স্যুট টাই পরা পেট মোটা একটা লোক আমার সামনে বসে আছেন তার আশে পাশে আরও কিছু মানুষ তার মা বাবা ছোট ভাই সহ আরও কয়েকজন … আগে ছবিতে এই লোকটাকে আমি দেখেছি, ছবি দেখে মোটেও মনে হয় নাই যে এই লোক দেশে খাদ্য সংকটের জন্য এতটা দায়ী। পাত্র পাত্রী যখন ছবি পাঠায় কনে বা বর দেখার জন্য স্বভাবতই সবচেয়ে সুন্দর ছবি বেছে বেছে পাঠায় কিন্তু এই লোক তার ছবির চেয়ে আরও দ্বিগুণ পরিমাণে কুৎসিত এক তো ভুঁড়ি আছে আরেক হল মাথায় এত্ত বড় একটা টাক, আমার মোটেও পছন্দ হয় নাই কিন্তু আমার বাবা মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে বিশেষ করে আমার মায়ের তার খুব কাছের বান্ধবীর ছেলে … আর
অনেক বড় ডিগ্রি ধারী এই ভুঁড়ি ওয়ালা লোক মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরিও করে … আমার না বলার অবকাশ নাই , না বলি নাই এমনও না, কিন্তু শ’খানেক ছেলে আমার জন্যও দেখা হয়েছে আমার কোন সমস্যা না থাকলেও আমার বাবা মায়ের চোখে হাজারো সমস্যা দেখা দেয়।
কোন ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না, কোন ছেলের আগের প্রেমিকার খোজ পাওয়া গেছে আর কোন ছেলে তো পড়াশুনা ছাড়াই বিদেশে চাকরী করে … আমার বাবা
মায়ের এই সামনের লোকটিকে কোন দিক দিয়ে পছন্দ হল সেটা এতক্ষণ ধরেই আমি বোঝার চেষ্টা করছি ।। আমার চোখে চোখ পড়তেই লোকটা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। আমার খুব বলতে ইচ্ছা হল ঐ ব্যটা মেয়েদের দেখলে এতই যখন লজ্জা তখন বিয়ে করতে আসছিস কেন? তোরে কি আমি জোর করে আনছি?
ঐ ভুঁড়িওয়ালা লোকের নাম সাবিদ আহম্মদ সাইফ। নাম শুনেই আমার কেমন যেন লাগছিল এই যুগের কোন মানুষের এমন কিভাবে হয়! কি পরিমান ক্ষেত একটা
নাম!!! সাবিদ সাহেবের মা বললেন আজকেই আকদ করিয়ে নিলে কেমন হয়? এই কথা শোনা মাত্র আমার আব্বা আম্মা খুশিতে বলে উঠলেন আরে আমরাও তো এটাই বলতে চাচ্ছিলাম।। আমি বলে উঠলাম মা কিন্তু ।। মা চোখ মুখ শক্ত করে আমাকে বললেন চুপ । শুভ কাজে দেরি করতে নেই … এক ঘণ্টার মধ্যে কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন … রাফি আহম্মদ এর পুত্র সাবিদ আহম্মদ সাইফ। এর সাথে আপনি কি বিবাহে রাজী? রাজী হলে বলুন কবুল … আমি কাল বিলম্ব না করে ঝটপট বলে ফেললাম বিসমিল্লাহ্ কবুল, বিসমিল্লাহ্ কবুল, বিসমিল্লাহ্ কবুল … এই সব বিয়ের রীতিনীতি আমার কোন কালেই পছন্দ ছিল না আর আমি মনেও করি না এইসব ফর্মালিটির কোন মানে আছে একজনকে আমি স্বামী হিসাবে মানলেই তো হল এইসব ফর্মালিটির কি আছে কে জানে … বাবার নাম এই মায়ের নাম এই … যার সাথে বিয়ে তার নাম জানলেই তো হয় ।। এত নাম দিয়ে আমি কি করবো !
বিয়ের পর্ব শেষে আসলো খাওয়া দাওয়ার পর্ব … নিয়ম হল বর কণে এক সাথে বসে খাবে।। আমি দেখলাম খাবার সামনে আসা মাত্র সাবিদ সাহেব খাওয়া শুরু করে দিলেন । গপাগপ করে খেয়েই যাচ্ছেন … আমি তাকিয়ে আছি একটা মানুষ কি জঘন্য করে খেতে পারে !!! খাওয়ার শেষে সাবিদ সাহেব বিশাল বড় করে এক ঢেঁকুর দিলেন ।। সেই ঢেঁকুর শুনে আমি যতটুকু খেয়েছিলাম সবটুকু বের হয়ে আসার উপক্রম … আমার মাথা ঘুরছিল যে মানুষটাকে আমি কয়েকঘণ্টা সহ্য করতে পারছি না সারাজীবন তার সাথে কাটানো ! কিভাবে সম্ভব … আমার ছোট বোন খুব কম উপকরণ দিয়ে বাসর সাজিয়েছে ।। বিছানায় কিছু গোলাপের পাপড়ি আর পাশের একটা টেবিলে ছোট্ট একটা টেবিল ল্যাম্প ! রুমটা আমার কিন্তু আজকে কেমন যেন পর পর মনে হচ্ছে।।
আমি ঘরে ঢোকার একটু পর সাবিদ সাহেব ঢুকলেন। ঢুকেই আমাকে বললেন আমার না খাওয়ার পর খুব ঘুম পায়। আমি একটু ঘুমাই? ভোরের দিকে আমাকে ডেকে দিবেন …
আপনার সাথে গল্প করবো। আমি বললাম গল্প করার দরকার নাই আপনি ঘুমান ।।
সাবিদ সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।। তারপর শুয়ে পড়লেন বেশ পাঁচ ছয় মিনিটের মাথায় আমি নাক ডাকার শব্দ পেলাম। এমন জোড়ে নাক ডাকার শব্দ আমি আর জীবনেও দেখি নাই।। আমি ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম কিন্তু একদম ঘুমাতে পারছিলাম না শব্দের কারণে।। এক জায়গায় শুনেছিলাম নাক ডাকা মানুষদের আস্তে করে ধাক্কা দিলে নাকি নাক ডাকা বন্ধ হয়! আমি তাই সাবিদকে ধাক্কা দিলাম আস্তে করে আমার ধাক্কা খেয়ে সে আরেকটু নড়ে চড়ে ঘুমাতে লাগলো কিন্তু নাক
ডাকা বন্ধ হল না। পরদিন সকালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল সাবিদ সাহেবের বাড়িতে বাড়িটা সুন্দর সাজানো গোছানো । তার রুমে ঢুকেই আমার খুব বিরক্ত লাগলো।
প্রায় প্রত্যেকটা জিনিস আমার অপছন্দের রং হলুদে মোড়ানো …
একদিন মা বললেন যাও তোমরা কোথাও থেকে ঘুরে এসো বিয়ের পরে তো কোথাও যাও নি … আমি বললাম আচ্ছা মা …সাবিদ সাহেব রেডি হচ্ছেন কটকটা আকাশি কালারের একটা শার্ট পরেছেন তিনি … আমি বললাম এটা কি পরেছেন আপনি? তিনি বললেন কি আবার শার্ট। সুন্দর না কালারটা? আমি বললাম মোটেও সুন্দর না, তিনি বললেন কই সুন্দর না ? জানো আমি পনেরশো টাকা দিয়ে শার্টটা কিনেছি। আমি বললাম এই শার্টের এত দাম ! আমাকে কেউ ফ্রি দিলেও আমি নিতাম না।। সোহেল সাহেব আমাকে কিছুই আর বললেন না … চুপচাপ শার্ট বদলে আসলেন।।
আমার তার কিছুই ভালো লাগতো না তার খাওয়া ঘুমানো চলাফেরা কিছুই না … আমার যে তাকে একেবারে সহ্য হয় না সেটা সে নিজেও টের পাচ্ছিল বৈকি ।আমি কথায় ক্ষেপে যেতাম ঝগড়া করতাম। আমি যখন চিৎকার চ্যাঁচামেচি করতাম তিনি তখন বাধ্য ছেলের মত চুপ করে থাকতেন। কখনোই কিছু বলতেন না নিজেকে বদলাবার চেষ্টা করতেন, কিন্তু যতই চেষ্টা করুক তার কোন কিছুই আমার ভালো লাগতো না …
বেশ কিছুদিন পর একদিন রাত প্রায় ১২ টা বাজে সাবিদ সাহেব ফোন ধরছেন না।। আমি মা বাবা সবাই তাকে অনেক বার ফোন করছি সে ফোন ধরছে না কিছুক্ষন পর দেখাল ফোন নট রিচেবল। মা কাঁদছেন সাথে বাবাও। তার অফিস বন্ধুদের সবার বাসা সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে কোথাও নেই সে। এভাবে দুইদিন কেটে গেলো। দুই দিন যাবত তার কোন খবর নাই থানায় জিডি করা হয়েছে।
সবাই চুপচাপ কেমন যেন শুধু মনে হয় আমারই ঘুম হচ্ছে না …
মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই। কোন একটা শব্দ যার কারনে আমার ঘুম হত না আজকেও সেই শব্দটাই আমার ঘুম না হওয়ার পেছনে দায়ী। কোন একটা এলোমেলো মানুষ আমার পাশে নেই। যার পই পই করে খুত আমি ধরতে পারি ঝগড়া করতে পারি।। আমি ভালো নেই মানুষটিকে ছাড়া আমি মোটেও ভালো নেই।।
এভাবে কেটে গেলো প্রায় সাতটা দিন … তারপর হঠাৎ সন্ধ্যায় কলিং বেলের শব্দ। আমি দৌড়ে গেলাম দরজা খুলতে … তাকিয়ে দেখি সাবিদ এসেছে।। আমি চিৎকার
করে বললাম কই ছিলে তুমি এত দিন? তুমি জানো না?
জানো না তুমি? তোমার সাথে ঝগড়া না করে যে আমি থাকতে পারি না? জানো না তুমি?তোমার নাক ডাকা না শুনলে আমার ঘুম পায় না।
সে আমার মাথা তার বুকে টেনে নিলো মাথায় আলতো করে হাত রেখে বলল, আমি এটা অনেক আগে থেকেই জানি যে তুমি আমার সাথে ঝগড়া না করে থাকতে পারো না।।তাই তোমাকে সুখী দেখতে একটু দূরে চলে গিয়েছিলাম..
আমি কাঁদছি, এই কান্নার নাম সুখ কান্না। আমার চোখের জলে ওর পশমে ভরা বুক ভরে যাচ্ছে।। তবু আমি কাঁদছি..
কেঁদেই যাচ্ছি।।।।।।।