“ময়নার মা, আজ কী তরকারী রান্না করছ?”
“আলু ভর্তা আর ডাল। আপনি খাবার সময় চাইলে একটা ডিম ভেজে দিব। অবশ্য ঘরে ডিম আছে কিনা, জানি না।”
“আজ শুক্রবার। ভালএকটা দিন। শুক্রবারে অনেকের বাসায় পোলাও কোর্মা রান্না হয়। যাদের হয় না, তারাও বাসায় নিদেনপক্ষে ইলিশ মাছ অথবা গরুর মাংস ভুনা দিয়ে ভাত খায়।”
“দোষ তো আমার না। আপনি বাজার করেন নাই। বাজার করে আনলে আমিও আপনাকে এসব রেঁধে খাওয়াতাম।”
সাবের জানে তার মানিব্যাগে মাত্র বাইশ টাকা আছে। একটা বিশ টাকা আর একটা দুই টাকার ন্যাতন্যাতে ছেঁড়া নোট। এই টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে আধাকেজি বেগুনও কিনতে পাওয়া যাবে না।
সাবের এবার এমএসসি ফাইনাল দিয়েছে। তার ডিপার্টমেন্ট মাইক্রোবায়োলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সে সচ্ছ্বল পরিবারের ছেলে। এখনকার সচ্ছ্বল পরিবারের সন্তানদের পকেটে এত কম টাকা থাকে না। সিঙ্গেল প্যাটির একটা বার্গারের দাম দেড়শ টাকা। ডাবল প্যাটি উইথ চিজ আড়াইশ টাকার মতন। সাধারণ পিৎজা পাঁচশ থেকে হাজার টাকায়বিকোয়। সাবেরের পকেটেও আগে অনেক টাকা থাকত। দুটো টিউশনি করত সে। বেতন ভালছিল। সাবেরের বাবা তাকে হাত খরচের জন্য টাকা দিতেন। এখন সেসব বন্ধ। তার বাবার ধারণা, ছেলে ড্রাগস ধরেছে। তাই হাতখরচা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সাবেরের কিছু প্রয়োজন হলে তাকে জানাতে বলেছেন। তিনি নিজে কিনে এনে দিবেন।
টিউশনি দুটো চালিয়ে যেতে পারলে অবশ্য টাকার সমস্যায় পড়তে হত না। সাবের ইচ্ছে করেই টিউশনি দুটো ছেড়ে দিয়েছে। টিউশনি করলে ময়নার মা’কে ঠিকমত সময় দেয়া যায় না। সাবের যতক্ষণ বাসায় থাকে না, ময়নার মা মুখ বেজার করে বসে থাকে। মুখে অবশ্য কিছু বলে না। সাবের তার মুখ দেখে যা বোঝার বুঝে নেয়।
“আচ্ছা, ডিম ভাজতে হবে না। আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে খেতে দাও। তোমার হাতের মাখানো আলুর ভর্তা একশটা ডিম ভাজার চাইতেও সুমিষ্ট।”
“আপনি যে কী সব বলেন! আলু ভর্তা কখনও মিষ্টি হয় নাকি? আলু ভর্তা হয় ঝাল। তবে আজকের ভর্তায় ঝাল কম হয়েছে। ঘরে মরিচও ছিল না। একটা মাত্র মরিচ দিয়েছি।”
সাবের তৃপ্তি সহকারে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত মাখিয়ে খেল। ময়নার মা পাশে বসে সাবেরের খাওয়া দেখছে। সে কখনও সাবেরের সঙ্গে খেতে বসে না। সাবেরের খাওয়া শেষ হলে পরে খায়। সাবের অবশ্য নিজ চোখে কখনও তাকে কিছু খেতে দেখেনি। অবশ্য খেতে তাকে হয়ই। না খেলে বাঁচে কী করে?
দরজায় ধপ ধপ শব্দে বাড়ি পড়ছে। সাবেরের মা তাকে খেতে ডাকছেন।
“সাবের, বাবা খেতে আয়।”
“আম্মা, তোমরা খেয়ে নাও। আমি খাইছি।”
“খাইছিস মানে? কখন খাইলি? তুই তো সকাল থেকে একবারের জন্যেও রুম থেকে বের হোসনি!”
“ভুল বলছি। খাই নাই। শরীরটা খারাপ লাগতেছে, তাই রাতে কিছু খাব না। তোমরা খেয়ে নাও।”
“কী হইছে তোর? জ্বর আসছে? দেখি, দরজা খোল।”
সাবের দরজা না খুলে একহাত ভাঁজ করে কপালের ওপর রেখে চিৎ হয়ে শুলো। ময়নার মা মিথ্যা কথা বলেছে। আলু ভর্তায় নাকি ঝাল হয়নি। ঝালে সাবেরের মুখ জ্বলে যাচ্ছে। মা তাকে ডাকতে আসার পর থেকে ময়নার মাকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। দেখলে আরেক গ্লাস পানি দিতে বলত।
ছোটবেলা থেকেই সাবের বেশ ভাল ছাত্র। ভাল ছাত্র না হয়ে তার আর কোন উপায় ছিল না। সাবেরের সমবয়সী ছেলেরা তাকে খেলায় নিতে চাইত না। বাধ্য হয়ে সারাদিন সে বাসায় বসে পড়ত। সাবেরের গায়ের রঙ মিশমিশে কাল। থ্যাবড়া নাক। যেন মাইক টাইসন ঘুষি মেরে তার নাক থ্যাবড়াবানিয়ে দিয়েছে। মাথার চুল নিগ্রোদের মত কোঁকড়ানো। সিগারেট না খেয়েও তার ঠোঁটের রঙ কালো। সাধারণত কালো মানুষদের দাঁতের সারি ঝকঝকে সাদা হয়। সাবেরের দাঁত সাদা নয়। হলদেটে।
মেয়েরা সাবেরকে এড়িয়ে চলে। যেন সে একজন খারাপ প্রকৃতির মানুষ। সুযোগ পেলেই তাদের ওপর হামলে পড়বে। সাবেরের দীপাকে খুব ভাললাগত। দীপা তাদের ইউনিভার্সিটির সুন্দরী মেয়েদের একজন। সাবেরকে দূর থেকে আসতে দেখলে দীপা একাকিদাঁড়িয়ে থাকলে দৌড়ে পালাত। আর সাথে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী থাকলে সাবেরকে নিয়ে হাসাহাসি করত। দীপার হাসি দেখতে সাবেরের ভাল লাগে। কিন্তু দীপা যখন ওকে নিয়ে টিটকারিসূচক হাসি হাসত,কষ্ট পেয়ে সাবেরের চোখে পানি চলে আসত।
বাসার সবাই জানে, সাবের এমএসসি ফাইনাল দিয়েছে। আসলে সে একটা পরীক্ষাতেও এ্যাটেন্ড করেনি। সাবের দীপাকে বিয়ে করেছে। বিয়ে করে নিজের ঘরে লুকিয়ে রেখেছে। বিয়ের পর দীপার নাম দিয়েছে সে ময়নার মা। এ যুগের দম্পতিদের মত তারা সন্তান নিতে দেরী করবে না। যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে নিবে। সাবের তার অনাগত সন্তানের নাম রেখেছে, ‘ময়না।’এ কারণেই দীপাকে সে ময়নার মা বলে ডাকে। সাবেরের ইচ্ছা, তাদের প্রথম সন্তান মেয়ে হোক। সেই মেয়ে দেখতে হবে দীপার মত সুন্দর। বুদ্ধি সাবেরের মত হলে তাতে তার কোন আপত্তি নেই।
সাবেরের ঘরের দরজায় দুম দুম শব্দে বাড়ি পড়ছে। সাবের দরজা না খুললে সাবেরের বাবা ইফতেখারুল ইসলাম দরজা পিটিয়ে ভেঙে ফেলবেন। সাবের উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
“সারাদিন ঘরের ভেতর দরজা বন্ধ করে তুই কী করিস?”
“কিছু করি না, বাবা।”
ইফতেখারুল সাহেবকে দীপার ব্যাপারটা জানানো যাবে না। দীপাকে তিনি কোনভাবেই মেনে নিবেন না। ইফতেখারুল সাহেব এ্যাডিশনাল সেক্রেটারি। সাবের দীপার পরিবারের খোঁজ নিয়ে জেনেছে, দীপার বাবা তৃতীয় শ্রেণীর একজন সরকারী কর্মচারী। ইফতেখারুল সাহেব কোনভাবেই এ বিয়ে মেনে নিবেন না। তিনি জানতে পারলে দীপাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। দীপাকে বের করে দিলে সাবেরকেও তার সাথে বেরিয়ে যেতে হবে। দীপাকে নিয়ে ওঠার মত সাবেরের কোন জায়গা নেই। সে এখনও বেকার। এমএসসি ফাইনাল না দেয়াটা মস্তবড় ভুল হয়ে গেছে।
“তুই একটু ড্রয়িংরুমে আয়। তোর সাথে আমার কথা আছে।”
সাবের পরনের লুঙি পাল্টে প্যান্ট পরে ড্রয়িংরুমে গেল।
“কী হয়েছে তোর?”
“কই, কিছু হয়নি তো বাবা।”
“তোর এক বন্ধু বলল, তুই নাকি এমএসসি ফাইনাল দিসনি?”
“আমার কোন বন্ধু নেই, বাবা।”
“ওই হল, ক্লাসমেট। কথাটা কি সত্যি?”
সাবের মাথা নিচু করে বসে রইল। বাবা পরীক্ষা না দেয়ার ব্যাপারটা জেনে গেছেন। তিনি কি দীপার ব্যাপারটাও জানেন?
“তোর মধ্যে বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করছি। তোর বন্ধুরা.. মানে ক্লাসমেটরাও তাই বলল। তুই নাকি একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করতি?”
সাবের লজ্জায় মাথা তুলেতাকাতে পারে না। বাবা শেষমেশ দীপার ব্যাপারটা জেনেই ফেললেন।
“মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবার পরই নাকি তুই কেমন হয়ে গেছিস? এমএসসি ফাইনালটাও কি এই কারণেই দিসনি?”
যাক! দীপার বিয়েটা যে সাবেরের সঙ্গেই হয়েছে, এ খবরটা তাহলে বাবা এখনও পাননি।
সাবের সুবোধ বালকের মত মাথা নেড়ে সোফা ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে এল। বাবা সাবেরকে ডাকায় ময়নার মা ভয় পেয়ে লুকিয়েছে। ভয় পাবার কিছু নেই। বাবা তাদের বিয়ের বিষয়টা এখনও জানেন না। খবরটা ময়নার মা’কে দিয়েতার ভয়টা ভাঙানো দরকার।
“চিন্তার কোন কারণ নেই, ইফতেখারুল সাহেব। আমি সাবেরের সাথে কথা বলেছি। যুবক বয়সে এমন একটু আধটু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা কেইবা প্রেমে পড়িনি, বলুন? আমাদের মধ্যে ক’জনের তার প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে?”
“হুম। কিন্তু ছেলেটা সারাদিন ঘরের ভেতর দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। ড্রাগস ট্রাগস নিচ্ছে না তো?”
“আরে না, না। আপনার ছেলে দেখলাম বেশ বুদ্ধিমান। ড্রাগস নেয়ার মত নির্বুদ্ধিতার কাজ সে করবে বলে মনে হয় না। কয়েকটা ওষুধ লিখে দিলাম। দেখবেন, ওষুধগুলো যেন সময়মত খায়।”
“থ্যাংক ইউ, ডাক্তার সাহেব।”
“দু’সপ্তাহ পরে ওকে আরেকবার আমার চেম্বারে নিয়ে আসবেন।”
“আচ্ছা।”
সাবের নিয়ম করে ডাক্তারের দেয়া ওষুধগুলো খাচ্ছে। ওষুধগুলো খাবার পর মাথা ঝিমঝিম করে। খুব ঘুম পায়। সাবের ঘুমিয়ে পড়ে। দরজা লাগিয়ে দেবার কথা মনে থাকে না। সাবেরের মা দিলরুবা ইসলাম দরজায় দাঁড়িয়ে ছেলের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বাইরের মানুষের দৃষ্টিতে সাবের দেখতে সুন্দর না হলেও তার মায়ের দৃষ্টিতে সুন্দর। মায়ের চোখে তার সন্তান কখনই অসুন্দর হয় না।
দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ডাক্তারের দেয়া ওষুধের কোর্স সমাপ্ত হয়েছে। সাবেরকে নিয়ে আজ আবারও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিনহাজুল আবেদীনের চেম্বারে যাবার কথা।
“হ্যালো, ইয়াং ম্যান। এখন কেমন আছ?”
“জ্বি, ভাল।”
“ভাল তো থাকতেই হবে। ভাল না থেকে উপায় আছে, বল? তোমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখ, সে-ও ভালই আছে। এই বয়সে এসব প্রেম ফ্রেম জীবনে অন্তত একবার হলেও আসে। না আসলে জীবনটা হোস্টেলের ডালের মত পানসে হয়ে যায়।”
“স্যার, আপনার জীবনেওএসেছিল?”
“কে?”
“প্রেম!”
“ও হ্যাঁ, আসবে না কেন? অবশ্যই এসেছিল।”
“বিয়ে করেছেন?”
“বিয়ে করেছি মানে? আমার বড় মেয়ে বয়সে তোমার চাইতেও বড় হবে। ছোট ছেলে প্রায় তোমার সমবয়সী। দুই এক বছরের ছোট হতে পারে।”
“আপনার সেই প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন?”
প্রশ্নটা শুনে ডাক্তার মিনহাজ থতমত খেয়ে গেলেন। অবশ্য সেকেন্ডের মাঝেই তিনি তার থতমত ভাব কাটিয়ে উঠলেন।
“এখন তো আর দীপা মেয়েটাকে নিয়ে হ্যালুসিনেশন হয় না, তাই না?”
“না। স্যার, আপনি আপনার প্রেমিকাকে কেন বিয়ে করেননি?”
“ওষুধের কোর্সটা ঠিকভাবে শেষ করেছিলে তো? আজ আর নতুন করে কোন ওষুধ দিচ্ছি না। আশা করি, তুমি এমনিতেই সেরে উঠবে।”
“স্যার, আমি জানি আপনি কেন তাকে বিয়ে করেননি।”
“কী জান?”
“সে সময় মেয়েটির বাসায় তার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। মেয়েটি আপনাকে বার বার তাকে বিয়ে করতে বলে। আপনি নিজের বিদেশে পড়তে যাবার ব্যাপারটা নিয়ে অধিক মনযোগী ছিলেন। ওই সময় মেয়েটিকে বিয়ে করলে আপনার বিদেশে যাওয়া আটকে যেত। বড় ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরতে পারতেন না। তাই ক্যারিয়ার বাঁচাতে মেয়েটির সাথে সকল প্রকারের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।”
“মিথ্যে কথা! এসব তোমাকে কে বলেছে?”
“দীপা। মেয়েটির নামও আমাকে বলেছে। তার নাম ছিল আসমা।”
ডাক্তার মিনহাজের হাত কাঁপছে। তিনি ঘামছেন। সাবের তাকে রীতিমত ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। তিনি যে মেয়েটিকে ভালবাসতেন, তার নাম ছিল প্রজ্ঞা। সে এখন আর বেঁচে নেই। এ্যাবরশন করতে গিয়ে মারা গেছে। প্রজ্ঞার মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেও কম দায়ী নন। তিনি ভেবেছিলেন, সাবের কোনভাবে সেসব কথা জেনে ফেলেছে।
“সাবের, তোমার বাবাকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও।”
“জ্বি আচ্ছা, স্যার।”
সাবের বেরিয়ে যাবার কয়েক মুহূর্ত পর তার বাবা ইফতেখারুল ইসলাম চেম্বারে ঢুকলেন।
“কী দেখলেন, ডাক্তার সাহেব? ও এখন পুরোপুরি সুস্থ তো?”
ডাক্তার মিনহাজ খসখস শব্দে প্রেসক্রিপশন লিখছেন। আগের ওষুধগুলোর চাইতে আরও বেশী পাওয়ারফুল ওষুধের নাম তিনি প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়েছেন।
“এই ওষুধগুলো আজ থেকেই শুরু করুন। ওষুধ খাওয়ায়যেন কোন প্রকারেরঅনিয়ম না হয়। আমার ধারণা, আগের ওষুধগুলো আপনার ছেলে ঠিকমত খায়নি।”
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না, ডাক্তার সাহেব। সময়মত ওষুধ খাবার ব্যাপারটা এবার আমি নিজে দেখাশোনা করব।”
“আরেকটা কথা। ওর আচরণে একটু এদিক সেদিক দেখলেই দেরী না করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। আমি কী বলেছি, বুঝতে পেরেছেন?”
“জ্বি, পেরেছি।” ইফতেখারুল ইসলাম থেমে থেমে বললেন। তার ছেলে কি আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছে?
সাবের দরজা খুলে তার ঘরে প্রবেশ করল। বিছানার এক কোণে ময়নার মা বুকের কাছে পা ভাঁজ করে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে।
“আপনার আসতে এত দেরী হল কেন?”
“ডাক্তারের ধারণা, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। তুমি কি একা একা ভয় পেয়েছ?”
“না। তবে আপনাকে ছাড়া থাকতে আমার ভাললাগছিল না। আপনার জন্য সেদিনের আলু খোসা দিয়ে বড়া বানিয়ে রেখেছি। আপনি বসেন, আমি ভেজে নিয়ে আসি।”
“আলুর খোসা দিয়ে বানানো বড়ার নামই তো জীবনে শুনি নাই।”
“আপনি তো বাজারই করেন না। ঘরে নুডুলস থাকলেওহত। দশ টাকা দিয়ে এক প্যাকেট ইন্সট্যান্ট নুডুলস কিনে আনলে রান্না করে দিতে পারতাম।”
“এইটা ঠিক বলেছ। আসলে মনে ছিল না।”
“আচ্ছা থাক। কাল নিয়ে আসলেও চলবে। এখন বড়া খান।”
“উম.. দারুন মজা তো! এই বড়া বাবাকে একবার খাওয়াতে পারলে তিনি তোমাকে পুত্রবধূ হিসেবে চোখ বন্ধ করে মেনে নিতেন।”
“থাক, আরওকয়েকটা দিন অপেক্ষা করেন।”
“দেখি, কাছে আস। তোমাকে একটা বড়া খাওয়ায় দেই।”
দীপা সাবেরের কাছে আসে না। দূরে দাঁড়িয়ে ফিকফিক করে হাসে।
সাবেরের বাবা ওর ঘরের দরজায় নক করে রাতে খাবার ওষুধটা দিয়ে যান। সাবের ওষুধ খাবার ভান করে গালের একপাশে লুকিয়ে রাখে। পরে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। এই ওষুধগুলো খেলে তার খুব ঘুম পায়। সে ঘুমিয়ে পড়ে। ময়নার মা সারারাতএকা একা জেগে ভয় পায়। সাবের ময়নার মা’কে ভয় পেতে দিবে না। সে তাকে নিয়ে সুখের একটা সংসার সাজিয়েছে। এসব হাবিজাবি ওষুধ খেয়ে সেই সংসারের বারটা বাজানোর কোন ইচ্ছা তার নেই।
সাবের আবারও ফিসফিসিয়ে দীপাকে তার কাছে ডাকে, “ময়নার মা, কাছে আস। তোমাকে একটু আদর করি।”
তবুও দীপা তার কাছে আসে না। আগেরমতই দূরে দাঁড়িয়ে হাসে। সাবের মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দীপার সেই হাসি দেখে। দূর থেকে দীপার সেই হাসি দেখাতেও তার সুখ।
সমাপ্ত