সম্পর্ক

সম্পর্ক

এল .আই.সি এজেন্ট হবার সুবাদে,প্রতিদিনই আমায় চারিদিকে ঘুরতে হতো। নতুন নতুন মক্কেল ধরার উদ্দেশ্যে। যদি কোন পলিসি গছানো যায়। প্রথম প্রথম খুব লজ্জা লাগতো। কেননা আমাদের দেখলেই অনেকে বিরক্ত হতো। তবু মাথা ঠান্ডা রেখে বোঝাতে হতো। শক্ত কথা গায়ে না মেখে , ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হতো। একটা নতুন পলিসি আসা মানে , আমার সংসার সচল থাকা। কেননা কমিশনের ভিত্তিতে ওপরে ওঠা।

এই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন চরিত্রের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল l সেই সব নিয়ে একটা বড়ো বই লেখা যায় .l অনেক মানুষের সাথে হৃদ্যতাও গড়ে ওঠে l কত পারিবারিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছি l এইসব ঘটনার মধ্যে থেকে , একটা বেছে নিচ্ছি l –ইরা দির কাহিনী l ￰ইরাদির সঙ্গে পরিচয় এই কর্মসূত্রে l থাকতো ভদ্রেশ্বরে l আমার কাজ করার এলাকা ছিল , হুগলি থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত l ￰ইরাদির নাম আর ঠিকানাটা পেয়েছিলাম আমারই এক পলিসি হোল্ডারের মুখে l ￰ইরা মল্লিক , বিধবা হলেও …স্বচ্ছল l

সকালের দিকে বেরোলাম মাকে বলে l ” ভদ্রেশ্বরে যাচ্ছি , দেরি হলে খেয়ে নিও l” কয়েক জায়গায় পরীক্ষা দিচ্ছি , যদি ভালো চাকরি পেয়ে যাই l কেননা আমরা জীবন বীমাতে কাজ পাবো , তার কোন নিশ্চয়তা নেই l ইরা মল্লিকের বাড়িতে কলিং বেলটা বাজিয়ে , মনে মনে ঠাকুরের নাম নিলাম l যেন নিরাশ হয়ে ফিরতে না হয় l

যিনি দরজা খুললেন , অভিজ্ঞতা থেকে বুঝলাম ইনি …ইরা মল্লিক l পরনে সরু নরুন পাড় হালকা শাড়ি l ফর্সা , একটু গোলগাল চেহারা l বয়স পঞ্চাশ বাহান্ন হবে l অল্প বয়সেই বিধবা হয়েছেন l কেননা চুলে অল্প পাক ধরেছে l চোখে সরু ফ্রেমের চশমা l প্রশ্নতে ভরা মুখ l

পরিচয় দিতেই মুখটা বদলালো l এই ধরণের বিরক্তি ধরা মুখটা দেখার অভ্যেস , খানিকটা হয়েছে l বিনয়ের সঙ্গে বললাম l

” মাত্র পাঁচ মিনিট ,সময় আপনার নষ্ট করবো l তারপর আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি চলে যাবো দিভাই। এই দিভাই শব্দটা বোধহয় , মুখের ওপর দরজা বন্ধ করতে দিলো না l অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়ির ভেতরে আসতে দিলেন।￰ট্রেনিংএ আমাদের শেখানো হতো রোগী চিনে ডাক্তারি করবে l কে কি ধরণের কথা পছন্দ করেন ! যার সঙ্গে কথা বলছো , তাকে দেখেই আগে থাকতে আন্দাজ করতে হবে l এই ক্ষমতা যার মধ্যে যত বেশি , সে তত তাড়াতাড়ি সাফল্যের দরজায় পৌঁছে যাবে l ঘরে ঢুকে পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘামটা মুছলাম l

” দিভাই , একটু কষ্ট করে এক গ্লাশ জল খাওয়াবেন l বড্ডো তেষ্টা পেয়েছে ” l ভেতর দিকে তাকিয়ে একটু জোরে বললেন l

” প্রিয়া , এক গ্লাশ জল আর একটু মিষ্টি নিয়ে আয় “l
” না না মিষ্টি লাগবে না ”

” এটা আমাদের মা ঠাকুমাদের শেখানো জিনিস l এখন অবশ্য কেউ কেউ জলের বোতল ধরিয়ে দেয় “l তার মানে , সহবত শিক্ষা জানেন l কালের হাতে পুরোনো আতিথেয়তা এখনো বিসর্জন দেননি l একজন তেইশ চব্বিশ বছরের মেয়ে , হাতে গ্লাশ আর মিষ্টির প্লেট নিয়ে ঢুকলো l এক পলক দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম l যেন জল জ্যান্ত লক্ষী প্রতিমা l দেখলেই মনে হবে , মমতা..কমনীয়তা…ভালোবাসার প্রতীক l উগ্রতার এতটুকু ছোঁয়া নেই l দুধে আলতা গায়ের রং l মাথার সিঁথিতে সিঁদুরের রেখা দেখে বুঝলাম , খুব সম্ভবত পুত্রবধূ l

আমাকে মিষ্টি আর জল এগিয়ে দিয়ে , শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে সুরেলা কণ্ঠে বললো ” মা মণি , তুমি কখন পূজো করেছ ! এবার জলখাবারটা খাও l ” লজ্জিত হলাম l উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছি ,হাত তুলে আমাকে থামালেন l এরপর বৌমা দিকে তাকিয়ে বললেন l

” পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছি l ততক্ষন তুই শুরু কর। ” দেখলাম ও দাঁড়িয়ে রইলো।বোধহয় আমি কি বলবো জানার জন্যে! দেরি না করে শেখানো বুলি বলতে শুরু করলাম l মাঝপথেই বাধা পেলাম।

” ঠিক আছে l আর বলতে হবে না l তুমি ভালোর জন্যেই বলছো , এইটু বুঝতে পাচ্ছি l বেশ আমি একটা পলিসি করবো l আগামী পরশু একটু বেলার দিকে এসো l ”

উঠে দাঁড়ালাম l ” অনেক ধন্যবাদ দিভাই l আপনার কথা অনুযায়ী বেলার দিকেই আসবো “l
” দিদি ভাই বলছো , আবার আপনি আজ্ঞে করছো ? তুমি বললেই খুশি হবো l ”

এই ছিল ইরাদির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের দৃশ্য l মনে আনন্দ হলো l যাক একটা নতুন পলিসি পাওয়া যাবে l
পরশু দিন যখন ইরাদির বাড়িতে ফর্ম ভর্তি করছি , নমিনির জায়গায় এসে বললাম ” কার নাম হবে ? ”

” কার আবার ? আমার একমাত্র মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া l কি রে ঠিক বলেছি তো ? ” প্রিয়ার দিকে তাকালো l আমার ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে গেলো l আমি ভেবেছিলাম , পুত্রবধূ ! এরপরের কাহিনীটা মনে মনে যোগ করে নিলাম l ￰অর্থাৎ ,মেয়ে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে মায়ের কাছেই থাকে l কিন্তু জামাই ? সে কোথায় ? মাথায় ঢুকছে না l যতই কৌতূহল থাক , প্রশ্ন করাটা গর্হিত l কেননা যতই হোক আমি একটা বাইরের লোক l

ওর নাম নমিনিতে রাখা নিয়ে , একটা মৃদু আপত্তি তুলেছিল প্রিয়া l ইরা দি ধমকালো l ” তোকে ছাড়া আর কাকে করবো ? ওই জামাইকে ? ” হঠাৎ আমার দিকে নজর পড়তে চুপ করে গেলো l মন বলছে , একটা বড়ো গল্প আছে এর মাঝে l হয় ঘর জামাই থাকে ! নচেৎ বর্তমানে সেপারেশনে আছে ! ডিভোর্স মামলা চলছে l কিন্তু ওই মেয়েকে দেখে , বোঝাই যাবে না ! আমিও তো প্রথম দর্শনে কত কি ভালো ভালো কথা ভেবে বসেছিলাম l অবশ্য ছেলেটার বিষয়ে কিছু জানি না l তাই এখুনি কোন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না l

বেশ বড়ো এমাউন্টের পলিসি করলো l বয়স বেশি হবার জন্যে , প্রিমিয়ামটাও বেশি পড়বে l বললাম — মেডিকেল রিপোর্টটা করিয়ে রাখতে l দিন সাতেক পর আসবো l ইরা দি চেক দিয়ে দিলো l

মিষ্টি, চা খাওয়ালো l এমনিতে মা মেয়ে দুজনেই খুব মিশুকে l ইরা দি বললো ” কয়েকজন চেনাশোনাদের তোমার কথা বলবো l ”

” খুব ভালো হবে l এবার আসি ” বেরিয়ে এলাম l মনটা খুশি হলেও , ভেতরের আসল গল্পটা জানার আগ্রহ বেড়ে গেলো l

© Sankar Chatterjee.
এরপর থেকেই শুরু হলো ইরাদির বাড়িতে আমার যাতায়াত l ওদের বাড়িতে গেলে সময়টাও যেন তাড়াতাড়ি কেটে যেত l দুজনেই ছিল গল্প করার মাস্টার l আমার বলা ভূতের গল্প গুলো শোনার জন্যে ওরা আগ্রহে বসে থাকতো l
কিন্তু আমার মনের মধ্যে জেগে থাকা প্রশ্ন গুলোর উত্তর এখনও পাওয়া হয় নি l চিন্তা করতাম কি এমন ঘটনা ? যার ফলে স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে থাকা যায় না ? ঘরেতে জামাই মেয়ের ছবি দেখেছি l ￰জামাইকেও কোন অংশে দেখতে খারাপ নয় !

একদিন থাকতে না পেরে ঘুরিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলি।
” দিভাই , তোমার জামাই কোথায় কাজ করে ? ” এক মিনিটের জন্যে চুপ করে রইলো l প্রিয়া গেছে চা করতে।
” চেন্নাইতে , ছুটি ছাটা পেলে আসে। ” কথার পিঠে কথা।
” প্রিয়ার কি ওখানে থাকার অসুবিধে ? ”

” মোটেই না। ” গলাটা গম্ভীর। ” ওখানে বড়ো ফ্ল্যাট l কিন্তু আমার মেয়ে , আমাকে এখানে একলা ফেলে যাবে না। বার বার বুঝিয়েছি l তুমিই বলো , এই বয়সটা চলে গেলে ফিরে পাবে ? ” অভিমান ঝরলো। কি উত্তর দোব ?

” অবশ্য , আকাশ চষ্টা করছে এখানে ট্রান্সফারের ।” এই সময় চা নিয়ে ও এলো l ভাবতে পারিনি ইরা দি , মেয়ের সামনে আরও কথা বলবে l

” আসলে কোন মা চায় না , বিয়ের পর স্বামী ছেড়ে মায়ের সেবা করবে l ” মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে l ” ওই তো মহারানী এসেছেন l ওকেই জিজ্ঞেস করো ” চায়ের কাপ রেখে মৃদু হাসে প্রিয়া l

” আপনিই বলুন , আপনার মা যদি এতো বড়ো বাড়িতে একলা এই বয়সে পড়ে থাকতো ? আপনি পারতেন মাকে ফেলে অতদূর গিয়ে থাকতে ? সারাক্ষন চিন্তা কুরে কুরে খেত না ? ” উত্তর দিতে গিয়েও চুপ করে রইলাম l ￰উত্তরটা হলো , ছেলে আর মেয়ের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে l সেটা মানি আর না মানি ! তাছাড়া আমি কি বলতে পারি যে , এতো সুন্দরী বউ ছেড়ে ,কোন ইয়ং স্বামী বেশিদিন একলা থাকতে পারে ? তার কোন শখ আহ্লাদ নেই? এই থেকেই তো পরবর্তী সময়ে সম্পর্কে চিড় ধরে যায় ! এই থেকেই বাইরে মন , নেশা কতকি জীবনের মধ্যে ঢুকে পড়ে l তখন হাজার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয় না l

ইরা দি মা হয়ে ঠিকই বুঝেছে l ওর উচিত মেয়ের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা l আচ্ছা প্রিয়ারও কি কিছু মনে হয় না স্বামীর জন্যে ? অবশ্য যদি এখানে অন্য কোন আকর্ষণ থাকে আলাদা কথা l চা খেতে খেতে বললাম l
” ইরা দিকে ওখানে নিয়ে গেলেই তো সমস্যার সমাধান l ” প্রিয়া মিষ্টি গলায় বললো l
” এই কথা আমি অনেকবার বলেছি l কিন্তু বাবার স্মৃতি এই ভিটে ছেড়ে যাবে না l ”

ইরা দি মুচকি হাসলো ” সেটা ঠিক l তাই বলে তুই তোর নতুন দাম্পত্য জীবনের সুন্দর রঙিন দিনগুলো ,আমার পিছনে কাটাবি ? ” -কথাটা একশো ভাগ ঠিক l সময় আর বয়স কারো জন্যে থেমে থাকে না l আমি আকাশের জায়গায় হলে, এই নিঃসঙ্গতায় মনের দূরত্ব সৃষ্টি করতো l বিয়ের আগে মেয়ের এই কথাটা ভাবা উচিত ছিল l তাছাড়া ছেলের বাড়ির লোকজন ? তারাই বা কি ভাবছে ? শুনেছি দু বছর বিয়ে হয়েছে ! গত এক বছর ধরেই এখানে আছে l জানি বাবা মায়ের সেবা যত্ন করা সন্তানের পরম ধর্ম l কিন্তু অন্যান্য সম্পর্ক গুলো ? শ্বশুর ,শ্বাশুড়ি , দেওর , ননদ তারা কি অবহেলার পাত্র ? এতো একচোখোমি l ইরা দির কথায় বুঝলাম , উনিও খুশি নয় l আমারও এই বয়সে জ্ঞান দেওয়া সাজে না l

বাড়িতে মাকে ওদের কথা বলছিলাম l মা শুনে বললো ” এরপর মেয়ের শ্বশুর বাড়ি কোন খারাপ আচরণ করলেই , তারা খারাপ হয়ে যাবে l তুই ওসবের মধ্যে থাকিস না l ”

দিন পনেরো ওদের বাড়ি আর যাওয়া হয় নি l সেদিন ইরা দির ফোন এলো ” কি ভাই , দিদিকে ভুলে গেলে ? ”
” না দিভাই, আসল কথা কোম্পানি থেকে একটা টার্গেট দিয়েছে l সেটা পূরণের জন্যে একটু ছোটাছুটি করতে হচ্ছে।

” শোন , রবিবার সন্ধ্যের সময় চলে আসবে l রাত্রে আমাদের সঙ্গে খাবে l জামাই শনিবার আসছে l ওর কলকাতায় ট্রান্সফার হয়েছে l ” খুশির গলা l

” বাহ্ , দারুন খবর l নিশ্চয়ই আসবো “l ফোন রাখলাম l মাকে বললাম l
” যাক , মনে হচ্ছে এবার প্রিয়া শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে l একটা সম্পর্ক আবার নিবিড় হবে l ”
” দ্যাখ আবার মেয়ে , মাকে ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি থাকে কি না ? ” -এই কথাটা আমার মাথায় আসেনি তো ? সেটা যদি হয় ? প্রিয়া জীবনের চরম ভুল করবে l

কিন্তু রবিবার ওখানে আমার জন্যে যে একটা সম্পূর্ণ অন্য গল্প অপেক্ষা করে আছে , সেটা কল্পনার বাইরে ছিল l
©Sankar Chatterjee.

রবিবার সন্ধ্যায় ইরাদির বাড়ি গেলাম l দরজা খুললো প্রিয়া l হাসি মুখে বললল ” আসুন ” l লক্ষ্য করলাম ওর মুখে একটা পরিতৃপ্তির ছাপ l তার মানে , স্বামীর বিরহে নিজেও কাতর ছিল l মেয়েদের মনে কি যে চলে, সত্যি বোঝা যায় না l

” কই আকাশ কোথায় ? ” ওর গালে একটু লাল ছোপ ধরলো l ￰সলজ্জ হাসি হেসে বললো l
” দোতলায় চলে যান l তিনি এখন শুয়ে শুয়ে মায়ের আদর খাচ্ছে l ” কথাটা কানে লাগলো l যতই হোক শ্বাশুড়ি , যুগের কি খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হচ্ছে ? নিজের মা আর শ্বাশুড়ির মধ্যে একটা সূক্ষ ফারাক থাকে বৈকি l ওপরের ঘরে আসতে যে দৃশ্য চোখে পড়লো , নিজেই কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে গেলাম l

ইরাদির কোলে মাথা রেখে প্রিয়ার বর আকাশ চোখ বুজে শুয়ে আছে l দিভাই ওর কালো ঘন চুলে হাত বোলাচ্ছে ! মানছি , জামাইও ছেলের মতো l এই দৃশ্য যদি আকাশের মা , মানে প্রিয়ার শ্বাশুড়ি দেখে ? যতই উদার হোক না কেন , মেনে নিতে পারবে ? আমি আজকালকার ছেলে হয়েও অস্বস্তি লাগছে l আমাকে দেখেই ইরা দি তাড়াাড়ি বলে উঠলো। আরে এসে গেছো। চুল থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো।￰ এই যে নবাব …ওঠো , আমার গল্প বলা ভাই এসে গেছে।

আকাশ ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো। প্রিয়াও উপস্থিত হয়েছে l আকাশ বললো ” তুমি করেই বলছি। আপনি বললে কিরকম পর পর লাগে।

” একদম ঠিক কথা। ” চেয়ারে বসে বললাম। ও ছবির থেকেও অনেক হ্যান্ডসাম। প্রিয়ার সাথে একদম রাজযোটক।
” মা মনি তোমার কথা আগেই বলেছে l তুমি জীবন বীমার সাথে জীবন ধারাও মা মনির বদলে দিয়েছো। আগে যে ভালোবাসা আমার একচেটিয়া ছিল , তাতে ভাই বনে গিয়ে ভাগীদার হয়ে গেছো।” ইরা দি কপট রাগ দেখিয়ে ওর কান মুলে দেবার ইঙ্গিত করলো আর বললো।

” কেন হিংসে হচ্ছে ? ” আকাশ জড়িয়ে ধরলো ইরাদিকে।” একশো বার হচ্ছে ” আদুরে গলায় বললো। আমি বোকা হাসি হাসলাম। আসলে এই ধরণের পরিবেশের সঙ্গে , ঠিক পরিচিত নই।

” ওরে প্রিয়া তোর বরকে ছাড়া। রাক্ষসের মতো জড়িয়ে ধরেছে। আমার ভাইটা কি ভাবছে বল তো ?” প্রিয়াও বা কিরকম ? মুক্তোর মতো দাঁত বার করে হাসছে। এবার বোধহয় আকাশের হুঁশ হলো l শ্বাশুড়ীকে ছেড়ে বললো।
” এবার চা খেতে খেতে তোমার ভূতের গল্প শুনবো। প্রিয়া রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ানোর আগে ও এসে কাঁধটা ধরলো। একদম না, লক্ষী মেয়ের মতো মায়ের পাশে বোসো l চা আমি বানিয়ে আনছি। সঙ্গে কাজু বাদাম। নিচে নেমে গেলো ও।

” এই হলো আমাদের বাড়ির জামাই। এখনও বাচ্চাদের মতো আচরণ। অবাক হচ্ছো নিশ্চয়ই, এই রকম সম্পর্ক দেখে ” ইরা দি বললো l মনে হয় আমার মুখের চেহারা দেখেই বললো। এই সময় বিছানায় ফেলে যাওয়া আকাশের মোবাইলটা বেজে উঠলো। প্রিয়া নম্বরটা দেখে, ইরা দির দিকে তাকিয়ে বললো ” মায়ের ফোন।

ভালোই হলো, এই প্রথম বোঝা যাবে ওই বাড়ির সঙ্গে এদের সম্পর্কটা কি রকম ? প্রিয়া বললো ” বলো , আমি প্রিয়া বলছি। কালকে সকালে আমরা যাবো। আকাশ ট্রেতে করে চা আর স্ন্যাক্স নিয়ে ঢুকলো। প্রিয়া ফোন ওর হাতে তুলে দিলো ” মা ফোন করেছে। তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। ও ফোন ধরলো।

” কাল সকালেই আমরা দুজন ওখানে যাবো। বাবার শরীর কেমন আছে? ঠিক আছে কাল গিয়েই সব কথা হবে। তার মানে ওরা কালকেই চলে যাচ্ছে। ইরা দি একলা পড়ে যাবে। ওদের আবার শুরু হবে নতুন করে একসঙ্গে পথ চলা।

চায়ের কাপ নিয়ে বললাম ” তাহলে প্রিয়ার কাল থেকে শ্বশুর বাড়ির ঘর। আমার কথায় ওরা অবাক হয়ে তিনজনেই মুখের দিকে চাইলো। কিছু কি ভুল বলে ফেলেছি ? দিভাই প্রথম মুখ খুললো।

” প্রিয়া শ্বশুর বাড়ি যাবে মানে? বরং আমার ছেলেটা শ্বশুর বাড়ি যাবে।” এবার আমার অবাক হবার পালা! ইরাদি বলে চলেছে।

” তুমি কি এতদিন ভেবে আসছো জানিনা। প্রিয়া আমার বৌমা , আকাশ আমার ছেলে। বোকা বনে গেলাম। ￰এইরকম সম্পর্ক আজকালকার দিনে হয়? নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হচ্ছে না।মনটা এক অনাবিল আনন্দে ভরে যাচ্ছে। ইস, সব সম্পর্ক গুলো যদি এইরকম হতো? সবাই যদি সবাইকে এইভাবে আপন করে নিতো? তাহলে এতো তিক্ততা, এতো সন্দেহ, এতো ভুল বোঝাবুঝি , এতো মন ভাঙা,ঘর ভাঙা, সব বন্ধ হয়ে নতুন করে বাঁচার আনন্দ উপভোগ করা যেত।

আমি সত্যি ভাগ্যবান , এইরকম একটা পরিবারের সাথে যুক্ত হতে পেরে। মনে মনে প্রণাম জানাই ইরা দিকে l সত্যি তুমি গ্রেট।

******************************************* সমাপ্ত *****************************************

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত