আকাশে মেঘরাশি গুলো বালিয়ারির এপথ থেকে ওপথ ধরে উড়ছে। মেঘরূপী কাশফুল গুলো আশে পাশে তার কাটা গুলো কেমন করে গর্জে উঠলো। মুহূর্তেই টপটপ করে বৃষ্টি গুলোও দল বেঁধে জমিনে খসে পড়ল। জানালার গ্রিলে মুখ লুকিয়ে দেখছে আকাশটাকে নিবিড় ভাবে আপন করে নিচ্ছে ধ্রুব। ইচ্ছে করছে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোয়ার আনন্দটাকে কাছে টেনে নেয়,না তা আর সম্ভব না। পিছ পা হয়ে ঘুরে দাড়াল ধ্রুব। বেডের পাশে ইজিচেয়ারটায়া বসে কি সব ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল সেই মেয়েটির কথা…
প্রথম দেখেছিলাম মেয়েটিকে এমনি এক বৃষ্টি ভেজা রাতে। রাস্তার পাশে ল্যামপোষ্টের নিচে দাড়িয়ে আমি যখন সিগারেটের ধোয়া উড়াতে ব্যস্ত। ঠিক তখনি মেয়েটা পেছন থেকে ডেকে বললো, -‘এই যে শুনছেন?’
প্রতি উত্তর না করে আমি আমার কাজেই মগ্ন.. বিরক্তিভাব নিয়ে মেয়েটা আবার ডাক দিল আমাকে,
-‘হ্যালো,আপনাকে বলছি তো।’ এবারো কর্নপাত করলাম না আমি। রেগে গিয়ে মেয়েটা আমার কাঁধে হাত রাখলো.. সিগারেটের জ্বলন্ত কয়লার সাথে ভাবনা গুলোকে মাটি চাপা দিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।
~’আমাকে বলছেন?’
-‘বয়রা নাকি?’ মুখে ভেঙ্গচি কেটে বলে মেয়েটা। মেয়েটি আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি তার পিছন জন্মের শত্রু। চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে নাকি?
-‘মেয়ে মানুষ দেখেননি জীবনে নাকি?’
~’না, এই প্রথম।’ রেগে গেল মেয়েটি…
-‘কতক্ষন থেকে স্টেশনে বসে আছি। আর আপনার এদিকে কি?’
~’এই যা,মা ই তো পাঠালো দূর সম্পর্কের আত্নীয়কে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে যেতে। ধ্যাত! সিগারেটের নেশায় সব গুলিয়ে গেল।’
-‘বিড়বিড় করা বন্ধ করেন।’ বিরক্তিভাব স্পষ্ট মুখে ফুটিয়ে মেয়েটি বলল।
~’সরি। আসলে ট্রেন লেট করবে বলে এদিকে আসলাম। এনিওয়ে,আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?’
-‘বাহানা। ছাতা আছে?’ আবার সেই রাগি কন্ঠে বলে উঠল মেয়েটি। জীবনের দ্বিতীয় ভুলটি আজই করে ফেললাম। কেন যে এত মন ভোলা আমি.. হাসি পাচ্ছিল খুব,হেসেই দিলাম..
~’হে হে হে।’ রাগে গজগজ করে মেয়েটি বললো,
-‘হাসেন কেন?’
~’ছাতা আনলে কি আর আপনি আমাকে এই অবস্থায় দেখতেন?’ কেলানি হাসিটা না দিয়ে পারলাম না.. হে হে হে..
***
রাত তখন প্রায় দশটা.. বৃষ্টির কারনে রাস্তা প্রায় জনশুন্য..
-‘কি ব্যাপার রিকশা ডাকেন?’ এমন ভাবে হুকুম দিচ্ছে যেন আমি তার বাপের চাকর..
~’দেখছেন না রাস্তা ফাকা,রিকশা পাবো কই?’
-‘এত মালপত্র নিয়ে কি হেঁটেই যাব?’
~’আসেন কোলে তুলি..’ আমার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটি.. নে আজ আর রক্ষা নেই..
-‘ব্যাগটা ধরেন?’ বাপরে কি ওজন ওয়ালা ব্যাগরে ..
~’কি দিয়ে ব্যাগ ভরেছেন ইট নাকি পাথর?’
মেয়েটার সে কি হাসি.. হাসতে হাসতে মেয়েটার টোল পড়া গালটা ভেসে আসলো.. মেয়েটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব। বৃষিতে কাক ভেজার মত ভিজে একাকার মেয়েটা… তার উপর এমন টোল মাখা হাসি.. মনে হয় জীবনের প্রথম ভুলটা করেই ফেললাম…***
মেয়েটির হৃদয় হরন করা হাসিগুলো ভেসে আসছে কানে … মধুর সে হাসির ধ্বনি… দরজার ঠকঠক আওয়াজে লাফ দিয়ে উঠল ধ্রুব। অবচেতন মনে ভেসে আসলো স্বপ্ন দেখছিলেন…
–
-‘এই ধ্রুব দরজা খোলো জলদি?
~’কে?’
রাগি কন্ঠে মেয়েটি আবার বলে উঠল… সে রাতের মত.. -‘কে আবার তোমার বৌ।’
রুম থেকে চশমাটা হাতে নিয়ে ধ্রুব দরজা খুলে দিল,
~’কি হয়েছে? তুমি এমন হাঁপাচ্ছো কেন?’
-‘চলো না সেদিনের মত বৃষ্টিতে ভিজি?’
~’পাগলি মেয়ে বলে কি?’
অনেকটা টেনে হিচড়ে ধ্রুবকে ছাদে নিয়ে গেল| কাশফুলরূপী মেঘ গুলো দুষ্ট খেলায় মেতে উঠলো| অদূর মনের বিশালতা থেকে ভেসে আসা দু’ বিন্দুর ভালবাসা| এই মেয়েটি আর কেউ নয়, সেদিনের রাতের আঁধারী আভার খেলায় মন ভোলানো আমার বিন্তি… খুব ভালবাসি তোমায় বিন্তি…