দুষ্টু শ্রাবু

দুষ্টু শ্রাবু

প্রতিবার প্রেমের মিশন ফেইল হলেও এবার আমাকে পিড়িত একখান করতেই হইব। একটা হিরু সাইকেল নিয়া বের হইছি সুন্দরী মাইয়ার খুঁজে। সবাই পিড়িত করে আর আমি চাইয়া চাইয়া দেখমু এইটা হইবার পারেনা।

সাইকেল চালিয়ে সুন্দর একটি গ্রামে আমি হাজির। অপেক্ষা করতে হইব কখন স্কুল ছুটি হয়। কলেজের মাইয়াদের সাথে পিড়িত করা আর নিজেরে গুলিস্তানের মোড়ে বিক্রি করে দেয়া সমান কথা, তাই এবার স্কুলের মাইয়ার পিছে জরুরী অভিযান চালামু। বন্ধুদের পিড়িত দেইখ্যা আমার দিলে খালি চোট লাগে। এবার আমিও দেখাই দিমু আমিও একখান প্রেমিক। আসার পথে জেল দিয়া চুলগুলারে সজারুর কাটার মত খাড়া করছি, বুকের মধ্যে একখান কাচা মরিচের রকেট লাগাইছি। হাতে দিছি মাইয়াগো চুড়ি। থুক্কু, এইটা কিন্তু আধুনিক বেসলেট।

ঐ আস্তে, বুকের সিনাটা টান করে দাড়াইছি। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, এখনি আমার পিড়িতের অভিযান শুরু।

দুই মাইয়ার পিছন পিছন সাইকেল নিয়া যাইতাছি। একটু পর পর যখন বব কাটিং চুলওয়ালা মাইয়াটা পিছনে তাকায় তখনি বুকের ভিতর ভালবাসা উছলায়।

আস্তে আস্তে গান গাইতাছি, তুমি ছুন্দর তাই পিছন আসি কন্যা সেকি মোর অপরাধ? রবীন্দ্রনাথ থাকলে আমার এই গান শুইনা নির্ঘাত সুইসাইড খাইত।

হায় হায়, মাইয়ারা দেখি বাড়ির ভিতর চলে গেল। এখন কি করি?
আস্তে আস্তে আমিও সাইকেল নিয়া বাড়ির ভিতর ঢুকতাছি। আর বুদ্ধি ঠিক করছি পানি খাওয়ার কথা বইলা মাইয়াডারে দেইখা আসমু। হায় হায়, বাড়ির ভিতরে যাওয়ার আগেই শুনতাছি মাইয়া কইতাছে, আব্বা, একটা বজ্জাত পোলা আমাদের পিছন পিছন বাড়ি পর্যন্ত আসছে।

পালাও আটটা বাজে, আমার পিড়িত লাগতনা। সাইকেলে পেডেল মারি মারি পালানোটাই ভালা কাম।

ভাবতাছি জরিনারে ডাক দিয় এ্যাই ল্যাভু কইমু। দেখতে মোটামোটি খারাপনা, শুধু একখান চোখ ট্যারা। আমার দিকে তাকালে মনে হয় আমার দিকেনা হেতি গাছের পাতার দিকে তাকাইয়া আছে। তবুও নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালা।

ডাক দিলাম, জরিনা এদিকে আসোতো..
— শ্রাবু কাকা আমারে ডাকছেন?
— তুই কাকা ডাকলি ক্যারে?
— তুমিনা আমার আম্মারে ভাবী ডাকো, আমার আব্বা তোমার ভাই হলেতো তুমি আমার কাকাই।
— যা ভাতিজি দেখে আয় তোর বাপে বাড়িত নাকি?

জিন্দেগীটা তামা তামা হইয়া গেল। বন্দুরা কত্ত সহজে দুইটা তিনটা পিড়িত করে, আমার বেলা এত্ত প্যাচ লাগে কেনু?

আজকা ফ্রেস ওয়াস দিয়া মুখ ধুইছি, তারপর ফেয়ার এন্ড লাভলী মুখে মাইখা মুখটারে সাদা বানাইলাম। তারপর দুই বন্ধুর সাথে রওনা দিলাম। আজ বন্ধুরা আমারে পিড়িত করাইয়া দিব।

পথে একবার এক বন্ধু কইতাছে, দোস্ত তোর চেহারার সাথে শরীরের মিল নাই ক্যারে? মুখে তিব্বত ঘামাচি পাউডার মাখছস?

মেজাজটা কেমন লাগে, তোরা যদি মনের দুঃখ না বুঝোস তাইলে মরতে গেলে বিষও আমার সাথে বিতলামি করব।
অবশেষে দুই মাইয়ার দেখা পাইলাম। নারকেল গাছের গোড়ায় কারিনার মত ভাব নিয়া দাড়াইয়া আছে। একটারে পাঠাইছি, দোস্ত যেইটা বেশী সুন্দর সেইটারেই আমার কথা কইবি, আমি পিড়িত করমু।

দোস্ত ফেরত আইসা যে কথা শুনাইছে তাতে আমার কান্দন আইসা পড়ছে। মাইয়া নাকি আমারে না আমার সাথের দোস্তরে পছন্দ করছে। ইচ্ছা করতাছে নারকেল গাছের আগায় ওইঠা লাফ দিয়া সুইসাইড খাই।

অবশেষে একখান পিড়িত যোগাড় হইল। আজ প্রথম দেখা করতে যাইতাছি পার্কে। মনে আমার পিড়িত লাফ দিয়া ওঠতাছে। মাইয়া একটু মোটা তাতে কি? আমিও ফল আর শাক সবজি খাইয়া আরেকটু হৃষ্টপুষ্ট হমু, সমস্যা নাই।
গিয়ে দেখি ওনি চক্ষুরে একশো পাওয়ারের লাইটের মত কইরা রাখছে।

— প্রথমদিনই এত দেরী? আর চুলেরে এমন আসমানের দিক খাড়া করছ কেরে? (মেয়ে)
—না, মানে। তুমি কী খাইবা?
— বসো আগে এখানে।
— জানু, তুমি ধমক দেও কেরে?
— এই জানু কি? আমার নাম মালতি।
— বাহ, কত্ত সুন্দর নাম। ( মিথ্যেই বলছি)
—দেখোতো আমাকে কেমন লাগছে?
— একদম চাঁদের মত সুন্দর।
— কী? আমি কলঙ্কিনী?
— হায় খোদা, এই কথা কখন কইলাম?
— চাঁদেরইতো কলঙ্ক আছে।
— আচ্ছা তুমি ঝড়নার মত সুন্দর।
— কী? পাহাড়ের উপর থেইক্কা মারবা নাকি?
— তাহলে নদীর ঢেউয়ের মত সুন্দর।
— সাতার জানিনা, পানিতে মারবা নাকি?
— পানিত মারতামনা, তোরে পানিত চুবাইমু। যা তোর সাথে আমার ব্রেকআপ।
অবশেষে শ্রাবুর প্রথম পিড়িত নদীর জলে চুবানি খাইয়া ভাইসা গেল।
কালকে আবার আমি নতুন পিড়িতের অভিযানে নাইমা পড়মু।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত