ছেলেটি দাড়িয়ে আছে কলেজ গেটের ঠিক সামনে একটি চায়ের দোকানে। তাকে কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে। কারন সে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আর গেটের দিকে তাকাচ্ছে। মাঝে মাঝে পকেটে থাকা রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছছে। ঘাম মোছার কোন কারন নেই, কেননা আজ তেমন একটা গরম নেই। হয়তো ছেলেটা অতিরিক্ত নার্ভাস ফিল করছে,যার ফলে সে ঘেমে যাচ্ছে। কিন্তু নার্ভাস হওয়ার কোন কারন দেখছিনা।
আকাশে মেঘ জমেছে। মাঝে মাঝে মেঘের বিকট শব্দ হচ্ছে। চারপাশের মানুষ ছোটাছুটি করছে, তাদের গন্তব্যে পৌছানোর জন্য। কিন্তু ছেলেটির সেদিকে কোন খেয়াল নেই। চারপাশে মানুষের চলাফেরা যদি এখন স্থির হয়ে যায় তাও ছেলেটি টের পাবেনা। তার অস্থির ভাব এখনও কাটেনি, বরং আরো বেরেছে। হয়তো কলেজ ছুটি হবে সেই কারনে তার অস্থিরতা বেরেছে। কিন্তু কলেজ ছুটি হওয়ার সাথে অস্থিরতা বেরে যাওয়ার সম্পর্ক কি? কি জানি কলেজ ছুটি হয়েছে।
ছেলেটি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গেটের দিকে। সে নিজেই সমানে নিজের হাত নারাচ্ছে। সে যে প্রচন্ড ছটফট করছে, সেটা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কলেজ গেট দিয়ে বান্ধবিদের সাথে হাসতে হাসতে বের হচ্ছে অরুণিমা। অপজিটে চায়ের দোকানের সামনে দারিয়ে থাকা ছেলেটির অস্থিরতা কিছুটা কমে। সে সস্থির একটা নিঃশ্বাস ফেলে।
বান্ধবীদের বিদায় দেয় অরুণিমা। তারপর আড়চোখে তাকায় চায়ের দোকানের দিকে। অনুজকে দেখেই তার বুকটা ধুক করে ওঠে। অজান্তেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে তার। আর মনে মনে ভাব “ইসসসস পাগলটা আজও এসেছে।
আজ না আসলে হতোনা? প্রত্যেকদিন-ই আসতে হবে? আজ তো সকাল থেকেই দিনটা খারাপ ছিলো,,তাহলে আজ আসার কি দরকার ছিলো? আচ্ছা আমিওতো তেমন একটা কলেজে আসিনা। তাহলে দিন খারাপ তারপরেও কেনো আমি কলেজে আসলাম? হু ডালমে কুচ কালা হে হিহিহিহি অরুণিমা আস্তে আস্তে হাটছে।
তার ইচ্ছে করছে অনুজের পাশে তার হাতে হাত রেখে হাটতে। কিন্তু পাগলটা যে খালি পিছে পিছে হাটে। অরুণিমা আবার ভাবে “কথা বলার মুরুত নেই এসেছে লাইন মারতে,,পাগল একটা। ঐ আমি কি ডাইনি যে কথা বলতে ভয় পাও? আরে বাবা প্রপোজ করেই দেখোনা। তারপর কি করি। আচ্ছা ও যদি প্রপোজ করে কি করব? আচমকা জরিয়ে ধরে বুকে কিল দিবো,,নাকি চুমো দিবো? ”
চুমোর কথা মনে করেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় অরুণিমা। আর মনে মনে হাজার হাজার গালি দিতে থাকে অনুজকে।
আচমকা দমকা হওয়া শুরু হয় চারদিকে। সাথে মেঘের বিকট শব্দতো আছেই। তারপর শুরু হয় ঘুরিঘুরি বৃষ্টি। বৃষ্টির গতি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারপর শুরু হয় মূষল ধারে বৃষ্টি। অরুণিমা দৌড়ে গিয়ে রাস্তার পাশে গুদামের ছাউনির নিচে দাড়ায়। অনুজ বুজতে পারছেনা কি করবে। কেননা আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোন জায়গা নেই,একমাত্র অরুণিমা যেখানো আশ্রয় নিয়েছে সেই জায়গা ছাড়া। অনেকটা সাহস নিয়ে সে দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় সেই গুদামের ছাউনির নিচে। অরুণিমা মনে মনে যা চেয়েছিলো তাই হলো।
বৃষ্টি কোনমতেই কমছে না। ছাউনির নিচে থাকার ফলেও তারা ভিজে যাচ্ছে। একপর্যায়ে অনুজ নিজেকে বৃষ্টির পানি থেকে বাচানোর জন্য একটু সরে যায় অরুণিমার দিকে। অরুণিমাও সরে আসে অনুজের দিকে। দুজনেই সরে আসার ফলে গায়ের সাথে গা লেগে যাচ্ছে। এতে করে দুজনেরই ভালো লাগছে। কিন্তু মুখে কৃত্রিম বিরক্তির ছাপ।
অনুজ ভাবছে আমিকি তাকে কিছু বলব? আচ্ছা কি বলব আমি। প্রপোজ করলে কেমন হয়? যদি চড় মারে? বিশ্বাস নেই, মেয়ে মানুষ মারতেও পারে। ধৌ মারলে মারবে এখনতো বৃষ্টি, কেউতো আর দেখবেনা। ”
অনুজ আজকে পকেটে করে একটা লাল গোলাপ নিয়ে এসেছে অরুণিমাকে প্রপোজ করার জন্য। কিন্তু সাহস পাচ্ছেনা। পকেটে থাকা ফুলটা যে বের করবে সে বুদ্ধিও নেই। কারন অরুণিমার গা তার গায়ের সাথে লেগে আছে। সে পকেটে হাত দিতে ভয় পাচ্ছে,,ফুলটা ডান পকেটে,,আর ডান পাশেই অরুণিমা। পকেটে হাত দিলেই অরুণিমার হাতের সাথে তার হাত লাগবে। তারপরেও অনুজ আস্তে আস্তে তার হাত পকেটে ঢুকায়। এতে করে তার হাত অরুণিমার হাতের সাথে লেগে যায়। অরুণিমা অবাক হয়ে তাকায় অনুজের দিকে। অরুণিমার অমন তাকানো দেখে আবাল মার্কা হাসি দেয় অনুজ। আর লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয় অরুণিমা।
অনুজের হাতে ফুল। সে দোটানায় পরে গেছে প্রপোজ করবে কি করবেনা ভাবছে। তারমন ছটফট করছে,আবার ভয়ও পাচ্ছে সে। তারপর বুকে সাহস নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই অরুণিমার সামনে হাটুগেরে বসে পরে। অরুণিমা অনেকটা বিস্ময় চোখে তাকিয়ে থাকে অনুজের দিকে। তার বুক সমানে ধরফর করছে।
হঠাৎ আচমকা একটি ঠাডা পরে অনুজ সেখানেই মারা যায়। অরুণিমা চিৎকার দিয়ে ওঠে,,নাআআআআ তারপর আরেকটি ঠাডা পরে অরুণিমাও মারা যায় এক-ই স্থানে।
ইতিহাসের পাতায় রচিত হয় আরেকটি ভালোবাসার নাম।