গম্ভীর ভালবাসা

গম্ভীর ভালবাসা

– কোথায় ছিলেন এতদিন?
– আপনি জেনে কি করবেন?
– বলতে বলছি বলেন।
– মানিকগঞ্জ।
– মানিকগঞ্জ কি করতে গেছিলেন?
– বেড়াতে।
– আমায় বলে গেলেন না কেন?
– আপনায় বলে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি।
– হুম গুড।আন্টি আপনার ওপর নজর রাখতে বলেছিলো।সকালে দেখলাম রিক্সায় মেয়েদের সাথে ঘুরতেছেন।তো এই কথা কি আন্টিকে বলবো?
– আমি সকালে ভার্সিটিতে ছিলাম।এবং ভার্সিটি শেষ করে সোজা বাসায় আসছি।মাঝে কোনো মেয়ের সাথে ঘুরছি বলে মনে পড়ছে না।
– মনে করতে হবে না।কথাটা আমি বানিয়ে আন্টির কাছে বলবো।
– তাতে আপনার লাভ?
– আপনায় কিছুটা শায়েস্তা করা হবে।
– যে কাজ আমি করি নাই সে কাজ আমার ঘাড়ে চাপালে ফল ভালো হবে না।
– আপনি এমন কেন?গম্ভীর রসকষহীন।সবসময় জেদ দেখান।একদম রাক্ষস রাক্ষস ভাব।
– নীল এই আকাশ দেখেছেন।কেমন গম্ভীর নিশ্চুপ।এটা আকাশের সাধারণ রূপ মাত্র।ঝড় উঠলে প্রকাশ পায় এর বিকট চেহারা।

বাজ পড়ার সাথে জানিয়ে দেয় ভয়ংকর গর্জনের কথা।নীল এই আকাশটা আমাদের উত্তপ্ত করে এবং পর্যায়ক্রমে শীতল করে।রংধনুর যে দর্শন আমরা পেয়ে থাকি এটাও আকাশের একাংশ।সবশেষে,সামান্য কাউকে চিনে কারো বিচার করা উচিত নয়।
– ওয়াও..ওয়াও..ওয়াও।আপনি এত সুন্দরভাবে কথা বলতে পারেন জানা ছিলো না।
– আমি কথা কম বলতে পছন্দ করি।
– আচ্ছা,আমি এখন যাই।
– দাঁড়াও।আপনি থেকে আজ তুমিতে নেমে এসেছি।অধিকার তুমি দাওনি।কিন্তু ছিনিয়ে নিয়েছি।

কখনো বাতাস অনুভব করেছো?সবসময় শীতল হয়।শীতের মাত্রা শুধু কম বা বেশি।আচ্ছা তোমার শীত পছন্দ?উত্তর জানিনা।তবে পছন্দ হলে পাখার বাতাসে চুল গুলো উড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতে চাই তোমার পানে।তুমি চোখে কাজল নাও?এর আগে নিতে দেখিনি।হয়তো প্রয়োজন পড়েনি।কিছু সুন্দর অন্যভাবে সুন্দর করে তোলার প্রয়োজন পড়ে না।তোমার কাছে আমি গম্ভির।হয়তো কারো জানা নেই,এই গম্ভীর হৃদয় কাউকে ভালবাসে।অনেক অনেক ভালবাসে।শুনলে অবাক হবে,ভালবাসার মানুষটা তুমি।গোসল করে ভেজা চুলে যেদিন ছাদে এসেছিলে সেদিন প্রথম তোমার প্রেমে পড়ে যাই।ঘুম কেড়ে নেয় ওই গোলাপি ঠোঁটের মিষ্টি হাসি।জানো জ্বরে একবার তুমি মাথা স্পর্শ করে আমার শরীরের তাপমাত্রা দেখেছিলে।সেদিন শিউরে উঠেছিলাম আমি।মনে প্রশ্ন জেগেছিলো একটা স্পর্শ এত কোমল হতে পারে কিভাবে!আচ্ছা নেহা,অনেক কথা তো বলে ফেললাম।এখনো কি বলবা আমি গম্ভীর?

– কথাগুলো শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই।তোমায় শুধু বোঝালাম গম্ভীর নিশ্চুপ মানুষগুলাও রোমান্টিক হয়।
– আমি রুমে যাবো।
– সিরি বেয়ে নামার সময় পা ধীরে ফেলবেন।হালকা আঘাত এই নরম পায়ে গভীর ক্ষত প্রদান কর‍তে পারে।
– হুম।
নেহা দাঁড়ালো না।মুহূর্তে রুমে চলে গেলো।মনে তাঁর কষ্ট।নীল বেদনা গ্রাস করে গেছে পুরোটা জুড়ে।ঝরতে চায় লোনা জল।সে জল.
নেহা নীরবে ঝরাতে পছন্দ করবে।

মাত্র শীত শুরু।ভোরে গ্রাস করে আছে ঘন কুয়াশা।ঋতুর সাথে প্রকৃতির মিল নেই।না হয় এই সময় এত কুয়াশা পড়ার কথা নয়।
নিধান জ্যাকেট গায়ে মর্নিং ওয়াক করতে ঘন কুয়াশার মাঝে বের হয়েছে।
চারিপাশ ফাকা শুনশান।স্তব্ধ নীরব।ভোর পাঁচটায় অল্প সংখ্যক মানুষের দেখা মিলে।পরিবেশ হয়তো এর জন্য এমন লাগছে।
নিধান এই পরিবেশে ভয় পাচ্ছে।
ঠিক তখন কেউ একজন তাকে টেনে ধরলো।ভয়ে চমকে ওঠে নিধান।
মনে ছড়িয়ে পড়ে আতংক
অতঃপর পেছন ঘুরে স্বস্থির নিশ্বাসের সাথে দেখে “নেহা।”
– আপনি?
– হুম।
– এখানে?
– হুম।
– কি চাই?
– ভালবাসা।
– দেখতে সুন্দরী।বুদ্ধিমতী বড়লোক বাপের মেয়ে।আপনার ভালবাসার অভাব হবে না।
– আমি আপনার ভালবাসা চাই।
– তাহলে না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
– কেন পাবো না?
– আমার যে ধরণের মেয়ে পছন্দ আপনি সে ধরণের মেয়ে না।
– কি ধরণের মেয়ে পছন্দ আপনার?
– স্মার্ট কিন্তু ধার্মি।বাচাল তবে আমার কাছে।
– ঠিক বুঝলাম না।বর্ণনা দিয়ে বলেন।
– মেয়েটা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে।সকালে আল কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাবে।বোরখা পড়ে লোকের ভিড়ে নিজেকে আড়াল রাখবে। মেয়েটার জীবনে ছেলে বলতে শুধু আমি থাকবো।মেয়েটা আমার সাথে সব কথা বলবে।ইচ্ছা অনইচ্ছা প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সবরকম কথা শেয়ার করবে আমার সাথে।
– আমারো কিছু শর্ত আছে।
– মানে?
– আমি আপনার মনের মতন হবো।তবে আপনিও আমার মনের মতন হবেন।বাসায় থাকলে আমার সাথে নামাজ পড়তে হবে।

প্রতিদিন আমার পাশে বসে আল কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে।অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাতে পারবেন না।যদিও এই স্বভাব আগে থেকে আপনার মধ্যে নেই।যাইহোক!আমি কথা বলার সময় মন দিয়ে আমার কথা শুনতে হবে।আমি রান্না করার সময় আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন।প্রতিদিন চকলেট আইসক্রিম মাস্ট লাগবে।বাকিটা লজ্জা করে বলতে।
– হাহাহা,ভার্সিটি কম্পিলিট করে জব পেতে দেড় বছর তো লাগবেই।এই দেড় বছর কি করবো আমরা?
– আপনি আপনার আব্বুকে বলে বিয়ের প্রস্তাব দিবেন।বিয়ে করে যে যার বাসায় থাকবো।সুন্দর করে আপনি আপনার পরিবারকে বোঝান আমিও আমার পরিবারকে ম্যানেজ করি।পরে জব পেলে না হয় একসাথে থাকবো।
– আইডিয়া খারাপ না।
– আর একটা কথা।কাল বিকালে যে কথা গুলো আপনি আমায় বলছেন এই কথা কি এর আগে অন্য কাউকে বলা হয়েছে?
– নাহ্।কাল বিকালের জন্য সরি।এভাবে মজা করা ঠিক হয়নি।
– আমি রাতে খুব কান্না করছি।[অভিমানী সুরে]
– বিনীময়ে আদর না হয় বিয়ের পর করে দিবো।
– অনেক আদর করে দিতে হবে।
– আচ্ছা চলেন এখন বাসায় যাওয়া যাক।
– চলেন না,চলো।
– হুম চলো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত