এইতো কয়েকদিন আগে ফোনে কথা হচ্ছিলো তবাস্মির সাথে । নেটওয়ার্কের প্রবলেম । আমি ওর কথা ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছিলাম না ।
ও রেগে গিয়ে বললো ,
-তুই কি কানে কম শুনিস ?
আমি রোমান্টিক সুরে বললাম ,
-আমার কান তো অন্য কিছু শুনতে চায় !
-কি শুনতে চাস তুই ?
-বুঝিস না ?
-নাহ ! আমার বুদ্ধি কম । তুই বুঝায় দে ।
-আমি শুনতে চাই , কেউ আমাকে বলছে , 1 4 3 !
-এহ ! শখ কতো ! তোকে বলবো কেনো ?
-প্লিজ বল । প্লিজ ।
-উহু । এখন না । সময় আসুক ।
-সময় কবে আসবে ?
-বারো বছর পর ।
আমি মন খারাপ করে বলি ,
-ওকে । তাহলে আমি বলি ?
-বল !
-i love you.
ওপাশ থেকে আর কোনো শব্দ আসে না । তবাস্মি চুপ । তবে আমি জানি , ও হাসছে । স্নিগ্ধ ও মায়াবী হাসি ।
তবাস্মি আর আমি খুব ভালো বন্ধু । আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড । দুজন দুজনকে ছাড়া আমরা এক মুহুর্তও থাকতে পারি না । সারাদিন চলে আমাদের গল্প । রাগ অভিমান । হাসি কান্না ।
আমি আমার মনের কথা অনেকদিন আগেই তবাস্মিকে জানিয়ে দিয়েছিলাম । ও খুব অবাক হয়েছিলো সেদিন ।
তবাস্মি সম্পর্কে কিছুকথা বলা প্রয়োজন । সাধারন মেয়ে । ওর একজন মাত্র বন্ধু আছে । আমি । আমি জানি , আমি ওর সবকিছু ।
তবাস্মি আমার ভালোবাসা গ্রহন করেনি । তবে ও আমাকে দূরে ঠেলে দেয়নি । ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার যে কষ্ট , সেটা তবাস্মি আমাকে কখনো অনুভব করতে দেয়নি । বন্ধুত্বের ভালোবাসা দিয়ে আমার জীবনকে পূর্ণ করে রেখেছে ।
তবাস্মি আমাকে ভালোবাসেনি কিছু কারনে । ওদের পরিবারে এ ব্যাপারটিতে কড়া নিষেধ আছে । ওর পছন্দের মানুষটিকে কখনোই ওর পরিবার মেনে নিবে না । তাই শুধু শুধু ও কষ্ট পেতে চায় না ।
আমি আমার তবাস্মিকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম ,
-তুই কি কখনোই আমাকে ভালোবাসবি না ?
তবাস্মি বলেছিলো ,
– ভালোবাসবো । যদি তোর সাথে আমার বিয়ে হয় ।
-তুই আমাকে বিয়ে করবি ?
-আমার আপত্তি নেই । কিন্তু দুইটা শর্ত ।
-কি কি ?
-যদি আমি অন্য কাউকে ভালোবেসে না ফেলি এবং আমার মা বাবা তোর সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয় ।
তবাস্মির আম্মু বলেছিলো যে এখনো বারো বছর পর তবাস্মির বিয়ে দিবে । আর আমিও অপেক্ষায় আছি ।
এভাবেই আমাদের দিন কেটে যায় । তবাস্মিকে ছাড়া আমি আমার জীবন কল্পনা করতে পারি না । ও যখন কাঁদে , কষ্ট পায় , আমার তখন ইচ্ছে করে , ছুটে যাই ওর কাছে । ওকে বুকে জড়িয়ে ধরি । ওর সব কষ্ট নিজের করে নিই ।
তবাস্মি খুব খুব ভালো । ওর প্রতিটা বিষয় আমাকে মুগ্ধ করে । সবসময় আমার সাথে থাকে । আমার জীবনে তবাস্মি আসার পর আমি কখনো একাকীত্ব অনুভব করিনি ।
আমার খুব ভালো লাগে , আমি আনন্দে , প্রশান্তিতে আকাশে ভেসে বেড়াই , যখন তবাস্মি বলে , “আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে তোকে খুব চাইতাম । তাই তোকে পেয়েছি । তুই আমার গড্ গিফ্টেড ফ্রেন্ড !”
যখনই আমি কোনো কাজে ব্যর্থ হয়েছি , তবাস্মি আমাকে সাহস দিয়েছে ।
আর কোনো কাজে একটু অবহেলা করলে , তবাস্মি রাগ করে , বকা দেয় । আমার এত্তো ভালো লাগে ! ইচ্ছে করে আরো ওকে রাগিয়ে দিই । কথা বলতে বলতে ও খুব রেগে যায় । চলে যায় । আমি তখন তবাস্মির রাগ ভাঙায় । একটু পর ও বলে ,
-তুই খুব খারাপ ।
আমি হেসে বলি ,
-কতখানি খারাপ ?
ও অভিমানী সুরে বলে ,
-খুব খুব খুব খুব !
আমি বলি ,
-ইয়েস ! তোর বেস্ট ফ্রেন্ড খারাপ ! কিন্তু আমার বেস্টু ফ্রেন্ড অনেক অনেক ভালো । খুউউউব কিউট !
তবাস্মিও হেসে ফেলে । বলে ,
-হয়েছে হয়েছে ! আর ঢঙ করতে হবে না !
একদিন আমি তবাস্মিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ,
-আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না তো ?
তবাস্মি ভালোবাসায় স্নিগ্ধ এক উত্তর দিয়েছিলো ,
-মৃত্যুর পরেও তোকে ছেড়ে যাবো না । পরকালে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি তোকে আবার চাইবো ।
আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম । আমি কেনো এত ভাগ্যবান ?
আরেকদিনের কথা । আমরা গল্প করছি । হঠাত্ তবাস্মি বললো যে ও এখন যাবে । আমি খুব মন খারাপ করলাম । ও তখন বললো ,
-আমার সাথে গল্প না করলে কি হয় ?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন পর বললাম ,
-নিঃশ্বাস না নিলে কি হয় ?
ও মিষ্টি করে হাসলো ,
-আহা ! ঠিক আছে ঠিক আছে ! গল্প করবো এখন ।
তবাস্মি আর যায়নি । যেতে পারেনি ।
আমি যদি ঠিকমতো পড়াশোনা না করি , তাহলেই তবাস্মি আদর করে হুমকি দেয় , আমি কিন্তু খারাপ ছাত্রকে বিয়ে করবো না ! সাবধান !
আমিও পড়তে বসি ।
এইতো সেদিন তবাস্মি হাসতে হাসতে বললো ,
-Good news! Good news!
আমি জানতে চাইলাম ,
-কি ? বল !
-আম্মু বলছে , আমার বিয়ে এগারো বছর পরে !
আমি খুশি হয়ে বললাম ,
-তার মানে , এক বছরের অপেক্ষা কমে গেলো ! আন্টিকে অনেক অনেক অনেক thanks!
-হুমমম্ !!!
তখন আমি বললাম ,
-আমাদের বিয়ের প্রথম এক বছরের ঐ ৩৬৫ দিনই আমি আমার শাশুড়ি আম্মাকে সালাম করবো ! ওঁনার কারনেই তো এক বছর আগেই তোকে পাবো !
আমার কথা শুনে তবাস্মির সে কি হাসি !!! আমি এত সুন্দর করে কাউকে হাসতে দেখিনি । তখন মনে মনে বলছিলাম , তোকে যেন এভাবেই হাসিখুশি রাখতে পারি । সারাজীবন । …
আমি জানি , তবাস্মিকে হয়তো আমি পাবো না । ওর বাবা মা আমাকে পছন্দ করবে না ।
যেদিন অন্য কারো সাথে তবাস্মির বিয়ে হয়ে যাবে , অন্য সুতোয় গাথা হয়ে যাবে তবাস্মির জীবন , তখন আমার কেমন লাগবে ? আমার সব স্বপ্ন যখন অর্থহীন হয়ে যাবে , তখন কেমন লাগবে ? আমি কি নিয়ে বাঁচবো ?
এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই দুচোখ দিয়ে মৃদু ধারায় পানি পড়ে । দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে বসে থাকি । কাউকে জানতে দিই না । বুঝতে দিই না । কিন্তু যার জন্য আমার সব অনুভূতি , সেই ঠিকই বুঝে ফেলে ।
তবাস্মি কাঁদে । কাঁদতে কাঁদতে বলে ,
-তুই এমন কেনো ? কেনো এত ভালোবাসিস ?
আমি কিছু বলতে পারি না । শুধু বলি ,
-আমি তোকে ভালোবাসি । খুব খুব ।
-আমি … আমি তোকে ভালোবাসতে চাই ।
আমার চমকে উঠি । অচেনা অনুভূতি আচ্ছন্ন হয়ে যাই ।
-সত্যি ? প্লিজ একটু চেষ্টা কর । প্লিজ ।
তবাস্মি আরো কাঁদে ।
-আমি পারি না রে ।
-কেনো পারিস না ? একটু । একটু চেষ্টা করবি না ? আমার জন্য ।
-আমি তোকে ভালোবাসলে তুই অনেক কষ্ট পাবি । আমার ফ্যামিলি কখনোই মেনে নিবে না । আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই না । প্লিজ । প্লিজ অপেক্ষা কর । আল্লাহ চাইলে আমি তোর হবো । শুধু তোর ।
আমি কান্না থামায় । তবাস্মির চোখও মুছে দেই ।
নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হয় । আমি তো জানি , আমি তবাস্মিকে পাবো না হয়তো । তাই এখনই ভালোবাসা চাচ্ছি । এই ভেবে যে অন্তত ভালোবাসা নিয়ে তো মরতে পারবো । কিন্তু তবাস্মির কথা একবারও ভাবছি না । আমাকে ভালোবেসে পরে আমাকে না পেলে ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে । আমি তা চাই না ।
মনে মনে ভাবি , আমি আর কখনো ভালোবাসা চাইবো না । ও কে কষ্ট দিবো না । আমি অপেক্ষা করবো ।
এভাবে নানা রঙে রঙিন হয় আমাদের বন্ধুত্ব । মাঝে মাঝেই তবাস্মি দুষ্টুমি করে বলে ,
-তুই দিন দিন খুব রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছিস ! ব্যাপার কি রে ? হুমম্ ?
আমি বলি ,
-হবোই তো ! বিয়ের তো আর বেশি দেরি নাই ! মাত্র এগারো বছর !
আর তখনই আমি তবাস্মিকে নিয়ে আমাদের কল্পনা রাজ্যে ডুব দিই । দুজন হাত ধরে সমুদ্র তীরে হাটি । সমুদ্রের ঢেউ আমাদের পা ভিজিয়ে দেয় । জলের শীতল স্পর্শে কেপে ওঠে তবাস্মি । উষ্ণতার খোঁজে ও আমার খুব কাছে চলে আসে । আমি সেভাবেই আকাশের পানে সূর্যাস্ত দেখি । আর তবাস্মির মায়াবী মুখে দেখি আমার জীবনের সূর্যোদয় । সুখস্বপ্নের সূচনা ।