আমার অনেক দিনের শখ। বাসে উঠলে পাশের সিটে কোনো সুন্দরী বসবে। তারপর আলাপ পরিচয় হবে। এর পরে প্রেম হবে অতঃপর বিয়ে। কিন্তু পোড়া কপাল। মাথার চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে তবু ও পাশের সিটে কোনো সুন্দরী বসলো না! কিন্তু আজকে কেনো যেনো মনে হচ্ছে পাশের সিটে কোনো সুন্দরী বালিকা বসবেই।
ঘুম থেকে উঠে যে কার মুখ দেখেছিলাম আল্লাহ জানে। আজকে কীভাবে যেনো পাশের সিটে সুন্দরী বসেই পরলো! মনে মনে ভাবছি, পাইছি বালিকা। তোমাকে বৌ বানাবোই।
ঠিক আমার মনের মতো। কালো কেশ, কালো আঁখি, কালো কাজল আর অপরূপ হাসি। হাসলে যেনো মনে হয় সারা পৃথিবীর উজ্জ্বলতা এই হাসির মাঝেই। লুকিয়ে আরেকবার ব্যাগ থেকে পারফিউমটটা বের করে গায়ে বেশ করে লাগিয়ে নিলাম। আহা কী সুগন্ধি। মন ছুঁয়ে যায়। এতো সময় নষ্ট করলে চলবে না।
আমাকে নাম পরিচয় জানতে হবে। কথা বলা শুরু করা যাক। কিন্তু কী বলে যে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। অবশেষে জড়তা কাটিয়ে বললামঃ-
– আপনার সাথে কী একটু কথা বলতে পারি?
বালিকা মৃদু হেসে বললোঃ-
– জ্বী।
আহা কী ব্যবহার। কলিজায় যেনো খটকা লাগলো। বললামঃ-
– আপনার কণ্ঠটা খুব মধুর। এটা মিথ্যা কথা।
বালিকা হেসে বললোঃ-
– বেশ মজার লোক তো আপনি।
– হুম। আচ্ছা আপনি যাবেন কোথায়?
– এইতো সামনেই। আপনি?
– আপনার সীমানা পর্যন্তই।
– তাই?
– হুম। আপনার চোখে কাজল দেয়া ঠিক না। এতো সুন্দর চোখে কাজল দিলে ছেলেরা সব পাগল হয়ে যাবে।
– এটা ও মিথ্যা কথা?
– না। আচ্ছা আমি আপনার এতো প্রশংসা করলাম আপনি আমাকে কিছু দিবেন না?
– ধন্যবাদ নিবেন না ধন্যযোগ নিবেন?
– ফেসবুক আইডি নিবো।
বালিকা আবারো হাসলো। মুখ চেপে হাসলো। তারপর বললোঃ-
– আচ্ছা আপনার আইডির নাম বলুন আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাচ্ছি।
– সিয়াম আহমেদ জয়।
– ফারজানা জান্নাত তাসনীম। গ্রহণ কইরেন পারলে।
– কী যে বলেন না। আমি এক্ষণি এক্সেপ্ট করছি।
– আচ্ছা।
– আপনার আবার বি এফ নাই তো? না মানে এতো সুন্দরীর বি এফ নাই এটা বিশ্বাসযোগ্য না।
বালিকা আবারো হেসে বললোঃ-
– না নাই। আপনার আবার জি এফ নাই তো? যে এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে তাঁর জি এফ নাই এটা ও বিশ্বাসযোগ্য না।
– আরেহ না। কেউ পটে না।
– আহারে দুঃখ।
বাস চলছে। আমাদের কথা ও চলছে। বাস যেনো আর গন্তব্যে না পৌঁছায় সেই দোয়া করছি। মনে হচ্ছে এভাবে সারা জীবন বালিকার সাথে বলে পার করে দিতে পারলে ভালো হতো। বালিকার কথাবার্তা বুঝে তো মনে হচ্ছে বালিকার ও বুঝি আমাকে ভালো লেগেছে। আহা আমার কতো দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ইতিমধ্যে ফোন নাম্বার দেয়া নেয়া হয়ে গিয়েছে। আমার আর তর সইছে না। আমি ফোনে মেসেজ দিয়ে আমার ভালো লাগার কথা বলে ও ফেলেছি।
বালিকা কিছু বলছে না। শুধু হাসছে। বুঝতে পারছি না কেনো এতো হাসছে। মাত্রাতিরিক্ত হাসছে। অবশ্য শব্দ করে হাসছে না। যাকে বলে সিঙ্গেল হাসি। অনেকক্ষণ পর বালিকা বললোঃ-
– সামনের স্টেশনে আমি নামবো। নেমেই আপনার প্রস্থাবের উত্তর দিবো।
আমার যে আর কিছু ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে বাস ড্রাইভার আমার সাথে অভিমান করে বাস ধীরেধীরে চালাচ্ছে। বহু কষ্টের পর বাস স্টেশনে দাঁড়ালো। বালিকা আর আমি নামলাম। আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। বুকটা ধড়ফড় ধড়ফড় করছে। এক মিনিট দাঁড়াতেই একজন ভদ্রলোক আসলো। বালিকা গিয়ে সেই ভদ্রলোকের হাত ধরে বললোঃ-
– আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এক মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। মুহূর্তেই শরীরটা নিঃশক্তি হয়ে গেলো। চোখে ঘোলান ঘোলান দেখছি সব!