অনেক দিন হয়ে গেছে গল্প লেখা হয় না। একসময় যদিও নেশা ছিলো,হয়তো সেই নেশা এখন আর নেই!থাকবেই বা কিভাবে আমার গল্প নায়কা নিজেই তো আমাকে তাকে নিয়ে গল্প লিখতে নিষেধ করেছে!
আজ থেকে প্রায় এক বছর আগের কথা,তখন সবেমাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছি।তখন বেশ ভালই লেখালেখি করতাম,গল্প লেখা নেশা হয়ে গিয়েছিলো!
সেদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো।গাড়ির মধ্যে বসা ছিলাম, বাসটা যখন একটা বাসস্টপে থামলো তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, মাগরিবের আযান হচ্ছে। গাড়িতে আসার সময় ফেসবুকে একটা অপরিচিতো মেয়ের সাথে কথা হচ্ছিলো, ঠিক তখনও আমি সঠিক জানতাম না এটা কি সত্যি মেয়ে!অথচ এই মেয়েটাই এক সময় কতো পরিচিত হয়ে গিয়েছিলো! তবে তার আইডিটার নাম তো মেয়ে, আর তা ছাড়া অনেক ছেলে ফেক আইডি ব্যবহার করে। একাকিত্ব কাটানোর জন্য মেয়েটার সাথে চ্যাটিং করছিলাম, যদিও আমি সাধারনত চ্যাটিং খুব বেশি পছন্দ করি না! সে নাকি আমার গল্প গুলো পড়ে, আমার লেখা গল্প নাকি তার ভালো লাগে! আযান শুনে তাকে বললাম “আমি নামাজ পড়বো, এখন তাহলে বাই”..
সেই মেয়েটি বললো, “আমার রাইটার তাহলে নামাজও পড়ে,আমি এটা পছন্দ করি “..!
তার ঐ কথাটা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না, কারণ আমার তখন মনে হয়েছিলো আমি তার রাইটার হলাম কিভাবে? আমি তো তাকে চিনিও না, জানিও না!
সেদিন তাকে আমার সবার থেকে একটু আলাদা মনে হয়েছিলো! এভাবেই তার সাথে অল্প কিছু কথা বলতে বলতে একসময় দেখলাম আমি যখনি গল্প লেখার জন্য আসি তখনি সে আমায় এসএমএস করে। আমি অল্প কথায় তাকে রিপ্লে দিতাম, এভাবেই চলছিলো, সে অবশ্য আমায় অনেক সম্মান করতো! প্রথমে অনুমতি নিতো,ফ্রি আছি কি না, সে আমায় বিরক্ত করছে কি না? যদিও প্রথমে একটু বিরক্ত হতাম তবুও কিছু বলতাম না!
একদিন রাতে তার সাথে কথা বলতে বলতে এক সময় বিরক্তিকর লাগছিলো। তো তখন আমি তাকে কিছু শর্ত দিয়েছিলাম। শর্ত গুলো কিন্তুু বেশ কঠিন ছিলো। যেগুলো এখনও আমার অ্যাবাউটে আছে। সব চেয় কঠিন শর্ত ছিলো তার ফটো দেখা, ভাবছিলাম ফটো চাইলে সে দেবে না, আমিও মুক্ত, সে আর আমায় বিরক্ত করবে না!
কিন্তুু সে রাজি হয়েছিলো। সে আমাকে তার কিছু ফটো দিয়েছিলো। অসম্ভব সুন্দর ছিলো মেয়েটা। আমি বিশ্বাসি করতে পারছিলাম না, সত্যি এই মেয়েটা আমার সাথে কথা বলে!
তাকে যে সব শর্ত দিয়েছিলাম আর তার সাথে কথা বলে মনে হয়েছিলো মেয়েটা সবার থেকে আলাদা! আমি বুঝতে পেরেছিলাম সে আমার প্রতি দুর্বল। তাকে প্রথম দেখায় আমারও অনেক ভালো লেগেছিলো, কিন্তুু বলিনি কারণ মেয়েদের মন আর আষাঢ় মাসে আকাশ, কখন যে কি হয় কোন গ্যারান্টি নেই!
সে দিন ১২ই নভেম্বর ছিলো তোমার জন্ম দিন!
‘তুমি রাত ১২টার আগেই আমাকে বলেছিলে তোমায় যেনো আমি জন্ম দিনে শুভেচ্ছা জানাই! আমি ঠিক তাই করেছিলাম। তোমার কি সেদিনের কথা মনে আছে? আমি তোমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম, কিন্তুু তুমি না দেখেই আমায় বলেছিলে কেনো আমি শুভেচ্ছা জানাইনি! অথচ তুমি বলার আগেই আমি শুভ জন্মদিন বলেছিলাম, তুমি দেখোনি কারণ সত্যে আড়ালে যে আরও একটা সত্য থাকে সেটা তো আমার জানা ছিলো না, কারণ তখন তোমায় অন্য কেউ হয়তো ব্যস্ত রেখেছিলো! সেদিন তুমি শুধু আমায় একটা কথা বলেছিলে “আমার বাসা বরিশাল,আমার ইনভাইট চলে এসো।”..
সেই কথাগুলো আজও আমার কানে বাজে,খুব যত্ন করে রেখেছি! থাক না সে সব কথা!
একটা সময় ছিলো আমি কথা এড়িয়ে যেতাম, কথা এড়ানো আমার অভ্যাস ছিলো! তোমার সাথে সর্বদাই কম কথা বলতাম এবং এড়িয়ে যেতাম! আমাদের দুজনের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো! তোমার কি সেই দিনের কথা মনে আছে? যেদিন তুমি আমাকে বলেছিলে, আমি কিভাবে তোমায় প্রপোজ করবো! সত্যি বলতে কি ভালবাসার সঙ্গাটা তো তুমিই আমাকে শিখিয়েছো। তুমি আমাকে ঠিক যেভাবে যেটা বলতে আমি সেটাই করতাম! আমি তোমাকে অনুসরন করতে করতে আমার নিজের ওপর আয়ত্ত হারিয়ে ফেলেছিলাম? অথচও আমি কিন্তুু বার বার তোমাকে আমার মত হতে বলেছি। কোন দিনও তুমি তা হতে পারোনি, আমি অনেকটা সময় চেষ্টা করেছি কিন্তুু তবুও আমি ব্যর্থ!
সেদিনের কথা তোমার মনে আছে, ৯ই ডিসেম্বর! ঐ দিন তোমার সাথে আমার প্রথম কথা হয়েছিলো! তোমার কন্ঠটা শুনে কিছু সময়ের জন্য বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সত্যি এতো সুন্দর মিষ্টি কন্ঠ তোমার! তুমি সেদিন আমার সাথে যতগুলো কথা বলেছিলে তার চেয়ে বেশি হেসেছিলে! সত্যি বলতে কি আমি তো তোমার হাসির প্রেমে পরেছিলাম! তোমার মুখে কি আজও সেই হাসি আছে? হয়তো তো বা আছে তবে কি তা আমার জন্য নাকি অন্য কারও জন্য?
তোমার আমার প্রেমের গল্পটা তো এভাবেই শুরু হয়েছিলো তাই না! সত্যি কতো ভালো ছিলো সেই দিন গুলো!
এখনও খুব মিস করি! একটা সময় ছিলো যখন তুমি আমাকে অনেক সম্মান করতে, কিছু বলতে ভয় পেতে, কিছু বলার আগে অনুমতি নিতে! সত্যি সম্পর্কে যদি শ্রদ্ধা বা সন্মান না থাকে, সে সম্পর্ক বেশি দিন টিকে না! তুমি আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতে। একটা মেয়ে যে একটা ছেলেকে এতোটা ভালবাসতে পারে সেটা তোমাকে না দেখলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না!
আমি তো আমার মতই ছিলাম, মাঝখান থেকে হঠাৎ বদলে যেতে শুরু করলে তুমি! আমার ব্যর্থতা ছিলো শুধু একটাই, তুমি যখন আমাকে বিয়ে করতে বলেছিলে তখন তো আমি তোমার যোগ্য ছিলাম না, হয়তো আমি আজও তোমার অযোগ্য! তোমার বদলে যাওয়া আর আমাদের মান অভিমানের কারনে আমাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে! একটা সময় যে তুমি আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতে না, সেই তুমি এখন আমাকে সহ্য করতে পারো না!বাস্তবতার ওযুহাত দিয়ে আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছো!
তুমি আমি দুজনি হয়তো জিতেছি, হেরে গেছে শুধু আমাদের ভালোবাসা! আমি তোমার প্রায় সমস্থ স্মৃতি যত্ন করে রেখেছি, কিন্তুু তুমি! মাঝে মাঝে তোমাকে এতো পরিমান মিস করি, তুমি ছাড়া সব কিছু শূন্য মনে হয়। কিন্তুু কি করবো বলো, তোমার দেওয়া সব আঘাত অপমান না সহ্য করতে পেরে এক সময় আমিও পিছুটান দিতে শুরু করি, তার মানে এই নয় তোমায় ভুলে থাকতে শিখেছি! নিজেকে শুধু আড়াল করেছি তোমার থেকে, দূর থেকেই না হয় তোমায় ভালবাসবো, তবুও তুমি তো ভালো থাকো!
আজ ১২ নভেম্বর তোমার জন্মদিন! সত্যি দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেলো! এই গত একবছরের কত হাসি খুশির স্মৃতি জমা করে রেখেছি ডায়রির পাতায়!
পাগলি, হ্যাঁ। আমি তোমাকে ভালবেসে পাগলি ডাকতাম, কারণ তুমি আমার জন্য পাগল ছিলে,অথচও মাঝে মাঝে ভুলে যাও কে আমি! কখনও পাগলি, কখনও নিঝুম বালিকা, কখনও বা স্বপ্নবিলাসী কন্যা হয়ে ছিলে আমার জীবনে, হয়তো এখনও আছো! কারণ তোমাকে নিয়েই তো আজও হাজারও স্বপ্ন দেখি। জানি তা কোন দিনও সত্যি হবে না,তবুও স্বপ্ন দেখলে সে তো কোন দিনও নিষেধ করবে না!
তুমিও আমায় ভালবেসে রাইটার বলে ডাকতে! তোমার কথাই সত্যি ছিলো, আমি শুধু তোমারি রাইটার! আজ তোমার জন্মদিন, হয়তো তোমাকে দেবার মত কিছুই আমার কাছে নেই! তোমার কিছু স্মৃতি উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দিলাম! পাগলি তোর হাতটা ধরে বলতে চাই “আমি শুধু তোকেই ভালবাসি “…
বলতে চাই আর একবার…
শুভ জন্মদিন পাগলি…