ছোটবেলা থেকে প্রেম ভালোবাসা জিনিসটাকে ভয় পেতাম।
তার কারন বুঝতে শিখেছি যখন থেকে,তখন থেকেই দেখতাম মেয়েটা যাকে ভালোবাসে তাকে হাজার কান্না করে পরিবারের বড়দের হাতে পায়ে ধরেও নিজের করে পায় না।
ছেলে বাউন্ডেলে, বেকার,ফ্যামিলিরর সাথে যায় না এসব নিচক অজুহাতে ভাগ্যকে মেনে নিয়ে সুখে থাকার অভিনয় করতে হয় শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।
ছেলেদের কথা ঠিক মেয়েরা চলনাময়ী ভালোবাসার অভিনয় করে ভালোবাসতে জানেনা।
হ্যাঁ মেয়েরা অভিনয় করে বাবা মা এর সম্মান রাখতে।
সন্তান ভালো ভাবে মানুষ করতে নিজের চাহিদা মাটি চাপা দিয়ে সবকিছুতেই সন্তুষ্ট থাকে।
সারাজীবন মনের এক কোনে একজন কে রেখে আরেক জনকে মুখে ভালোবাসি বলে যাওয়া এগুলা অভিনয় নয়তো কি?
এরকম একটা অভিনেত্রী কথা বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, তাহলে আমার ছোটবেলায়য় ফিরে যাই।
আমি যখন তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ি।
তখন ছোট ফুফির বিয়ে কিন্তু ফুফি সারাক্ষণ কান্না করতো তাও লুকিয়ে সবার অজান্তে।
কিন্তু আমার ছোট চোখ দুটি কে পাঁকি দিতে পারতোনা।
আমি কাছে গিয়ে বলতাম ফুফি কান্না করো কেন আমার খুব কষ্ট হয়।
এখন আর আমাকে নিয়ে খেলা করো না বাহিরে হাঁটতে নিয়ে যাও না।
তখন ফুফি কান্না ভেজা চোখে বলতো কয়দিন পর তো থাকবোই না তোকে একা থাকতে হবে এখন থেকে অভ্যাস করে নাও।
তুমি কোথায় যাবে আর আসবে না কেনো?
ফুফি চোখ মুছে করুন মুচকি হাসি দিয়ে পিঠের উপর হাত রেখে বলে আমার তো বিয়ে আলো সোনা।
পরের বাড়ি চলে গেলেতো ফুফিকে ছাড়া থাকতে হবে।
আমি ফুফিকে ধরে কান্না করতে করতে তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে? মা তো ঘরের বাহিরে বেশি বের হতে দেয়না তোমায় ছাড়া।
আর বিয়ে হলে কি তুমি সারাজীবন আর আসবে না ?
সবাই তো বিয়ে হলে বাবার বাড়ি যায় তুমি দেখনা আমিও মা সহ নানু বাড়ি যাই এ রকম পঁচা কথা আর বলবেনা (কান্না করতে করতে)
তখন ফুফি আমায় বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শান্ত স্বরে বলে,
এই পাগলি মেয়ে এতো কান্না করে না আমি তো আসবো আমার আলো সোনা কে ছেড়ে থাকতে যখন অনেক কষ্ট হবে তখন ছুটে চলে আসবো
( তখন তো আর জানা ছিল না পরের বাড়ি গেলে ইচ্ছা মতো ছুটে আশা যায়না)
ফুফি আমায় আরো অনেক শান্তনা দিলো যেন আর মন খারাপ করে কান্না না করি।
আমার অনেক ভালো লেগেছে ফুফির বুকে মাথা রেখে।
অনেক্ষণ নিরব থেকে শান্ত গলায় ডাক দিলো আলো,
আমি হকচকিয়ে উঠে বললাম জ্বি ফুফি।
ফুফি আমাকে বলছে:মা বড় হলে কাউকে পছন্দ করবি না,
পছন্দ করলেও ভালোবাসবি না,
ভালোবাসলেও প্রকাশ করবি না,
প্রকাশ করলেও মাথায় একটা চিন্তা রাখবি সারা জীবন তাকে ভালোবেসে যাবি সুখ দুঃখের সঙ্গী করে পাবি না এটা মাথায় রেখে একটু কম ভালোবাসিস।
যেন স্বামী কে ভালোবাসতে পারিস আমি পারবো কি না আল্লাহ্ ভালো যানে।
ওহহহ আরেকটা কথা মা ভালোবাসলে সব দিক থেকে যোগ্য একটা ছেলে দেখে ভালোবাসবি যেন আমার মতো কাঁদতে না হয় ।
এ যন্ত্রণা মৃত্যূ যন্ত্রণা থেকেও বেশি মনে হচ্ছে।
তখন ছোট মনে কথা গুলো গেঁথে গিয়েছে কিন্তু এর সঠিক ব্যাখ্যা বুঝিনি।
আজ না কি আমার মাদ্রাসায় যাওয়া বারন।
কোন লাট সাহেব এর দল দেখতে আসবে।
ক্লাস নাইন থেকে এ জ্বালায় ভুগছি আলিম(HSC)পরিক্ষার আর তিন মাস বাকি তাও এই
আব্দুর রব মিয়ার জ্বালায় বাঁচি না। (আমার দাদা)
উনি না কি আমায় নিজ হাতে বিয়ে না দিয়ে যেতে পারলে মরেও শান্তি পাবে না(ইস কি আদর)।
দেখতে আসলে তাদের
সামনে যাওয়ার আগে
দাদার মহান উক্তি —-
বৌমা এই লেইনজ্জা(যে জন্তু লেজ নিয়ে গাছে গাছে লাফয়)
যেন জামা পরে ঠ্যাং ঠ্যাঙ্গাই (চিকন বলে এই অপবাদ) কারো সামনে না যায় শাড়ি পরিয়ে দিবে সব সময়।
তখন আমি বলতাম ও দাদাও আমার কি লেজ আছে না কি?
ওমা গো লেজ থাকলে তো লেজ ছাড়া লোকরে বিয়ে করুম না।
তখন দাদা হাসতে হাসতে লাঠি
একটা নিয়ে বলতো খাড়া তুই লেইনজ্জা )
আমিও দৌড় দেওয়ার ভাব ধরতাম দাদা যে রকম মিচে মিচি মাইর দেওয়ার অভিনয় করতো আমিও তাই করতাম বলাই যায় দাদা কা নাতনী হি হি হি।
এখনো তিন জায়গায় কথা দিয়ে রাখছে আজ আবার আরেক দল আসবে তাও উনার (দাদার)খুশি যেন পেটে ধরেনা মনে হচ্ছে পেট পেটে গেলে বোমার আওয়াজ এর মতো হবে এমন দশা।
দাদি সব সময় এ নিয়ে ঝগড়া করে উপযুক্ত নাতনী একটা কয় জনের সাথে বিয়ে দিবে।
থাক সে সব কথা আমি তো রুমের দরজা বন্ধ করে সেই একটা ঘুম দিচি।
মেহমান বাসায় রুমের দরজার বারোটা বাজাইতেছে সবাই
আমি শুয়ে শুয়ে মজা নিচ্ছি আর দোয়া করছি ঐ দিক থেকে মহিলা কেউ আসুক আমার এই নওয়াবি দেখে সোজা বাড়ি যাওয়ার পথে আরেকটা মেয়ে দেখে ওখানে তাদের ছেলের বিয়ে দিয়ে দিক।
কিন্তু তা আর হলো না দুইটা মহিলা আসছে আমার এ অবস্তা দেখেও বসে আছে দুর যাচ্ছে না কেন।
রুম থেকে বসে বাহিরের কথা গুলো শুনে উপলব্ধি করতে পারছি।
অবশেষে মা এর ধমক এ দরজার চিটকানি খুলে দিলাম আর বললাম আমি রুম থেকে বের হতে পারবোনা।
যা করার এখানে করতে হবে তারপর সোজা ওদের সামনে যাবো।
এই রুমে ওয়াশরুম নেই বলে এক বালতি পানি সাবান সহ নিয়ে আসছে ।
আমাকে হাত মুখ ধোয়াতে আমার কিন্তু বেশ মজা লাগছে উদ্বট আচরন করার পর ও সবাই কেমন চুপ করে আমার কথা শুনছে।
কি না ভালো লাগছে এ রকম যদি প্রতিদিন হতো যা আদেশ করবো সাথে সাথে সামনে হাজির,
কি মজাই না হতো ।
কিন্তু না সিমিত সময়ের জন্য অপূর্ব সুজোগ।
সম্পর্কে চাচী হয় উনি আসছে আমায় সাজাতে,সোজা না করে দেই।
আমার সাজা আমি সাজবো কারো হাতে বিড়াল সাজ দিবো না।
মুখে একটু ক্রিম, ঠোটে হালকা লিপজেল,চোখে গাড় কাজল আর একটা কালো শাড়ি।
কালো শাড়ি পরার মাঝেও একটা কারন আছে শ্যামলা বর্ন মেয়েকে কালো শাড়িতে বেশ খারাপই দেখা যাবে।
কতো যুদ্ধ করে কালো শাড়ি পরার আইন পাশ করছি।
এদিকে আমার সাজ দেখে মা বলছে এই আলো শাড়ী খুলে জামা পর (সাথে রাগি লুক)
দাদা গেস্ট রুম থেকে আসছে আমি রেডি হয়েছি কি না দেখতে।
এসে মা এর এ কথা শুনে দাদা বললো না বৌমা লাগবেনা শাড়ি খোলা এমনি মেহমান অনেক্ষণ হলো বসে আছে।
দাদার সাথে পানের বাটা নিয়ে হাজির হলাম তাদের সামনে।
ঐ রুমে গিয়ে বুঝতে পারলাম আজ কেউ একজন মিসিং।
ঐ দিকে ক্যাবলা কান্তের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঐ দেখতে আশা ছেলেটা(তাকাই নাই বুঝতে পারছি)
উনার চাহনি আন্দাজ করে মনে মনে চিন্তায় পড়ে গেলাম তাহলে আমাকে কি অসুন্দর দেখা যাচ্ছে না?
কি আজব আয়নায় দেখে এলাম এক রকম এখন আবার অন্য রকম কেমনে হলো,বুঝি না বাপু।
হয়তো খারাপ দেখা যাচ্ছে তাই ফ্রিতে জোকার দেখছে।
এসব ভাবার আমার সময় নাই ।
পছন্দ না হলেই হলো।
নিচের দিকে তাকিয়ে নাম জিজ্ঞাস করছে
আপনার নাম কি?(ছেলে)
আলো(আমি)
পুরা নাম কি যেন—-
ভুলে গেছে মনে হয় এমন ভাব (আস্তে)
হ্যাঁ ভুলে গেছি(ছেলে)
কি আজব পাবলিক রে বাপু(মনে মনে)
রোকসানা আক্তার আলো
নাম বলতে বলতে টি টেবিলে পা রাখলাম
ঐ ছেলের ইস শব্দে(মৃদু)বিরক্তি ভরা চোখে তাকিয়ে দেখি উনি খুব উপভোগ করছে পা দেখে।
বুঝতে পারছিনা পা দেখে এতো খুশি হওয়ার কি আছে কালো একটা পা .
ওরে নপূর দেখে খুশি হলো না কি?
যদি বিয়ে হয় তাহলে নপূর এর টাকা বেঁচে গেলো এজন্য?
কি কিপ্টুস ছেলে এ ছেলের সাথে যদি কপাল বাঁধা থাকে তাইলে আমি আর নাই।
সুইসাইড খাওয়া ছাড়া উপায় থাকবোনা।
-ভাই একান্তে কথা বলবেন(ছেলের বোন জামাই)
পাশে দাদা ছিলো তাই ডাক দিলাম দাদা।
দাদা ডাক দেওয়ার সাথে সাথে বলে তোর আর থাকা লাগবেনা ভিতরে যা।
এক বুক মন খারাপ নিয়ে চলে এলাম ভিতরে,মন কেনো খারাপ তার কথা না হয় পরেই বলি।
হায় হায় এসব কি শুনছি ঐ ছেলে না কি তার বাবা কে ফোন দিচে রিং নিয়ে আসতে আজ বায়না করে রেখে যাবে।
সাথে সাথে আখিঁ কে ডাক দিলাম, এই এগুলা কি সত্যিই?
হ্যাঁ সত্যিই আপু দাদা সেই খুশি।
আর মা মা কি বলছে(আমি)
মা অমত কিন্তু দাদাকে বুঝাতে পারছে না
যে আরো খোঁজ নেওয়া দরকার,,বিয়ে সাদি সারা জীবনের ব্যপার, তাদের কে আজ চলে যেতে তারিখ দিয়ে যেতে কোন দিন আসবে।
দাদা ধমক দিয়ে বলে তোমরা বেশি বুঝো,বেশি বুঝলে আমি আর নাই তোমার মেয়ে তুমি বিয়ে দাও।
বুঝোস তো দাদা এক রোখা মানুষ উনারে দাদি ছাড়া কেউ বুঝাতে পারে না।দাদি আর সময় ফেলো না বেড়াতে যাওয়ার (আখিঁ)
রাগে আমি পাথর হয়ে গেছি মনে হচ্ছে নাড়াছাড়া করারও শক্তি নাই।
এক বুক কষ্টটা যেনো রাগে পরিনত হচ্ছে এখন হৃদয় ভাইয়া তোমার আজ কি এমন কাজ যে আসতে পারলেনা।
প্রতিটা সময় কেউ দেখতে এলে তুমি থাকো তোমার হাসি হাসি মুখটা দেখলে একটু ভরসা পাই যে করেই হোক এ
বিয়েটাও বাদ হয়ে যাবে।
কি ভাবে কি হয় জানিনা তবে বুঝতে পারি সবার অজান্তে তুমি এগুলা করো।
চার পাঁচ টা রিং বাসায় এসে ফিরত গেলো কিন্তু আমার হাতে উঠেনি।
বিভৎস্ব চেহারা নিয়ে আবার তাদের (দেখতে আশা লোকদের) সামনে যেতে হলো আমার কোরবানির রিং পরতে। আমি যেন পুতুল এর মতো হয়ে গেছি কেউ কিছু বললে শুনছি কিন্তু বুঝছিনা।
আমার চেহারা দেখে ছেলের বাবা বললো মা তুমি এ বিয়েতে খুশি না।তখনি দাদা বলে উঠলো আমাদের মতামত ওর মতামত।
আসলে একথাটা ঠিক কাউকে ভালোবাসি কি না তা আমি আজোও বুঝতে পারি নাই,কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতেও ইচ্ছা হচ্ছেনা।
পরিবারের সবাই এখনো এক নামে ডাকে পাগলি,সবার আদরে আদরে বাস্তব দুনিয়াটাকে এখনো বুঝিনা আবার সংসার করবো??
ফাইনাল কথা দিয়ে তারা চলে গেলো ওরা আর কথা বলার জন্য দাদা নিজেকে একাই দুইশো মনে করেন।
পরের সাপ্তাহে আমার কোরবানির নির্দিষ্ট তারিখ আজ বুধবার পরের বুধবারে বিয়ে।
মা সন্ধ্যায় ফোন দিলো হৃদয় ভাইয়া কে যেনো এখনি আমাদের বাড়িতে আসে তার সাথে জরুরি কথা আছে(হৃদয় আমার ফুফাতো ভাই)।
নিজের ছেলে না থাকায় হৃদয় ভাইয়াকে নিজের ছেলের মতো যানে।
ভালো জানার ও বেশ কারন আছে হৃদয় ভাইয়া অনেক শান্ত একটা ছেলে তার উপর ইসলামি মাইন্ডের।
আরো একটা গুনের জন্য মা এর বেশ প্রিয় তা হলো মায়ের (আমার ফুফু)সব কাজে সাহায্য করে মায়ের হাতের কাছে থাকার চেষ্টা করে মায়ের মেয়ে নেই বলে মায়ের কেয়ার করে বেশি।
আমার মায়ের ভাষায় লক্ষী একটা ছেলে তাই তো সব কাজে আগে হৃদয় তার পর সবাই।
*ওদিকে ফুফুর বড় ছেলে উড়ন চন্ডি সকাল ১২টায়(দুপুর বললেও সমস্যা নাই)উঠে নাস্তা করলে করবে না করলে বাজরে গিয়ে আড্ডা সাথে তো প্রেম করা আছেই এ যেনো উনার সিঙ্গেল জীবনের আসল এবং একমাত্র ধর্ম।
এক জন এর বিয়ে হলে তিনদিন শোক করে চারদিন এর দিন আরেক জন হাত ধরে।
উনার জন্য মেয়ে গুলাও কি ভাবে তৈরি থাকে বুঝি না বাপু।
এর দ্বারা বুঝা যায় মেয়েরা আসলেই বোকা দু’একটা মিষ্টি কথা সাথে অন্যের থেকে মিথ্যা দুটি ভালো গুন শুনেই গলে মোম হয়ে যায়।
ফুফু রান্না করছে হঠাৎ রিশাত ভাই মা মা বলে ডাকছে আর বলছে মা জানো তোমার বৌমার বিয়ে রিশাতের সাথে।
ফুফুর তো গলা কলিজা শুকিয়ে একাকার।
তখন ভাইয়া এক গ্লাস পানি দিয়ে বলে আরে মা টেনশন এর কিচ্ছু নাই আরেক রিশাতের সাথে রিতার বিয়ে বলে হাতে বিয়ের কার্ড দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।
ভাইয়ার এ সম্পর্কের কথা সবাই জানতো কারন মেয়েটা ছিলো ফুফার বন্ধুর মেয়ে কিন্তু খুব ফাজিল তাই ফুফু চিন্তার বেশ কারন ছিলো কখন বিয়ে করে ভাইয়াকে নিয়ে সোজা বাড়িতে উঠে আর হুকুম করা শুরু করে।
আপনারা আবার ভাবেন না এটা ভাইয়ার প্রথম ব্যর্থ প্রেম।
আল্লাহ্ ভালো যানে এটা কয় নাম্বারের ছ্যাকা।
সব শেষে উপায় অন্ত না পেয় রিশাত ভাইয়াকে ইতালি পাঠিয়ে দিলো ফুফা।
ফুফাও একজন সফল প্রবাসী খুব শান্তিতে আছে ফুফু।
যাক সে সব কথা আমি মরছি আমার জ্বালায় তাও আপনাদের সাথে একটু গল্প করে মনটা হালকা করা এই আরকি।
হৃদয় ভাইয়া দরজার সামনে এসে আখিঁ বলে ডাকার সাথে সাথে মা দরজা খুলে দিলো, মনে হয় এতোক্ষন এ দরজা খোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
ভাইয়াদের বাড়ি আবার আমাদের গ্রামেই একটা ক্ষেত এর ব্যবধান। ক্ষেত দিয়ে আসলে বড় জোর দশ মিনিট আর সোজা রাস্তা দিয়ে আসলে ত্রিশ মিনিট সময় লাগে।
এখনতো রাত তাই সোজা রাস্তা দিয়েই আশা লাগছে সময় বেশ লেগেছে তাই মা এর অপেক্ষা ও বেশি করা লাগছে।
হৃদয় ভাই মা কে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাস করলো মামীমা কেমন আছেন? এতো জরুরি খবর দিলেন কেনো।
বলিস না বাবা তোর নানা তো আলোর বিয়ে ঠিক করে ফেলছে।
হৃদয় ভাইয়া বললো এ আর নতুন কি নানার তো কাজ দুইটা একটা হলো আমার সাথে ঝগড়া লাগা আর আরেকটা হলো আলোর বিয়ে ঠিক করা।
তখন আমি বুঝতে পারলাম হৃদয় ভাই জানতো না আজ আমায় দেখতে আসবে।
আরে না হৃদয় তুই বুঝতে পারছিস না রিং পরিয়ে দিয়ে গেলো পরের বুধবার বিয়ে কাবিন সাত লক্ষ
বর যাত্রী তিন’শ আসবে।(মা)
মায়ের কথার পর আর কিছু বুঝলাম না ধপাস একটা শব্দ শুনতে ফেলাম।
আমার আর বুঝতে বাকি নেই যে হৃদয় ভাই সোফায় বসে যাওয়ার চলে ধপাস করে পড়ে গেলো।
মা এ কথা বলে বললো বাবা তুই বস তোর সাথে অনেক কথা আছে আমি একটু চা বসিয়ে আসি।
মা নাস্তা নিয়ে ফিরে এসে বললো নাস্তা করো তার পার কথা বলি।
হৃদয় ভাইয়া বললো না সমস্যা নাই আপনি বলেন আর আমি দোকান থেকে নাস্তা করে আসলাম।
প্রথম হলো তুই আরেক বার গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখ পরিবার আর ছেলে কেমন।
হৃদয় ভাইয়া একটু আস্তে বললো এখন খোঁজ নিলে কি লাভ হবে ।
মা বললো তোর কথা একরকম ঠিক তোর নানা তো ধমক দিয়ে বললো তুমি বেশি চালাকি করলে তোমার মেয়ে তুমিই বিয়ে দিবে আমি আর নাই।
মামা কি বললো(হৃদয় ভাই)
তোর মামা তো বাবার (দাদাকে বাবা বলে মা)উপর কোন কথা বলে না আর আমিও সাহস পাই না।
–নানি আসেনি এখনো বাপের বাড়ি থেকে(হৃদয় ভাই)
-খবর দেওয়া হয়েছে,কালকে আসবে বলছে।(মা)
কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো হু,আর কিছু বলবেন?
-হ্যাঁ তোর তো অনেক কাজ আলোর বিয়ে পরিবারের প্রথম মেয়ের বিয়ে বুঝোস তো অনেক কাজ,তোকেও অনেক গুলা কাজ করতে হবে।
তার মধ্যে তোর বিশেষ কাজ হলো বাবা সব কিছু কমিয়ে কমিয়ে নিবে তো কে আমি আলদা একটা লিস্ট দিবো বুঝিসই তো আগের কালের মানুষ বেশি খরচ পছন্দ করেন না।
বিয়ের ব্যপার কোন কিছু টান পড়লে পরে মানসম্মান শেষ।(মা)
ঐ বেটার আদরের নাতনীর বিয়ে যা বলবেন তাই আনতে হবে দরকার হলে সব কিছু দশ কেজি করে বাড়িয়ে লিখবেন।(হৃদয় ভাই)
এ কথা বলে সামনের রুম থেকে ভিতরের দিকে আসতে আসতে বলে আমাদের বিয়ের কনে কই তার আংটি দেখার সৌভাগ্য কি হবে আমার।
রুমে বসে একটা ফানি নাটক দেখছিলাম ফোনে তাই মুখে হাসি হাসি ভাব ছিলো।
কি করবো আর মন ভালো করার মাধ্যম হিসাবে এটাই ভালো মনে হলো ।
আমার হাসি মুখ দেখে কি বুঝলো জানিনা এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না রুমেও ঢুকলো না আংটি দেখা তো দূরের কথা।
আংটি দেখাতে বললে দেখাতে পারতাম না কারন ঐ লোক গুলা চলে যাওয়ার পর মা কে দিয়ে দিলাম আর বললাম এই রিং এর তো দরকার ছিলো এখন রাখেন এসব আমি পরতে পারবোনা।
বুঝলাম মা মনে কষ্ট ফেলো এ কথা বলাতে কিন্তু কি করবো রাগের কারনে বলে ফেলছি।
একদিন করে যাচ্ছে আর আমার মন খারাপ ও বাড়ছে।
মাদ্রাসায় গিয়ে কাছের বন্ধু নপূর কে বললাম আমার বিয়ে,কিন্তু ও বিশ্বাস করছেনা ।পরে যখন মা দাওয়াত দিলো তখন বিশ্বাস করলো,বিশ্বাস না করার ও বেশ কারন আছে আমার বেশির ভাগ সময় স্বর্নের রিং হাতে থাকতো দুইটা।
ভগ্য বসত আমার হাতের একটা রিং এর কোয়ালিটি ছিল বায়নার রিংটার।
বিয়ের আর মাত্র চার দিন বাকি আজও গেলাম মাদ্রাসায়,বাড়িতে থাকলে যেন পাগল পাগল মনে হয় খুব হতাশ লাগে তাই মন ভালো রাখার জন্য যাই মায়ের হাজার বারনের পরও।
আজ গিয়ে নপূর এর কাছ থেকে যা শুনলাম তার জন্য মোটেও প্রশস্তু ছিলাম না।
নপূর বলছে কাল রাতে ফাহিম ফোন দিছে তার কাছে।
বলে রাখা ভালো ফাহিম এক রকম আমার বন্ধু, আমি ছেলেদের সাথে খুব কম কথা বলি কিন্তু ইন্টার এ উঠার পর থেকে কিভাবে কিভাবে টুকটাক কথা হতো তবে বেশি না।
দরকার ছাড়া বিনা দরকারে ছেলেদের সাথে কথা বলতে ভালোলাগে না কিন্তু ফাহিম এর সাথে বিনা দরকারেও কথা বলতাম মাঝে মাঝে সাথে একটু আদটু ফাইজলামি।
ফাহিম ফোনে নূপুর কে বলছে নয়ন না কি তার কাছে ফোন দিছে।
আর ফাহিম কে কোনঠাশা করে বলছে কিরে শালা এই তোর ভালোবাসা?
চোখের সামনে আলো ঘুরছে কিন্তু বুঝতে পারছিস না ওর বিয়ে চার দিন পর।
এ কথা বলেই ফোন কেটে দিলো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
এই এই শুন নপূর আমি আবার কবে ফাহিম এর ভালোবাসা হলাম।
তারপর এই হারামি দুই বছর পর কোথা থেকে বের হইছে আর ও জানে কিভাবে আমার বিয়ে।
বাড়িতে আশার পর থেকে নয়ন এর চেহারাটা কেন চোখের সামনে ভাসছে।
রাতে ঘুমাতে গেলাম চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে নয়ন এর চুরি করে দেখা সরাসরি আবুল এর মতো তাকিয়ে থাকার মূহর্ত গুলো চোখের সামনে ভাসছে আর আমার মনে হচ্ছে নয়ন ভালো নেই।
দুর ঐ ছেলে ভালো আছে না খারাপ আছে তাতে আমার কি আমি তো ওকে বুদ্ধি করে মাদ্রাসা থেকে তাড়িয়েছি।
দাখিল(SSC) পরিক্ষার পর আমার কাছে ফোন দিলো(মায়ের ফোন) এতো বছরে এই প্রথম নয়ন এর সাথে কথা।
সালাম দিয়ে বললো ভালো আছেন?
সালাম এর উত্তর দিয়ে বললাম হু তুই (সমবয়সী কাউকে আপনি বলতে ভালোলাগে না)।
আজকে তো ভালোই আনন্দ করলেন আমি থাকলেই যতো সমস্যা আপনার আমি ফোন দিলেও সমস্যা কিন্তু অন্য সবার সাথে তো ভালো
করে কথা বলেন(নয়ন)
আমি বললাম তোকে এগুলা কখনো বলছি?? আর এসব কথা বলতে ফোন দিলি?
আপনার ব্যবহার এ সব বুঝিয় দেয়(নয়ন)
আমি চুপ আসলে কথা গুলো ঠিক মাঝে মাঝে নয়ন কে খুব বিরক্তি লাগে।
আমার নিরবতা দেখে নয়ন বলে উঠলো নিরবতা সম্বতির লক্ষন।থাক সেসব কথা তুমি কোথায় ভর্তি হবে(আপনি থেকে তুমি বেশ পরিবর্তন)
আমি বললাম তুই?
আগে বলো তুমি কি মাদ্রাসায় আর পড়বেনা।(নয়ন)
না আমার ইচ্ছা কলেজে পড়ার।
কোন কলেজ(নয়ন)
মডেল কলেজ(আমি)
আমিও তো ওখানে ভর্তি হবো তুমি হলে তো বেশ ভালো হয়(নয়ন)
হু দেখছি ছাড়পত্র তো আনতে হবে(আমি)
আমি তাহলে কাল ছাড়পত্র নিয়ে আসবো তুমি যাবে(নয়ন)
বলতে পারিনা তবে যেতেও পারি(আমি)
তারপর ফোন কেটে দিলাম আমি।
সেদিন এর পর থেকে অনেক বার ফোন দিচে বাট আমি কথা বলি নাই।
নপূর এর থেকে জানতে পারলাম ও মডেল কলেজে ভর্তি হয়েছে।তার পর থেকে আমি তাকে কখনো দেখি নাই খোজ ও যানিনা এখন মনে হচ্ছে ও ঠিকই আমার সব খোঁজ রাখে।
নয়ন কে আমি চিনতাম না,সপ্তম শ্রেনীতে থাকাকালীন জান্নাত ডাক দিলো আলো শুন তোর সাথে কথা আছে বাহিরে আয়।
গেলাম বাহিরে যাওয়ার পর জান্নাত বললো নয়ন তোকে পছন্দ করে প্রেম করতে চায়।
জান্নাত প্রেম কি?(আমি)
তুই নয়ন এর সাথে কথা বলবি(জান্নাত)
আরে তোর সেই নয়ন কে আমি তো তাকে চিনিনা(আমি)
আরে ক্লাসে আয়(জান্নাত)
ক্লাসে যাওয়ার পর আঙ্গুল দিয়ে নয়ন কে দেখালো।
তাকিয়ে দেখি ঐছেলেটা আমাদের দিকে তাকিয়ে মুসকি হাসছে।
জান্নাত এরে তো কখনো আমাদের ক্লাসে দেখি নাই।
নয়ন আমাদের উপরের ক্লাসের ইচ্ছা করে ফেল করছে আমাদের সাথে পড়ার জন্য(জান্নাত)
আমি বললাম কেনো?
তোকে দেখার জন্য(জান্নাত)
আমাকে দেখার কি আছে আর একজন মানুষকে একবার দেখলে অন্ততো ছয় মাস ঠিকঠাক মনে থাকে।
তোর এসব কথা আমি বুঝি না।
আর শুন আমার পক্ষে কোন ছেলের সাথে কথা বলা সম্ভব না।
কেন?(জান্নাত)
তুই জানোস না দেখোস না আমি কোন ছেলের দিকে তাকাই,
কথা বলা তো দুরের কথা আমার পক্ষে সম্ভবনা পারলে তুই কথা বল তুই এসব ভালো পারস বলে খাতা তুলতে চলে আসলাম ।
তারপর থেকে মাঝে মাঝে নয়ন এর দিকে চোখ যেতো,
যখনি তার দিকে তাকাতাম তখনি দেখতাম আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
সেই থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত মহা যন্ত্রণা ভোগ করছি তবে মাঝে মাঝে তার চাহনির করুন ধরন গুলা দেখলে খুব হাসি পেতো।
সামনা সামনি প্রপোজ করেনি কখনো হয়তো আমার রাগকে বেশ ভয় পেতো।
আর মাত্র দুইদিন বাকি বিয়ের,
কাল আমার হলুদ পরশু বিয়ে।
এতোদিন যা মন খারাপ ছিলো এখনতো রিতিমতো চোখে দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে ।
আমি চাচ্ছিনা কান্না করতে তবুও আমার না চাওয়াতেও অবাধ্য পানি গুলো ঝরছে তো ঝরছেই থামার নাম গন্ধ নেই।
এর সাথে কাউকে একটি বার দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু তা হবার না আমি তো অন্য কারো হয়ে যাবো দুদিন পর শুধু শুধু শেষ বেলায় এসে মায়া বাড়ানোর কি দরকার ।
মায়া বাড়াতে চাইলেও তো তাকে আর হাতের নাগালে চোখের সামনে পাবো না।
বড্ড মিস করছি তোকে নয়ন তবে কেন মিস করছি যানিনা দেখা হলে জেনে নিতাম কেন এ হাহাকার এ হাহাকার এর মানে কি? হয়তো তুইও বুঝাতে ব্যর্থ হতি কারন তুই যে আমার সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে পারিসনা।
তোর ঐ চোখ গুলা কেন আসে বার বার আমার চোখের পাতায়।
এগুলা তো কখনো আমি ফিল করিনি তবে এখন কেনো পুরানো সৃতি গুলা ভিতরটা লন্ড ভন্ড কর দিচ্ছে ।
শয়তান ছেলে এখন একবার সামনে ফেলে ইচ্ছা মতো থাপড়ানি দিতে পারলে একটু হলেও শান্ত হতাম।
আজ আমার হলুদ সন্ধ্যা তাই আমারে সেই রকম বিড়াল সাজ দিলো ।
হলুদ কাপড় পরে সাজানোর পর মনে হচ্ছে আমার ওজন আট কেজি বেড়ে গেছে।
আমাকে সাজানোর পর সবাই সাজতে চলে গেলো আর এদিকে আমি বসে বসে চোখকে শাস্তি দিচ্ছি এর ফলে চোখ লাল হয়ে ভেজা ভেজা হয়ে আছে।
দুই হাটুর সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছি তখনি হৃদয় ভাই রুমে ঢুকে বলছে কি রে তুই রেডি তো? আমি মাথা তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
আমার চোখ দেখে এই তুই কাদছিস কেনো সাজ নষ্ট হয়ে যাবে না বোকা মেয়ে এখনকার মেয়েরা সাজ নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে কান্না করে না লোকজনকে শুনাতে উ আ করে শুধু।
এই কান্না করবিনা ভিডিও সুন্দর হবে না অনেক খাটছি কোন কিছু অসুন্দর হলে সব কষ্ট বৃথা যাবে বলে ঘুরে দাড়িয়ে চোখে কিছু পড়ার ভান করে চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সবাই স্টেজ এ উঠে হলুদ মেখে মিষ্টি মুখ করালো এবং বেশ অনন্দও করলো। অনুষ্ঠান শেষের দিকে এলে আমার মনে হলো হৃদয় ভাই তো উঠেনি।
আমি ভিডিও ম্যানকে হাত ইশারা ডাক দিলাম আমার কাছে আসতে, উনি আবার রিশাত ভাই এর ভালো বন্ধু সেই হিসাবে ভাইয়া ডাকি আর আমাদের বাড়িতে অনেক আসে রিশাত ভাই প্রবাসে যাওয়ার পর হৃদয় ভাই এর সাথেও চলাফেরা করে একরকম ভাইয়াদের মতোই ।
উনি কাছে এসে বললেন কিরে লাইট কিছু কমিয়ে দিব নাকি? চোখে সমস্যা হচ্ছে।
আমার আবার মাথা ব্যথার কারনে চোখেও হালকা সমস্যা আছে মাঝে মাঝে চশমা ব্যবহার করা লাগে তাই উনি এ কথা জিজ্ঞাস করছেন।
আমি বললাম না ভাইয়া তা নয় সব ঠিক আছে হৃদয় ভাইয়া কোথায় আর তো দু’চার জন উঠলে অনুষ্ঠান শেষ কিন্তু উনাকে তো দেখছি না কোথায়?
ভিডিওম্যান বললো নাটকের জন্য সাজছে সবাই হয়তো ওখানে আছে।
কিহহহ? কিসের নাটক পাটক করবে আর হৃদয় ভাইয়াও করবে না কি অভিনয়।
ভিডিওম্যান মিনমিনিয়ে কি যেন বললো সম্পর্ণ বুঝতে পারিনি।তবে হালকা কিছু শুনে বুঝতে পারলাম হৃদয় তো এখনো অভিনয়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে ।
ঐ সময়ে এ বিষয়ে বুঝে উঠতে পারিনি তাই বুঝতেও চেষ্টা করি নাই।
ভিডিওম্যান তার সাথের একটা ছেলেকে পাঠিয়ে দিলো হৃদয়কে স্টেজ এ উঠার জন্য আমি ডাকছি একথা বলার জন্য, দাঁত বত্রিশ টা দেখিয়ে হাসতে হাসতে স্টেজ এ উঠছে।
বত্রিশ টা আছে কিনা জানিনা আরো চার পাঁচ বছর আগে বলছিলো দেখ দেখ যতোবার গুনছি ততোবারই গুনার পর দেখি আটাশ টা দাঁত তাহলে নানা বলে কেন থাপ্পড়ের সাথে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিবো হিহিহি নানা বোকা বোকার নাতনী তুই।
তখনি আমি চিৎকার করে উঠলাম ও দাদা বলে আর ভাইয়ার সামনে থেকে চলে আসলাম এ ছেলের সাথে কোনদিনও ঝগড়া করে কেউ জিততে পারেনি এমনকি আমার দাদাও না আর সেখানে তো আমি বালু কনা মাত্র তাই আমি উনার সাথে বেশি কথা বলতাম না মাঝে মাঝে সুজোগ ফেলে কয়টা কিল ঘুসি দিয়ে পালিয়ে যেতাম না হয় ফুফুর কাছে আর দাদার কাছে বিচার দিতাম।
কথায় যখন পারতাম না তাই মাইর দিয়ে রাগ মিটাতাম আর ফুফুর স্পেশাল বকা সাথে দাদার দৌড়ানি হাহাহা।
আমার মনে হয় বাবা মা এর ভালোবাসার পরে যদি আর কারো ভালোবাসার কথা বলতে হয় তাহলে প্রথমে পড়বে আমার দাদা তারপর হৃদয় ভাই এর মা আর ছোট ফুফু। আমাদের বড় পরিবার চার কাকা পাঁচ ফুফু সুখে ভরা পরিবার সে পরিবারের একটা ফুল হয়ে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় মাঝে মাঝে।
অনেক রাগ হচ্ছে আমার আরে বাবা কপাল থেকে শুরু করে গাল পর্যন্ত এটা আবার কোন ধরনের হলুদ লাগানো আজ কি এর প্রথম আবিস্কার ঘটলো তাও আবার হৃদয় ভাইয়া নিজে আবিস্কারক।
উনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কোন খারাপ দৃষ্টি দিয়ে তাকাচ্ছেনা বরং কেমন স্নেহ মাখা মলিন চাহনি।
সামনে তাকিয়ে দেখি ভিডিওম্যান অন্যদিকে ক্যামরা রেখে ঐ দিকে মুখ করে সবে আছে।
তাই আমি বললাম ভাইয়া মিষ্টি খাওয়াবেন না?
আমার মনে হলো তখন যেনো তিনি বাস্তবে ফিরে আসলেন তাহলে এতক্ষণ কোন জগতে ছিলেন জানিনা বাপু।
আর এখন জানতেও ইচ্ছা হচ্ছে না ইচ্ছা সব অর্ধ মৃত হয়ে গেছে অল্প একটু দম আছে সানের দিনগুলাতে চলার জন্য হয়তো মৃত ইচ্ছা নিয়ে এ জগতে চলা দুষ্কর হয়ে যাবে তাই তারা মাঝে মাঝে শ্বাস নিচ্ছে আর আমাকে জানান দিচ্ছে তুমি চিন্তা করো না আমারা তোমার সাথে এরকম অমৃত্য আধমরা হয়ে বেঁচে থাকবো।
আজ আমার বিয়ে সবাই কেমন খুশি তার সাথে আমার বন্ধুরাও বেশ খুশি কে কোনটা পরবে আজ কোনটা পরলে বেশি সুন্দর লাগবে তার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ।
নূপুর এসে বললো আলো ক্লাসের সব ছেলেরা(যাদের দাওয়াত দেওয়া হলো)
তো এসে গেছে শুধু ফাহিম আসেনি ওরা বলছে ও না কি আসবেনা।
কেন আসবেনা তুই ফোন করে দেখ সমস্যা কি?
কাল রাত থেকে আমি অনেকবার ফোন দিচি আমার ফোন তোলে না তুই দে ।
দুর আমি পারবোনা না আসলে নাই।
নপূর এর অনেক অনুরোধ এ ফোন দিতে বাধ্য হলাম মনে হচ্ছে ফাহিম না এলে তার আজকেন দিনটাই বৃথা যাবে।
কল দেওয়ার দশ সেকেন্ড এর মাথায় ফোন তুলে কিরে কেমন আছিস?
ঐ তোরে আমি ফোন দিচি কেমন আছি তা শুনানোর জন্য? ??
এমন রাগে আছিস কেন (ঘুম জড়ানো কন্ঠ মনে হচ্ছে)
ঐ গিট্টু তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস????
(খাটো বলে সবাই ওরে গিট্টু বলে আমি কখনো বলি নাই আজ অতিমাত্রা রাগের জন্য বলা)
হ্যাঁ রে তিন দিন দুই রাত ঘুম মারছি।
আমি:কেন কি এমন রাজ কার্য ছিলো যে ঘুমাতে পারিস নাই।
ত্রিশ সেকেন্ড পরে ,একটা বিয়েতে গেছিলাম তাই ঘুমাতে পারি নাই তুই কি চাস তোর বন্ধু তোর বিয়েতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসুক ।
একথা শুনার পর ফোন কেটে দিলাম, ফোনে ত্রিশ সেকেন্ড পর উত্তর দেওয়া মানে তিন মিনিটা পর উত্তর দেওয়া এর সমান, আর এখন আমার উপর দিয়ে যে সময়টা বয়ে যাচ্ছে এ সময়ে মনে হচ্ছে ত্রিশ মিনিট।
আর কি সব মাথা মন্ডু বলে বিয়েতে গেলে কেউ ঘুম যেতে পারে না আজ নতুন শুনলাম ।
ফোন কাটার পর থেকে ফাহিম ফোন দিচ্ছে তাই ফোনটা অফ করে আখিঁ কে ডাক দিয়ে তার কাছে দিয়ে দিলাম যেনো ভালো কোন জায়গায় লুকিয়ে রাখে।
আমার বিয়ের সাজ শেষ আজকে সাজানোর পর মনে হচ্ছে আল্লাহ্ কোন সময় এই নরক জ্বালা থেকে মুক্তি পাবো।
আমার তেমন সাজার অভ্যাস নেই আমার ফোনে যতো গুলা পিক আছে তার মধ্যে চার পাঁচটা পিক এর বেশি হবে না সেজে পরিপাটি হয়ে উঠানো। সাজতেও আমার আলসেমি লাগে কোন মেয়ের সাজার জন্য আলসেমি লাগে এটা শুনলে সবাই হাসে আর কেমন চোখে তাকায় আসলে কি আমি ?
এলিয়েন না মেয়ে।
বর পক্ষের সবাই এসে উপস্থিত বউ দেখবে বলে আমিও কোন ভনিতা না করে সরাসরি তাকিয়ে আছি তাদের দিকে কে কেমন সাজ সাজছে কাকে বেশি সুন্দর দেখা যাচ্ছে কাকে কম সুন্দর দেখা যাচ্ছে। ওরা আমায় দেখতে এলো আমি দেখতে কেমন তাহলে আমারও তো একটা কর্তব্য আছে না তাদের দেখা না হয় কেমন যেন দেখায়।
আমি পনেরো বিশ মিনিট থেকে দেখছি একটা মেয়ে (আমার বয়সি হবে না হয় একটু বড় হবে) বসে আছে আমার সাথে সবাই ডাকছে তেদের সাথে যেতে কিন্তু ও না করে দিচ্ছে আর বলছে আমার পা ব্যাথা করছে তোরা হাঁটে দেখ সবাইকে আমি পারবোনা।
রুম কিছুটা হালকা হওয়ার পর মেয়েটা আমার কানের সাথে ওর মুখ মিলিয়ে বলছে আপু তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকালাম তখন সে চোখ দিয়ে ইশারা করলো সবাইকে বের করে দিতে।
অবাক চোখে তাকানোর কারন এ মেয়ে আমাকে আপু বলাতে বিশেষ করে নতুন বউদের আপু বলে সম্মোধন করেনা ,ভাই হলে ভাবি মামা হলে মামি এরকমি বলে, আপু বলাতে একটু খটকা লাগলো মনে।
তাই তখন আমার বন্ধু গুলারে বললাম তোরা সবাই খেয়ে নে আমার জন্য বসে থাকিস না এমনিতে আমার গলা দিয়ে খাবার নামবেনা শুধু শুধু বসে না থেকে খেয়ে আয় সবাইকে নিয়ে।
সবাই চলে যাওয়ার পর মেয়েটি বললো আপু সত্যিই তুমি অনেক সুন্দর তাই তো শাওন ভাই আমাকে ভুলে তোমাকে বিয়ে করছে।
এ মেয়ে আমাকে সুন্দর বলছে,মনে হচ্ছে আয়না দেখে না, আয়না দেখলে আমাকে সুন্দর বলতোনা।
কারন আমি মেয়ে হয়েও তার রূপের ব্যাখ্যা ঠিক মতো দিতে পারবোনা।
(মনে মনে)
<<আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম রিলেশন কতো দিনের?
শিখা বললো কোন রিলেশন ছিলো না।
<<তাহলে??
–ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে চায় বলে মামার (শওন এর বাবা)কাছে বললো,কিন্তু মামা চায় না।
আজ তিন বছর থেকে ভাইকে অনেক জায়গায় মেয়ে দেখায় ভাই পছন্দ হয়নি বলে না করে দেয় তখন আমি বুঝতাম আমায় ভালোবাসে,পছন্দ করে তাই না করে দেয়।
কিন্তু ঐ দিন যখন শুনলাম শাওন ভাই এর মেয়ে পছন্দ হয়েছে বিশ্বাস করো পুরা রাত কান্না করে কাটিয়ে দিয়েছি।
ঐ রাত থেকে এখন পর্যন্ত পেট ভরে একটু খাওয়া খেতে পারিনি।
ইচ্ছা ছিলো না বিয়েতে আসার হলুদে আসিনি পুরা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।
আজ সকালে মনে হলো তোমাদের বাড়ীতে আসলে যদি তোমার কাছে সাহায্য পাই সে আশায় বুক বেঁধে এলাম এখন তোমার উপর নির্ভর করে আমার ভবিষ্যৎ জীবনের ভলো থাকা খারাপ থাকা।
হয়তো বেঁচে থাকবো সংসার করবো অন্য কারো সাথে কিন্তু মন,ভালোবাসা, ভালোলাগা সব পড়ে থাকবে শাওন এর কাছে।
<<ভাই থেকে শাওন মনে হচ্ছে মন থেকে অনেক ভালোবাসে আর ছেলেটা কি হারামি মেয়েটাকে ভালোলাগা ভালোবাসা শিখিয়ে এখন আমায় বিয়ে করতে আসছে রুমাল মুখে দিয়ে।
মন চাচ্ছে রুমাল ফেলে দিয়ে আচ্ছা করে পাতিলের নিচের কালি
লাগিয়ে দেই(মনে মনে)।
<<আমি তোমার জন্য কি করতে পারি? কি করলে তুমি তোমার ভালোবাসা পাবে তা বলো।
–আপু তুমি বলে দাও ছেলের অন্য কারো সাথে রিলেশন তুমি তাকে বিয়ে করতে পারবেনা।
<<হ্যাঁ তা তো বুঝলাম কিন্তু বিয়ে ভাঙ্গার পরও যদি তোমাদের বিয়ে না হয় উল্টো তোমার ভালোবাসা তোমায় ফাঁসিয়ে দেই তখন?
আর আরেকটা কথা আমার বাবা টাকা গুলার কি কোন মূল্য নাই? তার মেয়ের বিয়েও হলো না কিন্তু টাকাও খোয়ালো আমি তখন নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারবো? বলো তুমি।
–চুপ করে আছে মাথা নিচু করে।
<<এই তুমি কিছু বলোনা কেনো।
–আপনি বলেন,আপনি যে ভাবে বলবেন আমি সে ভাবেই করবো।
<<তোমার বাবা মা তোমাদের এ বিয়ে মেনে নিবে?
তোমার মামা ছাড়া উনাদের পরিবারের সবাই মেনে নিবে মানে তোমার মামি,তোমার মামির সাথে তোমার মায়ের কি রকম সম্পর্ক ভালো না খারাপ।
–বাবা মা সাবাই রাজি আর মামীও চায় আমি তার একমাত্র ছেলের বউ হই,মায়ের সাথে মামীর খুব ভাব।
<<তাহলে তো ভালোই হলো।
–না ভালো না মামা খুব বদ রাগি মানুষ বিয়ে ভাঙ্গার পর কি করবে আল্লাহ্ ভালো যানে।
<< হু বুঝছি,তোমার বাবা মা আজকের সব ক্ষতি পূরন দিতে পারবে।
–বুঝলাম না আপু।
<<আজকে তোমাদের দুজনের বিয়ে হলে তো তোমার বাবা মা সব খরচ বহন করতে হবে।
এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলে তাড়াতাড়ি যানাও সময় বেশি নাই।
–তুমি পারবে তো?