একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প

একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প

দূরে থাকতেই বাসটা দেখতে পেলাম । এই বাসটা ধরতেই হবে। নইলে মিস হয়ে যাবে ইন্টারভিউ । অবশ্য ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে আজ কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না । অন্তত এই পোষাকে তো নয়ই। আর দশটা ফিটফাট ছেলের সামনে আমার এই কাক ভেজা চেহারা নিশ্চয় দর্শনীয় কিছু হবে। এই বৃষ্টিতে ছাতা ছাড়া বের হওয়া ঠিক হয়নি । হাজার চেষ্টাতেও ছাতা খুজে পেলাম না। বাসার একমাত্র ছাতাটা নিয়ে ছোটবোনটা স্কুলে চলে গেছে। ভাইয়াও কাক ভেজা হয়ে গেছে অফিসে। আমাদের বাসায় আরও দুটো ছাতা ছিল –আমি হারিয়ে ফেলেছি গত সপ্তাহে। বৃষ্টি থেমে গেলে আর ছাতার কথা মনে থাকেনা আমার।

ভেবেছিলাম একজন যাত্রীদেখে বাসটা থামবেনা ,কিন্তু বাস থামল । এম্নিতেই কাকভেজা আমি, নিজেকে আরেকটু বৃষ্টিস্নান করিয়ে বাসে চাপলাম। কি আশ্চার্য্য, এই ঝুম বৃষ্টির দিনেও বাসে একটা সিট খালি নেই। বাংগালীকি আলসামি ঝেড়ে ফেললো নাকি!? না সব অজুহাত শেষ?

ভাবতে ভাবতেই একটু হাসলাম । ভাইয়ার কথা মনে পড়লো-বিয়ের পর গত পাঁচ বছরে একদিনও অফিস কামাই করতে পারেননি । বৃষ্টি , ঝড় , জ্বলোচ্ছাস,বন্যা যাই হোক ভাইয়াকে অফিসে যেতেই হয়েছে। ভাবির জন্য। বঊদের কারনে যদি বাংগালি কর্মঠ হয় ক্ষতি কি?

থার্ড রোতে একটা সিট খালি আছে। একটা মেয়ে বসে আছে তাতে , জানালা দিয়ে মুখটা বের করে আছে বলে দেখা যাচ্ছেনা । মেয়ের পাশে বলেই হয়তো কেউ বসে পড়েনি। আমার জন্য ভালই হল । ভাজা শরিরে দাঁড়িয়ে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে তাই কিছু না বলেই টুপ করে বসে পড়লাম।চমকে মেয়েটা তাকাল আমার দিকে, তাকিয়েই রইল।

-কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করলাম।

-চিনতে পেরেছেন। একটু দুর্বল গলায় বলল মেয়েটি।

-চিনতে পারবনা কেন? একটু হাসলাম আমি।

আমি আসলেই সুমিকে চিনতে পেরেছি। আমি যে ঠিকঠাক চিনেছি এটা বুঝলাম যখন আমার বুকের ভেতর একটু চিনচিনে ব্যথার অনুভূতি হল। আমি জানি এটা স্বাভাবিক নয়। মেয়েটি আমার কেউ নয়; বছর দুই আগে আমার সাথে বিয়ের কথা হয়েছিল মেয়েটির । পারিবারিক আলোচনায়। পরে বিয়ে ভেংগে যায় । কাজেই এই সময়ে এসে মন কেমন করারা কোন মানে হয় না । কিন্তু এখন এই দু বছর পরে মেয়েটিকে না পাওয়ার দুঃখবোধ আমার মনকে কেমন অবশ করে রাখলো। এ আমার কেউ নয় ,কিন্তু কি না হইবার পারতো; একরাত্রি গল্পের মত ।

-ক্ষমা করেছেন আমাকে?

-ক্ষমার কথা বলছ কেন ? সত্য বলেছ তুমি । একজন কে ভাল না লাগা তেমন অপরাধের কিছু না । তাছাড়া এতদিন পরে ওসব আর কেন । তার চেয়ে বরং হাবিব সাহেব কেমন আছে বলো।

হঠাত কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল মেয়েটার মুখ। রক্তশূন্য ; একেবারে পেজা তুলার মত সাদা। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল আমার । কোন আঘাত পায়নিতো মেয়েটা?!

-বলতে না চাইলে থাক। মেয়েটার মুখের বর্ন ফিরিয়ে আনার জন্য তারাতারি বললাম আমি।

-থাকবে কেন শুনুন । তাছাড়া শুনার রাইট আপনার আছে।

বলে কিছুক্ষন ভাবল , হয়তো কথা গুছিয়ে নিচ্ছে। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে যেন বলেইনি কিংবা এত দ্রুত যেন মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে এমন ভাবে বলল,হাবিব অন্য একটা মেয়ে কে বিয়ে করেছে।

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। হাবিব, যে ছেলেটার জন্য আমার সাথে বিয়েতে মেয়েটা রাজি হয়নি, সে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে!!

-সরি , জানতাম না আমি।

একটু যেন হাস্লো সুমি। আহারে, কি করুন সেই হাসি । আমার বুকের ভেতরটা কেমন দুমরে যেতে থাকলো । কি অদ্ভুত!

-এত ফরমাল হচ্ছেন কেন? আপনিতো কোন অপরাধ করেননি! বরং আমিই…………

এটুকু বলেই মাথা নিচু করলো । তারপর বলল , আপনার স্বপ্নটা ভেংগে দিয়েছি বলেই হয়তো আমার স্বপ্নটা জুড়ল না।

স্বপ্ন! আমার স্বপ্ন!! হন্যে হয়ে চাকরি খোঁজা এক বেকার যুবকের স্বপ্ন!! হ্যা, স্বপ্ন আমার ছিল বটে, দু বছর আগে, যখন বিয়ের কথা চলছিল। বেকারের আরাধ্য একটা চাকুরীর স্বপ্ন নয়। একজোড়া হরিণ চোখের গহীনে হারানোর স্বপ্ন, এক রমনীর কালোচুলে গিট পাকিয়ে ভবিষ্যত বাধার সপ্ন। হ্যা স্বপ্ন আমার ছিল, এক যুবতির লাল ঠোট স্পর্শ করার সপ্ন, বর্ষাস্নাত রাতের পর স্নিগ্ধ সকালের স্বপ্ন।

তখন ভাবি একদিন বললেন , সুমি ফোন করেছিল । কথা বলতে চায় তোর সাথে।

আমি বললাম ,কেন?

-যা ঘুরে টুরে আয়, বিয়ের পরতো ঘর থেকে বের হবিনা ।

ভাবির দুস্টামিতে লজ্জা পেলেও ভাললাগার পরিমান ছিল বেশি। আমার ভাল্লাগা টুকু বিকেলে উবে গেল। সুমি শুনাল হাবিব সাহেবের কথা। বিয়েটা ভেংগে গেল। তারপর আর কোন আগ্রহ পাইনি বিয়ের ব্যপারে।

তারপর আর কি বলব! বসে আছি চুপচাপ।

-আমি নেমে যাব সামনের স্টপেজেই। সুমি বলল।

-অ।

-একটা এন জি ও তে কাজ করি ।ভালই চলে যাছে আমার।

নিজ থেকেই বলছে মেয়েটা,আপনি কি করেন?

-আমি ? আমি কিছুই করিনা ,বেকার।

-বিয়ে?

-দিনকাল তেমন পাল্টায়নি । পাত্র হিসেবে বেকার ছেলেরা আজো মেয়েদের অপছন্দের।

আঘাত দেওয়ার জন্য বলিনি,তবুও কালো হয়ে গেল মেয়েটার মুখ। আবার আমার বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল! না , এভাবে বলা ঠিক হয়নি। নিজেকে সামলে বলতে যাব কিছু এমন সময় উঠে দড়াল সুমি, আমি নামব।

আর বলা হল না । সরে জায়গা করে দিলাম।

যাওয়ার সময় আবার তাকাল সুমি,একদিন আসুন না আমার অফিসে। চা খেয়ে যাবেন !

আমি সুমির গভীর কালোচোখে তাকিয়ে কিছু খুজলাম। সেখানে কি আকুতি? জানিনা ! তবে একটু কষ্টের জল মনে হয় আছে। আমি তাতেই দ্রবীভূত হলাম। তার চোখের গভীরে তাকিয়ে ফিসফিস করে যেন নিজেকেই শুনালাম, যাব , নিশ্চয় যাব!

লিখেছেন – অলস রাজা

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত