কাছে আসার গল্প

কাছে আসার গল্প

একদিন আমি ফেসবুকে মেয়েদের নিয়ে ছোট একটা পোস্ট করি । তখন সেখানে একটা মেয়ে কমেন্ট করে – দেখেন ভাইয়া একটা মেয়ের জন্য সব মেয়েদেরকে এক মাপকাঠিতে ভাবা মোটেও ঠিক না ।

আমি তার কমেন্ট দেখলাম কিন্তু কোন রিপ্লাই দিলাম না। তবে আমার চাচাতো ভাই সালমান কমেন্টে রিপ্লাই দেয় -সব মেয়ে গুলাই একেকটা বদের হাড্ডি। এরপরে মেয়েটার সাথে সালমান ভাইয়ের কমেন্ট বক্সে ঝগড়া শুরু হয়ে যায় ।

এজন্য আমি পরে পোস্টটা ডিলিট করে দেই ।
আর সালমান ভাইকে কিছু জিজ্ঞেসও করি নাই

এই ব্যাপারে , কারণ ভাই আমার চেয়ে ছয় বছরের বড়। তাই আমি তার সাথে ফ্রি ভাবে কথা বলতে পারিনা ,সম্মান দিয়ে কথা বলি।

এর দুই মাস পরে একদিন রাতে আমি পড়ার টেবিলে বসে বসে পড়ছিলাম। তখনই হঠাৎ সালমান ভাই আমাকে কল দেয়। ভাই আবার থাকতেন সৌদি আরব।

সৌদি আরব গিয়েছেন তিন বছরের মত। এর আগে কখনোই আমাকে কল দেই নি এই তিন বছরে। তবে মাঝে মাঝে এসএমএস করে খোঁজখবর নিতো ফেসবুকের মাধ্যমে।

তখন ভাই আমাকে বললেন – তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভ। আমি সেদিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছিলাম- ধন্যবাদ কেন, আমি আবার ধন্যবাদ পাওয়ার মত কি করলাম।

ভাই তখন বললেন – তোর জন্য আমি আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত টা পেলাম। তোর কারনে আজকে আমি তোর ভাবী কে খুঁজে পেলাম।

আমি বললাম- কি বলছেন ভাই আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

ভাই তখন আমাকে জানালো – দুমাস আগে আমি যে একটা পোস্ট করছিলাম তখন ভাইয়ের সাথে যে মেয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে কমেন্ট বক্সে। ওই মেয়েকে ভাই সেদিন রাতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। মেয়েটা তখন এ্যাকসেপ্ট করে। এরপর থেকে সব সময় সেই মেয়েটার সাথে উনার কথা হতো। তারপর ধীরে ধীরে উনাদের মাঝে বন্ধুত্ব হয় তারপর সেটা ভালোবাসায় পরিনিত হয়। আর আজকে যখন ভাই সেই মেয়েটাকে প্রপোজ করছিল। তখন সেই মেয়েটা জানায় সেও নাকি ভাইকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। আর মেয়েটার নাম হচ্ছে তুলি।

এভাবে তাদের সম্পর্কের দুই বছর হয়ে যায়।
আর ভাই দেশে ফিরেন। দেশে আসলেই চাচা চাচি ওনার বিয়ের কথাবার্তা বলেন। তখন ভাই তুলির সম্পর্কে সবাইকে বলে। তুলির ছবি দেখে সবারই পছন্দ হয়। এদিকে তুলি ও তার বাবা-মাকে ভাইয়ের কথা জানায় , ছবি দেখে তাদেরও পছন্দ হয়ে যায় ভাইকে।

কিন্তু সমস্যা ছিল দুজনের বাসা ছিল অনেক দূরে দূরে । তুলিদের বাসা ছিল রাজশাহীতে।
আর ভাই দের বাসা লাকসাম। এত দূরে আত্মীয়তা করতে দুই পরিবারই রাজি হচ্ছিল না। এরপরে ভাই চাচা চাচিকে অনেক বুঝান আর তুলি তার বাবা মা কে অনেক বুঝিয়ে তাদের সবাইকে রাজি করান। এর এক মাস পরেই উনাদের বিয়ে হয়ে যায়। পরে ভাই পাঁচ মাস মাস দেশে ছিলেন। তারপর আবার সৌদি আরবে চলে যান।

অনেক সুখে যাচ্ছিল ওনাদের বিবাহিত জীবন।
দুজনেই অনেক সুখে ছিল। হাসিখুশি উনাদের সংসার ছিল। ভাই সৌদি আরব যাওয়ার দুই বছর পর একদিন আমার সাথে কথায় কথায় বলল -দুই মাস পর উনি দেশে আসতেছেন। সবকিছু ফাইনাল হয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে উনি কাউকে জানাতে বারণ করলেন। উনি বললেন কাউকে না জানিয়ে উনি দেশে আসবেন আর সবাইকে সারপ্রাইজ দিবেন। আমি যেন এই বিষয়ে কাউকে কিছু না বলি।

এর কিছুদিন পরেই তুলি ভাবী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। উনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
কিন্তু ভাবীর অসুস্থতা দিন দিন বাড়তে থাকে।

সালমান ভাই যখন তুলি ভাবীর অসুখের কথা শুনতে পেল। তখন তিনি কোম্পানিকে বলে ওদের ছুটির দশ দিন আগেই দেশে ফিরে এলেন। ভাই দেশে আসার পর তুলি ভাবী কে ঢাকায় নিয়ে যান। তখন আমিও উনাদের সাথে গিয়েছিলাম। তুলি ভাবীকে হসপিটালে নেওয়ার পর ডাক্তার ওনার চেকআপ করেন।

পরের দিন রিপোর্ট দেয়ার সময় ভাইকে চ্যাম্বারে ডাকেন। আমি বাইরে বসে ছিলাম। ডাক্তারের চেম্বার থেকে ভাই যখন বের হয়েছিল। দেখছি ভাই কান্না করছে । দু চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। ভাই কাঁদতে কাঁদতে তুলি ভাবীর কেবিনে গেলেন। আমি ও ভাই এর পিছনে গেলাম। ভাই কেবিনে ঢুকেই তুলি ভাবীকে জড়িয়ে ধরেন। জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কাঁদতে থাকেন। তুলি ভাবী বার বার বলছেন আরে তুমি কাঁদছো কেন। দেখো আমার কিচ্ছু হবে না আমি একদম সুস্থ হয়ে যাব।

কিন্তু তারপরও ভাইয়ের কান্না থামছিল না।

তুলি ভাবী বলে – তুমি এত কাঁদছো কেন তুমি আমাকে দেখো আমি কত হ্যাপি । আমি মারা গেল আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হবে না ।আমার মত এত ভাগ্যবান মেয়ে পৃথিবীতে আর কয়জনই বা আছে । যে মেয়ে স্বামীর বুকে মাথা রেখে মরতে পারে ।

তখন ভাই রেগে গিয়ে বলে – একদম ফালতু কথা বলবে না তোমার কিচ্ছু হবে না তুমি একদম সুস্থ হয়ে যাবে ।
আমি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না আমার চোখে জল এসে পড়ে। আমি কোন কথা বললাম না চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলাম দুজনকে একা থাকতে দিলাম ।

এর পরের দিনই আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয় আমার আবার সামনে এক্সাম ছিল এজন্য ।

আমি বাসায় আসার চার দিন পর রাতে জানতে পারি। তুলি ভাবী আর বেঁচে নেই উনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
পরদিন সকালে ভাবির লাশ নিয়ে আসা হয়।

আমি লক্ষ করলাম ভাবির লাশের পাশে ভাই নিশ্চুপভাবে বসে। ভাবীর ডান হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন। আমি সেদিন যতবারই ভাবির লাশের পাশে গিয়েছিলাম। সব সময় আমি দেখতে পেয়েছিলাম ভাই এখনো বসে আছে লাশের পাশে। কারো সাথে কোনো কথাবার্তা বলছিলেন না শুধু নিরবে অশ্রু ফেলেছিলেন।

দেশ থেকে সৌদি আরব গিয়েছেন এখন প্রায় দেড় বছর। চাচা চাচি ও উনাকে দেশে আসতে বলতেছেন এসে বিয়ে করার জন্যে। কিন্তু উনি এখনো বলছেন উনি অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। তুলি ভাবীর স্মৃতি নিয়ে নাকি বাকি জীবনটা পার করে দিবেন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত