
বছর পেরুতেই বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসতে শুরু করে।
ঘটক মশাই যখন মেয়ের রূপ লাবণ্যের কথা বর্ণনা করে, তখন যেনো মনে হয় ঘটক নিজ হাতেই কণ্যাকে তৈরি করেছে।
মাঝে মাঝে রিয়াদ এর মনে হয় ঘটককেই বিয়ে দেই আরেকবার!
চারদিক থেকে বিয়ের জন্য যেনো উঠে পড়ে লেগেছে লোকজন।
রিয়াদের মা নিজেও এখন রিয়াদকে বিয়ের জন্য কানাকানি শুরু করেছে।রিয়াদ মা-কে শুধু বলছে একটু ধৈর্য ধরো মা।
কে শুনে কার কথা।
শুক্রবারের দিন হঠাৎ মা বললো
–তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি বাবা।তোর নাসিমা চাচীর বোনের মেয়ে।দেখতে যেমন রূপোসী, তেমনি ধার্মিক।
বাড়ির রান্নাবান্নার কাজ-কর্ম সব পারে।আর মেয়েটা এবার ইন্টার পরিক্ষা দেবে।পড়াশুনাতেও নাকি অনেক ভালো।
–মা তুমি এসব বন্ধ করবে এখন!
–শুনো বাবা আজ তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে মেয়েটা দেখতে।
–কি?মাথা ঠিক আছে তোমার?
–দেখো বাবা আমি ওদেরকে কথা দিয়েছি আজ যাবো।এখন কি তুমি তোমার মায়ের কথার দাম নষ্ট করবে?
তুমি দেখতে গেলেই তো আর বিয়ে দিচ্ছিনা।তোমার পছন্দ হতে হবে তারপর তো বিয়ে।
–মা তুমি একটা বার আমাকে বলতে পারতে।
–আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।এখন দাড়িগুলা কেটে রেডি হও।বিকেলে দেখতে যাবো।
–দাড়ি না, এখন ন্যাড়া করবো!
–কেনো এমন করছিস বাবা? আচ্ছা আজ চলো আর কোনদিন আমি এ ব্যপারে কথা বলবোনা।
মায়ের অভিমান দেখে রিয়াদ রাজি হয়।
.
যহরের নামাজ শেষ করে দুপুরের খাবার খেয়ে রিয়াদ বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয়।
জানালার পাশ দিয়ে শরৎ এর পুরিয়া বাতাস শিলশিল করে ঘরের মধ্যে ঢুকে।ঘুমের জন্য নয়ন চেপে দেয়।
–রিয়াদ তাড়তাড়ি তৈরি হয়ে নে বাবা।
মায়ের ডাকে চোখের পাতা খুলে রিয়াদ।বিছানা ছেড়ে উঠে আকাশী রংয়ের পাঞ্জাবিটা গাঁয়ে দিয়ে বেরোয় রিয়াদ।
পেছন থেকে ছোট বোন সাদিয়া বলে ওঠে ভাইয়া, তুই কি আজই বিয়ে করে আনবি নাকি পাঞ্জাবি পড়ে যাচ্ছিস।হিহিহি….
রিয়াদ ছোট বোনের মশকোরাতে লজ্জা পায় একটু।
–আরে নাহ্।মা জোরাজুরি করলো তাই দেখতে যাচ্ছি।
–হুম ভালো।
.(আবির)
একটা গোলাপী রংয়ের বাড়ির সামনে অটোটা থামাতে বললো মা।
গেটের বড় বড় অক্ষরে লিখা ‘রাইসা ভিলা’।অটোওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে মায়ের পিছুপিছু বাড়ির ভিতরে ঢুকলো রিয়াদ।
খুব সাধারণ একটা বাড়ি।চারদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।বাড়িতে লোকজন কম মনে হচ্ছে।একজন মধ্যবয়সী লোক মা-কে সালাম দিলো।
রিয়াদ সালাম দিলো ভদ্রলোককে।লোকটা ঘরের মধ্যে নিয়ে গেলো ছোপার মধ্যে বসতে বললো।
রিয়াদ খুব অসস্থিবোধ করছে।মা লোকটির সাথে বিভিন্ন কথা-বার্তা বলছে।
কথা শুনে রিয়াদের মনে হলো এই ভদ্রলোকের মেয়েকেই দেখতে আসছে সে।রিয়াদ মাথা নিচু করে বসে আছে।
দরজার খুলার শব্দ পেয়ে নিজের অজান্তেই রিয়াদের দৃষ্টি দরজার দিকে চলে যায়।আর দেখতে পায় এক অন্নপর্ণাকে।
হাতে নাস্তার ট্রে, মাথায় ঘোমটা, চোখে তার উচ্ছলতার দৃষ্টি।
রিয়াদের নিষ্পাপ চোখ কিছুক্ষনের জন্য সে দৃষ্টিতে হারিয়ে যায়।একি রূপ গো, প্রকৃতির সবুজ মাঠের চেয়েও অমায়িক!
মুখে তার লজ্জার রক্তিমা।যেনো শরৎ-এর কাশফুলের সমস্ত সৌন্দর্য তার চেহারায় এসে ভার করেছে।
মুগ্ধ হৃদয়ের কল্পলতা যেনো এমনি।
–কি-রে রিয়াদ নাস্তা খাওয়া শুরু কর।
মায়ের ডাকে রিয়াদ বাস্তবে ফিরে। দ্রুত নাস্তা খেতে শুরু করে।
গল্প-সল্প শেষে মা-কে নিয়ে বাড়ি আসে রিয়াদ।
মা, জিজ্ঞাসা করে মেয়েটা কেমন লাগলো?পছন্দ হয়েছে কি?
রিয়াদ শুধু হাসে আর বলে মা তোমার পছন্দ হলে আমারও পছন্দ।
–হুম বুঝলাম।তোর বাবাকে আমি বলছি। এখন কবে বিয়ের দিন তারিখ করবো বলো।
–তোমাদের যখন ভালো মনে হয় মা আমাকে জানিও আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেবো।
–আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে সামনে মাসের এক তারিখ থেকে বিয়ে শুরু।
আমি তোমার আব্বাকে রাইসার আব্বার সাথে এ ব্যপারে কথা বলতে পাঠাবো আজ।
–আচ্ছা মা।
নামটাও শুনা হয়ে গেলো।তার মানে মেয়েটার নাম রাইসা।সে জন্যই বাড়ির গেটে লিখা হয়েছে ‘রাইসা ভিলা’।ভালোই তো।
.
রিয়াদ এক অপরিচিত মেয়েকে বিয়ে করলো।আজ তার ফুলশয্যার রাত।রিয়াদ ঘরে ঢুকে সালাম দিলো।
রাইসা সালাম নিয়ে রিয়াদকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছেন?
–আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।আপনি কেমন আছেন।
–হুম আমিও ভালো আছি।কিন্তু আমাকে আপনি করে বলছেন কেনো?
–আপনি বলছেন তাই।
–দেখুন আমার অনেক দিনের ইচ্ছা আমার জামাই আমাকে ‘তুমি’ করে ডাকবে, আর আমি আপনি করে বলবো।
–হুম।কিন্তু এমনটা কেনো?
–কারণ আমি আমার জামাইকে শুধু ভালোই বাসবোনা,শ্রদ্ধা-সম্মান দিয়ে সবকিছুর উর্ধ্বে রাখতে চাই।
–হুম।আচ্ছা এখন ঘুম পাইছে খুব ঘুমাবো।তুমিও শুয়ে পড়ো।
–কিহ্! আজ আমাদের ফুলশয্যার রাত না!
উঠুন উঠুন আগে আপনার সাথে আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বো।তারপর সারারাত বসে গল্প করবো।
–কিহ্ ! সারারাত গল্প কেনো? আমি ঘুমাবো ঘুম পাইছে খুব।
–ওকে তাহলে থাকেন আপনি আপনার ঘরে, আমি শ্বাশুড়ী আম্মুর কাছে গেলাম উনার সাথে গল্প করবো।
রিয়াদ হাতটা টেনে ধরে পেছন থেকে। আরে বউ রাগ করছো কেনো?
আচ্ছা সারারাত গল্প করবো।এখন চলো ওযু করে আসি।
–চলেন।
রিয়াদ আর রাইসা ওযু করে নামাজ আদায় করে।
জাইনামাজে বসেই রাইসা রিয়াদকে বলে ‘আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে কি দোয়া করলেন?
–আমাদের হাজারো কষ্টের মাঝেও যেনো একে অপরের থেকে ভালোবাসা কখনো না কমে।
আর আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহ্ যেনো তোমার চাহিদাগুলো পূর্ণ করার শক্তি দেন।
তুমি কি চাইলে?
–আমিন।
আল্লাহ্ যেনো এই পরিবারের মধ্যে আমার দ্বারা সুখ বয়ে আনে।আর পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের মন যাতে পূর্ণ করতে পারি।
–আমিন।তোমার মতো বউ আমার জন্য সুখের প্রদীপ।
আলহামদুলিল্লাহ্।
–আচ্ছা চলেন ঘুমোতে যাই।
–তুমি না বললে সারারাত গল্প করবে?
–গল্প কি এখনে বসে বসে করবো নাকি! বিছানায় চলেন আপনার বুকে মাথা রেখে গল্প করবো।
–আচ্ছা চলো।
রিয়াদ শুয়ে আছে। রিয়াদের বুকে মাথা রেখে রাইসা গল্প বলছে।তারা কি করবে, কি করবেনা।
জ্যোছনা রাতে জ্যোছনা দেখবে।আরো কতো কতো স্বপ্নের কথা বলতে থাকে মেয়েটা।
রিয়াদ আলতো করে চুলে বিনি কেটে দেয়, আর কল্পলতার স্বপ্নরাণীকে পাওয়ার পূর্ণতা ভাবতে থাকে।
কথা রাজ্যের কথা মিতালি যেনো আজ তার বিকে শতশত স্বপ্ন কথা বুঁনছে।
এ যে অমৃত সুখ।হাজার বছর অনুভব করলেও তৃষ্ণা মিটেনা।
হঠাৎ লক্ষী পরীটাকে নিয়ে নীল আকাশের বুকে উড়তে ইচ্ছে করে রিয়াদের।ছোট ছোট সাদা মেঘের ভেলায় চড়তে ইচ্ছে করে।
নিজের অজান্তেই রাইসাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিয়াদ।রাইসাও প্রিয় মানুষটির বুকে লুকোতে চায় নিজেকে।
গল্প থেমে যায় ঘুমিয়ে পড়ে দু-জনে। সুখ এভাবেই আসে দুটো আত্মার পরম তৃপ্তিতে।