আমি একটা ফুল বাগানের কাছে বসে আছি। এখানে কত মানুষ এসে বসে বসে গল্প করে। একটা ফুল ছিঁড়লাম। ফুলটা হাতে নিয়ে বসে তাকলাম। আমার একটা প্রিয় মানুষ আছে তাকে দিব বলে ফুল টা ছিঁড়লাম। প্রিয় মানুষ টা কাছে আসল। আমার দিকে কেমন করে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইল । আনিকা মিনমিন করে বলল ” ইচ্ছা করছে নাক টা টেনে ছিঁড়ে দেই। ”
— আমার নাক তোমাকে কি করছে গো ? আমার নাক ছিঁড়বে কেন?
— তোমার নাক কিছু করে নি। তোমার মোবাইল কোথায়? জানো কত টা ফোন দিয়েছি। তা জানবে কি করে। মন টা তো তোমার উদাসীন থাকে।
— ও বাবা। আমার মোবাইল বন্ধ হলো কখন গো?
— ঢং করো না। ঢং করতে এখন আমার ভালো লাগছে না। এখানে বসে বসে কি করছিলে?
— এমনি বসে আসিলাম। তেমন কিছু করে নি। তোমার মাথা থেকে ঘাম পড়ছে। নেও রুমাল টা। মাথা টা থেকে ঘাম পরিষ্কার করো।
আনিকা রুমাল টা নিয়ে ঘাম পরিষ্কার করতে তাকল। আমি আনিকার দিকে চেয়ে রইলাম। আনিকার মুখ টা লাল হয়ে গেল।
বিকালবেলা আমি আর আনিকা রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে নদীর পাড়ে যেতে তাকলাম। আমি আকাশের দিকে চেয়ে একটা পাখি কে দেখতে লাগলাম। আনিকা আমাকে বলে ” কি দেখো? ”
আমি বললাম দুই টা পাখি। আনিকা অবাক হয়ে বলে ” আমি তো একটা পাখি দেখতে পারছি। আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” আরেক টা
পাখি তুমি। ”
আনিকা মাথা নিচু করে হাটতে তাকল।
সারাবিকাল বেলা ঘুরলাম। সন্ধ্যা বেলা একটা রিক্সা করে আনিকার বাসায় তাকে দিয়ে আসতে লাগলাম। আনিকা আমার কাঁধে মাথা টা রাখল। মাথা রেখে বলল ” বিকালবেলা টা অল্প সময়ে চলে যায় কেন?
আমি মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম ” কাল তো আবার বিকাল আসবে। ”
আনিকা এবার একটা মুচকি হাসি দিল। আমিও সাথে হাসি দিলাম।
আমি একটা মোবাইল হাতে নিয়ে টিপাটিপি করতে লাগলাম। এমন সময় একটা মেয়ে আমার কাছে আসল। আমার কাছে এসে বলে ” আপনার নাম কি? ”
আমি চোখ দুই টা বড় করে বললাম ” মানে টা কি? ”
মেয়ে টা হাসি দিয়ে বলে মাথার উপর কাকের বাসা। তারপর মেয়েটা চলে গেল। কিন্তু তাতে সমস্যা ছিল না। আনিকা আমাকে দেখে পেলল মেয়েটার সাথে কথা বলতে। আনিকা আমাকে ধমক দিয়ে বলে ” মেয়েটা তোমার কি হয়? ”
আমি চিনি না।
— রাগ টা তুলবে না কিন্তু। মেয়েটা কে ছিল?
— মেয়েটা কে জিজ্ঞাস করতে হবে। মেয়ে টা কে।
— মেয়ে টার সাথে দাঁত বের করে হাসলে কেন? অপরিচিত মেয়ে হলে তো হাসতে না ।
— ও বাবা। এই টা কেমন কথা। মেয়েটার কথায় আমার হাসি পাইছিল। তাই আমি হাসি দিয়েছি।
— ও। আমার সাথে এমন করে কোনো দিন হাসো?
— তুমি কি হাসির পাত্র? যে আমি হাসব।
— একদম চুপ করে থাকো। কোনো কথা বলবে না।
আমি চুপ হয়ে বসে তাকলাম। কিছু বললে এখন রাগ করে ফেলবে। আনিকা চুপ থেকে বলল ” মেয়েটার সাথে তোমার সম্পর্ক কিভাবে হলো?
আমি রাগি ভাব নিয়ে বললাম ” দশ মিনিট।
— দশ মিনিটে সম্পর্ক হয়ে গেল?
— মেয়েটা তো কিউট।
— ভ্যাএএএএএএএ। তুমি আমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করবে?
— না রে বাবা। আমি তো তোমাকে ভালবাসি।
— তোমার রুমাল টা দেও। নাকের পানি পরিষ্কার করব।
— ছিঃ ছিঃ।
— দেও না গো।
— দিচ্ছি বাবা।
একটা সুপারি গাছের কাছে আমি আর আনিকা দাঁড়িয়ে তাকলাম। আনিকা আজ একটু সাজসজ্জা করে এসেছে। চুল টা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। চোখে কাজল দিয়েছে। কপালের মাঝখানে লাল টিপ দিয়েছে। কানে ধুল। ঠোঁটে লাল টিপ সাথে মুখে একটু হালকা মেকাপ। আমি অপলক ভাবে থাকিয়ে তাকলাম। আনিকা অন্য দিন থেকে আজ একটু আলাদা। আনিকা কে শাড়ি পড়লে খুব ভালো লাগে। অল্প বয়স তো তাই শাড়ি ভালো করে পড়তে পারে না। আনিকা হাতে একটা ঘড়ি পড়ল। হাতের অপূর্ব দৃশ্য টা ফুটে উটেছে। আনিকা আমার হাত টা ধরে একটা টান দিয়ে হাটতে তাকল। আমি সামনের দিকে চেয়ে চেয়ে হাটতে তাকলাম। আনিকা এক দুই পা করে হাটছে আর মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। চারপাশে গাছপালা। আমার দিকে একবার তাকল। আমাকে দেখে নিল আমি কত টা বোকা। একটা রিক্সা ডাক দিয়ে আমাকে রিক্সায় উঠতে বলল। আমি উঠলাম। আনিকা আমার এক হাত তার হাতে নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে বলতে হাসতে তাকল। আনিকার সাদা দাঁত দেখা যাচ্ছে। রিক্সাওয়ালা তার রিক্সা চালাচ্ছে। আনিকা খবু অদ্ভুত। আমার কাছে খুব অদ্ভুত মনে হয়।
আনিকা পড়ার টেবিলে বসে বই পড়ছে। আনিকা কে দেখতে আমার খুব ইচ্ছা হলো তাই তাদের বাসার জানালার কাছে গেলাম। আনিকা কে ফোন দিতেই আনিকা জানালা গুলে আমাকে বকা দিল। জানালা দিয়ে আমার চুল টা টেনে বলল ” এতো রাতে আমাকে দেখার ইচ্ছা হলো কেন? ”
— তোমার চাঁদনী মুখ টা দেখতে।
— হু মা তাই।
— জ্বী গো।
— যাও বলছি। আমি পড়ব।
— আমি যাব না।
— আমাদের বাসার কুকুর কে কি ডাক দিব?
— না গো। তোমার বাসার কুকুর টা তোমার থেকে খুব মারাত্মক। আমাকে দেখলেই শুধু ঘেউ ঘেউ করে।
— ঘেউ ঘেউ করবে নাকি তোমাকে জামাই আদর করবে? তুমি যদি আমাকে চুরি করে নিয়ে যাও। তখন কি হবে?
— তোমার যা ওজন। তোমাকে কোলে তুলে আমি নিব কি করে?
— কি বললে? যাও আমার বাসা থেকে। যাও বলছি।
— না গেলে কি করবে?
— দেখবে কি করব?
— হা দেখব।
আনিকা আমার চোখের সামনে জানালা টা লাগিয়ে দিল। আমিও চলে আসলাম। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে মশার কামড় খেয়ে লাভ নেই।
পথ দিয়ে হেটে হেটে যাচ্ছি এমন সময় দেখলাম। আনিকা একটা রিক্সায় উঠে আমার কাছে এলো। আমাকে বলল ” তোমার সাহস হলো কি করে? ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম ” আমি কি করলাম? ”
আমার কান ধরে বলে ” আমার ফুল বাগান থেকে গোলাপ ফুল কে চুরি করছে? ”
আমি বললাম ” আমি। ” সাথে সাথে জিহ্বায় কামড় দিলাম। আমি এ কি বললাম। আমি জানি এখন বাচতে পারব না। তাই কানে ধরে দাঁড়িয়ে তাকলাম। আনিকা বলে ” কান ধরলে কেন? ”
— ভয়ে গো ভয়ে।
— আমি কি বাঘ?
— নাতো। বাঘিনী।
— কি বললে?
— নাতো বলছি। তুমি খুব ভালো মেয়ে।
— মিথ্যা কথা কইবে না। নইলে কান ধরিয়ে রেখে দিব।
— ফুটবলের মতো করে রং বদলে যাও কেন?
— ফুটবলের মতো করে তুমি রং বদলে যাও। আমি বদলায় না। শুনো ফুটবল খেলতে গেলে শক্তি লাগে। সে শক্তি তোমার নাই।
— কি যে বলো! মানুষ আমাকে নেইমার বলে।
— নেইমার। হেহেহে। বাতাসের আগে উড়ে যায়।
— ধ্যাত ভালো লাগে না।
আমি সহ আমার তিন বন্ধু এক জায়গায় বসে গল্প করছি। আমি দাঁত বের করে হাসছি। আনিকা আমার শার্ট ধরে টানতে তাকল। আমি রাগে বললাম ” কি হয়েছে বাবা। এভাবে টানছ কেন? ”
— তুমি এখানে বসে বসে কি করছ?
— দেখতে পারছ না। গল্প করছি।
— চলো আমার সাথে।
— আমি কোথায় যাব? এদের কে ছেড়ে আমি যাব না কোথায়? তুমি একা যাও।
— আমি তোমার কিছু না। এরা তোমার সব?
— এই কথা বলছ কেন?
— তাইলে চলো। আকাশ টা আজ মেঘাচ্ছন্ন। যে কোনো সময় বৃষ্টি আসবে।
— বৃষ্টি আসলে আসবে। আমি ভিজব তুমি যাও।
— ইশ! কি যে বলো। জ্বর আসবে। চলো যাই।
— জ্বর আসলে আসবে। ওষুধ খেয়ে নিব।
— টাকা পাবে কোথায়?
— তোমার কাছ থেকে টাকা নিব না। আমার মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওষুধ খেয়ে নিব।
— আকাশে পাখি উড়ে উড়ে তাদের বাসায় যাচ্ছে। তুমি যাবে না?
— আমি বলছি না। আমি যাব না। আমি পাখি না। আমি হিমু।
— ইশ! রে জ্বালা। তুমি না গেলে আমি বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাব। যখন আমার জ্বর আসবে। তখন তুমি বুঝবে মজা।
— তুমি যাও তো যাও। আমি যাব না।
— ছোটো বাচ্চার মতো ব্যবহার করছ কেন?
— আমি বাচ্চা না। আমি বড় হইছি।
— তা তো আমি দেখতে পাচ্ছি। কি রকম বড় হইছ। বড় হলে আমার কথা শুনতে। ভ্যাএএএএএএ।
— আচ্ছা কেঁদো না। চল যাই।
— এই তো লক্ষ্মী ছেলে। চলো না একটা মোবাইল দিয়ে ফোটো তুলি।
— ইশ! মন টায় কয় কি যে করি। তুমি কি পাগলী নাকি? এই দুপুরবেলা ফোটো তুলতে যাব।
— তাইলে চলো রিক্সায় উড়ে উড়ে চলে যাই অচিনপুরে।
— তা করা যায়।
— হেহেহে।
— হিহিহি।