ঘুমের ঘোরে বিছানা হাতরাচ্ছে ইলা..
সে জানে পাশে কেউ নেই তবুও মনের সন্দেহটা দূর করতেই হাত চালান…
চোখ বন্ধ করে হাতরানোর পর হাতের আঙুলে মোবাইল ঠেকল!
বিড়বিড় চোখে মোবাইলে স্কীনে ঘড়িটা দেখার চেষ্টা করলো।
মাত্র ভোর ছয়টা বাজে ,অবশ্য তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।জরুরী কাজ না থাকায় আলসেমির মাত্রাটা আরেকটু চেপে বসলো ঘাড়ে…
ইলা বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান।ছোটবেলা থেকেই ইলা’র ইচ্ছা সরকারী ভাল জব করবে।কিন্ত বাবা তা কখনো হতে দেন নি।
দেন নি বললে ভুল হবে, আসলে সে’যে টাইপের জব করতে চায় এমন জব বাবা’র অপছন্দ..
বাবা মাঝপথে থামিয়ে দিল, একমাত্র সন্তানকে ভাল রাখার জন্য, সুখি দেখার জন্য বিয়ের পিরিতে বসালেন…
ছেলে পছন্দ নয় তেমন না কিন্ত সংসার করার মতো মেন্টালিটির প্রস্তুতি দরকার, ম্যাচুরিটি দরকার তা ইলা’র এখনো হয়নি, হয়ে উঠেনি বলা যায়।
কিন্ত এখানেই কি এর সমাপ্তি…
নাহ! মোটেও না।মনের দিক থেকে হাল ছাড়েনি ইলা।
এখনো শক্ত করে চেপে ধরে আছে মনের লাগাম’টা যেন’ ছুটে না যায়..
এই বয়সে একটুআধটু এমন হয়, এটা সব মেয়েদের বেলায়, বিশেষ করে যারা বিশ, বাইশ বছরের মেয়ে।
এরা সবসময় নিজের ইচ্ছাটাকে প্রাধান্য দিতে চায়..নিজের মত করে গড়ে তুলতে চায় সুন্দর একটা ক্যারিয়ার।
ইলা’র বর আরিফ সাহেব, সুদর্শন! পেশায় একজন সফল ভাল ব্যাবসায়ী।
ছয় মাস হয় দুজনের বিয়ে হয়েছে।
সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া দরকার হলাম। বাশর ঘরে তার প্রাপ্য টুকু অধিকার খাটিয়ে বুঝে নিলো, অনিচ্ছা শর্তেও বাদা দিলাম না।
বিয়ের পর এক ছাদের নিচে থাকা দরকার থাকলাম।
আসলে মনের ইচ্ছেটা এরকম যে কোন রকম বেচে থাকার জন্য খাবার যতটুকু দরকার ততটুকুই খেলাম।না বেশি না কম।
আরিফ সাহেব মাঝেমাঝে ভাবেন যে উনি কাকে বিয়ে করেছেন!
এমন একটা রোবট’কে জীবন সঙ্গী বানানোর আগে একবারো ভেবে দেখা উচিৎ ছিল না?
তবে একটা ব্যাপার মনের সাথে মিলে গেছে খুব তা’হলো ইলা’র সৌন্দর্য…
কথাবার্তা, চাল চলনে কোন সমস্যা নেই..
মেয়েটা একটু উড়নচণ্ডী টাইপের, এই টাইপের মেয়েদের বসে আনতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয় তা আরিফ সাহেব খুব ভাল করেই জানেন!
আজ পহেলা বৈশাখ, আরিফ সাহেব ঘুম থেকে উঠে করিডোরে পায়চারী করছেন।
খুব চিন্তিত মনে হয়।কপালে ভাজে বিরক্তির রেখা, তবে সেটা বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না।আড় চোখে দেখছে ইলা’কে! ঘুম থেকে উঠেছে মনে হয়…..
আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসেছে বিছানায়।
আমাকে দেখেই বুকের আচলটা ঠিক করার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো। মনে হয় কোন পরপুরুষের সামনে আচল পড়ে গেছে।
কথাটা এখনো বলা হয়নি ইলা’কে বুঝতে পারছেনা কিভাবে বলবে..
সে’কি স্বাভাবিক ভাবে নিবে নাকি ভ্রু কুচকে বলবে আমি আজ বাইরে কোথাও যাবোনা…
এর আগে যতবার সে বাইরে নিয়ে যেতে চেয়েছে সে প্রতিবারি এমন করেছে, আগের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই মনে করা…
ইলা’কে উঠতে দেখে তার দিকে আগাল একটু, কাছে বসে ফিসফিস করে বলল..
আজকের এই দিনে আমি ভেবেছি কাজে যাবোনা।
তোমাকে নিয়ে একটু বেরোবো, তোমার কি সময় হবে? হাই তুলতে তুলতে ইলা’ জবাব দিলো নাহ!
আজ সারাদিন বাসায় থাকবো।
বছরের প্রথম দিনটা চাচ্ছি আমরা দুজনে মিলে খুব এনজয় করে কাটাবো, অবশ্য যদি তোমার আপত্তি না থাকে।
সবিনয়ে ইলা’র উত্তর ইচ্ছে করছেনা…
ওকে!
তোমার ইচ্ছা।বলেই বারান্দার দিকে পা বাড়াল আরিফ সাহেব……
ভোর সকালের শিশিরসিক্ত ঘাস থেকে ফোঁটা ফোঁটা শিশির ঝড়ার দৃশ্যপট দারুন উপভোগ্য..
ইজিচেয়ার হেলান দিয়ে অসাধারণ প্রকৃতির দৃশ্যটা দেখতে খারাপ লাগছে না আরিফ সাহেবের।
আরো ভাল লাগতো যদি ইলা এসে ইজি চেয়ারটার হতলে বসে কোমল হাতে চুলে বিলি কেটে দিয়ে বলতো “তুমি কি আমার শিশির হবে”
আমি শিক্ত হবো তোমাতে, মিশে একাকার হবো তোমার বিহনে………………
ছোট্র একটা দ্বীর্ঘশ্বাষ সবকিছু এলোমেলো করে দিলো..
জানে এই কল্পনাগুলো এভাবেই পড়ে থাকবে…হয়তো পুরন হবে মনের চাওয়াগুলো! হয়তো কোনদিনিই হবেনা…