রাতে খাওয়া করে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়েছি হঠাৎ বৌ আগুন আগুন বলে চিল্লানো শুরু করছে।
চোখ খুলে দেখি ঘর অন্ধকার, বিছানা থেকে নেমে আইডিয়া করে দরজা বরাবর দৌঁড় দিছি মাগার সোজা দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরের মধ্যে চিৎ হয়ে পড়ছি। পড়ছি ভালো কথা মুহি মানে আমার মেয়ের কোন একটা খেলনার উপড় পড়ছি। খেলনাটা ঠিক কি জানিনা তবে খেলনার ছুঁচালো অংশ ব্যক্তিগত সোফার একপাশে গেঁথে গেছে। উরিআম্মা বলে চিৎকার দিতেই ঘরের আলো জ্বলে উঠলো। দেখি বৌ দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলামঃ
-মিষ্টি আগুন কই? কিসের আগুন। কিসের আগুন মানে, এই না আগুন আগুন বলে চিল্লাচ্ছিলা। ও আচ্ছা সেটা তো তোমাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য। বদ মহিলা ঘুম থেকে জাগানোর জন্য কেউ এমন করে?
ডাকাডাকি করলে তো উঠতে চাওনা। আগুন বলেছি বলেই তো সাথে সাথে উঠেছো। তুই একটা বদ মহিলা। তুই বলদ, বুইড়া খাটাস। তুই ড্যাস ড্যাস ড্যাস। ড্যাস ড্যাস ড্যাস কি?
ফ্রেন্চ ভাষায় গালি। তুমি ফ্রেন্চ ভাষা জানো? না তো। তাহলে? ড্যাস ড্যাস দিয়ে গালির জন্য শূণ্যস্থান রাখলাম, একসময় ফ্রেন্চ ভাষা শিখে শূণ্যস্থান পূরণ করে দিবো।
তোমার আজাইরা বকবক শেষ হইছে?
না হয়নি, তুই ড্যাস ড্যাস ড্যাস এবার তুর্কি ভাষায়। আরিয়ান বাবা হাঁসপাতালে।
-আমার না তোমার?
–আমার।
-কেন কি হইছে?
–বাবা নাকি ভুত দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে। হাঁসপাতালে নিয়ে গেছে, একটু আগে মা ফোন করেছিলো।
-এখন কেমন আছেন?
–ভালো। তাহলে সত্যি বলা যায়। কি সত্যি?
-তোমার বাপ ভুত টুত কিচ্ছু দেখেনি, তোমার মাকে হয়তো মেকআপ ছাড়া অন্ধকারে দেখছে। দেখ ফালতু কথা একদম বলবানা। মা বাবা নিয়ে ইয়ার্কি আমি মোটেও পছন্দ করিনা। আচ্ছা ঠিক আছে ইয়ার্কি করবোনা, তবে সত্যি তোমার মাকে দেখলে ভয় করে। এখন কি আমার হাঁসপাতালে যেতে হবে?
এটা প্রশ্ন করার কি আছে এক্ষুনি যাবে। না গেলে হয়না, বাবা তো সুস্থ্য আছেন কাল সকালে নাহয় যাই। এক্ষুনি যাবা তুমি। তোমার বাপ মাল খেয়ে টাল হয়ে কি না কি দেখছে হুদাই সবার দৌঁড়াদৌঁড়ি উঠছে। বাজে কথা বলবানা আমার বাবা কিছু খায়না। আর ভুত দেখা স্বাভাবিক বিষয়। ভুত বলতে কিছু নাই দুনিয়ায়। আর থাকলেও যে বাসায় তোমার আম্মুর মতো চুড়েল থাকে সে বাসায় ডুকার সাহস করবেনা। ভাই মাথার মধ্যে রিমোটের বাড়ি খাইছেন কখনো?
খাননি তাইনা, একবার খেয়ে দেখুন হেব্বি লাগে। আমি মাঝে মাঝেই খাই। আমার বৌ ৬ বছরে ৭টা রিমোট ভাঙ্গছে। এই মুহুর্তেও মাথায় রিমোর্টের বাড়ি খাইলাম। তারপর বৌ গলা ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিলো। কি আর করা গেলাম হাঁসপাতাল।শশুড়আব্বা চোখ বড়বড় করে শুয়ে আছে, লাল লাল চোখ। শশুড় আব্বার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আস্তে করে বললামঃ
-আব্বা স্লামুআলাইকুম…
–কে তুমি?
-আমি আপনার একমাত্র মেয়ে জামাই আরিয়ান। মস্করা করো? এমন জায়গায় লাথি দিবো না এক সপ্তাহ দাঁড়িয়ে থাকবা চেয়ারে বসার সাহস করবানা। আমি আবিবাহিত মানুষ আর উনি আসছে আমার জামাই। মনে মনে বললাম এমা শশুড়আব্বার অবস্থা দেখি সিরিয়াস। শাশুড়িআম্মার দিকে তাকিয়ে বললামঃ
-আম্মা আব্বার তো মেমরি ক্রাশ হইছে, গাজনি সিনেমার আমির খান হয়ে গেছে। অন্যসময় এ জাতীয় কথা বললে সেই লেভেলের ধমক খেতাম। শাশুড়িআম্মা কঠিন মহিলা, শশুড়আব্বা নিজেও বৌয়ের ভয়ে সবসময় চুপসে থাকেন। কিন্তু আজ আমার কথা শুনে ধমক না দিয়ে মুখে আঁচল দিয়ে কেঁদে উঠলেনঃ
–ও মিষ্টির আব্বু কি হলো তোমার। শাশুড়িআম্মার কথা শুনে শশুড়আব্বা হুংকার দিয়ে উঠলেন। ওই চুপ, কান্দস ক্যান। এই মহিলা তখন থেকে বিরক্ত করছে। একদম জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ
–ভাই এই মহিলারে এখান থেকে সড়ান তো। লজ্জা শরম নাই আমাকে বলে আই লাভ ইউ তুমি সুস্থ্য হয়ে যাও। কোন মানুষের মুখ থেকে লাভ ইউ শুনতে এতো বাজে লাগতে পারে এই মহিলারে না দেখলে বুঝতাম না। ওই মহিলা যা এই খান থেকে নাইলে পিঠের মধ্যে কিল দিমু। কি সাংঘাতিক কথা। যেই শশুড়কে এতো বছর দেখলাম বৌয়ের সামনে মিনমিনে বিড়াল হয়ে থাকতে আজ কেমন বাঘের মতো গর্জন করছে। নিশ্চই ডালমে কুছ কালা হ্যায়। শাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করলামঃ -আম্মা ঘটনা কি?
–ইদানিং রাত হলে মহিলার কান্না শোনা যায়। কান্না করে আর বলে আদা পাদা কন পাদা, যে পাদিবে সে গাধা।
-আম্মা কি বলে?
–যা শুনছো তাই বলে। তোমার আব্বা প্রতিদিন ভয় পান। আজ রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আমি পেছন থেকে খেতে ডাকলাম আমার দিকে তাকিয়ে উলালা বলে চিৎকার দিয়ে ফিট হয়ে গেছে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে উল্টাপাল্টা বলতেছে। -আম্মা কি বলে চিৎকার দিছিলো?
উলালা…স্ট্রেইন্জ। রাত বারোটায় শশুড়আব্বাকে নিয়ে তাদের বাসায় নিয়ে গেলাম। বাসাটা থমথমে লাগছে। সত্যি বলতে আমারো একটু একটু ভয় লাগছে। শশুড়আব্বা এখন সবাইকে চিনতে পারছেন। হঠাৎ মহিলা মানুষের কান্নার কন্ঠ শোনা যেতে লাগলো। তার কিছুক্ষনের মধ্যে বলতে শুরু করলো আদা পাদা কন পাদা, যে পাদিবে সে গাধা।
মনে হলো ভুত নিচ তলায়। কি মনে করে দৌঁড়ে নিচে আসলাম। এতো সাহস কিভাবে হলো আল্লাহ্ মালুম। অবশেষে ভুতনির দেখা পেলাম। বাসার দারোয়ান টুলের উপর বসে ইচ্ছা মতো গাঞ্জা টানতেছে আর এসব বলতেছে। পেছন থেকে সজোড়ে সালার মাথায় টালা মানে ঠুয়া মারলাম। বেচারা টুল থেকে উপুত হয়ে মাটিতে পড়লো। তারপর উঠে আমার দিকে তাকিয়ে দৌঁড় দিলো। আজব দৌঁড়ানোর কি আছে, আচ্ছা দৌঁড়াচ্ছিস দৌঁড়া একটু পরপর পেছন ফিরে মুখ ভেংচি কাটার কি আছে। কোন পাগলের বংশে বিয়ে করলাম। বাসা ফিরতে ফিরতে রাত দুটা, ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। বৌ বাসা অন্ধকার করে কি সুন্দর ঘুম দিচ্ছে আহা। কয়েকবার কলিংবেল টিপলাম দরজা খোলার নাম নেই। দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো।
ব্যাপার কি?
সবকিছু ঠিক আছে তো?
তাড়াহুড়া করে বাসা ঢুকে লাইট অন করলাম। আল্লাহগো বলো আমি ফিট লাগলাম। কি দেখেছিলাম?
ফ্রিজের উপর সাদা পোশাক পড়ে এক ভুতের বাচ্চা বসে আছে। আরেক ভুত সাদা শাড়ি পড়ে চুল সামনের দিকে দিয়ে সোফার উপর দাঁড়িয়ে আছে। যখন জ্ঞান ফিরলো আমি তখনো ফ্লোরে শুয়ে আছি, মুখ ভেজা বুঝতে পারছি মানে পানি ছেটানো হয়েছে। চোখ খুলে দেখলাম বউ কোলে মাথা নিয়ে বসে আছে। মুহি সমানে কান্না করতেছে।
-কি হইছে তোমরা কান্না করতেছো কেন?
–সরি।
-সরি কিসের জন্য?
–তুমি বলছিলা ভুতে বিশ্বাস করোনা। ভয় দেখানোর জন্য মুহিকে ভুত সাজিয়ে ফ্রিজের উপর বসিয়ে দিছিলাম আর আমি সোফায়। তুমি যে এতো ভয় পাবা বুঝতে পারিনি। সরি। বদ মহিলা যদি হার্টএটাক করে মরতাম তাহলে পার্মানেন্ট সাদা কাপড় পড়তে হতো। স্বশব্দে চড় খেলাম মিষ্টির কাছেঃ সরি তো বলছি, ইচ্ছা হলে গালি দাও কিন্তু বাজে কথা বলো কেন।
-তুই একটা বদ মহিলা পাগলের বংশ তোর। মিষ্টি কোন জবাব দিলোনা, সে এখনো কাঁদছে। নাহ্ এই দুইটা মানুষের কান্না ভাল্লাগেনা। মিষ্টির সাথে ঝগড়া না করলে তো আরো বেশি ভাল্লাগেনা। এক কাজ করা যেতে পারে, দুহাতে দুই মা-মেয়েকে কাতুকুতু দেয়া দেতে পারে।
মিষ্টি হাসছে আর গড়াগড়ি খাচ্ছে, মুহি আমার পিঠের উপর চড়ে বসছে। ঝগড়া করলে ভালোবাসা বাড়ে, আর পাগলামি করলে কিছু ভালো মুহূর্ত পাওয়া যায়। আমাদের দ্বারা নর্মাল লাইফ চলেনা।
আমরা পাগল পরিবার।