মাই লভ ইজ গন

মাই লভ ইজ গন

সেদিন গার্লফ্রেন্ডের সামনে বেশ জম্পেশ পিটুনি খেলাম বখাটেদের হাতে। সে আমার মার খাবার পর এমন একটি কান্ড করেছিল যে, বালির উত্তাপে সূর্যের তাপ ভুলে যাওয়ার দশা হয়েছিল। ঘটনা শুরু করি তাহলে।

ওর নাম চুমকি। আর দশটা প্রেমকাহিনীর মতই বিচিত্রভাবে আমাদের পরিচয়। একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি তখন আনমনে গেয়ে উঠি, “চুমকি চলেছে একা পথে”। ঠিক সেসময় পাশ থেকে সে এসে বলে, “কী হচ্ছে শুনি এটা?”
আমি বলি, “একটু গান গাইছি। কেন, গান গাইবার জন্য কি সারেগামার মঞ্চ লাগবে? রাস্তায় গাওয়া যাবে না?”
“আমি সেটা বলিনি।”
“তাহলে কী বলছেন সেটাও তো বলছেন না।”
“আমার নাম চুমকি। আপনি এটা কি জানেন?”
এবারে ভড়কে গেলাম। কিন্তু নিজেকে সামাল দিয়ে যখন কথা শুরু করি, আবিষ্কার করি আমার গলা কাঁপছে। কান্না পাচ্ছে। বলি, “দেখুন, আপনার নাম জানলে কি আর এভাবে গান গাইতাম বলুন?”
“নেক্সট টাইম যেন আপনাকে আমার পেছনে না দেখি। যত্তসব!”

মেয়েটি এটা বলেই চলে গেল। অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।

তবে ঐ এলাকার রাস্তাটিতে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আর চুমকির বাসাটিও ছিল আশেপাশে। একদিন রাস্তা দিয়ে যাবার মুহূর্তে মাথায় কিছু একটা পড়বার অনুভূতি পাই। হাত দিয়ে দেখি ডিম। ওপরে তাকিয়ে বাড়ির ছাদে একটি বাচ্চা মেয়েকে হাস্যমুখী অবস্থায় চুমকির পাশে দেখতে পাই। এ ঘটনার দরুন রাগে-দুঃখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। বাড়ির সদর দরজা খোলা পেয়েই ভেতরে ঢুকে যাই। সোজা উঠে যাই ছাদে। বাচ্চা মেয়েটি আমায় দেখেই ভয়ে দৌড়ে পালায়। আর আমি দ্রুত হেঁটে গিয়ে চুমকিকে জড়িয়ে ধরে বলি, “আই লভ ইউ!”

চুমকি ঘটনার আকস্মিকতায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বলি, “এইটা তোমার শাস্তি।”
চুমকি বলে, “দোষ করেছে আমার ছোটবোন। আমার ইচ্ছায় এটা ঘটেনি।”
আমি টের পাই চুমকির চোখে পানি। সে অনেকটাই রেগে গেছে। আমি বলি, “সরি, আসলে……”
“তুমি খুবই বেয়াদব ছেলে।”
“সরি বললাম তো।”
“এভাবে মেয়েদের সাথে বেয়াদবি করবে না। কেমন?”

চুমকি হেঁটে চলে যায়।
এর কিছুদিন পর…
আজকাল আর চুমকির দেখা পাই না। অথচ নিয়মিতই আমি ওর এলাকায় ঘুরছি-ফিরছি.. কারণে-অকারণে। দেখা না পেয়েও একদিন বিকালে চুমকির বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনই এক বখাটে এসে বলে, “ভাই, আফনেরে বস বুলায়।”
আমি ভয়ার্ত গলায় বলি, “বস কে?”
“দিলবার ভাই।”
“এইটা কি উনার নাম?”
“অত প্যাঁচান ক্যা? চলেন!”
“না ভাই, আমার কাজ আছে।”
“আরে ভাই, বস আফনেরে সমুচা খাওয়াবো। ডর নাই।”
“না ভাই, আমার কাছে টাকা আছে। আমি কিনে খাব।”
ছেলেটি যেন আকাশ থেকে পড়লো কথাটি শুনে। বলে, “বসের কাছে সমুচা থাকতে কিনে খাবেন!”

ইতোমধ্যে দেরী হচ্ছে বলেই হয়তো আরও কয়েকজন বখাটে এসে হাজীর হল। সংখ্যায় প্রায় দশজন। এক বখাটে জিজ্ঞেস করল, “ঐ হাবিব, এত দেরী ক্যা? বস যে বুলায়।”
হাবিব বলে, “আরে এ ভাই বলছে সে নাকি সমুচা কিনে খাবে।”

সবাই অবাক হয়ে গেল বলে মনে হল। এরপর আমাকে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে উঁচু করে ধরে নিয়ে যেতে থাকে আর মুখে বলে, “বলো হরি, হরিবোল।”

ওদের বসের কাছে আমায় নামিয়ে দিয়ে হাবিব নামের ছেলেটি বলে, “ওস্তাদ, আপনার হুকুম তামিল করছি। এবার এরে সমুচা খিলান।”

আমি দেখি বসের পিরিচে তখন একটাও সমুচা নেই। তিনি লজ্জিত হলেন বলে মনে হল। কিন্ত সে বিষয়ে কিছু না বলে বলেন, “তোমারে এই এলাকায় প্রায়ই দেখি। এর কারণ কী?”
আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলি, “আমি একজনকে ভালবাসি, তাই।”
“কে সে?”
“ওর নাম চুমকি।”
বস একটি হুংকার ছেড়ে উদাস হয়ে যায়। তারপর ‘ঢাউস’ শব্দে জোরে বায়ু ছেড়ে বলে, “চুমকিরে তুমি ডিস্টাব(ডিস্টার্ব) করো?”
আমি বলি, “আমি তাকে ভালবাসি।”
“কী?”
“কেন, আপনিও তাকে ভালবাসেন?”
“অবশ্যই। তাই তুমি এই লাইন ছাড়ো।”
“সম্ভব না।”

অতঃপর বস ইশারা করতেই এলোপাথাড়ি মার পড়লো আমার পিঠে। ধিড়িমধাড়াম ধুড়ুমধাড়াম শব্দ হয়েই চলেছে। এরইমধ্যে চোখ বুলিয়ে নিলাম চারিদিকে, কেউ দেখছে কিনা। তাকিয়ে দেখি চুমকি দূর থেকে সব দেখছে। আমি তড়িঘড়ি করে সবাইকে ধাক্কা দিয়ে বলি, “থাম! এভাবে কেউ মারে?”
ওরাও মনে হয় লজ্জা পেল। সকলে মাথা নিচু করল। আর আমি চুমকির কাছে গেলাম। চুমকি হাত ধরে আমাকে ওদের আড়ালে নিয়ে গেল। বলল, “এই তুমি মারামারিও করো?”
“না। মারছি কখন? মারই তো খেলাম কেবল।”
“কেন?”
“তোমায় ভালবাসি, তাই।”
“হুম। সেদিনের ব্যবহারের জন্য এখন তোমায় শাস্তি পেতে হবে।”
“এখনই?”
“হ্যা। এখনই।”
আমি চোখ বন্ধ করে বলি, “ঠিক আছে।”
ঠিক সেসময় স্বর্গীয় মোলায়েম স্পর্শ পেয়ে আমি চোখ খুলি। দেখি চুমকি পোষমানা পাখির মত আমার বুকে মাথা রেখে আমায় জড়িয়ে ধরে আছে।

এর কিছুদিন পর দিলবার ভাইকে দেখি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে কোথায় যেন যাচ্ছেন। আমাকে দেখে হাত নেড়ে ডাকলেন। কাছে গেলাম। বললেন, “সেদিনের ব্যাপারে কিছু মনে করো না।”
“সেটা ভেবে দেখব। কিন্তু আপনার একী হাল!”
“তুমি আগে আমায় ক্ষমা করো।”
“ঠিক আছে করলাম।”
“চুমকি আমার এ হাল করেছে, বুঝলে?”
“বলেন কী!”
“হুম। ওর কিছু চেনা বড়ভাই ছিল, তারা মেরেছে। আগে যদি জানতাম ও তোমায় ভালবাসে তাহলে আর তোমায় মারতাম না।”
“যা হবার হইছে ভাই। দুঃখ করে কী হবে? বাড়ি যান।”
“হ। সেইটাই। থাকো তাইলে।”

দিলবার ভাই চলে গেলেন।

আরেকদিন…
চুমকিকে পথে দেখে বহুবার ডেকেও সাড়া পেলাম না। যখন ওর কাছে গেলাম তখন আতঙ্কে তার মুখ নীল হয়ে আছে। আমার হাতে কোনোমতে একটা স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে সে চলে গেল। তারপরও আমি ওর পিছু ছাড়লাম না। পেছন থেকে নাম ধরে ডাকছি আর বলছি, “কী হইছে সেটা তো বলো।”

তখনই কোত্থেকে দুজন বড়ভাই এসে বলে, “আমরা ওর আপন ভাই। তোমার কিছু বলার থাকলে আমাদের বলো।”

আমি বলি, “আর কিছু বলার নাই।”
তারপরও তারা আমায় ইচ্ছামত কিলঘুষি দিয়ে বলেন, “মারটা মনে রাখবি!”

আমি মারের মধ্যেও স্লিপটা শক্ত করে ধরে রাখছিলাম। তারা যাবার পর খুলে দেখি সেখানে লেখা, “আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আর কিছুদিন পর আমি এই এলাকাতেও থাকছি না। ভাল না থাকলেও অন্তত আমায় ভুলে যেও।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত