আমারদের বিয়েটা হয়েছে বাবা-মায়ের অনিচ্ছায়। নিলাকে হঠ্যাত করে বাসায় নিয়ে আসার পর পৃথিবীর সকল নিয়মগুলো উল্টে যেতে লাগল। বাবা-মাকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করলাম। কিন্তুু তারা কোনভাবেই আমার সাথে নিলার বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নিতে চাইল না। দিনগুলো একটু অসস্তির মধ্য কেটে যাচ্ছে।
শত ঝামেলার মধ্য দিয়ে পাঁচটি বছর কেটে গেল।এর মাঝেই আমাদের ফ্যামিলিতে একটা নতুন সমস্যা যোগ হলো।
সমস্যাটি হলো , আমাদের কোন সন্তান ছিল না। বাবা-মা এ জন্য সরাসরি নিলাকেই দোষারুপ করত। নিলাকে প্রতিনিয়ত বাবা-মায়ের কথা শুনতে হতো , কিন্তুু নিলা কখনো আমাকে এই ব্যাপারে অভিযোগ করে নাই। একদিন বাবা-মা আমার অজান্তেই একটি ভয়াবহ সিন্ধান্ত নিলো , আমাকে আরেকটি বিয়ে করাবে । সিন্ধান্তটা ভয়াবহ মনে হলে ও বাবা-মার কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হলো। প্রতিদিনের মতো আজকে ও সন্ধায় বাসায় ফিরেছি , রুমে এসে দেখি নিলা বাসায় নেই। নিলাকে না দেখে আমি হতভম্ব হয়ে বাবা-মাকে জিঙ্গাসা করায় তারা বলল ,
– আজকে আমরা তর জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম , এসে দেখি নিলা বাসায় নেই। রুমে ডুকে জীবনের প্রথম অনুভব করছি , নিলাকে ছাড়া আমি সত্যি কতটা অসহায়। একাকিত্বের চাপ মাথায় নিয়ে নিলাকে অনেক খুজেছি কিন্তুু কোথাও খুজে পাই নি।
এক সাপ্তাহ পরে পোষ্ট অফিস থেকে একটি চিঠি আসে , চিঠিতে একটা ডিভোর্স লেটার , লেটারে নিলা সাইন করে রেখেছে। সাথে একটা চিরকুট ,সেখানে লেখা , তোমাকে মুক্ত করে দিলাম , তোমার ফ্যামিলি সব-সময় চেয়েছিল আমি যেনো তোমাকে মুক্তি দেই। আমি দোয়া করি , যেনো তুমি সব-সময় ভালো থাকো।
নিলাকে ছাড়া যে আমি কতটা কষ্টে আছি এটা কোন ভাবেই বলতে পারি নাই। অনেক ইচ্ছে করছিল , নিলাকে বলতে
” নিলা আমি তোমাকে ছাড়া এক মূহুতের জন্য ও ভালো নেই ”
নিজকে কন্ট্রোল রাখতে না পেরে সিন্ধান্ত নিলাম দেশ ছেড়ে চলে যাবো।
নিলাকে ছাড়া এক মাস কেটে গেল। তার মধ্যই কাগজপত্র রেডি হয়ে গেছে। একটু পরেই আমার বিমান ছেড়ে দিবে, আমার এক হাতে বিমানের টিকেট অন্য হাতে ডিভোর্স লেটারটা , লেটারে আমার সাইন দেওয়ার ঘরটা খালি পড়ে আছে।
দেশের বাইরে এসে নিজকে একজন সংগ্রামী যুদ্ধার মতো প্রস্তুত করলাম।কিন্তুু নিজের অজান্তেই মাঝে মাঝে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে যেতো।
আজকে পাঁচ বছর পর দেশে ফিরছি। নিলাকে এখনো ভুলতে পারি নি। পাল্টে গেছে পৃথিবীর ধারাবাহিকতা। পাল্টে গেছে গ্রামের চিরচেনা রুপ।
শরীরটা খুব কান্তি লাগছে তাই রুমে ডুকেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে অগুছালো রুমটা গুছানোর জন্য নতুন ফার্নিচার কিনে নিয়ে আসি।
পুরুনো জিনিসগুলো সরাতেই , খাটের নিচে একটি বক্স খুজে পেলাম। বক্সটি খুলতেই বিস্মিত হয়ে গেলাম , বক্সের ভেতরে দেখি একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট , একটি চিঠি , সাথে একটি বাচ্চা মেয়ের পুতুল।
চিঠিতে লেখা ,
– বিয়ের আগে তুমি বলতে আমাদের কন্যা সন্তান হবে। সত্যি মেডিক্যাল রিপোর্টে করে জানতে পারলাম , আমাদের কন্যা সন্তানই হবে। তোমার জন্মদিনে এই খুশির খবরটি উপহার দিব বলে একটি মেয়ে পুতুল কিনে রেখেছি।
কিন্তুু সেটা আর হলো না , তোমার বাবা-মা তোমাকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে ঠিক করে এসেছে।। তাদের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে বাবা-মায়ের ইচ্ছেটা পুরুন করো।
চিঠিটা পড়ে পাগলের মতো নিলাকে খুজতে লাগলাম। অনেক খুজার পর নিলার এক বান্ধবীর খোজ পেলাম , জানতে পারলাম নিলা চট্রগ্রাম আছে , নিলা সেখানের একটি স্কুলের টিচার।
সকালের ট্রেনে চট্রগ্রাম গেলাম। নিলার স্কুলের কাছে এসে দাড়িয়ে আছি। ভিতরে যাওয়ার সাহস খুজে পাচ্ছি না। স্কুল ছুটি হয়েছে , একে একে সবাই চলে যাচ্ছে।
একটু পরেই নিলা স্কুল থেকে বেড়িয়ে আসল , সাথে একটি ছোট ফুটফুটে মেয়ে নিলার হাত ধরে এগিয়ে আসছে। মেয়েটি দেখতে অবিকল আমার মতো।
নিলার সামনে গিয়ে দাড়াতেই , নিলা স্তব্দ হয়ে গেল। নিলার সাথে সাথে পুরো পৃথিবীটা নিস্তব্দ হয়ে গেছে। জানী না দু-জনে কতক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম।
নিলাকে বললাম , আমার এই হাতটি এখনো অন্য কারো হাত স্পর্শ করে নাই। তোমার হাতটি ধরতে পারি। নিলার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
জীবনের প্রথম নিলাকে আনন্দে কাঁদতে দেখে নিজকে কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না। নিজের অজান্তেই আমার দু-চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল।