“আচ্ছা তুমি এমন কেন বলো তো।
আবির একদম সহজ সরল একটা ছেলে। চোখে চশমা পড়ে। কথা কম বলে। কেউ যদি দশটা কথা বলে ও একটা বা দুইটা বলে চুপ করে থাকে। চুপ করে থাকা মানে এই না যে, আবির কিছু বলতে পারে না, কথা বলার চেয়ে কথা শোনার মাঝে ও একটা আলাদা অনুভূতি আছে। আবিরের সাথে সাদিয়ার সম্পর্ক এক বছর দু মাস। এই এক বছর দু মাসের মধ্যে আবির এবং সাদিয়ার মাঝে কোন ঝামেলা নেই। কোন ঝগড়া নেই। এ যেন একটা শান্ত নদীর মত বয়ে চলা প্রেম। যদিও নদী কখনো শান্ত হয় না। কখনো কখনো ভয়ংকর রুপ নিয়ে সবার সম্মুখে এসে সব কিছু তলিয়ে দেয়। আবির কি বলবে বুঝতে পারে না। চোখের চশমাটা একটু ঠিক করে সাদিয়াকে বলে…
-“কেমন আমি? কেন আমি কি বদলে গেছি?
-“না বদলাও নি। আগের মতই আছো। একটু নিজেকে বদলালে কি হয়?
আবির একটু অবাক হলো সাদিয়ার কথা শোনে। কিছু বললো না, চুপ করে রইলো। আবিরের চুপ থাকা দেখে সাদিয়া বললো…
-“তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কত মাস হলো?
আবির সাদিয়ার দিকে তাকালো। চুলটা একটু চুলকালো।সাদিয়া জানে আবির বেশি কথা বলে না। দশটা বলে দুইটা বা তিনটে বলে, তাই সাদিয়া আবিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো..
-“আমাদের সম্পর্ক চৌদ্দ মাস। মানে একবছর দু মাস। এই এক বছর দু মাসে আমাদের মাঝে কি কোন ঝগড়া হয়েছে?
আবির ইশারা দেয় “হয় নি।
সাদিয়া একটু আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে মনে মনে একটু হাসে। আর ভাবে ছেলেটা এমন কেন? সাদিয়া আর আবির ছোট একটা ব্রীজের উপর বসে আছে। যদিও এই ব্রীজের উপর গাড়ি চলাচল করে না। মানুষের চলাচলের জন্যই ব্রীজটা তৈরি করা। জায়গাটা অনেকটা নিরব।সাদিয়া আবার বলতে লাগলো….
আচ্ছা এই এক বছর দু মাসে তুমি আমার উপর কতবার রাগ করেছো?
“একবারো না?
“আমার উপর কি রাগ করতে ইচ্ছে করে না? আমার কোন কথায় কিংবা কোন আচরণে তোমার রাগ হয় না?
“তোমার উপর রাগ করা মানায় না। তোমার উপর রাগ করব কেন? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তাই না? ভালোবাসার মানুষটার সাথে কি রাগ করা মানায় বলো?
“মানাবে না কেন? আমি ভুল কিছু বললে তুমি রাগ দেখাবে।
“সেটা তো তোমায় সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেও দিতে পারি। রাগ করার কি আছে?
“না রাগ করবে। রাগ করাটাও ভালোবাসার মধ্যে পড়ে।
আবির আবার চুপ হয়ে যায়।সাদিয়া মাঝে মাঝে এমন কথা বলে আবির কি বলবে কিছু ভেবে পায় না। সাদিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে হাতের আঙ্গুল গুলা একটা একটা করে ফুটাতে ফুটাতে বললো…
“আমার বান্ধবীকে তো তুমি চিনই। ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ও রাগ করে , অভিমান করে।
“তুমিও আমার উপর রাগ করতে পারলে রাগ করতে পারো।
সাদিয়া এবার অন্যদিক থেকে মুখ সরিয়ে আবিরের দিকে তাকায়। তারপর চুল গুলা বাম হাত দিয়ে একটু ঠিক করে বলে..
“আসলে হয়েছে কি আমার বান্ধবী ওর বয় ফ্রেন্ডের সাথে রাগ করে, পরে ওর বয় ফ্রেন্ড ওর রাগ ভাঙ্গায়। এটাতে অনেক ভালোবাসা ফুটে উঠে। কত মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়া করে ওরা। রাগলে বা অভিমান করলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। ঐযে বলে না, যে সম্পর্কে রাগ বা অভিমান নেই সে সম্পর্কে ভালোবাসা নেই।
আবির চুপ করে থাকে। কিছুক্ষন পর জবাব দেয়,
“আজ থেকে তুমিও আমার রাগ করিও কেমন। আমি রাগ ভাঙ্গাব।
“আমি কতবার চেষ্টা করেছি তোমার উপর রাগ করতে কিন্তু পারি না তো।
তারপর দুজনে চুপ হয়ে যায়। সত্যিই সাদিয়া বহুবার চেষ্টা করেছে আবিরের উপর রাগার কিন্তু পারে না। অবশ্য রাগ বা অভিমান করার জন্য একটা কারন লাগে। অযথা রাগ করা যায় না। আর আবির কোন “কারন” তৈরি হতে দেয় না। যার ফলে সাদিয়াও রাগ করতে পারে না।
হঠাৎ আবির বলে,
” ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে অনেক কাপলদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়।
কিন্তু আমাদের দেখে হয়ত অনেকে বলবে.. ওদের ভালোবাসা কত মধুর কোন ঝামেলা নেই। ইশ আমাদের ভালোবাসাটা ওদের মত হতো।”
সাদিয়া আবিরের দিকে তাকায়। সাদিয়া বুঝতে পারে আসলে এই রকম করা ঠিক না। আবির তার চোখের চশমাটা খুলে শার্ট দিয়ে মুছতে যাবে সাদিয়া বলে..
“এই দিকে দাও আমি মুছে দিচ্ছি।
এইটা বলেই সাদিয়া নিজেই আবিরের হাত থেকে চশমাটা নিয়ে নিজের উড়না দিয়ে মুছতে লাগলো। আবির চুপ করে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে…
“এই যে আমার চশমাটা মুছে দিচ্ছো যদি অন্যান্য কাপল বা মানুষ দেখে তাহলে কি বলবে জানো? বলবে.. বলবে দেখো ওদের সম্পর্কটা কত গভীর…। রাগ অভিমানে ভালোবাসে যতটা বাড়ে তার চেয়ে ছোট ছোট মিষ্টি মিষ্টি আচরণে ভালোবাসা তারচেয়ে বেশি বাড়ে।
“হইছে আর ল্যাকচার দিতে হবে না পাগল।
এইটা বলেই আবিরের চোখে সাদিয়া চশমাটা পড়িয়ে দিয়ে বলে..
“এই তুমি মাথার চুল না চুলকিয়েই এত কথা বললা কিভাবে? তোমার না মাথা না চুলকালে কথা বের হয় না?
আবির একটু হাসে। সাদিয়া আলতো করে কানটা ধরে বলে.. ল্যাকচার দিতে শিখে গেছো তাই না?… শান্ত নদীর মত বয়ে চলা ভালোবাসা গুলা হয়ত এই রকমি। একটু পরেই সাদিয়া আবিরের কাধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কে যেন ঘুড়ি উড়াচ্ছে। ঘুড়িটার দিকে দুজনেই তাকিয়ে আছে….
সমাপ্ত……