কিছু গল্পের শেষ হয়না

কিছু গল্পের শেষ হয়না

গতকাল রাত ফেসবুকেই ছিলাম। নিউজফিড ঘুরাঘুরি করতেছিলাম। হঠাৎ কি মনে করে যেন মেসেজ রিকুয়েস্ট চেক করলাম। দেখলাম একটা মেয়ে মেসেজ দিয়ে রেখেছে…

-ওই মিঃ রিকুয়েস্ট টা কি একসেপ্ট করবেন প্লিজ, কিছু কথা বলবো।
একসেপ্ট করলাম। রিপ্লাই দিবো তার আগেই দেখি আরেকটা মেসেজ।
-অনেক ধন্যবাদ, এখন কি বলতে পারি
-হুম পারেন
-আপনার পেজে যে গল্পগুলা দেখলাম, ওগুলা কি আপনার নিজের লেখা
-জি, আমার লিখা
-ওহ, তাহলে আমার একটা গল্প লিখে দিবেন প্লিজ
-কি গল্প
-লাভ স্টোরি নাকি স্যাড স্টোরি
-সেটা আমি নিজেও জানিনা
-হ্যাপি এন্ডিং নাকি স্যাড এন্ডিং
-সেটাও জানিনা, এমনকি শেষ হয়েছে কিনা সেটাও বলতে পারবোনা
-আচ্ছা বলেন শুনি,
-কিভাবে শুরু করবো একটু বলবেন প্লিজ

আমি বলে দিলাম এভাবে এভাবে শুরু করেন। তারপর মেয়েটা বলতে লাগল। মেয়েটা যেভাবে বলেছে আমি ঠিক সেভাবেই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

আমি নীলা( ছদ্দনাম)। তখন ক্লাশ ৮ এ পড়তাম। ২০১৫ সালের জে.এস.সি ব্যাস। লেখাপড়া খুব ভালোই চলছিল। মাথায় আলাদা কোনো ভাবনা ছিলনা। নিয়মিত ক্লাশ করতাম। পাশাপাশি একটা প্রাইভেট কোচিংএ পড়তাম।
এভাবেই দিন কাটছিল আমার।

হঠাৎ করেই এক্সামের কিছু আগে আমাদের কোচিংয়ের বিজ্ঞান স্যার চলে যায়। তখন হঠাৎ করেই নতুন একটা স্যারকে তার জায়গায় নিয়োগ করা হলো।

নতুন স্যার নিয়োগ করার পর কোনো এক কারণে দুইদিন আমার কোচিংয়ে যেতে পারিনি। তৃতীয়দিন আমি গেলাম। হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো । উপায় না দেখে ভিজেই গেলাম । কোচিংয়ে পৌছেই হঠাৎ করে রুমে ঢুকে গেলাম। গিয়েই নতুন স্যার কে দেখে চমকে গেলাম। উনিও হয়তো একটু চমকে গেছিলেন আমি হঠাৎ করে ঢুকার কারনে।
স্যারের নাম ছিল নীল(ছদ্দনাম)। তারপর থেকে স্যার আমার পড়া না হলেও বকতো না। আমি বেশি পড়াও ধরতো না। তাই সবাই আমাকে স্যারের নাম বলে ক্ষ্যাপাতো আর স্যারকে আমার নাম বলত। আসলে আমার থেকে আমার বান্ধবীরা স্যারের সাথে বেশি ফ্রি। তাই ওরা হয়তো সব জানতো।

এভাবেই চলছিল। আমি ও সব বুঝতে পারতাম। বাট না বুঝার মত করে থাকতাম। একদিন কোচিংয়ে রুমে প্রবেশ করলাম। তারপর বান্ধবীরা হাসতে শুরু করল। তারপর স্যারকে বলতে লাগল..

-স্যার, ও এসেছে বলেন
-তোমারা চুপ থাকো আমি এমনিই পরে বলে দিবো
তারপর আমাকে বলল,
-তুমি ক্লাশ শেষে আমার সাথে একটু দেখা করো
-ঠিক আছে
-ক্লাশ শেষে আমি স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম। ওখানে সব স্যাররা ছিল। তাই আমাকে পরে দেখা করতে বলল। আমি চলে আসলাম।

পরদিন বান্ধবিরা মিলে কোচিংয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তার মাঝে স্যারের সাথে দেখা হয়। বান্ধবীরা স্যার কে দেখে আমাকে একটা রেখে হাসতে হাসতে চলে গেল।

তারপর আমি স্যারের সাথে আসতে লাগলাম। স্যার কিছুই বলছেনা তাই আমিই বললাম।

-আমাকে কি যেন বলতে চাইছিলেন
-ও হ্যা,
-তো বলেন
-না মানে কিভাবে বলব বুঝতে পারছিনা তোমাকে দেখলে মনের মাঝে এক ধরণের ফিলিংস হয়, না মানে, বুঝতেই তো পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি

আমি বুঝতে পারছিলাম স্যার আমাকে প্রপোজ করতে চাচ্ছে। তবুও না বুঝার ভান করে চলে আসলাম কোচিং। কোচিংয়ে যেতেই সবাই আমাকে ক্ষাপাতে লাগল।

জীবনের প্রথম এরকম ঘটনা নিজের মধ্য আটকে রাখতে পারছিলামনা। তাই বাসায় এসে বোকার মত আপুকে বলে দিলাম। আপু আম্মুকে সব বলে দিল। আব্বু স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিল। কোচিংয়ে স্যারকে অনেক অপমানিত হতে হলো।

আমি আসলে এমন চাইনি। স্যারের জন্য অনেক খারাপ লাগছে। স্যার আমার উপর রেগে আছে হয়তো। এভাবেই চলতেছিলো।

-এভাবে চলতে চলতে আমাদের কোচিং থেকে পিকনিকে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। আমরা সবাই গেছিলাম। সেখানে স্যারের সাথে অনেক মজা করেছিলাম। এখন হয়তো স্যার আমার উপর আর রেগে নেই।

তারপর থেকে স্যারের সাথে একটু একটু ফোনে কথা বলতাম। এভাবে কখন যে আমরা রিলেশনে জরিয়েছি বুঝতেছি পারিনি।

ও আমার অনেক কেয়ার। অনেক ভালোবাসে আমাকে। আমাদের সম্পর্ক অনেক গভিরে চলে গেছিলো। তারপর হঠাত আমাদের ব্রেকাপ হয়ে যায়। কারণ টা ছিল আমার বান্ধবী। ওর ভালোর জন্য ওকে একটা কথা বলেছিলাম। আর ও আমার ক্ষতি করে দিলো।

আমি শুভ কে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না। তাই ওর সাথে দেখা অনেক ক্ষমা চেয়ে, অনেক কান্না কাটি করেছি।
তারপর আবার আমরা রিলেশন শুরু করেছি। একদিন সন্ধায় ও আমাদের বাসার সামনে দেখা করেছিল। গালে একটা চুমু দিয়েই দৌড় দিছিলো।

বাসায় গিয়েই মেসেজ দিলো..”সরি সরি আমি কপালে দিতে চেয়েছিলাম, ভুলে গালে দিয়েছি” মেসেজটা দেখে অনেক্ষন হেসেছিলাম।

একসময় বাড়িতে আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেল। তারপর থেকে আমাকে আর ফোন ধরতে দিতোনা ওর সাথে আর কথাও হতো না।

আমার ভাই ওকে মেরেছিলো। তবুও ও আমাকে ছাড়তে চায়না। অনেক ভালোবাসতে আমাকে।

-ক্লাশ নাইনে উঠার পর আমি ওই কোচিংয়ে আবার ভর্তি হই। আমাদের কথা চলতে থাকে। কিন্তু বাসায় আমাকে ফোন ধরতে দেয়ন। তাই কথা হয় না। তাই ও আমাকে একদিন একটা ফোন দিয়ে বলছিলো যদি সত্যি ভালোবেসে থাকো তাহলে ফোন টা নাও। আমি নিয়েছিলাম। কিছুদিন কথা হওয়ার বাড়িতে ফোন নিয়ে ধরা খেয়েছিলাম। বান্ধবীদের নাম করে আমি সেবারের মতো বেচে গেছিলাম। ওকে ফোনটা ফেরত দেই।

তারপর ও একদিন হঠাত করে আমাকে কোর্ট ম্যারেজ করতে বলে। আমি এটা কখনোই করতে পারবোনা। আমি আগেও ওকে বলছিলাম যে আমি কখনো পালিয়ে যতে পারবো না। তারপর ও আমার সাথে ব্রেকাপ করতে দেয়।
কিন্তু ফ্রেন্ড হিসেবে কথা হত। আমি ফেবুতে আরেকটা রিলেশনে জরিয়ে যাই। ওকে বলেছি বাট ও বিশ্বাস করেনি। অনেকদিন পর আমি ওই ফেবু বিএফ এর সাথে ফোন অনেক্ষণ কথা বলেছিলাম। তখন ও আমার ফোন অয়েটিং পেয়েছিল। তখন ও বিশ্বাস করেছিলো।

তারপর কিছুদিন পর ও আবার আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করে মাফ চায়। আমিও ফেবু বিএফ এর সাথে ব্রেকাপ করে নীল এর সাথে আবার রিলেশন করতে লাগলাম।

কিন্তু আগের থেকে আমি অনেক শক্ত শক্ত কথা বলি। কথায় কথায় ব্রেকাপ করতে চাই। ও অনেক কাদতো।
কিন্তু ইদানিং ও আর আমাকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। ফেবুতে একটিব থাকলেও মেসেজ দেয়না । অনেক রাগ হয় আমার। ব্লক তরে দিতাম। আবার আনব্লক করতাম। কিন্তু ও তেমন রিয়েকশন দেখাতো না। অনেক কষ্ট লাগে আমার।

এই তিন চার আগে ওকে লাইনে দেখতেছি বাট আমাকে একটা মেসেজও দিলাম। তাই আমিই মেসেজ দিলাম। তখন ও বলে, “ওই কি করো রে” মেজাজ টা গরম হয়ে গেল। অনেক কিছু বললাম। অবশেষে রাত ১২ টার সময় ওকে ব্লক দিলাম। ব্লক দেয়ার আগে ও আমাকে বলেছিল, “তোমার ভালো তুমি নিজেই সিলেক্ট করো”। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর আনব্লক করবো না।

একদিন হয়ে গেলো ও আমাকে একটা কল বা মেসেজ দিলো না। ওর সাথে কথা না বলে আমি আর থাকতে পারছিলাম না। আমি জানি আমাদের সম্পর্ক আমার ফ্যামিলিতে মেনে নিবে না। আমি পালিয়েও যেতে পারবোনা। আবার ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারবোনা। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলবো। তাই আজ তিন দিন পর আবার আনব্লক করলাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত