অরনির সামনে হাতে বেলীফুল নিয়ে বসে আছি। কিন্তু ও চুপ করে কি যেন ভাবছে। প্রায় দুই বছর পিছন পিছন ঘুরে এবার সাহস করে প্রপোজ করেই দিলাম। এখন যদি না করে দেয় তাহলে আমি যে কি করব নিজেও জানি না। ও হয়ত ভাবছে আমরা সমবয়সী, এটা ভেবে যদি এখন না করে দেয়। এতো দিন এটা ভেবে আমিও কিছু বলি না। আজ কেন জানি করেই দিলাম।
— কি হলো কিছু বলো? (আমি)
— কি বলব?(অরনি)
— আমার প্রপোজের উত্তর তো দাও।
— অরন্য আমরা সমবয়সী, এইসব হয়ত কেউ মেনে নিবে না।
— তার মানে তুমি কি বুঝাছ?
— তুমি যা বুঝবে ….
–তার মানে অরিন তুমি রাজি না।
— না তা নয় তো…
— তাহলে কি তুমি রাজি?( মনে অনেক খুশি নিয়ে বললাম)
— না তাও না…
— তাহলে কি?
— আমি তোমার প্রপোজে রাজি তবে আমার একটা শর্ত আছে।
— যা বলবে আমি তাতেই রাজি।
— ভেবে বলছ তো।
— তোমার জন্য আমি সব করতে রাজি…( ভাব নিয়ে বললাম)
— ওকে তাহলে শুনো যদি তোমার সাথে আমার ১০০ বার ব্রেকআপ হয়। তাহলে আমাকে একবারে ভুলে যেতে হবে।
— মানে??
— মানে আমার পছন্দ না এমন কাজ করা যাবে না। আমাকে কখনো রাগানো যাবে না। এই রকম অনেক কিছুই মানতে পারবে তো…
— ( মাথায় হাত দিয়ে ভাবছি, কি এমন আছে যার জন্য শুধু শুধু ব্রেকআপ করব)
— কি হলো রাজি তো নাকি…
— হুমমম রাজি (প্রেম করার শখে বলে ফেললাম)
— গ্রেড, তাহলে কাল থেকে আমাদের নতুন পথ চলা শুরু…
— হুমম
বলেই চলে গেল। আর আমি হাদারামের মত দাড়িয়ে রইলাম। কিছু বুঝি নাই তবে আশায় আছি ৫-৬ বার ব্রেকআপ হলেই সব শর্ত বুঝে যাবো। বড় কোন সমস্যা না হলে তো আর ব্রেকআপ করবে না। ব্রেকআপ কি সবজির দামে পাওয়া যায় নাকি। যে চাইলেই ব্রেকআপ করে দিবে…….
আমি অরন্য আর ও অরনি। আমরা এক এলাকায়ই থাকি, শুধু বাড়িটা একটু দূরেই। নবম শ্রেনী থেকে এক সাথে পড়ি। এখনো এক সাথে অনার্সে বাংলা বিভাগে ২য় বর্ষে পড়ি। প্রথমে ওরে ভাল লাগত না তবে ওর পাশে কোন ছেলে কে দেখলে আমার শরীর জ্বলত।তাই ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষার পর থেকে ওর পিছনে পরে আছি। ও হয়ত সব বুঝে কিন্তু কিছুই বলে না, তবে মাঝে মাঝে হাসে। সেই হাসির সাহসেই প্রপোজ করে দিলাম আর ও আমাকে বাশঁ দিয়েছে। দেখা যাক,কি হয়…
সকালে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ মোবাইলের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। খুব রাগ লাগছে তাই ফোনটা ধরেই বলতে লাগলাম..
— ওই কোন হারামীরে ..
— ওই হারামী বললে কেন? যাও ব্রেকআপ (তার মানে অরিন)
বলেই আর কথা না বলেই ফোনটা কেটে দিলো। এ মেয়ে কিরে বাবা, আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই ব্রেকআপ করে দিলো।
হঠাৎ আবার ফোন আসল তাই না দেখেই ফোনটা ধরে তারাতারি ওর রাগ ভাঙ্গাতে লাগলাম।
— সরি সরি সরি জানু…
— ওই তোর জানু কে রে। রাতে কি খেয়ে ঘুমাইলি যে উল্টা পাল্টা বকছিস।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি বর্ষা ফোন দিছে। ওরে গত রাতে বলছিলাম সকাল ফোন দিয়ে আমার ঘুমটা ভাঙ্গাই দিতো। হুমম ভাঙ্গাইছে কিন্তু যা হওয়ার তা তো হয়েই গেলো…
— দোস্ত তোর ভাবী ফোন দিয়ে রাগ করছে। আমি একটু পরেই তোরে ফোন দিচ্ছি।
— ওই শুন তো…
ওর ফোন কাটতে কাটতে আবার ফোন আসলো তাই ভাবলাম বর্ষা হয়ত ফোন দিলো…
— ওই হারামী বললাম না পরে ফোন দিবো।
— কি বললে? তার মানে প্রথমেও বুঝে শুনে হারামী বলছ। যাও ব্রেকআপ ব্রেকআপ।(অরনি)
বলেই আর কোন কথা না বলে ফোনটা কেটে দিলো। আরে এতো বর্ষা না, এটা অরনি।
আমি তো ভাবলাম ও আর ফোন দিবে না। কিন্তু ও কেন ফোন দিলো। ব্রেকআপ করে আবার কেউ বুঝি ফোন দেয়। আমারই দোষ অরনির নাম্বারটা মোবাইলে সেভ করে রাখার দরকার ছিলো তাহলে হয়ত এমন সমস্যা হতো না।
যাক গে, ও হয়ত আবার ফোন দিবে। তাই আমিও মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছি।কিন্তু ১০ মিনিট হলো কোন ফোন আসলো না তাই আমি ফোন দিতে যাবো। হঠাৎ ওর ফোন আসলো…
— হ্যালো জানু
— ওই তুমি আর আমাকে ফোন দিবে না। যাও ব্রেকআপ।
— কিন্তু কেন?
— দুইবার বকা দিলে আর এখন ফোন দিয়ে আমার রাগও ভাঙ্গালে না।
— সরি সরি সরি জানু
— ওই জানু বললে কেন? এটা বলার অধিকার তো এখনো দেই নি। যাও ব্রেকআপ।
— ওকে আর বলব না সরি।
— যাও মাফ করে দিলাম।
— ধন্যবাদ অরনি, আজ কোথায় দেখা করবে?
— এলাকার পার্কে ১০টা বাজে চলে আইসো।
— ওকে বায়
— বায় মানে কি? আমি কি রাখতে বলছি যাও ব্রেকআপ।
— ওকে সরি আর বায় বলব না।
— হুম এখন রাখি।
— ওকে।
আল্লাহ গো এটা কেমন মেয়ে একবার ফোন করেই তো ৫ বার ব্রেকআপ করলো। এভাবে চলতে থাকলে মনে তো হয় আজই ১০০ ব্রেকআপ হয়ে যাবে। মনে করছিলাম ওর কাছে হয়ত ব্রেকআপ সবজির দামে পাওয়া যায়। না এখন মনে হচ্ছে ও ব্রেকআপ বাংলালিংক দামে পাইছে।
যেহেতু এলাকার পার্ক তাই আসতে লেট না করে বরং ১০ মিনিট আগেই চলে আসছি।
— হাই কখন আসলে?
— এই তো ১০ মিনিট হবে।
— এমনই চাই
— হুমমমম
— দাও কি গিফট আনলে?
— গিফট?
— হুমম কি হলো গিফট আনো নি?
— না মানে?
–যাও ব্রেকআপ, ফুল তো আনতে পারতো।
–সরি ভাবলাম।
— ভাবলে এলাকার মেয়ের সাথে প্রেম করছি। এক সাথে পড়ি,কিছু না দিলেও সমস্যা নাই।
— ওই না না…
— তাহলে কি শুনি?
— মানে হলো মানে…
— এতো মানে মানের কি হলো? কিছু না আনার জন্য ধন্যবাদ। এখন যদি টাকা খরচ করো তাহলে আমাকে বিয়ের পরে শপিংয়ের এতো টাকা পাবে কই? এখন থেকেই টাকা জমাতে শুরু করো।
— কি?একটু আগে ফুল না আনার জন্য তো ব্রেকআপ করলো
— এটা বললে কেন? যাও ব্রেকআপ।
— সরি।
— হুমম চলো এবার এক সাথে সামনে থেকে হেটে আসি।
দুইজনেই পাশাপাশি হাটতে লাগলাম। আর চার দিকটা ভাল করে দেখতে লাগলাম। সবকিছুই কেমন যেন নতুন লাগছে, শুধু অরনি পাশে বলে…..
— এই তুমি এতখন আমার পাশে হাটছো কিন্তু আমার হাতটা ধরলে না কেন? যাও ব্রেকআপ।
— নাও ধরলাম।
ওর হাতটা ধরে হাটতে লাগলাম। আমাদের সামনে দিয়ে দুইটা মেয়ে চলে যাচ্ছে….
— ওই তুমি ওদের দিকে তাকালে কেন?যাও ব্রেকআপ। (তবুও আমার হাত ধরে হাটছে)
— কই তাকাই নি তো।
— কি মিথ্যা বললে, তার জন্য ব্রেক আপ।
— ওকে ওকে আর ভুল করব না।
এক সাথে মিলে বিকাল পর্যন্ত ঘুরলাম। দুপুরের খাবার হোটেল থেকে এক সাথে খেলাম। এখন নদীর পারে বসে আছি…
— অরনি?
— হুমম বলো
— এখন পর্যন্ত কয়বার ব্রেকআপ বলছ জানো…
— কয়বার?
— 99 বার।
— কি তুমি এই গুলো গুনছ, যাও ব্রেকআপ।
আমি আর কিছুই বললাম না।ও চলে যেতে লাগল।হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল…
–অরন্য শুনো এই রকম শর্ত দিয়েছি শুধু দেখতে তুমি আমার ব্যবহারে বিরক্ত হও কি না। বেশী ভাগ ছেলেরাই এমন মেয়ে পছন্দ করে কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই পছন্দ না। কিন্তু তুমি আমার অতিরিক্ত পাগলামী গুলো ভালবেসে গ্রহন করে নিয়েছ। এবার আমি বলছি, তোমার সাথে পথ চলার সুযোগটা কি দিবে? কথা দিচ্ছি তোমার সাথে পা মিলিয়ে চলব। তোমার এই পথ চলার সাথী করে নিবে তো…
— আমি কিছু বললাম না বরং একটু সামনে গিয়ে শুধু ওর হাত ধরে হাটতে লাগলাম।
এখান থেকেই অরন্য আর অরিনে নতুন পথ চলা শুরু…