অপলক দৃষ্টি

অপলক দৃষ্টি

একাকী একটি ছেলে । প্রতিদিনের মতো সেই দিন বিকালেও ছেলেটি বের হয়েছিল ঘুরতে । কিছুক্ষন হাঁটার পর ছেলেটির আর একা একা ভালো লাগতেছিল না । তাই সে আবার তাদের বাসার ছাদে ওঠে হাঁটতে লাগল । ছেলেটির বাসার দুই পাশে আরও দুইটি ফ্ল্যাট ছিল । ছেলেটি সেইদিকে চোখ ফিরানোর সাথে সাথে সে দেখল একটি মেয়ে তাদের বাসার ঠিক উপরের ফ্ল্যাট থেকে তার চলাফেরা লক্ষ্য করতেছিল । কিন্ত যখনই ছেলেটি সেই দেখে মুখ ফিরাল মেয়েটি তার চোখ ফিরিয়ে নিল । এক সময় দুইজনই পরস্পরের দিকে অপলক তাকিয়ে তাকলো । গল্পের সুবিধার্থে আমি এখানে গল্পের নায়িকার নাম দিলাম ফারিহা আর নায়ক আর নাম দিলাম আবিদ । যদিও এটা কোন সত্য ঘটনা নয় ।

এবার গল্পের মূল ঘটনাতে আসা যাক । এর পর দিনও ছেলেটি অর্থাৎ আবিদ ছাদে ওঠেছিল । যা হবার তাই হল । ছেলেটি তাকাই মেয়েটি চোখ ফিরিয়ে নে । মেয়েটি তাকাই ছেলেটি চোখ ফিরিয়ে নে । আবার দুইজনেরই একে অপরের প্রতি অপলক তাকিয়ে থাকে । সেই দিনের বিকাল বেলা এইভাবেই কেটে গেল । আবিদ ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার পর মেয়েটিও নেমে গিয়েছিল । হয়তো দুইজনই একে অন্যকে নিয়ে ভাবতেছে । আবিদ মেয়েটির প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়ে গেলো । আবিদের কাছে মনে হল এইতো আমার সেই রাজকন্যা যার জন্য আমি এতোদিন অপেক্ষার প্রহর গুনেছি । আবিদ সেই দিন রাত্রে ঘুমাতে পারে নি । সেই দিনের রাতকে তার কাছে মনে হয়েছিল একটি স্বপ্নের রাতের মতো ।ফারিহাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আবিদ এর রাতটা কেটে গেল । আবিদ সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটির সাথে সে পরিচিত হবে । তার না বলা ভালবাসার কথা সে ফারিহাকে জানাবে । পরদিন সেই আশাতেই সে ছাদে উঠল । কিন্ত ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সেই দিন মেয়েটি ছাদে আসে নি । যা হবার তাই হল । মেয়েটি কেন ছাদে আসলো না সেই কথা ভাবতে ভাবতে ওই দিনের বাকি সময়টা চলে গেল আবিদের । তবুও মেয়েটাকে নিয়ে আবিদের স্বপ্ন বুনা থেমে থাকল না । আর মনে মনে প্রার্থনা করতেছিল যেন ফারিহার সাথে তার আবার দেখা হয় ।

রাত শেষে ভোর হল । আবিদ বিকাল বেলা কবে আসবে সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনতে লাগল । বহুল প্রতিক্ষিত সেই বিকাল বেলা আসলো । আবিদ বিকাল ঘনিয়ে আসার অনেক আগেই ছাদে ওঠে ফারিহার অপেক্ষাই ছিল । কিন্তু যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন বুনা হচ্ছে তার নামটাই তো আবিদ জানে না । এমনকি ফারিহাও । আবিদের ভাগ্য সেই দিন সুপ্রসন্ন ছিল । তার দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটলো ফারিহার ছাদে ফিরে আসাতে । আবিদ খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ল । ইচ্ছে করতেছিল মাথার উপরের আকাশটাতে মুক্ত পাখির মত ডানা মেলে উড়তে । কিন্তু এতো খুশি হলে তো হবে না । এখনও যে কোন কাজই হল না ।

অতঃপর আবিদ তার স্বপ্নের রাজকন্যার দিকে এক পলক তাকানোর জন্য মুখ ফিরাল । ঠিক তখনই আবিদ অবাক হল । ফারিহাকে দেখে নয় । ফারিহার পাশে আবিদ তার নিজেরই ছোট চাচাতো বোনকে দেখে । আবিদ ভেবে দেখল আমাদের পাশেই তো ওদের বাসা হয়তো সেই কারণে ওর সাথে পরিচয় আছে । তাই সে ভেবে দেখল এখন আর কথা না বলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে কারণ আমার বোনের কাছ থেকে ওর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা যাবে । তাই সে সেই আশায় ছাদ থেকে নেমে পড়ল ।

আমি আবিদের চাচাতো বোনের নাম দিলাম নাবিলা । ওরা দুই ভাইবোনই কথাবার্তাই অনেক ফ্রী । তাই ফারিহা সম্পর্কে নাবিলার কাছ থেকে জানতে আবিদের কোন সমস্যাই হল না । অতঃপর আবিদের বোন মানে নাবিলা যখন ছাদ থেকে নামলো তখন আবিদ ফারিহা সম্পর্কে নাবিলাকে জিজ্ঞাস করলো । আবিদ যা ভেবেছিল তাই সঠিক । তেমন কোন পরিচয় নয় । শুধুমাত্র পাশের বাসার মেয়ে হিসাবেই একটু-আধটু কথাবার্তা হয় এই আর কি । আবিদ মেয়েটি সম্পর্কে নাবিলার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলো । যা আবিদের কাজকে আরও সহজ করে দিল । নাবিলার কাছ থেকে আবিদ ফারিহার ফোন নাম্বার ও পেয়ে গেলো ।

অতঃপর আবিদ ফারিহাকে রাত্রে ফোন করবে বলে টিক করলো । ফোন দিয়েই আবিদ বললো এইভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে । সারারাত ঘুমাতে পারি না । সারাক্ষণ শুধুই তোমার কথা ভাবতে থাকি । কোন কাজই হয় না ।অনুগ্রহ করে আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিবে কি ? এই সব কথা শুনে ফারিহা তো অবাক । কে এই আবিদ ? অনেক ভেবেচিন্তে ফারিহা আবিদকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিল । কিন্তু আবিদ রাজি হল না । আবিদ ফারিহাকে অনেক বুঝাল যে তাকে ছাড়া ওর জীবন অর্থহীন । পরক্ষনে আবিদ ভাবল হয়তো বন্ধুত্বের প্রস্তাবটা তার সম্পর্কে ভালভাবে জানার একটা কৌশল । তাই সে ফারিহার সাথে ফোনে কথা চালিয়ে যেতে লাগলো । ফারিহাও আবিদের সাথে অনেক কিছু শেয়ার করতে লাগলো । এইভাবে প্রায় দুই মাস চলে গেলো ।

দুই মাস পূর্ণ হওয়ার টিক তিনদিন পর আর ঘটনা । সেই দিন ফারিহা আর আবিদ কেউ কারো সাথে ফোনে কথা বলতে পারলো না । আবিদের ফোন বন্ধ ছিল । ফারিহা বারবার চেষ্টা করার পরও আবিদের কোন খবর পেল না । ফারিহা ভাবতে লাগলো , আমি কি আবিদকে ভালবাসতে আরম্ভ করেছি ?? ওর জন্য আমার এতো চিন্তা হচ্ছে কেন ?? ফারিহা অস্থির হয়ে পড়ল । কোনভাবেই যে সে আবিদের কোন খবর পাচ্ছিলো না । যতবারই আবিদের নাম্বারে ফোন করে ততবারই মোবাইল বন্ধ । সেই দিন রাত্রে ফারিহা ঘুমাতে পারলো না । এক সময় আবিদের যে কষ্ট হত সেই কষ্ট এখন ফারিহার হচ্ছে । ফারিহা বুঝতে পারলো যে সে সত্যি সত্যি আবিদকে ভালবেসে ফেলেছে । রাত পেরিয়ে সকাল হল । আবিদের কোনো খবর নেই । এই দিকে ফারিহা তো আবিদের ভাবনাই অস্থির হয়ে পড়ল । সকাল এর পর দুপুর ঘনিয়ে আসলো । তবুও আবিদের কোন খবর নেই । দুপুরের পর বিকাল ঘনিয়ে আসলো । বিকালে যথারীতি ফারিহা ছাদে একা একা হাঁটতে চলে গেলো । সেই খানেই নাবিলার সাথে যথারীতি দেখা হল । নাবিলা কে ? সেই কথা মনে আছে তো আপনাদের । আবিদের চাচাতো বোন নাবিলা । অতঃপর ফারিহা তার কষ্টের কিছু কথা নাবিলার সাথে শেয়ার করলো । নাবিলা সব কিছু জানার পরও না জানার ভান করলো । এইদিকে ফারিহা তো তার স্বপ্নের রাজপুত্র আবিদের কথা নাবিলাকে বলেই যাচ্ছে । আবিদ কোথায় আর ও যে আবিদেরই চাচাতো বোন সেই সব নাবিলা ফারিহাকে বুঝতে দিলো না । উল্লেখ্য ফারিহা কিন্তু জানতো না যে নাবিলা আবিদেরই আপন চাচাতো বোন । সব কিছু শুনে নাবিলা একটু মজা পেল । নাবিলা তো জানে আবিদ কোথায় ? ফারিহার সেই স্বপ্নের রাজপুত্র আবিদের ফোনও কেন বন্ধ সেই কারণটাও যে নাবিলার জানা আছে ।তাই সে মিটিমিটি হাসতেছিল ।

আপনারা কি এখন বুঝতে পেরেছেন ঘটনাটা আসলে কি ? ঘটনা আর কিছুই না । ঘটনা হল , এই সব কিছু মানে আবিদের ফোন বন্ধ করে রাখার বুদ্ধিটা আসলে আবিদকে দিয়েছিল নাবিলা নিজেই । তাই আবিদের জন্যে ফারিহার অস্থিরতার ব্যাপারটা নাবিলা খুব উপভোগ করতেছিল । আরও কিছুক্ষন ব্যাপারটা উপভোগ করার পর নাবিলা বলল , ফারিহা ,আবিদ কোথায় আমি জানি । অতঃপর সেই কথা শুনার পর তো ফারিহা নাবিলাকে অনুরোধ করলো সে যেন আবিদের কাছে তাকে নিয়ে যাই । এতো কিছুর পর নাবিলার বুঝতে বাকী রইলো না যে ফারিহা আবিদের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে । তাই সে আবিদের সাথে আলোচনা করে টিক করলো আবিদের বুদ্ধিটার ইতি টানবে কারণ ফারিহাকে আর এতো কষ্ট দেওয়া টিক হবে না ।

অবশেষে ফারিহার অপেক্ষার পালা শেষ হতে লাগলো । এরপর দিন সকালেই নাবিলা গল্পের মূল চরিত্র আবিদ ও ফারিহাকে সাক্ষাত করিয়ে দিল । সাক্ষাতের স্থান ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ এর ক্যান্টিন । উল্লেখ্য ফারিহা ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রী আর আবিদও ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । অতঃপর নাবিলা তাদেরকে সাক্ষাত করিয়ে দেওয়ার পর সেই স্থান থেকে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিল । কারণ আবিদ ও ফারিহাকে তাদের সেই বহুল প্রতিক্ষিত মুহূর্তটা কাটানোর সুযোগটা তো দিতে হবে । এরপর যা হয়েছিল তা হয়তো তাদের জীবনে আর কখনও ফিরে আসবে না । ফারিহা আবিদকে বলল আর কোন দিন যেন সে তাকে ফেলে কোথাও না যাই । আবিদও বলল আর কোন দিন যেন ফারিহা তাকে ফেলে কোথাও না যাই । দুই জনের চোখেই আবেগ ও খুশির ফোয়ারা বয়ে যেতে লাগলো ।

ভালোবাসা যেন এমনই মধুর ও বন্ধন যেন এমনই অটুট হয় সেই কামনাই রইলো ।

আমার জীবনেও কোনদিন আসুক সেই রকম কোন মিষ্টি-মধুর ভালবাসার মানুষ আপনারা সেই দোয়া করবেন

লিখেছেন – নিরব |

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত