ফ্রেন্ডসার্কেলের প্রায় সবাই আজকাল প্রেম করে!ব্রেকাপ হইলে কিংবা ছ্যাকা খাইলেও আবার নতুন একটা করে! আর আমার কি কপাল! একটা গার্লফ্রেন্ডও জুটলো না! তারমানে এই নয় যে প্রেম করার চেষ্টাও করিনি। অনেকবার করেছিলাম কিন্তু গার্লফ্রেন্ডতো জুম্মার নামাজের পর মিলাদ শেষের ফ্রিতে দেওয়া জিলাপি কিংবা তাবারক নয় যে কমবেশি সবাই পাবে! এইতো সেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক সুন্দরি মেয়ের সাথে লাইন মারতে চাইছিলাম।মেয়ের সাথে সদ্য হাঁটতে পারা এক তিন বছর বয়সি ছেলে দেখে আমি কনফার্ম ছিলাম ওটা মেয়ের ছোট ভাই হবে। মেয়েটা দেখতে একদম যেন অপ্সরা! বয়স উনিশ-কুড়ি হবে। একটু ভাব নিয়ে ভাবলাম জীবনেতো প্রেম করা হয়নি একটা ট্রাই করা যাক, মেয়েটার থেকে মোবাইল নাম্বার চেয়ে দেখি কি বলে।
-এইযে মিস অপ্সরা।
শুনে মেয়েটা মুচকি হাসছে! আমিও মনে মনে সেই খুশি। যাক তাহলে প্রেমে সম্মতির লক্ষণ। যেই বলতে যাবো আপনার নাম্বারটা ঠিক তখন এক মাঝবয়সী লোক এসে বললো এখানে কি?
-না মানে কাকা আপনার ছেলেটা দেখতে অনেক কিউটতো তাই ওর ওর সাথে একটু দুষ্টামি করছিলাম আর কি।
-ও আচ্ছা ঠিকাছে।
-হুম আর আপনার মেয়েটাও অনেক কিউট একটু সামলে রাখবেন। সময় মতো আমার ফ্যামিলি আসবে আপনার সাথে আলাপ করতে।
– হারামজাদা,বেয়াদব,রাস্কেল,র্যা
বেল,ননসেন্স,বখাটে ইত্যাদি ইত্যাদি দেশি বিদেশি গালি দেয়ার পর।
-তুই জানিস আমি কে?
এইগুলা শুনার পর আমি এক দৌড়ে ওই এলাকা থেকে প্রস্থান করি। সেদিন ভাবছিলাম লোকটা হয়তো আর্মি অফিসার কিংবা পুলিশের ওসি বা ডিসি হবে তাই ভয়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি লোকটা ওই
এলাকার চেয়ারম্যান আর ওই পুঁচকেটা ছেলে হলেও বড়টা মেয়ে ছিলো না,ওইটা নাকি বউ! যাহ শালা! টাকার কাছে এদেশে বাল্যবিবাহ দেয়ার কারণে আমার মতো কতো পোলার যে কপাল পুড়েছে আল্লাহ্ই জানে!
আমাদের দেশে সত্তর বছর বয়সি স্বামী আর সতের বছর বয়সি স্ত্রী জমজ সন্তানের রেকর্ড করতে পারলে ওই চেয়ারম্যান কোন ছাড়!
তারপর মিশুর সাথে এই ঘটনা শেয়ার করার পর ও হাসতে হাসতে পেট ফাটবার অবস্থায়।
-এতো হাসার কি আছে?
-তোরে দিয়া প্রেম হইবো না হাসিব্বা।
-তাতে কি তবুও ট্রাই করবো। কবি বলেছিলো একবার না পারিলে দেখো শতবার।
-শতবার পূর্ণ হলে পার্টি দিবি কিন্তু।
-হাহাহা।আচ্ছা মিশু এবার ক্যাম্পাসের কারো সাথে লাইন মারার ট্রাই করলে কেমন হয় বলতো?
-করে দেখতে পারিস।
-রাইসা মেয়েটা কেমন দেখতেরে?
-অবশ্যই সুন্দরকে সুন্দর বললে পাপ হবে না!সুন্দর!
-আচ্ছা তাহলে ওকে যাইয়া একটা প্রপোজ করি।
-যা কর।
দুইদিন পর।
-মিশু!
-কি হয়েছে?
-দোস্ত আমি রাইসাকে প্রপোজ করেছিলাম।
-কি বললো?
-ডায়মন্ড রিং ছাড়া নাকি প্রপোজ এক্সেপ্ট করবেনা!
-তুই কিছু বলিস নি?
-বলেছিলাম তো।
-কি?
-লোভি মাইয়া,তাহলে তোর ভালোবাসাটা কি আমার প্রতি নাকি ডায়মন্ড রিংটার প্রতি?
-তারপর ও কিছু বলেনি?
-বলেছিলো আরে যা যা কত পোলা হাতে ডায়মন্ড নেকলেস নিয়া দাঁড়াইয়া আছে লাইন ধরে তুই কোন এলাকার মোখলেস বে!এরপর আমার আর কি বলার আছে!
-হাহাহা।আগেই বলেছিলাম গাধা দিয়ে হালচাষ হয় না।
-যা ভাগ! তোকে চ্যালেঞ্জ করলাম আমি প্রেম করমুই।
-দেখা যাবে।
সপ্তাহখানেক পর।
-কিরে হাসিব আর কাউকে প্রপোজ করেছিস?
-নিশাতকে করেছিলাম!
-কি বললো?
-প্রেমের ইতিহাসে নাকি অনেক রেকর্ড আছে আমিও একটা ইতিহাস গড়ে দেখালে তারপর ভালোবাসবে।
-তুই কি বলেছিলি?
-পারবোনা।
-কেনো পারবিনা?
-আরে প্রথমে ভাবছিলাম চন্ডিদাসকে অনুসরণ করা যাক তাই ডাকাতিয়ার পাড়ে বড়শি বাইতে বসেছিলাম তিন ঘন্টায় একটা মাছ পাইনি! ধুর এইভাবে আজাইরা বসে থাকতে ভালো লাগে নাকি! ওই বেটায় পাগল না হইলে কি আর খালি বড়শি নদীতে ফালাইয়া বসে থাকতো বারো বছর?
তারপর ভাবলাম মজনুকে অনুসরণ করি। কিন্তু আমার এতো মরার শখ নাই। নিজেও মরছে লায়লিকেও মারছে। শাহাজাহানের কথা মাথায় আনাও পাপ হবে। আমারতো আর ওই বেটার মতো রাজসিংহাসনের আদায় করা খাজনা-করের এতো সম্পত্তি নাই। তাই বাদ!
-কি বাদ?
-চ্যালেঞ্জ!
তোকে যে চ্যালেঞ্জ করছিলাম। আমি আর প্রেম করমু না। আসলেই প্রেম অনেক কঠিন জিনিস। সবার দ্বারা প্রেম হয়না।
-মিশু সেদিন তোর ছোট বোন আমাকে জিজ্ঞাস করেছিলো আমার গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা?
-তুই কি বলেছিস?
-আমি বলেছিলাম ওসব প্রেমটেম আমার দ্বারা হয়না।তারপর ও বললো তাহলে চলবে।এটার মানে কি ছিলোরে?
-এটার কোনো মানে আমি বুঝিনি। হয়তো চিড়িয়াখানার লোকেরা আজব প্রাণির সন্ধানে বিজ্ঞাপন দিছিলো আর ও সেটা দেখেছিলো!
-ওরে বাবা! ওকে বলে দিস আমি দশ-বারোটা,না না ত্রিশ-চল্লিশটা,আরে ধুর দু চারটা প্রেম করি।
-হাহাহা।
পরেরদিন।
-দুলাভাই সেদিন তুমি মিথ্যা বলেছিলা!
আরে মিহি আমাকে দুলাভাই বলছে কেনো!আমারতো বউও নেই আবার!
-কি হচ্ছে এসব! মানে কি!
-তিন বছর ধরে আপুর সাথে লাইন মাইরা এখনও নাটক করা হচ্ছে খুব! আপনাকে তো কমেডি ফিল্মে হিরো হিসেবে পার্ফেক্ট মানাবে!
তারমানে ওই বজ্জাত মাইয়া মিহিকে এটা বলছে!
-কিরে আমি তোকে তিনবছর ধরে লাইন মারি?
-না!
-কিন্তু তাহলে মিহিকে বললি কেনো?
-এমনি।
-এমনি কেনো?
-লাগবেনা আমার।
-কি লাগবেনা।
-ডায়মন্ড রিং লাগবেনা,ইতিহাস গড়া লাগবে না।শুধু বন্ধুত্বের এই কয়েকবছরের মতো সারাজীবন আমার পাশে থাকবি? কিচ্ছু চাইনা আমি আর, তোকে পেলেই পৃথিবী!
– আগে বলিস নি কেনো?
-প্রয়োজন হয়নি।
-এখন কেনো প্রয়োজন হলো?
-মিহির চলবে কথায় যেটা বুঝিয়েছিলো সেটা হচ্ছে তোকে হারাতে হবে। তাই মিহিকে বুঝানোর এটাই রাস্তা ছিলো!ভালোবাসা অনেক সহজেই আসে এটা কঠিন কিছু,নয় কঠিন হচ্ছে ভালোবাসার সঠিক মানুষ,সঠিক সময় আর সঠিক কথাটা নির্ধারণ করা। যেটা তোর কাছে থাকা সত্ত্বেও বুঝতে পারিসনি বলেই কঠিন মনে হয়েছিলো!
-তাহলে আমিতো শেষ অব্দি চ্যালেঞ্জটা জিতলামই।
-তুই জিতিস নি। আমি জিতয়ে দিয়েছি। আমিতো জানি গাধা দিয়ে হালচাষ হয় না।
-কিন্তু সারাজীবন বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়!
-কি তুই আমাকে বোঝা বললি!
-তুই আমাকে গাধা বললি কেনো!
-আচ্ছা আর বলবো না কিন্তু আমি এতোগুলা কঠিন কথা তোর কাছে সহজ করে দিয়েছি তুই একটা কঠিক কাজ সহজ করে নিতে পারবি হাসিব?
-কি কাজ মিশু?
-সারাজীবন আমার সাথে থাকতে পারবি? আমার জীবনের সেরা বন্ধু হয়ে? আর একজন লাইফপার্টনার কিন্তু একজন ভালো বন্ধুও বটে…
অতঃপর শক্ত করে মিশুর হাত ধরে বললাম ছাড়বো না কভু!
দুইমাস পর।
-তুই ওই মাইয়ার কমেন্টে রিপ্লে দিলি কেনো?
-আরে আমিতো রিপ্লেতে আমার গল্পের মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভালোবাসা অবিরাম বলছিলাম।
-বলবি কেন?ব্রেকাপ তোর সাথে।
-এই সামান্য কারণে!
-তুই এটাকে সামান্য কারণ বলছিস?
-তা নয়তো কি?তুইও তো কমেন্টবক্সে কত ছেলের সাথে হাসিঠাট্টা করে কথা বলিস!
-কি তুই আমার চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলিস?
-তুই বেশি ভালো যে তাই।সেদিন আলোকিত সূর্য নামের ফেইক আইডি দিয়া জিজ্ঞাস করলাম তোমার বিএফ আছে নাকি গো কিউটি? সেদিনতো বলেছিলি নাই। আমি তাহলে ক্যামনে বিশ্বাস করি আমাকে পেলেই তোর পৃথিবী!
-তোকে বিশ্বাস করাই ভুল হইছে এর চাইতে রাদিতকে বিশ্বাস করতাম তাই বেটার হতো।ও বলেছিলো বিয়ের সময় আমাকে আট বরি সোনা দিবো।
-আহা! এইতো বলছিলি কিচ্ছু চাইনা!সবগুলাই লোভী!
-তাতে তোর কি? আমার আব্বু তোর বাবার কাছে গেছে!
-কেনো?
-তোর বাড়ি থেকে ছয় বরি সোনা দাবি করতে!
-আমার ধর্মে যৌতুক হারাম তাই শোধ তুললাম না। কিন্তু ছয় বরি সোনা দিয়ে যদি আজীবনের জন্য থাকা,খাওয়া আর পরিধান বাবদ একটা কাজের লোক পাওয়া যায় নেহাতি মন্দনয়!
-কি তুই আমাকে কাজের লোক বললি?
-আচ্ছা তাহলে তুই অকর্মা! হইছে এবার?
-না, আমি কাজের লো…ধুর আজাইরা কথা!
-হাহাহা!
-বত্রিশ দাত বাইর কইরা হাসলে চলবে না। একটা কথা শুনে রাখ, আমি এতো কমেন্টের রিপ্লে ডিলিট করতে পারমু না,লিমিট ক্রস করবিতো আমি আইডিই ক্রস করে দিমু!
-একটু মিস্টেক হইছে আমার দাঁত বত্রিশটা না! একত্রিশটা!একটা ডুয়েট ব্যাডমিন্টন খেলতে যাইয়া পড়ে গেছিলো! আর প্রেমের স্বাদ যে বেশি কচলালে লেবুর মতো তিতা হয়ে যায় সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি!
-বেশি কথা কইলে আমি ঘুসি দিয়া আরেকটা দাঁত ফালাইয়া দিমু।আর স্বাদ হাড়ে না জ্বিহব্বায় লাগে, প্রেমেরটা হৃদয় আর মনে!
-যা ভাগ।
-হিহিহি!