আমরা বন্ধু

আমরা বন্ধু

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, হঠাৎ করে চোখ গেল ক্যাম্পাসের দিকে। দেখলাম রিপা আমার দিকে চাইনিজ স্টাইলে এগিয়ে আসছে, হাতে আছে একটা ফাইল। মনে মনে ভাবছি নাজানি আজ আবার কী নিয়ে তর্ক করতে আসছে। হ্যাঁ রিপা আমার অরিজিনাল প্রেমিকা হলেও আমি কখনো ওকে ছাড় দিয়ে কথা বলি না। কারও সামনে উচিৎ কথা বলতে আমি কখনো ভয় পাইনা। আমার বাবাকে পর্যন্ত ছাড় দেইনা, আর রিপাকে তো ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

উচিৎ কথা সামনে বলি বিধায় আমার ফ্যামিলী যেমন আমাকে দেখতে পারেনা ঠিক রিপাও তেমনই । কত কিছু ত্যাগ করছি এই উচিৎ কথা বলার জন্য, যার কারণেই তো আজ আমি এতো বড় সেলিব্রিটি। আমি একটা ডাক দিলে মহল্লার সব মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আর আমার এতো যে ফলোয়ার, এতো পরিমাণে সেলিব্রিটি হওয়ার কারণেই রিপার হিংসে হয়। তার বুঝা উচিৎ তার বয়ফ্রেন্ডই তো সেলিব্রিটি অন্য কেউ নয়। কিন্তু সেটা না বুঝে আমার সাথে শুধু হিংসাই করে।

রিপা আমার সামনে এসে বলল এই নেও তোমার স্বপ্ন তোমার হাতে তুলে দিলাম। অনুগ্রহ করে এটা গ্রহণ করে আমাকে মুক্তি দাও।

আমি রাগি মুড নিয়ে বললাম ফালতু প্যাচাল না পেড়ে কী বলতে এসেছো সেটা বল! আর এই সাদা কাগজ আমার স্বপ্ন হতে যাবে কেন? খেয়ে দেয়ে কাজ পাওনা তাই আমাকে নতুন নতুন টপিক ধরে জ্বালাতে আসো বল? সে বলল আমি তো শুধু তোমার জ্বালায় বল? তবে এবার আর জ্বালাইতে আসি নাই। এবার তোমার ভাগ্য খোলার টিকেট নিয়ে এসেছি। আমি আবার বললাম কী এটা?

এটা মনোনয়ন পত্র, তোমার ভাগ্য খোলার জন্য এটা আব্বু থেকে নিয়ে এসেছি। তুমিই তো বল তুমি বড় সেলিব্রিটি, তোমার অনেক ফলোয়ার, তুমি একটা ডাক দিলে মহল্লার সব লোক ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু আর্থিক অবস্থার জন্য তুমি বড় পজিশনে উঠতে পারছো না, তাই তোমার জন্য এই পথ অবলম্বন করলাম। আর সেদিন তুমিই তো বলছিলে যদি একটা সুযোগ পেতাম তাহলে মানুষের সেবা করতাম। মানুষের এই দুঃখ দূরদশা আর দেখতে ভালো লাগেনা। শুধু একটা বার যদি চান্স পেতাম তাহলে আমার জিত কেউ ঠেকাতে পারতো না। তাই তোমার একটা চান্স পায়িয়ে দিলাম। এখন তুমি রাজনীতির মাঠে নেমে পড় আমি তোমার সাথে আছি।

মনে মনে কিছুটা আনন্দ পাচ্ছি তারপর ও রিপাকে বললাম তুমি কী পাগল হয়েছ নাকি? আমি দাঁড়াব ভোটে! আমার এতটা ইচ্ছে নেই। আমি গরীব মানুষের পাশে সারা জীবন যেমন ভাবে আছি এমনে ভাবেই থাকবো। রিপা আবার বলল গরীব দুঃখি মানুষের জন্য বড় কিছু করার ইচ্ছা নায় নাকি তোমার? তুমিই তো বলছিলে সু্যোগ পেলে কিছু করে দেখাতাম। পাশ থেকে বন্ধুরাও রিপার সাথে সাই দিয়ে বলল আরে দোস্ত চিন্তা করিস না রিপা ভাবীর সাথে আমরাও তোর পাশে আছি। আমরা সবাই মিলে তোর জন্য ভোট কালেকশন করব। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তোর জন্য ভোট চাইবো। তুই যে পরিমাণে সেলিব্রিটি মানুষ তোর কথা ফেলতে পারবে না। অবশ্যই একটা সুযোগ দেবে তোকে। আর তোর আচার ব্যবহারও তো খারাপ না, তাহলে মানুষ কেন তোকে ভোট দিবে না? আরে দোস্ত এই সুবর্ণ সুযোগ তুই মিস করিস না। অবশ্যই তুই বিপুল ভোটে পাশ করবি। আর ইয়াং মন্ত্রী হিসাবে তোকে মানাবে।

রিপার সাথে সাই দিয়ে বন্ধুরা যখন কথাগুলো বলছিল তখন আমি নতুন করে মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম কিন্তু করুণ সুরে বলতে হলো দোস্ত ভোটে দাঁড়ালে তো অনেক টাকা খরচ হবে। আমি এতো টাকা পাবো কোথায়? আমার ইচ্ছা থাকলেও ভাগ্যে মন্ত্রী লেখা নেই দোস্ত। আর রিপাকে বললাম -ও সোনা তুমি এই মনোনয়ন পত্র তোমার আব্বুকে দিয়ে দাওগে। তোমার বয়ফ্রেন্ড যে গরীব তার মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন এই জীবনে আর পূরণ হবে না।
রিপা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল আরে চিন্তা করো না। তুমি ভোটে দাঁড়ালে দেখবে সবই ম্যানেজ হয়ে গেছে।আর তুমি এতো চিন্তা করছো কেন? আমি আছি নাহ! আর আমার সাথে আমার বাবা তো আছেই তুমি কোন চিন্তা করনা। অবশ্যই একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে, আর তোমার বন্ধুরা তো আছেই। বন্ধুরা বলল আরে দোস্ত তুই ভোটে দাঁড়িয়ে দেখ তোর কোন টাকা খরচ করা লাগবে না। পাবলিক নিজের টাকা খরচ করে তোকে জয়ী বানাবে। তুই নিজেও জানিস না তোর সুনাম এই আকাশ বাসাসেও ভাসে। সবার এমন উৎসাহ মূলক কথা শুনে মনে একটু সাহস জাগলো। একটু না বেশ ভালোই সাহস জাগছে। জোরসে বললাম হ্যাঁ আমি ভোটে দাঁড়াব। গরীব দুঃখীদের জন্য অবশ্যই কিছু একটা করব।

আগামীকাল থেকেই প্রচারণার কাজ শুরু করতে হবে তোরা এখন বাসায় যা। রিপা তুমি আমাকে একটু বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসো। বন্ধুরা বলল কিরে ভাবী তোকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে কেন? বরং তুই ভাবীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়। কারণ সে মেয়ে মানুষ। আমি বললার তোদের এতো জ্ঞান দেওয়া লাগবে না, তোরা বাসায় যা। আমি একা একা বাসায় গেলে শত্রুরা আমাকে জখম করতে পারে। আমি যে একজন মন্ত্রী হতে যাচ্ছি এটা যদি বিপরীত পার্টি জানতে পারে তাহলে তো আমাকে শেষ করে ফেলবে। এজন্য এখন থেকে আমার সিকিউরিটি প্রয়োজন। আপাতত সিকিউরিটি হিসাবে রিপা থাকলে চলবে। পরবর্তীতে সিকিউরিটির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। আমার কথা শুনে বন্ধুরা হাসতে হাসতে চলে গেল। আর রিপা আমার সাথে আমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আসলো।

আজ চল্লিশ দিন পর ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বাহির হলাম। অবশ্য এই চল্লিশ দিন আমাকে অনেক খাটাখাটনি করতে হয়েছে। রিপাও আমার সাথে ছিল এই চল্লিশ দিন। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছি। প্রেমিক- প্রেমিকা মিলে ভোট চাইতে যাওয়াতে আমাদের প্রতি অনেকেই খুশি হয়েছিল। সেই সাথে আমাদের দুজনের জন্য দোয়াও করেছে। ছোট বড় দাড়ি পাকা মুরব্বী কচি কাঁচা বাচ্চারা পর্যন্ত আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর সেই প্রতিশ্রুতি নিয়েই এখন ভোট কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছি নিজের মূল্যবান ভোট টা দিতে । ইতোমধ্যে এক প্রার্থী আমার কাছে ভোট চাইলো! বলল ভাই আমারে একটা ভোট দিবেন। আমি অবাক হয়ে ব্যাটার দিকে চেয়ে আছি, সে কি জানে না নাকি আমি নিজেই একজন প্রার্থী! রিপা আমার পাশ থেকে বলল আচ্ছা কাকা চিন্তা কইরেন না আপনারে একটা ভোট দিব।
উত্তেজনা টানটান
ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছে কোটি প্রাণ,
মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে
মনটা করছে আমার আনচান।

ভোট কেন্দ্রের ভিতর ঢুকেছি নিজের মহামূল্যবান ভোট টা দিব বলে। কিন্তু ভিতরের পরিবেশ পাপড় ভাজার মত গরম। কোথায় কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে ২০০০ সালের বন্যা আবারও এসেছে। অনেক কষ্টে নিজের ভোট টা দিয়ে বেরিয়ে আসলাম।

বন্ধুরা ওদিক থেকে আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা। আর কিছুক্ষণ পর ভোটের ফলাফল দিবে। আমি জানি আমার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাই লোকালয়ের মধ্যে না গিয়ে একপাশে আমি আর রিপা বসে আছি।আর বাকি বন্ধুরা গেছে ফলাফল শুনতে। পায়ের উপর পা নাচিয়ে রিপাকে বলছি -মন্ত্রী হওয়ার পর সুন্দর একটা ফ্লাট কিনবো। মা- বাবাকে নিয়ে সেখানে উঠবো, তারপর তোমাকে বউ করে ঘরে আনবো। এরপর বছর তিনেক পর গ্রামের টুকিটাকি উন্নয়ন করব। নাহলে তো পরের বার পাবলিক আর ভোট দিবে না। খানিকটা পর বন্ধু নোমান দেখলাম আমার দিকে দৌড়ে আসছে। রিপা বলল নোমান হাসতে হাসতে আসছে তারমানে তুমি জিতে গেছ। রিপা আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। হুররেরেরে

আমি রিপার হাত ধরে বললাম এই বসো তো। নোমানের হাসি আর কান্না একই, কারণ ওর দাঁত উঁচু। কাঁদলেও মনেহয় হাসছে। কাছে এসে যখন বলল দোস্ত তুই ফেল করেছিস, তুই একটা ভোট ও পাসনি। এমনকি তোর নিজের ভোট ও পাসনি। অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে তোর টাই সিল মারতে গিয়ে অন্যটাই মেরেছিস হয়তো। পাবলিক আমাদেরকে সব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নোমানের এই কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ থেকে বজ্র পড়ল। ওদিকে রিপা খিলখিল করে হেসে বলছে -কি হলো মিঃ বাবু সাহেব কোথায় তোমার ফলোয়ার? তুমি নাহ এত সেলিব্রিটি তাহলে চিৎপটাং হয়ে পড়লে কেন? আমি ধমক দিয়ে বললাম তোমার ঐ সর্বনাশা মনোনয়ন পত্র আমার জীবন টা তামাক পাতা বানিয়ে দিয়েছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত