শুধুই আমারই জন্য। হ্যাঁ, শুধু আমারই জন্য আমার পছন্দের রঙের শাড়ী পড়ে কোন এক গোধূলী লগ্নে খোলা রাস্তায় অপেক্ষা করছিল প্রিয় প্রতিমা প্রিয়া। সেদিন নীল পাঞ্জাবি পড়ে দৌড়ে ছুটে ছুটে এসেছিলাম শুধু মাত্র তাকে দেখার লোভে। বেশ কয়েকদিন ধরে তার শূন্যতায় আমি একাকার হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল, এখনি তার খোজে বেরিয়ে পরবো ঠিক তখন সেই হাজির হলো। আমি প্রাণ খুলে আমার ইচ্ছের কথা জানালাম। সে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে ঐ লাল শাড়ীটাই পড়ে আসবো। আমি বললাম, সত্যি। সে বলল, সত্যি না মিথ্যা কাল তা শুভদার বাড়ির পাশে মাঠ পেরিয়ে যেই গলি গেছে সেখানে আসলেই দেখতে পাবে। গলিটা বেশ ফাঁকা আমরা হাত ধরে বিশ্বরোড পর্যন্ত নিঃসংকোচে, নির্ভয়ে বেরিয়ে যেতে পারবো। কাল আসলেই সত্যি না মিথ্যে দেখে যেও। তবে নীল পাঞ্জাবিতে না এলে আর কখনো শাড়ী পড়ে আসবো না। জানতো শাড়ী পড়তে কত ঝামেলা। তবুও তোমার জন্য কয়েকবার পড়েছি। জীবনে প্রথম শাড়ী পড়ার তোমার জন্য আজ এই নিয়ে সপ্তমবার পড়ছি। তাও তোমার জন্য। আর আমার জন্য না হয় নীল পাঞ্জাবিটা পড়ে আসতে তোমার জন্য তেমন কষ্ট হবে না।
প্রিয়ার এই সামান্য আকঙক্ষাটুকু যখন আমি পূর্ণ না করতে পারি তাহলে আমি নগণ্য প্রমিক। প্রেমিকা হিসেবে প্রিয়াকে দশে দশ দেয়া যায়। তার ভিতরে এমন ক্ষমতা আছে যা আমার মতো আবেগি প্রেমিককে মুহূর্তেই পরিতৃপ্ত করে দেয়। ক’দিন আগেই সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারালো। কি আজব ব্যাপার — ঘুম থেকে উঠে ভেবেছিলাম দেখবো প্রিয়ার কোলে কিন্তু বুঝতেই পারিনি প্রিয়ার হাত বুলানোতে আমার ঘুম আসেনি। ঘুম এসেছে তার কল্পনায়। তাকে নিয়ে কল্পনা করলেও বাস্তবতার অনুভূতি পাওয়া যায়।
প্রিয়া দারিয়ে আছে লাল শাড়ী পড়ে। চুলগুলো ছেড়ে এসেছে। আমিই বলেছিলাম, চুল ছেড়ে আসতে যাতে আমি বাতাসে তার পাতলা চুলগুলো উড়ার দৃশ্য দেখতে পারি। তার ঠোটে ইশ্বর অনেক কথা লিখে দিয়েছে। আমাকেই যেন এই কথাগুলো মনে মনে নিঃশব্দে পড়তে হবে। পড়তে সমস্যা নাই, বরং ভালোই লাগে। আমি পাশে একটা বিল্ডিং-এ লুকিয়ে ওর ঐশ্বরিক সৌন্দর্য দেখছিলাম। ওঁর সামনে গেলে হয়তো তাকাতেই লজ্জা লাগবে তাই দূর থেকে যতটুকু উপভোগ করা সম্ভব।
আমি ওঁর সামনে যেতেই- বলল, এখন সময় হলো। আমি বললাম, চল যাওয়া যাক। তারপর তার হাতটাকে আমার আঙিনায় নিয়ে এলাম। দুজন হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম বিশ্বরোড। তারপর ওঁ বলল, দেখছো সন্ধ্যা নেমে এলো। তোমাকে এ জন্যই বলছি একটু তাড়াতাড়ি এসো। আমি বললাম, সন্ধ্যার আলোয় তোমাকে আরো সুন্দর লাগবে। দুজন হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম ওভার ব্রিজের উপরে। তারপর সেখানে দাড়িয়ে দুজন ব্রিজের নিচের বাস চলার দৃশ্য দেখছি। হঠাৎ দেখলাম প্রিয়ার চেহারা বিষণ্ণ হয়ে যেতে লাগলো। আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, কি হয়েছে। সে আমার হাতটি তার দুই হাতের মুঠিতে শক্ত করে চেপে ধরে বলল, তুমি কি সত্যিই আমায় ভালবাসো? আমি বললাম, সন্দেহ হয়?
সে বলল, ভাল না বাসলে কি করে তুমি একটা ছায়াকে সময় দিচ্ছো। আমি জানি আমার মৃত্যুর পরও আমায় তুমি ভীষণ ভালবাসো।