– আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না?
– কিন্তু এখন তো আর উপায় নেই।
– উপায় না থাকলেও উপায় বের করুন
– আমার মাথা থেকে একটা উকুনও বের হয় না। আর বুদ্ধি বের হবে কি করে!
– দেখুন আপনি…- দেখলাম।
– ফাজলামি করা বন্ধ করুন। আপনি যদি আমাকে বিয়ে করেন তাহলে বিয়ের রাতেই আমি পালিয়ে যাব।
– তা বিয়ের রাতে কখন পালাবেন? বিয়ে হয়ে যাওয়ার আগে নাকি পরে? যদি বিয়ে হওয়ার পরে পালান তাহলে আমাকেও নিয়ে যাইয়েন। বিয়ের পর আমি বউ ছাড়া থাকতে পারব না।
– দেখুন আপনি কিন্তু ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না। বিয়ের রাতে যদি আমি পালাতে না পারি তাহলে আমি সুইসাইট করব।
– আহারে বিয়ের রাতেই আমারে পুরুষ বিধবা বানাবেন। তা কি দিয়ে সুইসাইট করবেন? যদি ব্লেড দিয়ে করেন তাহলে আমার কাছ থেকে হেল্প নিতে পারেন। আমি ভাল ব্রান্ডের ব্লেড চিনি।
– আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা।
নুহা রেগে চলে গেল। মেয়েটার সাথে আমার তেমন পরিচয় নেই। হঠাৎ করে আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলল। যেদিন আম্মু আমাকে বিয়ের কথা বলল সেদিন তো আমি আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেছিলাম। বলল-
– কিরে তুই বিয়ে করতে রাজি তো?
– রাজি মানে আম্মু আমি চারপায়ে খাড়া।
– চারপায়ে খাড়া মানে? মানুষের তো দুইটা পা থাকে।
– আমি হামাগুড়ি দিয়া খাড়া।
কিন্তু নুহা আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না। হয়তো ওর কারো সাথে রিলেশন আছে যার কারণে ও আমাকে বিয়ে করতে চায় না।
আমি ঘরে বসে টিভি দেখছি। দেখার মতো কিছুই নাই। তারপরও দেখছি। এমন সময় একটা শব্দ হল ম্যও ম্যও ম্যও ম্যও শব্দটা আমার চেনা। এটা আমার মোবাইলের রিংটোন। নুহা ফোন করেছে।
– হ্যালো
– আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?
– আছি
– তাহলে এখুনি আমার সাথে দেখা করুন।
– অকা। আপনি কোথায় আছেন বলুন। আমি উসাইন বোল্টের স্পিডে চলে আসছি।
– কালকে যেখানে দেখা করেছিলাম সেখানে চলে আসুন।
জায়গামত চলে এসেছি। নুহাও এসেছে। ওকে দেখতে দারুন লাগছে।
– আপনি কি কিছু উপায় বের করেছেন?
– না। ভাবতেছি বিয়ের পর একটা উপায় বের করব।
– আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন যে এই বিয়েটা হচ্ছে না।
– আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ড আমাদের বিয়ের বিষয়টা জানে?
– আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড পেলেন কোথায়?
– আপনার বয়ফ্রেন্ড নেই?
– না নেই|
– তাহলে আমাকে বিয়ে করতে আপনার অসুবিধা কোথায়?
– আছে। আপনাকে আমার একটুও পছন্দ হয় নি। তাই আপনাকে আমি বিয়ে করব না।
– ঠিক আছে আপনাকে বিয়ে করতে হবে না। আমিই আপনাকে বিয়ে করব আর আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করবেন।
– মানে?
– মানে বুঝতে হবে এই বিয়েটা হচ্ছে এটাই ফাইনাল।
– আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি আপনাকে আমি বিয়ে করব না। যদি এই বিয়ে হয় তাহলে আমি সুইসাইড করে মরব।
– ওকে সেটা আপনার ইচ্ছা।
বিয়ের দিন রাত ১২টা। নুহার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। নুহা একা ঘরে বসে আছে। হয়তো কাদছে। আমি ঘরে ঢুকলাম
– দেখুন এই বিয়েতে আমার কিন্তু একটুও মত ছিল না। আপনার সাথে আমি থাকতে পারব না।
– আমি আপনার সাথে থাকতে আসি নি। আমি ব্লেড নিয়ে এসেছি।
– ব্লেড আনছেন মানে?
– আপনি বলেছিলেন না আপনি সুইসাইড করবেন সেজন্য ব্লেড নিয়ে এসেছি। দুইটা ভাল ব্রান্ডের ব্লেড আনছি। আপনি একটা নিয়ে অন্যটা ফেরত দিন। দুইটা ব্লেড দিয়ে সুইসাইড করার নিয়ম নেই।
– আপনি প্লিজ বের হয়ে যান
– ব্লেড দুইটা রেখে যাব না নিয়ে যাব?
– নিয়ে যান (রেগে গিয়ে)
– তারমানে আপাতত সুইসাইড করার প্লান বাদ। নতুন কোন প্লান করছেন নাকি?
– প্লিজ আপনি চলে যান
আমি ব্লেড দুটো রেখে বাহিরে চলে এলাম। আমি জানি এই মেয়ে সুইসাইড করবে না। তবে আমার প্রেমে পরবে কিনা জানি না। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে আর আমি বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি। শুনেছিলাম বাসর রাতে বৃষ্টি হলে নাকি সংসারে শান্তি বিরাজ করে। আমার বাসর রাতেও বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আমার সংসার করা হবে কিনা জানি না। নুহা ঘরে কি করছে দেখতে ইচ্ছা করছে। ঘরে একবার উকি দিয়ে দেখলাম। নুহা এখনো আগের জায়গায় বসে আছে।
– এখানে আপনি কি চান?
ও আমাকে দেখে ফেলেছে।
– আসলে আপনাকে আমি দুইটা ব্লেড দিয়ে গিয়েছিলাম। একটা ফেরত নিতে এসেছি। আপনার তো দুইটা ব্লেডের প্রয়োজন নেই।
– আপনি আমার একটা কাজ করে দিতে পারবেন?
– বলুন আমাকে কি করতে হবে?
– আমাকে এক প্যাকেট চানাচুর এনে দিবেন। আমার খুব খিদে পেয়েছে।
– অকা। টাকা দেন
– চানাচুর কেনার টাকাও আপনার কাছে নাই? আর আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন?
– বিয়ে করতে তো টাকা লাগে না। শুধু তিনবার কবুল বললেই হল।
– আমার কাছে তো কোন টাকা নাই।
– ঠিক আছে আমি বাকি এনে দিচ্ছি। পরে টাকা দিয়েন। এতোরাতে দোকান খোলা থাকার কথা নয়। তারপরও একটা দোকান খোলা পেলাম। চানাচুর নিয়ে ফিরে এলাম।
– এখন টাকা দেন
– আপনাকে তো বললাম আমার কাছে টাকা নাই
– তাহলে পরেই দিয়েন। আমি কি এখানে দাড়িয়ে থাকব নাকি বাহিরে যাব?
– বাহিরে যান
– ঠিক আছে।
বাহিরে এসে আবার বৃষ্টি দেখা শুরু করলাম। আমাকে মনে হয় আজ বৃষ্টির সাথেই বাসর ঘর করতে হবে। তবে এটাকে বাসর রাত না বলে বাসর বারান্দা বললে ভাল হবে।
– এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করছেন?
কখন নুহা আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে খেয়ালই করি নি।
– বৃষ্টির সাথে বাসর করার চেষ্টা করছি।
– মানে?
– আজ তো আমার বাসর রাত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা তো হল না। তাই বাসর বারান্দা করার চেষ্টা করছি আরকি।
– বাসর বারান্দা মানে কি?
– বৃষ্টির সাথে তো আর ঘরে বাসর করা যায় না তাই বারান্দায় থেকে বাসর করছি। নুহা আমার কথা শুনে হাসতে শুরু করল। ওর হাসিটা খুব সুন্দর যা দেখে যেকেউ ওর প্রেমে পড়ে যাবে।
– আচ্ছা আপনি কি পাগল?
– জানি না। হতেও পারি।
– আমার মনে হয় আপনি পাগলই। কথাবার্তা কিরকম পাগল টাইপের।
– আমি এভাবেই কথা বলি। এটা আমার অভ্যাস।
– আচ্ছা অনেক হয়েছে আপনাকে আর বৃষ্টি দেখতে হবে
না। আসুন ভেতরে আসুন।
– ভিতরে গিয়ে কি করব?
– আমাকে দেখবেন।
এতোক্ষনে নুহা একটু একটু আমাকে পছন্দ করা শুরু করেছে। আমি ঘরে ঢুকলাম। নুহা বলল
– বাসর রাতে বৃষ্টি হলে কি হয় জানেন?
– হুম
– বলেন তো কি হয়?
– কনে বরকে বাসর ঘর থেকে বের করে দেয় আবার বাসর ঘরে ঢুকতে বলে।
– বৃষ্টি কিন্তু এখন থেমে গেছে.
– বৃষ্টি থেমে গেলে কি হয় জানেন?
– না জানি না। কি হয়?
– বর কনেকে নিয়ে ছাদে চলে যায়। আপনি আমার সাথে ছাদে যাবেন?
– কেন?
– আসলে আকাশে যে চাঁদটা আছে না সে খুব নিজের রুপ নিয়ে খুব গর্ব করে আমি তাকে দেখাতে চাই যে তার চেয়েও সুন্দরী পৃথিবীতে আছে।
– আপনি কিন্তু ভাল মেয়ে পটাতে পারেন। জিবনে কতজনকে পটাইছেন?
– একজনকে পটানোর চেষ্টা করছি। দেখা যাক কি হয়।
– আপনি কি জানেন আমি আপনার প্রেমে পরে গেছি?
– এখন জানলাম
– আপনি ছাদে যাবেন না?
– চলুন
ছাদে গেলাম কিন্তু আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। চাঁদের দেখা নেই।
– কই আকাশে তো চাঁদ নেই।
– তোমাকে দেখে লজ্জা পাইছে তাই লুকিয়ে পড়েছে।
নুহা লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিল। এই একটা হাসিই আমাকে পাগল করে দিতে যথেষ্ট ভাবতে খুব ভাল লাগছে যে এই মেয়ে আমার বউ।