একটি নির্লজ্জময় গল্প

একটি নির্লজ্জময় গল্প

“এ কি গো দিদি,মেয়েকে কি রান্নাবান্না শিখাও নি?? এখন ও ভালো মতো টাকি মাছের ভর্তা ই রাধতে পারে না!!স্বামীর ঘরে যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির লোক দের কি রেধে খাওয়াবে?আলু ভর্তা??”
মামীর মুখে এই কথা শুনে আমার পুরো পিত্তি জ্বলে গেল,দিদি কত কষ্ট করে রাধলো আর এই মহিলা কিনা যাচ্ছেতাই বলা শুরু করলো??
যাহোক বাইরে কিছু প্রকাশ না করে চুপচাপ টেবিলে খেতে লাগলাম।আর অইদিকে আমার মা বাবার গুনকীর্তন অলরেডি শুরু হয়ে গেছে,
“হায় রে মেয়েটা কিছুই পারে না। ইসস দোষ ত আমাদেরই , মেয়েটাকে ঘরের কাজকর্ম কিছুই শিখাই নি। এখন একেবারে রানীসাহেবা হয়ে গেছে সে, রান্না টাও পারে না ভালমত!”
দিদিকে দেখলাম মাথা নিচু করে ঘরের এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো। হয়তো সে আজ বাবা মার নতুন চেহারা দেখে আসলেই অবাক হয়ে গেছে,,, আমি ও কম অবাক হয় নি। যে বাবা কিনা female education female education বলে চিল্লাইতো সেই আজ দিদিকে ঘরের কাজকর্ম পারে না বলে একগাদা কথা শোনাচ্ছে আর ধমকাচ্ছে।আর মার কথা নাহয় নাই ই বললাম!!
সব দোষ এই মামীর,,বিয়ে বিয়ে করে মা বাবার মাথা উসকে দিছে, তাই তারা ও এখন মামীর কথায় নাচে আর গায়। তার উপর মামী কয়েকদিন পর পর কোথা হতে “পাত্র” নামক চিড়িয়া ধরে আনে, আর তারা যখন শুনে যে মেয়ে ঘরের কাজকর্ম এ তেমন পারদর্শী নয় তখন মুখ কালো করে ফ্রি তে এক বেলা বিরিয়ানী মাংস গিলে কিছু না বলেই ভেগে যায়!!!
মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে,,ভাই আপ্নারা বউ খুজতে আইছেন নাকি কাজের বুয়া খুজতে আইছেন??আইলে কইয়া দেন, আমি নিজেই কাজের বুয়া খুইজ্জা দিমুনে!!।
কিন্ত অলরেডি নির্লজ্জ বলে খেতাপপ্রাপ্ত আমি আর লজ্জাতে পড়তে চাই না বিধায় সবকিছু চুপচাপ দেখতাম আর মাথা নাড়াতাম!!
তবে শেষবারের মত নির্লজজতার আরেকটা কাজ করেছিলাম আমি, আবির ভাই কে ধরে এনে!! দিদিকে প্রায় ই জিজ্ঞেস করতাম, ভার্সিটি তে এত ছেলে,কাওকে মনে ধরলো না কেন এখনো???? প্রতিবার ই উত্তর না দেয়া দিদি সেদিন কাদতে কাদতে lower middle class আবির ভাইয়ার ব্যাপারে সব খুলে বলে!!!
আর আমি ও ঠিক তার পরেরদিন দিদিদের ভার্সিটি গিয়ে নির্লজজের মত ৩২দাত বের করে আবির দার সামনে যেয়ে বলেছিলাম,,
” দুলাভাই, আমি বর্ষা দির ছোট ভাই। আসলে দিদি খুব অসুস্থ তাই আজকে ভার্সিটি আসতে পারবে না। আপনাকে আমাদের বাসার পিছনের মাঠটার ওখানে যেতে বলেছে। সেখানে দিদি থাকবে।কি না কি খুব গুরুত্ব পূর্ণ কথা আছে!!”
প্রথমে ইতস্থত করলেও আমার জোড়াজুড়িতে সে আমার সাথে আসতে রাজি হয়। আর আমি ও হাসতে হাসতে মাঠের নাম করে সোজা আমাদের বাসায় নিয়ে আসি!! যেখানে বাবা আর দুলাভাই কে পরস্পর সামনা সামনি এনে দুই জামাই শ্বশুড় এর এক মহামিলন(অথবা প্রলয়ন) ঘটাই,, ,
এরপর ঠিক কি হয়েছিল তা আর না বললেই হয়। আমার নিকনেম নির্লজ্জ এর সাথে বেহায়া নামক আরেকটা শব্দ জুড়ে দিয়েছিলেন আমার মহান পিতা!!! হয়তো আরো কিছু হতো,তবে তার আগেই আমার উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন দুলাভাই সব সামাল দিয়ে ফেলেন।
আর এতেই আমার বাবা পুরো মুদ্ধ হয়ে ফিদা হয়ে গেলেন,, অবশ্য এই অল্প তেই এই বুড়ো মানুষ টা যে পটে যাবে সেটা হজম করতে আমার দিদিদের বিয়ের দিনের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল!!
নানান মানুষ নানান কথা বলেছিল,তবে সেটা তাদের টোনাটুনির সংসারে প্রভাব ফেলে নি।
না না এমন না যে টোনা বাইরে থাকে আর টুনি রান্না করে,, বরং টোনা টুনি দুজনেই মিলেমিশে সব কাজ করে। এতে অবশ্য লাভ সবচেয়ে বেশি হয়েছে আমার, যেদিন দুপুড়ে দেখি বাসায় রান্না ভাল হয় নি,,সেদিন বিকালের কোচিং থেকে সোজা টোনাটুনির বাসায় হামলা করি!!
টুনি,, মানে আমার দিদি কিছু বলতে গেলেই আমি আমার ৩২ খানা সাদা ঝকঝকে দাত বের করে বলি,,
“তুমাগো সংসার মুই জোড়া লাগাইছিং। তাই মুরে সম্মান দিবা বুঝলা,অহন ভাত বাইড়া দিয়া আর হাতে টিভির রিমোট দিয়া সামনে থিক্কা ফুডো!! ”
আমার কথা শুনে দুলাভাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকে আর দিদি রাগে গজগজ করতে ভাত বাড়তে থাকে!!!
খারাপ না বেশ ভাল ই লাগে এই টোনাটুনির সংসার দেখতে, মনে হয় এখনো পৃথিবীতে প্রকৃত ভালোবাসা বেচে আছে,,সাথে বেচে আছে পরিবারের স্নেহ। এসবের জন্য ই আরো অনেক বছর বাচতে ইচ্ছে করে,,,,,
[*পরিশিষ্টঃ এখন ও মাঝে মাঝে মামীর সাথে দেখা হলে টিটকারি মেরে বলি,”কি গো মামী?? পাত্র পেলে??” এরপর মামীর রিএকশন ঠিক কি হয় বোঝা যায় না, তবে তার সরু চোখ দেখে বুঝতে পারি যে চোখ থেকেআগুন বেরুনোর সিস্টেম থাকলে নির্ঘাৎ আমি এতক্ষনে বার -বি-কিউ হয়ে যেতাম!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত