আকাশে অনেক মেঘ জমেছে সাথে প্রবল বাতাসও বইছে। বিদুৎ চমকাচ্ছে। রাস্তার লোকজন দৌড়ে পথ পাড়ি দিচ্ছে। বাতাসে পলেথিনের টুকরো গুলি ঘুড়ির মত আকাশে উড়ছে। এরপর তির্ব শব্দে আশে-পাশে কোথাও বর্জপাত হলো বোধ হয়। সাথে সাথে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো।
ব্যস্ত রাস্তা মুহূর্তেই ফাকা হয়ে গেল।রাস্তার পাশের দোকানীরা দোকানের সাটার নামিয়ে ফেলেছে।কয়েকটা পথ শিশু বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে।
আমার ফ্লাটের কাচের জানালা ভেদ করে আমি তাকিয়ে এসব দেখতে ছিলাম। মনে পড়ল গ্রামে এমন বাদল দিনে আমরা দল বেধে আম কুড়াতে যেতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ধান খেতের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে মাছ ধরতাম। কখনো বা কৃষানীর রোদে শুকাতে দেওয়া ধান ঘরে তুলতে সাহায্য করতাম। আবার কখনো বা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দল বেধে ফুটবল খেলতে নেমে পড়তাম।
স্মৃতির ভেতর কতকক্ষন ছিলাম জানিনা স্ববিৎ ফিরে পেলাম কলিং বেলের কৃত্তিম পাখির ডাকে। দরজা খুলতেই ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম।
চমকে গিয়ে বললাম কে আপনি?
সে বলল আপনি কি শফিক ভাই ?
হ্যা বলতেই সে রুমে ঢুকে পড়ল।
বোরকার মুখের র্পাট খুলে বললো – হটাৎ বৃষ্টি এসে আমাকে ভিজিয়ে দিল। ঘরে তোয়ালে আছে?
আমি তার মুখের দিক তাকিয়ে অবাক হলাম ফর্শা সুন্দর মায়াবী চেহারা।
সে আমার মুখের দিক তাকিয়ে বললো “ কি হলো তোয়ালে …”
আমি ভেতরের রুম থেকে তোয়ালে এনে তার হাতে দিলাম।
ততকক্ষনে সে ভেজা বোরকা খুলে ফেলেছে। তার পরনে গোলাপী রংয়ের সুতির থ্রিপিছ। আমি তার রুপ দেখে রিতিমত মুগ্ধ। কিন্তু তার এমন আচরনে কিছুটা সংকিত।
পূর্ব পরিচিত দুরে থাক আমার জীবনে এই তরুনীকে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়লো না। সে সোফায় বসে নির্বিকার ভংগিতে বললো চা খেতে ইচ্ছে করছে। আমি লজ্বিত স্বরে বললাম ঘরে চায়ের দুধ শেষ হয়ে গেছে।
সে স্বাভাবিক গলায় বললো সম্যসা নেই আমি রং চা খাব। না হলে ঠান্ডায় আমার গলা বসে যাবে।
আমার বাসার কাজের ছেলে মনির দরজার কবাটের আড়ালে দাড়িয়ে অপরিচিত এই ক্ষেপাটে তরুনীকে দেখতে ছিল। আমি ইশারা করতেই ও বেড়িয়ে এল। ওরে বললাম ম্যাডামের জন্য চা বানাও রং চা। ও মাথা দুলিয়ে চলে গেল।
হটাৎ ধুমকেতুর মত ছুটে আসা তরুনী হেসে আমাকে ধন্যবাদ দিল।
হটাৎ করেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমি দুঃখিত আমিতো আমার পরিচয় দিতে ভুলে গিয়েছি। আমার নাম মিলি।আমার বাসা মিরপুরে। আপনার বাবা সেদিন আমাদের বাসায় গিয়ে ছিলেন, আপনার সাথে আমার বিয়ের ব্যপারে কথা-বার্তা ঠিক করে এসেছেন। কিন্তু দেখুন আমার এখন বিয়ের ব্যপারে কোন আগ্রহ নেই।
মিলির কথা শুনে মুখটা সাদা হয়ে গেল। বোকার মত ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। বলে কি মেয়ে টা?
মিলি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার বলে উঠে – দেখুন আমি আমি একটু স্বাধীনচেতা মেয়ে । আমার এক কথা আগে নিজের পায়ে দাড়াবো তারপর বিয়ে। কেবল অনার্স শেষ করলাম। এ সময় বিয়ে করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
সে অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছিল। বোকার মত সেই কথা শুনছি আর ভাবছি মেয়েটার মাথা ঠিক আছেতো?
সে হটাৎ থামলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো – কি ব্যাপার আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনার কি ধারনা আমার মাথা ঠিক নাই?
ঢোক গিলে আমত আমতা স্বরে বললাম : না মানে দেখুন আমি কিন্তু .. ..
সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো – মাকে আর বড় ভাইয়াকে অনেক বোঝালাম কিন্তু আমি পরিবারে সবার ছোট বলে ওরা আমাকে পাত্তাই দিলনা। তাই সাহস করে আপনার কাছে চলে এলাম।
মনির চায়ের ট্রে রাখল।
গলা শুকিয়ে আসতে ছিল তাই চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। মিলি চায়ে চুমুক দিয়ে আনন্দিত গলায় ঊচ্ছাসীত স্বরে বললো অসাধারন চা। মনির তোমাকে ধন্যবাদ। মনির কৃতজ্ঞতা ভরা চোখে মিলির দিকে তাকালো।
মিলি আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমার পূর্বের ধারনার সাথে আপনার কোন মিল নেই। আপনার বাবার বিসাল ভুড়ি আর জাদরেল গোফ দেখে আমিতো ভেবে ছিলাম . . .সে যাইহোক আপনী কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর!
মিলি মুচকি হাসল।
আমি এবার হেসে বললাম
ম্যাডাম আমার বাবা ছয় বছর আগে মারা গেছেন। তাছাড়া আমার এমন কোন অভিভাবক নেই যে আপনাদের বাসায় আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।
– কি বলছেন! মিলি আতকে উঠল।
তার হাত কাপছে।সে বিস্ময় ভরা গলায় প্রশ্ন করে
আপনি না বললেন আপনার নাম শফিক? এবার আমি হেসে বললাম দেখুন এ ভবনের পাচ তলায় আরো একজন শফিক সাহেব থাকেন।
উত্তেজনায় দাড়িয়ে যাওয়া মিলি এবার ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।
মনির পাশে এসে বলে মামা ওনারে দেখতে কিন্তু খুবেই সোন্দর লাগে নায়িকা পূনিমার মতন! আমার পছন্দ হইছে।
আমি ধমক দিয়ে মনির কে বিদায় করি।
মিলি লজ্বিত কন্ঠে বলে সর্যী ভাইয়া আমার মাথা ঠিক ছিলনা। আপনি কিছু মনে করেন নাই তো?
আমি মৃদ্য হেসে বললাম – না কিছু মনে করি নাই আমার বাসা ২য় তলায় হওয়ায় প্রায় ওনার বাসার গেষ্ট ভুল কর আমার বাসায় চলে আসে তবে এই প্রথম ও বাসার হবু বধু আমারে বাসায় চলে এসেছে।
মিলি লজ্বা পেয়ে জানালার দিকে তাকালো। বাইরে এখনও প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।
আমি বললাম আপনি কি এখন শফিক সাহেবের বাসায় যাবেন? তাহলে মনিরকে বলি ও আপনাকে পৌছে দিবে।
মিলি আমার দিকে তাকিয়ে বললো আপনি এখন ও বিয়ে করেন নাই কেন?
হেসে বললাম আমার এমন কোন অভিভাবক নেই তাছাড়া সময়ও হয়না।
মিলি এবার গম্ভীর স্বরে বলে আমার কিন্তু আপনাকে ভাল লেগেছে।
আমার কোন উত্তর না শুনেই ও বাইরে বেড়িয়ে যায়। আমি কিংর্কতব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে বসে রইলাম।
মনির দৌড়ে এসে বললো মামা এই নেন ছাতা দৌড় দেন।