অবশেষে মিলন

অবশেষে মিলন

রাত দশটা! প্রচন্ড রাগ,কষ্ট আর অভিমান নিয়ে বাসা থেকে বের হলো নাহিদ। এই রাগ, অভিমান কারো উপর নয়, নিজের উপর তার এ অভিমান। তাইতো বাসা থেকে বের হওয়া নাহিদের। বাসা থেকে বের হওয়ার একটাই কারণ যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।এ যোগ্যতা শিক্ষার যোগ্যতা নয়, এ যোগ্যতা হচ্ছে টাকার।

যে শিক্ষা নাহিদের আছে সেটা দিয়ে সে সমাজে মাথা উচু করে চলতে পারবে কিন্তু এ শিক্ষা দিয়ে তো জীবন চলছে না । শিক্ষা দেখে কোন মেয়ের বাবা বিয়ে দিতে চায়না। সব মেয়ের বাবা মা চায় প্রতিষ্ঠিত কোন ছেলের সাথে তাদের আদুরে মেয়েটার বিয়ে দিতে। প্রতিটা বাবা মা চায় তাদের মেয়েটা যেন বিয়ের পর সুখে থাকে,কোন কষ্ট যেন না হয় তাদের মেয়েটার।

নাহিদের শিক্ষা আছে কিন্তু নাহিদ প্রতিষ্ঠিত নয়।তাইতো নাদিয়া আজ সরাসরি বলেই দিলো প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলে বিয়ে করবে না। আবেগের বসে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি তাই বলে কি সারাজীবন বেকার মানুষের সাথে কাটাতে হবে এটা কোথাও লেখা নাই। আর বাবা মার অবাধ্য হয়ে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। বিয়ে করতে পারতাম যদি তুমি প্রতিষ্ঠিত হতে, তোমার যোগ্যতা থাকতো। মানলাম তুমি শিক্ষিত কিন্তু তোমারর এ শিক্ষারর কোন মূল্য বাস্তব জীবনে নেই যদি তুমি চাকরী না করো। বাস্তব জীবনে চলতে গেলে টাকা আগেই লাগবে। সুতরাং তোমাকে এক বছর সময় দিলাম এর মধ্য যদি তুমি নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারো তাহলে তোমাকে বিয়ে করবো আর না পারলে করবো না।কারণ আবেগ দিয়ে জীবন চলে না,বাস্তব অনেক কঠিন। যখন তোমার সাথে সম্পর্ক শুরু করেছিলাম তখন অনেক আবেগ ছিলাম কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে শিখেছি বাস্তব আগে তারপর আবেগ। আমার কথা মনে হয় বুঝতে পেরেছো।

নাহিদ শুধু একটা কথায় নাদিয়া কে বলে, আমি যদি প্রতিষ্ঠিত হই তাহলে আমাকে বিয়ে করবে আর না হলে করবে না এটাই কি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত।

হুম এটাই শেষ সিদ্ধান্ত। আমার পরিবার কখনোই বেকার আর অপ্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে না। আর আমিও আমার পরিবারের উপর কোন কথা কিংবা কাজ করতে পারবো না।

নাহিদ আবার বলে উঠে তাহলে এতদিনের সব কথা কি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। তোমার আমার সব স্বপ্ন আশা কি মিথ্যা হবে।

নাহিদ তুমি কি বোঝনা আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা, আর কখনো চলবে না। সুতরাং পরিবারের কাছে এক বছর সময় নিয়েছি তুমি পারলে প্রতিষ্ঠিত হও। প্রতিষ্ঠিত হলে বিয়ের জন্য এসো না হলে এসো না।

আচ্ছা নাদিয়া তোমার কাছে একবছরের মধ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে ফিরবো। প্রতিষ্ঠিত না হতে পারলে ফিরবো না। বাই বলে নাদিয়ার কাছ থেকে চলে আসে নাহিদ।

তারপর বাসা থেকে বের হয় প্রতিষ্ঠিত ও যোগ্যতা অর্জন করতে। রাত দশটায় দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য গাড়িতে উঠে নাহিদ। পরদিন সকাল ৫টায় ঢাকা এসে পৌঁছায়। এরপর এলাকার এক বন্ধুর বাসায় উঠে। হঠাৎ করে ঢাকা আসার কারণ জানতে চায় নাহিদের বন্ধু কিন্তু নাহিদ এমনি বলে মনের কথা মনের মধ্য রেখে দেয়। বন্ধুকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে বলে। বন্ধু কয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলে।

কয়েকদিন অপেক্ষা করার পর নাহিদের একটা গার্মেন্টসে চাকরী হয়।ডিগ্রী পাশ হওয়ায় নাহিদ ভালো একটা পজিশনে চাকরী পায়। টানা তিনমাস এক কোম্পানিতে চাকরী করার পর নাহিদ চাকরি বদলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তিন মাসের অবিঙ্গতা কে কাজে লাগিয়ে নাহিদ অন্য একটা কোম্পানিতে সুপারভাই জার পদে চাকরি নেয়। সেখান কিছুদিন চাকরি করার পর আবারো চাকরি টা বদলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের উপর বিশ্বাস,সাহসীকতা আর নাদিয়ার বলা সেদিনের কথাগুলো মাথায় কাজ করতে থাকে সবসময়। এভাবে পর্যায়ক্রমে একবছরের মধ্য নাহিদ একটা গার্মেন্টস এর ফ্লোর ইনচার্জ এ পরিণত হয়। অনেক টাকা বেতন হয় নাহিদের। নাহিদ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ভাবতে শুরু করে। নাদিয়ার সেদিনের কথাগুলো মনে করে কান্না আসে নাহিদের। নাহিদ সিদ্ধান্ত নেয় এবার নাদিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতা অর্জন হয়েছে।

নাহিদ ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্য বাসে উঠে। বাসে উঠে নাদিয়াকে কল করে বলে আমি আসতেছি।আগামীকাল তোমাদের বাসায় আসবো।কথা বলবো তোমার আমার সম্পর্ক নিয়ে। নাদিয়া অনেক খুশি হয়।

বাসায় ফিরে পরদিন সকালে নাহিদ নাদিয়ার বাসায় যায়। নাহিদ কে পর্যাপ্ত সম্মান করার ব্যবস্থা করে নাদিয়ার পরিবার। নাদিয়ার বাসায় পৌঁছে নাহিদ সবার সামনে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়। সবার সামনে নাহিদ পুরোনো দিনের কথা গুলো বলতে শুরু করে। পুরোনো দিনের কথা গুলো শুনে সবাই একটু অবাক হয়।

নাহিদ সোজা বলে দেয় নাদিয়ার পরিবারের কাছে তাদের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।কারণ দুঃখ আর হতাশায় ভুগতে থাকা নাহিদের পাশে সেদিন সে দাঁড়াতে চায় নি। যোগ্যতা সম্পূর্ণ হয়ে না ফিরলে নাদিয়া কখনো বিয়ে করতো না।আজকে ভালো চাকরী করছি তাই আপনার আজ রাজী। কিন্তু চাকরী যেদিন ছিলো না সেদিন অবহেলা করেছেন আপনারা।আমার সাথে বিয়ে দিতে অস্বীকৃত জানিয়েছেন। সুতরাং আপনাদের সাথে সম্পর্ক না করায় ভালো। কারণ যে মানুষ দুঃখের দিনে পাশে থাকতে পােরনা তাদের কে সুখের দিনে কাছে না টানাই ভালো। সুতরাং অন্য কোথাও নাদিয়ার বিয়ে দিয়ে দেন আপনারা। আমি চাই না আপনাদের সাথে কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। কথাগুলো বলে নাহিদ বাস ত্যাগ করে। নাদিয়া দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। অনেক কান্নাকাটি করে,ভুল গুলো বুঝতে পারে। সেদিন ওভাবে কথা গুলো না বলে একটু বুঝিয়ে বলা উচিৎ ছিলো মনে করে।

এভার ১ মাস পার হয়ে যায়। নাহিদও অনেক কষ্ট পায়,নাদিয়াকে ওভাবে কথা গুলো বলা উচিৎ হয় নি। নাদিয়ার মতো নাহিদও অকেন কষ্ট পায়, কেঁদে দুচোখ ভাষায়।কারণ নাদিয়া তার জীবনের প্রথম মানুষ।তার প্রথম পথ চলার সাথী ।

অবশেষ দীর্ঘ দুই মাস পর নাহিদ নাদিয়ার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠায়।নাদিয়া ও তার পরিবার বিয়েতে রাজি হয়। এরপর মহা ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হয়। সম্পর্ক টা পুরোপুরি পরিপূর্ণতা লাভ করে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত