নিস্তব্ধ প্রেম

নিস্তব্ধ প্রেম

দীপ্তিমান আকাশে সূর্য উঠেছে, সূর্যের সাথে নিস্তব্ধ নগরীতে গোলাপ ফুঁটেছে, অবশ্য গোলাপ ফোঁটার কথাই ছিলো কারন আজ যে আমার বিয়ে, আমার নিস্তব্ধ নগরীর ফোঁটা ফুল দেখতে শত শত মানুষ ভীর করেছে কারন ৪ বছর পর আজ প্রথম জমিদার বাড়ি আলোতে ঝলমল করছে, গত ৪ বছর ধরে জমিদার বাড়ি শোকে আহত ছিলো কারন জমিদার বাড়ির এক মাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করেছিলো। বাড়ির গুরুজনের মুখে শুনেছি “ভালোবাসা নামক প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে তিনি নিজের গলায় ফাঁস দিয়েছিলেন”। বাড়ির মেয়েকে হারানোর শোকে সবাই যখন নিরত আমি তখন প্রেম করতে মগ্ন।

জমিদার বাড়ির একমাত্র ছেলে ‘নূর’ যার সঙ্গে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে, এক বছর আগে আমাদের পরিচয় হয় গ্রামে, ভাগ্যের চুমুকে আমরা দু’জন প্রায় নদীর পাড়ে কিছুটা সময় দিতে আসতাম, যখন জানতে পেরেছিলাম আমাদের গ্রামের জমিদারের ছেলে উনি তখন বেশ চমকে উঠেছিলাম।

আমাদের কথোপকথন থেকে শুরু হয় বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব গড়িয়ে তা প্রেমে এসে দাড়ায়।
এক বছরের মাথায় নূর সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বিয়ে করার। যখন বলেছিলাম “নূর আমার বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন, তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে না পারো তবে আমার মন বাধ্য হবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে”। কথাটা শুনেই নূর ঠিক করেছিলো আমাকে তার জীবন সঙ্গিনি করার, রূপে-গুণে আমি কম কিসে! আমাকে হারালে নূর যে এমন রূপবতী মেয়ে অনেক জন্মেও পেত না তাই হয়তো বিয়ে করার জন্য রাজি হয়েছে। অবশ্য এসব নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই,আমি শুধু চাই নূরের সঙ্গে যেন আমার বিয়েটা হয়,দেখতে দেখতে সময় ধুয়ারে এসে দাড়ালো,ডাক-ডোল পিটিয়ে নূর আমায় বিয়ে করে জমিদার বাড়িতে নিয়ে আসলো।

সন্ধ্যার সাজসজ্জায় শতশত মানুষ ভীর করলো জমিদার বাড়ির পুত্র বূধকে দেখতে।
সকলের মুখের আনন্দ দেখে তৃপ্ত মিলেছিলো বুকে, সবার মুখে একই কথা “জমিদার বাড়ির ছেলের পছন্দ আছে বলতেই হবে, এমন রূপবতী মেয়ে পাওয়া যে ভাগ্যের ব্যাপার”

সকলের সমস্ত আচার-বিচার পালন করে ফুলশয্যায় বসে নূরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
কিছুক্ষণ পর নূর আমার পাশে এসে বসে।
মাথার মুকুট খুলে নূর বলে “মুকুট পড়ে বিয়ে না করলে নাকি বউ সেবা করে না, সত্যিই কি কথাটা?” আমি রেগে বললাম “আবার বসলে তুমি ঝগড়া করতে?” নূর চোদ্দপাটি দাঁত বের করে হেসে বলে->
“বেশ তো! আর কখনোই ঝগড়া করবো না কিন্তু আমার যে আবদার আছে মহারানী”
“কি আবদার?”
“বিয়ে হওয়ার আগে কখনো ছুঁতে দাওনি, এখন অনুমতি দাও, তোমায় জড়িয়ে আমি সাধনা করি”
“এখন অনুমতি চাচ্ছো কেন? আমি যে এখন তোমার বেগম”
“শুধুই বেগম?”
“নয়তো কি?”
“আমার অলংকার,আমার সুবাস,আমার রজনী,আমার প্রভাত”
আমি হেসে দিলাম, আমার হাসি দেখে নূর নড়েচড়ে বসে, আমি বললাম-
“মশাই কি শুধু কথা বলতে নাকি কিছু খাবে?”
“এভাবে বলো না, আমার যে বড্ড লজ্জা লাগে”
“মা বলেছেন তুমি রুমে আসলে যেন দুধ প্রাণ করাই, তোমাদের বংশের নিয়ম নাকি”
“বেশ তো! দাও।

নূরকে পরম যত্নে দুধ খাইয়ে নিয়ম পালন করেছিলাম, নূর বিছানায় হেলে পড়েছে, আমি নূরের বুকে মাথা রেখে শুলাম, নূর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, নূর হয়তো ক্লান্ত তাই বোধশক্তি ধীরে ধীরে নীরব হয়ে যাচ্ছে।
আমি নূরকে বললাম->
“ক্লান্ত লাগছে?”
“মাথাটা কেন জানি ঘুরছে”
“সারাদিন মুকুট পড়ে ছিলে তাই হয়তো ব্যথা করছে”
“হবে হয়তো”
“আমি এখনো ভাবতে পারছি না নূর তোমার মত প্রেমিক খুনি হতে পারে”
নূর চমকে উঠলো,আমার মাথা সরিয়ে উঠে বসলো, শীতল আবহাওয়াতে নূর ঘামতে শুরু করলো, নূর বলে->
“কি বলছো এসব?”
“তোমার বোন আত্মহত্যা করেনি, তুমি খুন করেছো”
বিষণ্ণ কণ্ঠে নূর বলে->
” তুমি জানো কি করে?”
“নূর তুমি কি জানো সেদিন শুধু তোমার বোন নয় আরো একজনও আত্মহত্যা করেছিলো”
“কি বলছো? কে সে?”
“আমার আদরের এক মাত্র ভাই জীবু”
নূর চমকে উঠলো,আরো বেশি ঘামাতে শুরু করলো, কাঁপা কণ্ঠে বললো->
“তোমার ভাই কেন আত্মহত্যা করেছিলো?”
“কারন প্রেমিকাকে হারানোর শোক মেনে নিতে পারেনি”
“প্রেমিকা!!”
“হ্যা প্রেমিকা, তোমার বোনকে জীবু ভালোবেসে ছিলো”
“তুমি জানো কিভাবে আমি আমার বোনকে খুন করেছিলাম?”
“জীবু সেদিন সেখানেই ছিলো, দেখা করতে এসেছিলো সে রাতে, তুমি দরজার কড়া নাড়ার পর জীবু লুকিয়ে ছিলো রুমে”

আমার কথা শুনে নূরের চোখ বড় হয়ে গেলো, আমি কথা থামালাম না, বলেই গেলাম “সম্পত্তির লোভে নিজের বোনকে খুন করে যে আত্মহত্যা বলে চালাতে পারে সে কখনো প্রেমিক হতে পারে না, জীবু সেদিন কোন রকম পালিয়ে গিয়েছিলো তোমাদের বাড়ি থেকে, আমায় সবটা বলে নিজের রুমে ঘুমাতে গিয়েছিলো জীবু , সকালে উঠে ওর মৃত্যু শরীরটা পেয়েছিলাম”।

নূর উত্তেজিত হয়ে উঠে, আমি নূরকে বললাম “উত্তেজিত হয়ে কি করবে? আর কখনোই পারবে না কথা বলতে,দুধের সঙ্গে যে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছি তোমায় প্রিয় প্রেমিক”।
নূর অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
হঠাৎ বিছানায় লুটিয়ে পড়লো ওর মৃত্য দেহ।

আমি মৃদু শব্দে হেসে বললাম “নূর তুমি শুনার সুযোগই পেলে না, বিষ মেশানো কিছুটা দুধ আমিও খেয়েছি, জীবু যে একা একা ভয় পাচ্ছে, ওর কাছে আমাকে যেতে হবে”।
ভুল ক্রুটি মার্জনা করবেন

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত