ভালবাসার চাদর

ভালবাসার চাদর

গাছটা কে ভেঙেছে?

ভোরের কুয়াশা ভেজা পরিবেশটা আমার ভাল লাগলেও আমি মোটেও এটা অনুভব করার চেষ্টা করতাম না।এই সময়টাতে কম্বলের ভেতর গভীর ঘুমটাই আমার বেশ প্রিয়।কিন্তু আজ কি কারনে এত সকালে ঘুম ভেঙে গেলো আর আমি ছাদে চলে আসলাম এই কুয়াশা ঘেরা সকালে সেইটা বুঝতে পারছি না।অবশ্য অফিসে যাওয়ার জন্যে উঠতেই হতো কিন্তু সেটা এতটা সকালে না।বেশ শীত শীতও লাগছে।অবশ্য এই টিশার্ট কোন মতেই শীত আটকানোর বস্তু না।
রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে কুয়াশা ধরার বৃথা চেষ্টা করছিলাম তখনি কেও কথাটি বললো।আমি ঘুরতেই মেয়েটা আবারও বললো,

-গাছটা কে ভেঙেছে?

মেয়েটার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।হাতে একটা টব নিয়ে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।অবশ্য মেয়েটাকে যে আমি চিনি না,তেমন নয়।মিথিলা।আমাদের উপর তলায় থাকে।বেশ মিষ্টি মেয়ে।অবশ্য ওর বড় বোনটা ওর থেকেও একটু বেশি মিষ্টি কিন্তু বেশ লাজুক।আমার সাথে হাতে গোনা কয়েকবার কথা হয়েছে।
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-কে ভেঙেছে সেটা আমি কিভাবে বলবো।
মেয়েটা চোখ পাকিয়ে বললো,
-আপনি ছাড়া তো এখানে কেও নেই।গতকালও তো গাছটা ভালই ছিল।

ফাজিল মেয়েটার কথায় আমি একটু চুপ করেই রইলাম।বলে কি,আমি নাকি গাছ ভেঙেছি।আমি যখনি কিছু বলতে যাব তখনি মেয়েটা বললো,

-আরে আপনি তো শীতে কাঁপছেন।

কথাটি বলেই মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে এসে ওর গায়ে জড়ানো চাদরটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিল।আরে করে কি মেয়েটা।আমি কিছু বোঝার আগেই মেয়েটা বললো,

-এখন ঠিক আছে।আর শুনুন কাল সকালে ছাদে এসে চাদরটা দিয়ে যাবেন।কথাটি বলে মেয়েটা আর দাড়ালো না।চলে গেলো।আর আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বোকার মত।কিন্তু মেয়েটা যে চাদরের নিচে সোয়েটারও গায়ে দিয়েছিল এইটা আমার চোখ এড়ালো না।অবশ্য এখনও এতটা শীত পড়েনি যে,সোয়েটার,চাদর একসাথে পড়তে হবে।কিন্তু মেয়েটা বলতে এলো কি আর করে গেলো কি!

তবে ভালই হলো।এমনিতেই শীত ও লাগছিল।কিন্তু এই পিচ্চি মেয়েটার চাদরটা নেওয়া কি ঠিক হলো।

আজ অফিস থেকে বের হতে হতে প্রায় সন্ধে হয়ে গেলো।সূর্যের আলো ডুবে গেছে প্রায়।বেশ শীত শীত ও লাগছে।অবশ্য অফিসের ভেতরে এতটা শীত বুঝতে পারিনি।আমি হাতে রাখা ব্লেজার গায়ে জড়িয়ে রিক্সায় চেপে বসলাম।আজকের বাতাসও বেশ ঠান্ডা মনে হচ্ছে।

একটু এগুতেই রাস্তার পাশে একটা মেয়েকে দেখে আমার চোখ আটকে গেলো।মেয়েটা এসময় এখানে কি করছে।আমি রিক্সাওয়ালাকে থামাতে বলতেই রিক্সাটা ঠিক মেয়েটার সামনে গিয়ে থেমে গেলো।কিন্তু মেয়েটার এদিকে কোন খেয়াল নেই।হয়তো রিক্সা পাচ্ছে না,তাই দেখেই মনে হচ্ছে বেশ টেনশনে আছে।

আমি রিক্সায় বসেই মেয়েটাকে ডাক দিলাম।সুপ্তি,এই সুপ্তি।আমার ডাকে মেয়েটা ঘুরে তাকালো।তবে মুখে এখনও সেই মলিন ভাবটা আছেই।আমি সুপ্তিকে আবারও বললাম,

-রিক্সার জন্যে অপেক্ষা?
মেয়েটা আমার কথায় মাথা নাড়িয়ে বললো,
-হ্যা,একটা রিক্সাও পাচ্ছি না।
সুপ্তির কথায় আমি একপাশে সরে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-চলো,আমিও বাসায় যাচ্ছি।

আমার কথায় সুপ্তি কিছু বললো না।তাছাড়া এখানে এসময় রিক্সাও পাওয়া যাবে না।এদিকে প্রায় সন্ধে হয়ে গেছে।ওকে একা ফেলে আমিও যেতে পারছি না।কিন্তু ও কি যাবে আমার সাথে।

সুপ্তি কিছু না বলে রিক্সায় চেপে বসলো।তবে ওর মুখের মলিন ভাবটা এখন আর দেখতে পাচ্ছি না।মেয়েটা আমাদের উপর তলায় থাকে।মিথিলার বড় বোন।

রিক্সা চলতেই সুপ্তি বললো,
-বই কিনতে আসছিলাম,কিন্তু বের হওয়ার পর আর রিক্সাই পাচ্ছিলাম না।
আমি সুপ্তির কথায় ওর হাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-এই বইটা?
-হ্যা,তবে আরও একটা বইয়ের অর্ডার দিয়ে আসলাম।
-এতগুলা কেনার পরও আরও একটা!
-আসলে আমি ওই বইটার খোজেই আসছিলাম। কিন্তু না পাওয়াতে এগুলো কিনে ফেলেছি।

সুপ্তির কথায় কি বলবো ভেবে পেলাম না।মেয়েটা একটা বই কিনতে এসে নিয়ে যাচ্ছে পাচ, ছয়টা বই।আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম,

-তো কোন বইটা কিনতে এসেছিলে?
আমার কথায় মেয়েটা একটু চুপ থেকে আস্তে করে বললো,
-আধাঁরে আলোর গল্প।

সুপ্তির মুখে বইটার নাম শুনে আমি একটু অবাকই হলাম।অবশ্য আমার অবাক হওয়াটা সুপ্তি বেশ ভালভাবেই টের পেয়েছে।আমার চুপ থাকা দেখে সুপ্তি বললো,

-সরি,বইটার কথা আপনাকে না বলার জন্যে।আমি জানি, বইটা আপনাকে বললেই পেতাম।আসলে এই বইতে যে আপনার গল্প আছে এটা ভেবেই বইটা কিনতে আসছিলাম।

সুপ্তির কথায় আমি একটু চুপ করেই রইলাম।এই বইতে যে আমার গল্প আছে এইটা ও জানলো কিভাবে।অবশ্য ও তো আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে আছে,জানাটা স্বাভাবিক।আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম,

-বইটা সামনের বইমেলাতে বের হবে।
-তাহলে বইটা আমিই প্রথম কিনবো।

সুপ্তির কথায় আমি মুচকি হাসলাম।মেয়েটা দেখি বেশ ইন্টারেস্ট বইটার প্রতি।
আধাঁরে আলোর গল্প বইটা ৬৪ জেলার ৬৪ জন লেখকের ৬৪ টা গল্প দ্বারা সাজানো।আর এই ৬৪ টা জেলার মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে সিলেক্ট হয়েছে আমার গল্পটা।সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে আমার গল্পটা থাকছে বইতে।আর বইটা পাওয়া যাবে সামনের বইমেলাতে।একুশে বইমেলা,২০১৯।কিন্তু সুপ্তি সেটা না জেনেই বের হয়েছে বইটা কিনতে।

আমি সুপ্তির দিকে তাকাতেই দেখি মেয়েটা শীতে বেশ কাঁপছে।পছন্দের মানুষটা এভাবে শীতে কাপলে কারই বা ভাল লাগে।ঠিক আমারও ভাল লাগেনি। আমি আর কিছু না ভেবে ব্লেজারটা খুলে সুপ্তির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললাম,

-এটা পড়ে নাও।শীত লাগবে না।
আমার কথায় সুপ্তি কিছু বললো না।ব্লেজারটা গায়ে জড়িয়ে মুচকি হেসে বললো,
-সকালে চাদরটা আমিই পাঠিয়েছিলাম।

সুপ্তির মুখে চাদরের কথা শুনে আমি একটু অবাকই হলাম।তারমানে চাদরটা মিথিলাকে দিয়ে ও পাঠিয়েছিল।আমার চুপ থাকা দেখে সুপ্তি আবারও বললো,

-দড়জা খুলতেই দেখি আপনি টি শার্ট গায়ে ছাদের দিকে যাচ্ছেন।আপনার শীত লাগবে ভেবে মিথিলাকে দিয়ে চাদরটা পাঠিয়েছিলাম।আর আমার কথা বলতেও নিষেধ করেছিলাম।

-তাহলে ওই গাছটা?
-ওটা আগেই ভাঙা ছিল।

সুপ্তির কথায় আমি যখনি কিছু বলতে যাব তখনি রিক্সাটা থেমে গেলো।উফ বাসাটা আর একটু দূরে হলে মন্দ হতো না।

আজ বেশ ভোরেই ছাদে এসেছি।জানি চাদরটা নিতে আজ সুপ্তিই আসবে।হ্যা হয়েছেও সেটাই।ওই তো মেয়েটা।
সুপ্তি আমার সামনে এসে দাড়াতেই আমি চাদরটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,

-চাদরটা থেকে বেশ মিষ্টি সুবাস আসে।
সুপ্তি আমার কথায় কিছু বললো না।চাদরটা নিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললো,
-এরকম মিষ্টি সুবাস কেন আসে?
-হয়তো চাদরটার মালিক মিষ্টি বলে।
-শুধু চাদর ই গায়ে জড়িয়ে রাখতে চান?
-উহু,চাদর সহ তার মালিককেও জড়িয়ে রাখতে চাই।কিন্তু উনি কি রাজি হবে আমাকে জড়িয়ে রাখতে?
-রাজি না হলে কাল তার ব্লেজার গায়ে জড়াতো না।
সুপ্তির কথায় আমার ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।তারমানে মেয়েটাও আমাকে ভালবাসে।আমি সুপ্তির দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে চাদরটা একপাশে একটু ছড়িয়ে বললাম,
-সে চাইলে শীতে না কেপে এই চাদরের ভেতর আসতে পারে।

আমার কথায় সুপ্তি মুচকি হেসে একটু এগুতেই মেয়েটাকে আমি চাদরের সাথে বুকে জড়িয়ে নিলাম আর মনে মনে বললাম,

চাদর থেকে যদি ভাল কিছু হয় তাহলে চাদর ই ভাল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত