অফিস শেষ করে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্য বাসের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আকাশ। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে মাথার উপর,সঙ্গে ছাতা না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাসের জন্য।
হঠাৎ করে পিছন দিক থেকে কেউ একজন এসে মাথার উপর ছাতা ধরে পাশে দাঁড়ালো। আকাশ মুখ ফিরিয়ে তার দিকে তাকালো কিন্তু চিনতে কষ্ট হলো অনেক।কারণ এমন ভাবে মুখ চোখ বাধা চেনার উপায় নেই। যিনি ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি আকাশের অফিসের এক সহকর্মী । দুজন পাশাপাশি একসাথে কাজ করেন। আকাশ ধন্যবাদ দিয়ে তার ছাতার নিচ থেকে বের হয়ে দাঁড়ালো কারণ অফিসের অন্যরা দেখে যদি কিছু মনে করে এই ভয়ে। ছাতার নিচ থেকে বের হওয়ায় আকাশের সহকর্মী আকাশের উপর কিছুটা রেগে উঠলেন। সহকর্মী হঠাৎ রেগে উঠার কারণে আকাশ একটু অবাক হয়ে গেলেন।
একটা কথা আগেই বলে নেই, আকাশের সহকর্মীর নাম ছিলো মেহেরুন নাহার মেঘা।
মেঘার এরকম রেগে যাওয়ায় আকাশ একটু অবাক হলেন। কোন কথা না বলে আকাশ নিজের মতো করে বৃষ্টিতে দাঁড়ালো । মেঘা আবারো পাশে গিয়ে ছাতাটা আকাশের মাথার উপর ধরলো।কিন্তু এবার আর আকাশ নিজেকে সরাতে পারলো না।চুপ করে এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো বাসের জন্য।
কিছুক্ষণ পর মেঘা বলে উঠলো মানুষের উপকার করতে নেই। কারণ নিজের ইচ্ছেই উপকার করছি বলে ভাব বেড়ে গেছে এক একজনের। এক ছাতার নিচে দাঁড়ালে মনে হয় মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই তিনি বার বার ভাব নিয়ে বের হচ্ছেন। মেঘার বকবক শুনে আকাশ ছোট্ট করে বলে উঠলো দুঃখিত,ভুল হয়েছে। মেঘা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো দুঃখিত আমার বলা উচিৎ ছিলো কারণ আমিতো নিজে এসে উপকার করতেছি। আপনিতো বলেন নাই। আকাশ কোন কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।চুপ করে থাকার কারণ মেঘার কথার যুক্তি খুঁজে পেয়েছিলো আকাশ।
বৃষ্টির দিন, রাস্তা গাড়ীর পরিমাণ খুব কম কিন্তু মানুষের পরিমাণ অনেক বেশি।দু একটা গাড়ী আসছে কিন্তু চড়ার মতো পরিবেশ নেই। আকাশ একা হলে কোন সমস্যা ছিলো না কিন্তু মেঘাকে একা রেখে স্বার্থপরের মত কিভাবে যায়।অনেকসময় দাঁড়িয়ে থাকার পর আকাশ বলে উঠলো চলেন সিএনজি করে বাসায় যাওয়া যাক। মেঘা মাথা নেড়ে সায় দিলেন।আকাশ একটা সিএনজি ভাড়া করলেন। তারপর দুজন মিলে সিএনজি করে বাসার দিকে রওনা হলেন। দুজনে চুপচাপ, কোন কথা নেই কারো মুখে। সিএনজি চলছে তার মতো করে। মাঝেমাঝে দুজন দুজনার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে কিন্তু কথা বলার সাহস হচ্ছেনা কারো। আধা ঘন্টা পর তারা দুজনে গন্তব্য স্থলে পৌঁছালে সিএনজি থেকে নেমে যায়। আকাশ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করার আগেই মেঘা সিএনজি ওয়ালার ভাড়া পরিশোধ করে দেয়। ভাড়া পরিশোধ করে একটা রিক্সায় চড়ে নিজ বাসার দিকে চলে যায়।আকাশ অবাক হয়ে তাকিয়ে চেয়ে থাকে।তারপর আকাশও তার বাসার দিকে চলে যায়।
বাসায় ফিরে আকাশ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে টিভি দেখতে থাকে এবং মুড়ি চিবাতে থাকে। হঠাৎ করেই অফিসিয়াল নাম্বারে একটা কল আসে। আকাশ কলটা রিসিভ করা মাএই মোবাইলের ওপাশ থেকে বলতে থাকে আপনি আসলেই একটা গাধা।এতটা পথ একসাথে আসলাম কিন্তু মুখে যেন তালা মেরে রেখেছেন। একটা মেয়ে পাশে বসা কিন্তু কথা বলার মতো সাহস নাই আপনার। আপনাকে বিয়ে করা তো দূরের কথা কোন মেয়ে একধাপ মাটি আপনার সাথে হাটবেনা। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কলটা কেটে দেয় মেঘা।
মেঘার কথাগুলো শুনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে আর ভাবতে থাকে আকাশ আসলেই কি বোকা বোকা লাগে। চিন্তায় পড়ে যায়,মেঘা তো সত্যিই বলছে।এতটা পথ আসলাম কিন্তু কোন কথা বলা হলোনা।
পরদিন সকালে ভয় ভয় করে অফিসে গেলো আকাশ। কিন্তু মেঘাকে কোথাও দেখতে পেলোনা। চারদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো কিন্তু কোথাও মেঘাকে পেলো না। কল করারো সাহস পেলোনা আকাশ কারণ লজ্জা।
অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসলো।বসে মেঘার নাম্বার টা বার বার দেখতে লাগলো কিন্তু কল করতে ভয় পাচ্ছে। কল করলে যদি কিছু বলে,আর কল করে কি জানতে চাইবে। অনেক ভাবার পর ভয় ভয় করে কল করলো মেঘাকে কে? মেঘা কলটা রিসিভ করা মাএই কলটা কেটে মোবাইল টা বন্ধ করে রাখে আকাশ। মেঘার রাগ আর,ক্ষোভে ফুলতে থাকে। পরদিন সকালে গিয়ে আকাশ কে ধরে ফেলে মেঘা।এত যদি ভয় পান তাহলে কল করার কি দরকার।এত বেশি ভয় থাকলে অফিস করেন কেন, বাসায় বসে বসে ঘুমাবেন। কোন উত্তর দিতে পারে না আকাশ।আজকে আর বেশি লজ্জায় পড়ে যায়।
সারারাত ঘুমাতে পারেনা আকাশ, বারবার মেঘার কথা গুলো মনে হতে থাকে। কিছুতেই ঘুম আসেনা, চোখ বন্ধ করলে মেঘার রাগান্বিত মুখখানা সামনে চলে আসে।পরদিন সকালে ভয় ভয় করে অফিসে পা দেয় আকাশ।চেয়ারে বসতেই পিছন দিক থেকে মেঘা বলতে থাকে কি ব্যাপার ঘুম হয়নি বুঝি রাতে।চোখের নিচে দেখি কালো দাগ পড়ছে একরাতে। এরকম মানুষের শাস্তি হওয়া উচিৎ এরকমভাবে। কি উত্তর দিবে খুঁজে পায়না আকাশ। চুপচাপ নিজের মতো কাজ করতে থাকে।
প্রতিদিন ঘুম কম হতে থাকে আকাশের।ঘুমাতে গেলেই সেই রাগান্বিত মুখ সামনে চলে আসে। বার বার মনে পড়তে থাকে মেঘাকে। কি করবে বুঝতে পারেনা। এভাবে মাস পার হয়ে যায়।মেঘাও একটু একটু করে জ্বালাতে থাকে প্রতিদিন।
হঠাৎ করেই একদিন মেঘা চাকরী থেকে অব্যাহতি নিয়ে নেয়। সবাই মিলে মেঘাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়। মেঘা আস্তে করে আকাশ কে ডাক দিলে বলে দুঃখিত। কারণ তোমাকে অনেক দিন ধরে জ্বালাতন করলাম, মাফ করে দিও।সত্যি বলতে কি আমি তোমাকে ভাললবাসতাম কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে একথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিলাম। তুমি বুঝতে পারো নাই আমার ভালোবাসা টা।অনেক বিরক্ত করছি মাফ করো। এই বলে বিদায় নেয় মেঘা।
পরদিন সকালে আকাশ অফিস আসলে কেমন জানি একা একা লাগে। মেঘার জ্বালাতন নেই,কাউকে ভয় করে চলতে হয়না।প্রচন্ড পরিমাণ অনুভব হতে থাকে মেঘাকে।বার বার এদিক সেদিক তাকায় কিন্তু মেঘা আসে না,খোঁচা মারা কথাও কেউ বলে না।এভাবে কয়েকদিন চলার পর মেঘার প্রতি একরকম আসক্ত হতে থাকে আকাশ।বার বার মেয়েটাকে মনে পড়ে।মনে পড়ে তার জ্বালাতন করা কথাগুলো।
অবশেষ আর থাকতে না পেরে আকাশ চলে যায় মেঘাদের বাসায়।কিন্তু ততোদিনে মেঘার অন্য যায়গায় বিয়ে ঠিক হয় । আকাশ দেখে মেঘা একটু অবাক হয়।বোকা ছেলেটা আজ তাদের বাসায় আসছে। আকশকে অনেক যত্ন সহকারে আপ্যায়ন করে মেঘার পরিবার। আকাশ মেঘার সাথে একাকী কথা বলতে চায়। আকাশের একাকী কথা বলার সাহস দেখে মেঘা আরো বেশি অবাক হয় কারণ এত সাহস তো আগে দেখেনি ও।
বাসার ছাদে উঠে আকাশ সরাসরি মেঘাকে বলে উঠে, ‘তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত চলবে না। এ কয়েকটা দিন বুঝছি আমি তোমাকে ছেড়ে থাকা কি কষ্টকর। আমি এ কয়েকদিন তোমার অনেক কিছু মিস করেছি। বার বার তোমাকে ভেবেছি। বার বার তোমার জ্বালাতন, তোমার খোঁচা মারা কথা, তোমার চোখ রাঙ্গানো আমাকে ভুগিয়েছে। আমি বুঝেছি তুমি আমার সব। আমার তোমাকে চাই, তুমি কি ফিরিয়ে দিবে আমায়?’ হাত পেতে দেয় মেঘার দিকে।
মেঘা এ মুহূর্তে কি করবে বুঝতে পারেনা। কারণ একদিকে বিয়ে ঠিক, অন্যদিকে ভালোবাসা। মেঘা চিন্তায় পড়ে যায়, ভাবতে থাকে অনেক। আকাশের দুচোখ ভরা অশ্রু দেখে মেঘা আকাশের ভালোবাসা গ্রহণ করে নেয়। তারপর দুজন মিলে যে মানুষটার সাথে মেঘার বিয়ে ঠিক হয় তার কাছে যায়। মানুষটাকে বুঝিয়ে বলে সব। মানুষটার কাছে দুজনে হাত পেতে দেয়। মানুষটাও তাদের হাত গুলো ভরে দেয় বিশাল এক মহানুভবতা দিয়ে। মানুষটাও তাদের কথায় রাজী হয়। দুজনকে সাহায্য করে মানুষটা। তার পর পারিবারিক ভাবে তাদের বিবাহ সম্পূর্ণ করে নতুন জীবন শুরু করে।