শরীরে তো অনেক জ্বর তোমার। এতো রাত হলো তবুও ঘুমোচ্ছো না যে! আচ্ছা কি এমন বললাম আমি বলতো!অসহ্য! সব সময় ওনার জেদ আর জেদ!
রুপা:-তুমি আমাকে থাপ্পড় দিলে কেনো!
তুমি কে আমাকে থাপ্পড় দেয়ার!আমার বাবা মা আজ অবধি আমার গায়ে হাত তোলেনি!আর তুমি বাহিরে কার সাথে কি নিয়ে ঝামেলা করে এসে, সেই ক্ষোভ আমার উপর ঝাড়লে!আমি ভালো রান্না পারিনা,সেটাতো জানোই,তার পরো ওই ইস্যুতে ধরলে আমায়!খাবারের প্লেট ছুড়ে মাড়লে, এটা কি কোনো রান্না হলো এই বলেই দুম করে গালে থাপ্পড় দিয়ে দিলে! আমি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করাতে পাড়ছিলাম না।তুমি কি করে আমার গায়ে হাত তুলতে পাড়লে! কাজের পিচ্চি মেয়েটাও ভয়ে কুকড়ে গিয়েছিলো।ওহ!লজ্
জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। মন চাচ্ছে এক্ষনি চলে যাই।মেয়ে মানুষ কি করেই বা এতো রাতে বেরুতে পারি!বাহিরে প্রচুর বৃস্টি হচ্ছে।আমাকে ছুবে না তুমি!এই অধিকার একটু আগেই কেড়ে নিয়েছি আমি।আবারো আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছেন কেনো! বিবেক-বোধহীন মানুষ!
আবির আহমেদ:-রুপা,দেখো,এসব কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা।অনেক জ্বর তোমার শরীরে।প্লীজ এমন করেনা জান পাখি।পট্টি লাগিয়ে দিচ্ছি আমি।
রুপা:-তুমি কি কথা বোঝোনা!আর একটা টাচ করলে আমি এই ঝড়ের রাতে বাহিরে বের হয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো।আজকের রাতটাই তো আছি।প্রতিদিন অফিস থেকে এসে আমাকে জ্বালাও!অমুকের বউ এইটা পারে,তমুকের বউ এইটা পারে!আর আমি জ্বলের শ্যাওলার মতন সরল সস্তা!কিচ্ছু পারিনা আমি!আমার কোনো গুণ নেই।সব গুণে গুণান্বিত অমুকের তমুকের বউ।বিয়ের আগে কত্তো মন কারা কথা বলতে।আর এখন আমি অসহ্য হয়ে গেছি তোমার কাছে!
রুপা একের পর এক কথার গ্রেনেড ছুড়তেই থাকে।আর আবির নিশ্চুপ থেকে শুনেই যায়। ও রুপাকে খুব ভালো বুঝতে পারে।এ সময় কথা বললে হিতে বিপরীত হবে,সেটা ও খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারে।রুপার কন্ঠস্বর ধীরে ধীরে অস্পষ্টতর হতে থাকে।চোখে ঘুম এসে গেছে ওর।চোখ নিভু নিভু করে আলতো করে খুলে রেখেছে।এইতো চোখ বন্ধ হয়ে গেছে।কি নিষ্পাপ লাগছে ঘুমন্ত মেয়েটাকে।পৃথিবীর সমস্ত পবিত্রতা বুঝি ভর করেছে ওর কান্নাচ্ছন্ন মুখশ্রীতে।আবির, রুপার কাছাকাছি সরে এসে পাশে বসে।কপালের ঘামগুলি রুমাল দিয়ে মুছে দেয়।কপালে চিবুকে চুমু খায়।অনেক গরম ওর শরীর।মনে হয় ধীরে ধীরে জ্বরের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। আবির একের পর এক পট্টি লাগাচ্ছে আর চেঞ্জ করছে।এভাবে জ্বর কিছুটা কমে আসে।ঘু্মন্ত রুপাকে ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়।গভীর রাত্রি অবধি মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।রাত্রি বেড়ে চলেছে ধীরে ধীরে।জানালার গ্লাসে বাদল রাত্রির অবিরাম বৃস্টিআচ্ছন্ন আচঁড় পরছে তো পরছেই।ঝড় থেমে গেছে,কিন্তু বৃস্টি এখনো চলমান।রুপার পুরো শরীর চাদরে আবৃত করে দেয় আবির।ওর অফিস সকাল ৮ টায়।৬:৩০ এ ওর বের হতে হয় বাসা থেকে।রুপা অতো সকালে ঘুম থেকে ওঠেনা।প্রচুর ঘুম পাগলী মেয়ে ও।প্রতিদিন কাজের মেয়েকে গেট লক করার আদেশ দিয়ে বেড়িয়ে পরে আবির।সকালের নাস্তা ও প্রতিদিন বাহিরের হোটেলে সম্পন্ন করে।অফিসে লান্সের ব্যবস্থা রয়েছে।কেবল রাতের খাবারটাই প্রেয়সীর সাথে করে।
আবির লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পরে।এখন রাত প্রায় দু’টা বাজে।গত দু’ঘন্টা ধরে রুপা ঘুমানোর ভান করে শুয়ে ছিলো।আবির কি করেছে না করেছে সব অনুভব করেছে হৃদয় ভরে।ও আগে থেকেই জানে আবির ওকে কত্তো বেশি ভালোবাসে।তবুও মাঝে মাঝে কেনো যে এমন করে!আর থাপ্পড় টা যে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো সেটাও ও বুঝতে পারে।তার পরো মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।খুব বেশি পোড়াচ্ছে ওই অনুভুতিটা ওকে।
রুপা উঠে বসে পরে,
রুপা:-এই শুনছো!আরে শুনছোনা ক্যান!
আবির:-তোমার রাগ কমেছে কি?
রুপা:-জিনা।আমার ভয় করছে!লাইট টা জালিয়ে দাও না!
আবির:-আশ্চর্য তো!কিসের ভয় শুনি?
রুপা:-ডানদিকের জানালা টা বাতাসে খুলে গেছে।ওদিকের গাছগাছালি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমার সত্যি অনেক ভয় করছে।
আবির:-আচ্ছা,আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।তুমি ঘুমিয়ে পরো রুপা।শরীরে এখনো অনেক জ্বর তোমার।একটা ফ্রেস ঘুম দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রুপা:-আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা।আমার দুষ্ট বরটা আমাকে থাপ্পড় দিতে পারে।কি করে পাড়লে তোমার জান পাখিকে এত্তো জোরে থাপ্পড় দিতে।আমি তো মাথা ঘুরে পরেই গিয়েছিলাম প্রায়।জানালার গ্রিলে হাত দিয়ে সেভ করেছিলাম মাথাটা।না হলে তো মাথাই ফেটে যেতো।তুমি টেবিলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বসে পরো।আমি তোমার প্রিয় ডিম আবারো ভাজি করে দিচ্ছি।কিচ্ছু খায়নাই আমার সোনা বরটা বাসায় ফিরে।
আবির:-আমার কেমন জানি লাগছে রুপা।কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি আমি প্রতিনিয়ত।কাল রাতে কয়েকজন কলিগের সাথে বাক বিতন্ডা হয়েছিলো।আর কি করে পাড়লাম আমি তোমার গায়ে হাত তুলতে!তুমি কি সত্যিই চলে যাবে রুপা?
রুপা:-তা তো অবশ্যই।কয়েক মাস মুখ দেখা দেখি বন্ধ।এটার দরকার আছে বুঝলে!নাহলে আমার গুরুত্ব বুঝবে না।
আবির:-তাহলে একটা কবিতা বলি শোনো?
এর পর যা ভালো মনে হয় করো।
”তুমি চলে গেলে দিন কে বলবো রাত,
দেখবোনা আর দুচোখ মেলে,
মায়াবী স্নিগ্ধ প্রভাত,
তুমি থেকে গেলে গভীর রাত্রি জেগে,
নৈ’শব্দের সাগর পাড়ায়
নৌকো ভাসাতাম ভেবে,
অনুভবে,অনুভবে,আর অনুভবে,
কেবল তুমিকে অনুভবে,
তোমায় স্বপ্ন দিতেম কিনে,
তোমার বাহানা নিতাম মেনে,
এবার টাল বাহানা রাখো,
আমার চোখে চোখটি রেখে
একটু খানি ভাবো,
আমায় কত্তো ভালোবাসো!
তাই যদি হয়, না হয় মান টা ভাঙো,
মিষ্টি করে লক্ষী সোনা
খিলখিলিয়ে হাসো”
রুপা:-আমি অভিমান করিনি বুঝলে,হৃদয়টা বেদনাদগ্ধ হয়েছে মাত্র।আমার যেতেই হবে।যেদিন ক্ষতটা শুকিয়ে যাবে,সেদিন আমি নিজেই ফিরে আসবো।
আবির:-তাহলে কাঁদছো যে?
রুপা:-কাঁদবো না তো কি!তোমার চেয়ে আরো কয়েকগুণ বেশি কষ্ট হবে আমার।আমি যে মেয়ে।তুমি তো বন্ধুদের দুর্বার আড্ডায়,কলিগদের সাথে কাটানো সময়ে অনেক কিছু ভুলে স্বাভাবিক থাকতে পাড়বে।আমি কি করে তা পারবো!সব সময় মন মরা হয়ে কেবল তোমার কথাই ভাববো।যেদিন অভিমান ভাঙবে সেদিন নিজেই চলে আসবো।বেশি দুরের পথ তো নয় মিরপুর টু গাজীপুর।
সকাল সকাল ব্যাগ লগেজ গুছিয়ে রেডি হয়ে গেছে রুপা।আবির অফিসে চলে গেছে।রুপা ফুঁপিয়ে কাঁদছে গেট অতিক্রম করে বের হওয়ার সময়।
রুপা:-হায়রে পুরুষ মানুষ!আজ অফিসে না গেলে কি হতোনা।যাওয়ার বেলা একবার বলেও তো যেতে পারতে!এতো কষ্ট আমি কোন নীরবতায় গোপন রাখি!গেট থেকে বেড়িয়েই চমকে ওঠে রুপা?আবির গেটের পাশের সিড়িতে বসে আছে।
আবির:-সি এন জি চলে এসেছে।হাত ধরো আমার।রাস্তায় এখন জ্যাম কম।আরাম আয়েশে পৌঁছে যাবো।
রুপার চোখ ছল ছল অশ্রুতে আরো বেশি জব জব হয়ে যায়।
রুপা:-পাগল নাকি!অফিস কি হবে তোমার!
আবির:-এক সপ্তাহের ছুটির দরখাস্ত ইমেইল করে দিয়েছি।কাজ হয়ে গেছে।এতোদিন একা থাকা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।ভাবতেই কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।ওখান থেকেই প্রয়োজনে অফিস করবো আমি।না হয় মাস খানেক ঘর জামাই হয়ে রইলাম।
রুপা:-সি এন জি কে বিদায় করে দিয়ো আসো।আমি এমন একটা মানুষ কেই জীবনে চেয়েছিলাম।যে কেবল আমাতেই নিমগ্ন,আমার জন্য ই পাগল।আমি কোত্থায় যাচ্ছিনা তোমাকে ছেড়ে।আমার সব অভিমান ব্যাথা নীলাকাশে মিশে।ওই যে দেখো?আরে দেখোনা!ওই দূর নীলত্বে।