পর্দাশীল বউ

পর্দাশীল বউ

আজ আর অফিসে যাব না, গতকাল স্যারের কাছে কোনো এক ছুতো দিয়ে আজকের জন্য ছুটি নিয়েছি। আজ সারাদিন শুধু রুমার সাথে ঘুরবো আর বিকেলের দিকে বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দিব। সকালের খাবারটা খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম মার্কেটের দিকে, রুমা ওর জন্য একটা থ্রি পিচ, মেকাপ বক্স আর লিপ্সটিক নিতে বলছে। আমিও রাজি হয়ে যাই পাগলীটার আবদারে, একমাত্র গার্লফ্রেন্ড বলতে কথা, ওর কথা কি ফেলা যায়! কিছুক্ষণ পরই চলে আসলাম মার্কেটে তারপর ওর বলে দেওয়া দরকারী জিনিস গুলো কিনে নিয়ে রওনা হলাম পার্কের দিকে। এগুলো নিয়ে আর বাড়ি যাওয়া যাবে না তাহলে বাড়ির সবাই আমাকে আর আস্ত রাখবো না সেইজন্য বাড়ির সবার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই এখনই ফোন করে ওকে জায়গা মতো আসতে বললাম।

মার্কেট থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে সরাসরি চলে আসলাম পার্কে তারপর আশেপাশে খুজেঁ দেখলাম এখনো রুমা আসেনি অতঃপর ফোন করে জানতে পারলাম মহারাণী জ্যামে আটকে গেছে তাই আসতে একটু দেরী হবে। তাই আমি আর বেশি কথা না বলে ফোনটা রেখে দিলাম তারপর ওখানে বসে বসে ওর অপেক্ষা করতে লাগলাম। একা একা বসে থাকতে কেমন যেন বোরিং লাগছে তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম কারণ অপেক্ষার ফল মিঠা হয়। পঁয়ত্রিশ মিনিট বসে থাকার পর মহারাণীর দেখা পেলাম, দেখি শার্ট প্যান্ট পরে মুখে কয়েক কেজি মেকাপ দিয়ে আসছে। এই এসব কি? কোনটা? এতো মেকাপ করছো কেন? মেকাপ না করলে সবাই আমাকে সুন্দর কিউটি বলবে না তো তাই! তুমি তো এমনিতেই অনেক সুন্দর তারপরও মেকাপ? উফফফ শুধু তুমি বললে কি হবে অন্যরা তো বলে না। ওহ্ আচ্ছা।

অতঃপর ওর জন্য আনা জিনিস গুলো ওর হাতে দিলাম। ওগুলো হাতে দেওয়া মাত্রই দেখি খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠলো। হুম এটাই তো চাই আমি, সবসময় ও খুশি থাকবে। ভালবাসি ওর খুশি গুলোকে ভালবাসি ওর ঐ মিষ্টি মুখের মিষ্টি হাসিটাকে। ওখানে বসে দুজনে মিলে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করার পর এক রেস্টুরেন্টে গেলাম অতঃপর সেখানে তো আমার পকেটের যায় যায় অবস্থা। ওর পছন্দমত সব দামী খাবার গুলো অর্ডার দিল আর খাওয়া শেষে বলে কিনা বিলটা দিয়ে দাও। রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে ওকে নিয়ে একটু রিক্সা করে ঘুরতে বের হলাম। ভালই লাগে ওর সাথে রিক্সায় চড়ে ঘুরতে, প্রিয় মানুষটার সাথে ঘুরতে কার না ভালো না লাগে। সবাই চায় তার প্রিয় মানুষটার সাথে সবসময় ঘুরতে, একসাথে থাকতে। রিক্সায় উঠে দুজনে পাশাপাশি বসে আছি, রিক্সাওয়ালা একমনে রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছে আর আমি ওর পাশে বসে ওর হাতটা ধরে আছি, ভাবতে লাগলাম কবে ওর কথা বাসায় বলবো আর কবে ওকে বউ করে ঘরে তুলবো! যত শিঘ্রই সম্ভব ওকে ঘরের বউ করে নিব, পরিবারের হালটা ধরতে পারবে কিনা জানি না তবে আমি নিশ্চিত আমাকে ঠিকই ভালবাসা দিতে পারবে।

বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুজনে মিলে অনেক ঘুরাঘুরি করলাম, দুজনে একসাথে বসে অনেক গল্প করলাম। ওর সাথে আর কিছুক্ষণ থাকতে চাইছিলাম কিন্তু ও বায়না ধরলো ওকে নাকি এখন বাসায় যেতে হবে না হলে আম্মু প্রবলেম করবে তাই আমিও আর জোর দিলাম না, ওকে কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে আসলাম। ওর সাথে আমার রিলেশনটা তিন বছরের। ফাস্ট যখন দেখা হয়েছিল তখন আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম তারপর কিভাবে যেন ওর সাথে দেখা হয়েছিল এতটা মনে নেই তারপর প্রতিদিন দেখা হতো একই জায়গায় অবশেষে ওর প্রতি একটু দূর্বলতা আর সময়মতো প্রপোজ করা ব্যস হয়ে গেল ভালবাসার শুরু।

বাড়িতে এসে খুব উত্তেজিত এক অনুভূতি হতে লাগলো, আজ অনেকটা সময় ওর সাথে ঘুরলাম তাই খুব খুশি খুশি লাগছে নিজেকে। কিছু সময় ড্রয়িংরুমে টিভির সামনে বসে থাকার পরই দেখি ওর ফোন, ওমনি নিজের বেডরুমে গিয়ে কলটা রিসিভ করলাম। এতক্ষণ লাগে রিসিভ করতে?  কই কতক্ষণ লাগলো?  ওকে, কাল আসতে পারবা? কি করে আসবো কাল? কাল তো অফিস! উফফফ বিকেলে আসতে পারবা কিনা বলো। হ্যাঁ তা তো পারবো।  আচ্ছা, কাল আমার সব বন্ধুরা একসাথে আসবো ওদের বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আড্ডা দিতে আমি চাই তুমি আমার সাথে থাকবা। ওকে, থাকবো। এইতো গুড বয়, এখন রাখছি (টুট টুট) যাহ্ বাবা এইটুকু বলার জন্য তাহলে ফোন দিছিল আর বলা শেষে একটুও দেরী করলো না, ঠাস করে কেটে দিল। কখন কি যে করে বুঝতে পারি না। কালকের বিকেলটা ও আমার কাছে চেয়েছে, অবশ্যই দিব।

এ পর্যন্ত অনেক কিছু চেয়েছে, কয়েক দিন পরপর নতুন ড্রেস, প্রয়োজন হলে কিছু কিছু টাকা। ভালবাসি তো পাগলীটাকে তাই ভালবেসে খুশি মনেই সব দিয়েছি যখন যা চেয়েছে। পরের দিন বিকেল বেলা অফিস শেষ করে আর বাসায় না গিয়ে রুমার কথামতো ঠিক জায়গায় পৌঁছে গেলাম দেখি ওরা সবাই আগেই এসে ঘাসের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি যাওয়া মাত্রই তো কয়েকটা ঝাড়ি দিল, এতো সময় কেন লাগলো, এতো লেট করলা কেন আরো নানান রকম কথা। তারপর কিছুক্ষণ ওদের সাথে গল্প করার পর হটাৎ করে ওর এক ফ্রেন্ড বলে উঠলো, এইযে দুলাভাই এভাবে বসে আছো কেন? এই নাও সিগারেট, কয়েকটা টান দাও। নো থ্যাংকস, আমার এইসব খাওয়ার অভ্যাস নেই। আরে অভ্যাস করতে বলছে কে? জাস্ট টান দিবা ধরো তো।

নাহ, নিলয় আমার বন্ধু বলতেছে একটু খেলে কি হবে? আর তোমার মতো একটা স্মার্ট ছেলে খেতেই পারে প্রবলেম কই?(রুমা) আচ্ছা তুমি যখন বলছো একটু খাওয়াই যাক, শত হলেও হবু বউয়ের রিকুয়েস্ট ফেলি কি করে? ( সবাই হেসে উঠলাম) রুমার কথামতো কয়েকটা টান দেওয়ার নাম করে বসে বসে তিনটা শেষ করে দিলাম। খাই না এগুলো, যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই তখন ওরা খেতে বলে কিন্তু আমি এড়িয়ে যাই তবে ওদের সাথে থেকে এটার ধোঁয়া খেয়েই পেট ভরে যায়। তাই এখন এই তিনটা সিগারেট খেতে কোনো প্রবলেমই হলো না। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ওর বন্ধুরা চলে গেল আড্ডা থেকে তাই আমিও রওনা দিলাম বাসার দিকে। এশার আযান এখনো দেয়নি, বাড়িতে গিয়ে এশার নামাজটা পরে নিব। বাসায় এসে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় বসা মাত্রই মসজিদ থেকে আযানের শব্দটা ভেসে আসলো, এবার নামাজটা পরে আসি। বিছানা থেকে উঠা মাত্রই দেখি রুমা ফোন দিছে, ধরলাম। কি করছো নিলয়? এইতো নামাজ পড়বো এখন, তুমিও পড়ো রাখি এখন হ্যাঁ? ফোন রাখবা না, আরে নামাজ পড়বো, তুমি পড়বা না? উফফফ পাঁচ ওয়াক্তই নামাজ পড়তে হবে নাকি, যত্তোসব।

রুমা তুমি এই যুগের মেয়ে, বলতে গেলে একটু বেশীই স্মার্ট তাই বলে নামাজ পড়বে না, আর আমাকেও পড়তে দিবা না! এসবের মানে কি? আমরা দুজন এখন গল্প করবো। নামাজটা পড়ে আসি। যাও, আমার সাথে আর গল্প করতে হবে না। আচ্ছা বাবা কোথাও যাচ্ছি না। তোমার গল্প বলা শুরু করো। কি আর করবো, যেতে দিচ্ছে না কোথাও তাই বাধ্য হয়ে ওর বকবক শুনতে হলো। নিজে একাই বকবক করে যাচ্ছে আজকের দিনটা আর সবার সাথে কাটানো মূহূর্ত গুলো নিয়ে কিন্তু আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগ ই দিচ্ছে না, সব কথা আজ একাই বলে ফেলবো। দেড়মাস পর অফিসে বসে স্যারের দেওয়া ফাইল গুলো ঠিকমতো দেখে নিচ্ছি! একটা না ফাইল, অনেক গুলো। পকেটে একটা সিগারেটের প্যাক ফুলে আছে। উপর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় তবে স্যারকে এটা দেখার কোনো সুযোগ দেয়নি স্যার এটা দেখলে বকা দিতে পারে। এখন একটু আধটু খাই, ভালই লাগে খেতে। বলতে গেলে এখন অভ্যাস ই হয়ে গেছে। এসব ভাবতেই হটাৎ বুঝতে পারলাম ফোনটা রিং হচ্ছে, দেখি রুমার ফোন।

ধরা মাত্রই, আজ বিকেলে একটু দেখা করো তো খুব দরকার। ( টুট টুত) আচ্ছা বলার সুযোগও দিল না এতো জলদি করে ফোনটা কেটে দিল। গলার আওয়াজটাও কেমন যেন লাগলো, কিছু হলো না তো আবার হটাৎ করে এমন জরুরি তলব, যেতেই হবে দেখছি। বিকেল বেলা গাছের নিচে এক ব্রেঞ্চে বসে কান্না করতেছি আর রুমা ব্রেঞ্চের অপর পাশে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। কি করবো এখন নিজেই বুঝতে পারছি না, ওর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর কয়েক দিন পর নাকি ওর বিয়ে। রুমা আর কি কোনো রাস্তা নেই? না নেই। আমাকে না জানিয়েই আমার বাবা তার বন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলছে ওনার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে। মানা করে দাও না তোমার বাবাকে তিনি যেন বিয়েটা বন্ধ করে। পারবো না, তাহলে আমার বাবা ওনার বন্ধুর কাছে অপমানিত হবে আর প্রতিজ্ঞাও নষ্ট হবে আর আমি কখনোই আমি আমার বাবার খারাপ চাইনা, আমাকে ভুলে যাও।

আমাকে কি এখন মাঝ পথে একা রেখে চলে যাবে? তাহলে তো এখন তোমার হাত ছেড়ে নেশার হাত ধরতে হবে। নেশা করো সমস্যা কই? আর সিগারেট খেলে কিছু হয় না, আমিই তো আগেই খেতে বলছি। আমি আসি বাসা থেকে ফোন দিচ্ছে, আর হ্যাঁ পারলে বিয়েতে এসো। তোমার হবু বর কি করে? বিদেশে থেকে পড়াশোনা করে এসেছে এখন অনেক বড় একটা জব করে, তোমার থেকে অনেক বেশি ইনকাম করে। আমিও খুব হ্যাপি আর ওকে দেখার জন্যও খুব এক্সাইটেড, কত্তো বড়লোক হবে সে। ওহ্ আচ্ছা তাহলে ধনী বরই পাইছো তারজন্যই আমাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে না, আচ্ছা যাও! হুম, বায়। এতদিনে বুঝতে পারলাম ও আমাকে কতটা ভালোবাসতো! এতদিন তাহলে ও আমার কাছে ছিলো শুধু নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। তাই তো কয়েক দিন পরপর এটা ওটা চেয়ে নিজের প্রয়োজন মেটাতো।

মানুষ চিনতে এতটা ভুলে করছি ভাবতেই এখন কান্না পায়। সবাই ঠিকই বলে, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হলো ভুল মানুষের হাত ধরা। কি আর করবো এখন! সারাদিন চিৎকার করে কাঁদলেও তো এখন আর ও ফিরে আসবে না তাই কেঁদেও এখন কোনো লাভ হবে না। চোখের জলটা মুছে নিয়ে পকেটে থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা বের করে একটা সিগারেট ধরলাম অতঃপর মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করতে করতে বাসার দিকে রওনা হলাম। বাসায় পৌঁছে দেখি বারটা সিগারেটের মধ্যে মাত্র একটা সিগারেট বাকি আছে আর এগারটা ই রাস্তায় হাটতে হাটতে শেষ করে ফেলছি। রাতে আর খেতে ইচ্ছে করলো না, না খেয়েই ঘুমাতে গেলাম কিন্তু সারারাত একটুও ঘুম হলো না, সবসময় শুধু রুমার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পরের দিন থেকে নিজের কষ্টটাকে বুকে চেপে রেখেই বাইরে সবার সাথে স্বাভাবিক হলাম নাহলে আম্মু আব্বু কষ্ট পাবে আমার জন্য।

এরপর প্রতিদিন যাওয়ার সময় আর আসার সময় ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে পথ চলতাম আর মাঝেমধ্যে একটু নেশা করতাম নিজের কষ্টটাকে ভুলতে কিন্তু আম্মুকে এইসব কোনো ভাবেই জানতে দেইনি। কয়েক মাস পর, আজ শুক্রবার তাই আরামসে ঘুমাচ্ছিলাম, গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম নেশার আড্ডায় তাই আজ অনেক বেলা পর্যন্ত বিছানায় ই পরে আছি কিন্তু হটাৎ করে ঘরের ভেতর কারো উপস্থিতি পেয়ে ঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ মেলে দরজার দিকে তাকাতেই দেখি একটা বোরকা পড়া মেয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। পুরো দেহটা পর্দা করা, ফর্সা চোখ ছাড়া আর একটু অংশও দেখা যায় না। চোখটার প্রতি যে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানি না তবে ঘোর কাটলো যখন ওনি চলে গেল।

তারপর ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুমে যেতেই দেখি কিছু নতুন মানুষ ওখানে বসে আছে কিছু বুঝলাম না কে ওনারা আর আমি এতো মাথা না ঘামিয়ে ছাদের দিকে পাঁ বাড়ালাম। ছাদে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি সেই বোরকা পড়া মেয়েটা আমার ছাদের ফুলগাছ গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতেছে। এই আপনি কে? ইয়ে মানে! আমাকে দেখেই একটু হকচকিয়ে গেল, মন হয় ভয় পেয়েছে। কে আপনি? এখানে কি করেন? আমি জান্নাত। তো এখানে কি? আপনার আম্মু আর আমার আম্মু পরিচিত। আর আপনার আম্মু আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।

বিশ্বাস করেন আজ আমি সবার সাথে এখানে আসতে চাইনি কিন্তু আপনার আম্মুই আমাকে এখানে আসার জন্য অনেক জোর করেছে তাই আসছি নয়তো আসতাম না।(নিচে চলে গেল) কি হলো ঠিক ভাবে বুঝতে পারলাম না, হুট করেই কার না কার সাথে বিয়ে ঠিক করছে যত্তোসব। ছাদ থেকে নেমে নিচে যেতেই দেখি সেই মেয়েটা আমার আম্মুর পাশে বসে আসে। সেখানে আর না থেকে রুমে চলে আসলাম। একটু পরেই দেখি আম্মু আসছে, এই নিলয় পরের সপ্তাহে তোর বিয়ে, অফিস থেকে কয়েক দিনের ছুটি নিস। আরে বিয়ে মানে! হ্যাঁ, বাবা তোর কষ্টটা আর সয্য হচ্ছে না রে তাই হটাৎ করেই ঠিক করে ফেললাম। কার কষ্ট? কিসের কষ্ট?

মা তো তাই সব বুঝতে পারি, কথা বলিস না আর সেলুনে যা চুল গুলো কেটে আয়।( এইটুকু বলেই যেতে লাগলো) আহ আরে শুনো কোন ঝামেলায় যে পরলাম নিজেও জানি না। পরের সপ্তাহে, বউ নিয়ে বাড়ি আসছি অনেকক্ষণ আগে আর এখন বাসর ঘরে বসে আছি। সবাই বাসর ঘরে তার নতুন বউয়ের ঘোমটা খুলে কিন্তু আমার বউয়ের ঘোমটা খোলার কোনো উপায় নেই। একটা ঘন কালো বোরকা পরে আমার পাশে বসে আছে শুধু চোখ দুটি বের করে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। না দেখেছি চোখের সামনে এর মুখ না দেখেছি এর কোনো ছবি। আজ এখানে রুমার বসে থাকার কথা ছিলো কিন্তু বসে আছে অচেনা একটা মেয়ে।

রুনার কথা মনে পড়তেই বুকের চাপা কষ্টটা আবার নাড়া দিয়ে উঠলো, পকেটে সিগারেট ছিল তাই আজ বাসর ঘরেই সিগারেট ধরালাম। এক টান দিতেই ধোঁয়ার জন্য মেয়েটা জোরে জোরে কাশতে লাগলো। কাশির জন্য মেয়েটার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। এই কেলো করছে রে! তাড়াতাড়ি ওটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম। আপনি এসব কেন খান? ভালো লাগে খেতে তাই খাই। আম্মু জানে আপনি সিগারেট খান? নাহ! আচ্ছা আমি বলে আসি এখন। হোয়াট, মানে কি? বলবেন কেন? আম্মু জানলে আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিব। ভালো হবে তখন, রাস্তায় বসে খাবেন। এই বাসায় আজ থেকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ আর আমি আবার জানতে পারলে সরাসরি আম্মুকে বলে দিব। গুন্ডামী করতে আসছেন। জ্বী হ্যাঁ। দেখুন অধিকার দেখাতে আসবেন না, আমি আপনাকে ভালবাসতে পারবো না।

জ্বী আমি এটা আগেই বুঝেছি আপনি আমাকে ভালবাসবেন না তাই আমি আপনার উপর আপনার অনিচ্ছাকৃত অধিকার দেখাতেও আসবো না শুধু আপনাকে এই বাজে অভ্যাস থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবো আর যে পর্যন্ত আপনি আমাকে ভালবেসে কাছে না টেনে নিবেন সে পর্যন্ত আমি আপনার বিরুদ্ধে গিয়ে কখনো আপনার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবো না। অনেক রাত হয়েছে ঘুমান। হুম। অতঃপর ওনার আর আমার মধ্যে একটা কোল বালিশ রেখে ঘুমিয়ে পরলাম। ভোরবেলা বুঝতে পারলাম কেউ আমাকে টানছে, ঘুম থেকে জেগে দেখি ওই মেয়েটা শার্ট ধরে টানতেছে। কি সমস্যা আপনার? টানছেন কেন? উঠুন, নামাজ পড়ে আসেন। স্যরি পারবো না, আমার ঘুমাবো।  আপনি উঠবেন নাকি আমি আম্মুকে ডাকবো?  ধ্যাত্, কি যে জুটেছে কপালে! অতঃপর বাধ্য হয়ে ওই মেয়েটার সাথে নামাজ পড়তে হলো। নামাজ পড়া শেষে আবার বিছানায় ফিরে আসলাম ঘুমের জন্য।

সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙলো, জেগে উঠতেই দেখতে পেলাম আলনার কাছে দাঁড়িয়ে কেউ ভেজা চুল মুছতেছে। আমার দিকে তাকাতেই আশ্চর্য হয়ে গেলাম এ মানুষ না জান্নাতের পরী! এতো কিউট চেহারা, আর চোখটা একদম আমার বউয়ের মতো মায়াবী। আপনি কে আর আমার ঘরে কি চান? আমি কে মানে! আপনার বউ। ও মাই গড! কি হলো? মেকাপ করছেন? আজব, মেকাপ করবো কেন? আর আমি এখনো কোনো দিন মেকাপ করিনি করবও না! কেবল গোসল করে আসলাম। আপনি তো দেখতে মাশাল্লাহ, তাহলে গতকাল সব মেহমানের সামনে এভাবে বোরকা পরে ছিলেন কেন? জ্বী আমি সবসময়ই পর্দা করে থাকি।

আল্লাহ আমাকে কতটুকু রুপ দিয়েছে জানি না, এই রুপ সবাইকে দেখানোর জন্য আল্লাহ আমাকে পৃথিবীতে পাঠায়নি, মা বাবার মতো আপনজন আর আমার জীবনসঙ্গীকে দেখানোর জন্যই আল্লাহ আমাকে রুপ দিয়েছে আর বাইরের কাউকে নিজের রুপ দেখানোর কথা আল্লাহ বলে দেননি তাই আমি এখন চাই না যে এখানে আমাকে আপনি আম্মু আর আব্বু ছাড়া অন্য কেউ দেখুক। আর এখন বাসায় মেহমান নেই, যারা ছিলো তারা সকালেই চলে গেছে আর কেউ গতকালই চলে গেছে তাই এখন আমি আপনার সামনে শাড়ি পরে আছি একটু পরই হয়তো আবার বোরকা পড়বো। কি আর বলবো? আর কিছুই বলতে পারলাম না, জান্নাত তো রুমার বিপরীত। জান্নাত তো সবসময় পর্দা করে যাতে আমি ছাড়া অন্য কেউ না দেখে কিন্তু ঐ লোভীটা মেকাপ করে লোক দেখিয়ে বেড়িয়েছে যে আমি এতো সুন্দর দেখতে কিন্তু আজ যে ওর চেয়ে অনেক নম্রতাগুণী আর সুন্দরী বউ পাব এটা জীবনেও কল্পনা করিনি।

কয়েক দিন পর, অফিস ক্যান্টিনে বসে আছি দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য, ভাবলাম একটা সিগারেট ধরাই কিন্তু পকেটে হাত দিয়েই যখন দেখলাম সিগারেট নেই তখন মনে পরলো গতকাল ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম আর তখনই নতুন বউয়ের কাছে ধরা পরে যাই আর তখন আল্লাহর নাম করে তওবা করিয়েছে আমি যেন আর এসব না খাই। যদিও এখনো ওর এতটা কাছে আমি যাইনি তবুও ওকে খুব ভালো লাগে তাই ওর কথা মতো তওবা করছিলাম। এসব ভাবতেই হটাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, দুপুরে খেয়েছেন? না, এখন খাব। ওহ্ আচ্ছা। আজেবাজে কিছু খাবেন না কিন্তু! আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি খাইছো? আপনার খাওয়া শেষ হলে কল দিয়ে বইলেন তারপর খাব। স্বামীর আগে কখনো স্ত্রী খায় না। আচ্ছা।

কিছুক্ষণ পর খাওয়া শেষ করে ওকে কল দিলাম আর দেওয়া মাত্রই ধরলো, আমার খাওয়া শেষ তুমি খেয়ে নাও। আচ্ছা ঠিক আছে, বাসায় আসার সময় সাবধানে আসবেন। তোমার কি কিছু লাগবে? যেমন, কোনো ড্রেস বা অন্য কিছু? জ্বী না, আমার ড্রেস বলতে বোরকা আর এখন আমার নতুন বোরকার দরকার নেই আর অন্য কিছু এনে ফালতু টাকা খরচ করার দরকার নেই। পারলে আম্মু আব্বুর জন্য কিছু নিয়ে আসুন। আচ্ছা ঠিক আছে।

আহা কি গুণবতী একটা বউ পাইছি, কয়জনের কপালে জুটে এমন বউ। ভাগ্যিস ওই লোভীটা গেছে জীবন থেকে তা নাহলে একে পেতাম না। কয়েক দিন পর রুমের ভেতর চেয়ারে বসে টিভি দেখতেছি আর জান্নাত কেবল আম্মুর সাথে রান্না শেষ করে এসে বিছানায় গিয়ে বসলো, একটা কথা রাখবা? জ্বী বলেন, আমি আপনার অনুগত আপনি যা বলবেন আমি সেটাই শুনবো। আজ বিকেলে একটু বেরুতে পারবা আমার সাথে? হ্যাঁ পারবো, কিন্তু কই যাবেন? আমার বন্ধুরা নাকি তোমার সাথে দেখা করবে কথা বলবে, বিয়ের দিন নাকি ওরা তোমার সাথে কথাই বলতে পারেনি তাই আমার সাথে যেতে বলছে তোমাকে।

আমার ধর্ম মতে আপনি ছাড়া অন্য কোনো পর পুরুষের সাথে কথা বলা আমার জায়েজ না কিন্তু আপনি যখন বলছেন আপনি আমার সাথে থাকবেন তাহলে আমি নিশ্চয় আপনার সাথে যাব। হুররে, তোমার জন্য একটা শাড়ি এনেছি এইটা পরে যাবে, এই ধরো। মাফ করবেন, আমি বোরকা ছাড়া অন্য কিছু পরিধান করে বাইরে বের হবো না আপনি যদি বলেন আমি এখনই শাড়িটা পড়ে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো, যতখুশি আপনি আমাকে দেখেন সমস্যা নাই কিন্তু দয়া করে এই শাড়িটা পড়ে বাসার বাইরে যেতে বলবেন না। কিন্তু ওরা তো তোমাকে দেখতে চাইছে। তাহলে বলবো, আমি দুঃখিত যেতে পারবো না। ওকে, তোমার যেভাবে খুশি সেভাবেই রেডি হয়ে থেকো আমি সময়মতো নিয়ে যাব। আচ্ছা।

বিকেলে একটু বাইরে গেছিলাম এসে দেখি বোরকা পড়ে সুন্দর ভাবে বসে আছে। তারপর ওকে নিয়ে বের হলাম বন্ধুদের কাছে। ওরা নাকি এক রেস্টুরেন্টে দেখা করবে তাই জান্নাতকে নিয়ে সরাসরি রেস্টুরেন্টে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি সবাই আগে থেকেই বসে আছে আর জান্নাতকে দেখে ওদের মুখটা মলিন হয়ে গেল, আহারে বেচারার দল, হয়তো অনেক আশা করছিল নতুন ভাবীর চাঁদ মুখ দেখবে। বোরকা পড়ে আসছে বলে কেউ আর তেমন কিছু বললো না ওকে, যে ভাবী মুখ দেখালেন না কেন? এরকম টাইপের কোনো কথাই বলেনি, সবার সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিলাম তারপর কিছুক্ষণ সবার ক্যারিয়ার নিয়ে গল্প করে বাসার দিকে রওনা হলাম। বিয়ে করেছি বলে ফাজিল গুলো আজকের বিলটা আমার কাছ থেকেই নিল আর কেউ একটা টাকাও দিল না, আমার অবস্থা দেখে তো জান্নাত হেসে অস্থির।

রিক্সা করে বাসার দিকে আসছি, এখনো সন্ধ্যা হয়নি আরেকটু পর হয়তো সন্ধ্যা নেমে আসবে, বাসা এখনো প্রায় দেড় কিলোমিটারের মতো দূরে, রিক্সাওয়ালা আনমনে রিক্সা চালিয়েই যাচ্ছে, জান্নাত এখান থেকে বাসায় আমার সাথে হেঁটে যেতে পারবে? হ্যাঁ, আপনি পাশে থাকলে পারবো কিন্তু কেন? ওকে, মামা এই নিন আপনার ভাড়া আমরা এখানেই নামবো। রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে জান্নাতকে নামালাম রিক্সা থেকে তারপর ওনি চলে গেল। এখানে নামলেন কেন? দুজন হেঁটে যাব, ফিলিংস রোমান্টিক। হায় কপাল, নামাজ পড়বেন না? হুম, বেশি সময় লাগবে না যেতে, পড়তে পারবো বাসায় গিয়ে। আচ্ছা চলুন।

দুজনে পাশাপাশি হাটতে লাগলাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা, মাঝেমধ্যে বড় বড় কড়ইগাছ গুলো থেকে ঝিঁঝিপোকা ডাক দেয় আর তখনই জান্নাত আমার খুব কাছে এসে পরে তখন ওর হাতের সাথে আমার হাতটা ছোঁয়া লাগে, হয়তো ভয় পায় ওগুলোর শব্দে, সন্ধ্যা হয়ে আসছে তো প্রায় আর তারমধ্যে রাস্তায় আর কেউ নেই। যদিও ও জানে আমি ওর প্রতি ততটা দূর্বল নই আর থাকলেও আমি ওর কাছে এখনো প্রকাশ করিনি তবুও বিয়ের পর দিন থেকে ও আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে, ওর বিশ্বাস আমি ওকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাব না সবসময় ওর পাশেই থাকবো। কতদূর যাওয়ার পর ওকে বললাম, একটা কথা বলি কিছু মনে করবে না তো? একটা কেন হাজারটা বলেন, আমি শুনতে প্রস্তুত। তোমার হাতটা ধরি?

এই রাস্তায়? কেউ দেখলে খারাপ দেখাবে তো! কেউ নেই আর কেউ দেখবেও না ( হাতটা ধরলাম) ছাড়বেন না তো কখনো?

নাহ্। আপনি না বলছিলেন আপনি আমাকে কখনো ভালবাসবেন না তাহলে এতো তাড়াতাড়ি ভালবাসলেন কিভাবে? জানি না শুধু এইটুকু বলতে পারবো, তোমায় মায়ায় পরে গেছি।

হিহিহি আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলেন তো এখন দুজনে একসাথে আল্লাহর কাছে নামাজ আদায় করবো।

আচ্ছা ঠিক আছে (হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরলাম)

The End

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত